অনেকে পীর ধরে।আমি সেই সম্পর্কে জানতে চাই,আসলে পীর ধরা কি জায়েজ?এটি সম্পর্কে কোরআন এ কি বলা হয়েছে? 
শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে

কুরআনের নির্দেশ অনুযায়ী ফরয বিধান দেওয়ার মালিক একমাত্র আল্লাহ তায়ালা। ইরশাদ করেছেন, বিধান দিবার অধিকার আল্লাহরই। (সূরা ইউছুফ ৪০) আরো ইরশাদ করেছেন, জেনে রেখো সৃষ্টি এবং বিধান তাঁরই। (সূরা আরাফ ৫৪) পীর-সুফীদের আক্বীদাহ হলো পীরের কাছে মুরীদ হওয়া ফরয। যেমন চরমোনইয়ের পীর সাহেব "মাওয়ায়েজে এসহাকিয়া" নামক কিতাবে বলেনঃ পীরের কাছে মুরীদ হওয়া ফরয। তিনি আরও বলেন, 'যদি কারো দুইজন পীর হয় তবে দুই পীর তোমার দুই ডানা ধরে বেহেশতে নিয়ে যাবেন। কোন ক্ষতি নাই। ( মাওয়ায়েজে এছহাকিয়া সৈয়দ মাঃ মোঃ মোমতাজুল করীম রচিত:পৃষ্টা নং ৫৫-৫৬) এছাড়া তিনি আরও বলেনঃ যার কোন পীর নাই তার পীর শয়তান। এজন্য তারা একটি আরবি বাক্য তৈরী করেছে যাতে সাধারণ মানুষের আরবি দেখে এটাকে কুরআন-হাদিস মনে করে বিনা আপত্তিতে মেনে নেয়। সে বাক্যটি হলো। মান লাইছা লাহু শাইখুন ফাশাইখাহু শাইতানুন। এ আরবি বাক্য শুনে অনেকেই এটিকে হাদীস বলে বিশ্বাস করে অথচ এটি কোন হাদীস নয় পীর-সূফীদের মনগড়া একটি বাক্য মাত্র। পীরদের যতগুলো সিলসিলা রয়েছে প্রায় সকলের আক্বীদাহ এরকম।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ

পীর একটি ফারসী শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ বয়সী মানুষ। পরিভাষায় পীর এবং শায়খ শব্দ দুটি সমর্থক অর্থ ধারণ করে। পীর ধরার অর্থ হলো, দীনী বিষয়ে জানা শোনার জন্য, আমলের পথে উন্নতি ও অগ্রগতি লাভের জন্য এবং আত্মার ব্যধি থেকে আরোগ্য লাভের জন্য একজন শিক্ষক ও পথনির্দেশকের দ্বারস্ত হওয়া। আর দীনী বিষয়ে জ্ঞান আহরণ করা ফরজ পর্যায়ের আবশ্যকীয় বিধান। তেমনিভাবে পরকালীন মুক্তি লাভের জন্য আমলের পথে উন্নতি ও অগ্রগতি সাধন করা এবং আত্মার ব্যধি থেকে মুক্তি লাভ করা আবশ্যক। সুতরাং যে ব্যক্তির দীনী বিষয়ে জানা শোনার প্রয়োজন রয়েছে, আমল-আখলাকে ঘাটতি রয়েছে কিংবা আত্মার ব্যধিতে আক্রান্ত হয়ে পড়েছে তাকে তো একজন শিক্ষক, পথনির্দেশক কিংবা চিকিৎসকের দ্বারস্থ হতেই হবে। এ দৃষ্টিকোণ থেকে আমল-আখলাক, আকীদা-বিশ্বাস তথা দীনী মানদণ্ডে উত্তীর্ণ একজন বিজ্ঞ ও বিদগ্ধ আলেমের সংস্রব ও সান্নিধ্য গ্রহণ করলে জান্নাতের চলার পথ সহজগম্য হবে। নতুবা পদস্খলিত হয়ে বিপথগামী হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ যেখানে জাগতিক জীবনে কেউ শিক্ষক বা গাইড ব্যতিরেকে উন্নতির চরম শিখরে পদার্পন করতে সক্ষম হয় না সেখানে দীনী বিষয়টি তো আরো বেশি স্পর্শকাতর ও ঝুঁকিপূণ। এক্ষেত্রে পথচ্যুতি হলে ইহকাল-পরকাল সব বিধ্বস্ত হয়ে যাবে। এ দৃষ্টকোণ থেকে শরীয়াতে পীর বলে কিছু নেই –এমন একচেটিয়া কথা বলা যায় না। ব্যক্তির আকীদা বিশ্বাস ও আমল আখলাক যদি কুরআন সুন্নাহর মানদণ্ডে উত্তীর্ণ হয় তাহলে তার প্রতি ভক্তি ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা ও তার সংস্রব গ্রহণ করা শরয়ী দৃষ্টিকোণ থেকে একটি অতি কাঙ্ক্ষিত বিষয়। এ ক্ষেত্রে পীর বা শায়খ শব্দ ধারণ করা না করায় কিছু যায় আসে না।

আল্লাহ তা‘য়ালা ইরশাদ করেন, يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَكُونُوا مَعَ الصَّادِقِينَ অর্থ: হে ঈমবনদারগণ! তোমরা তাকওয়া অবলম্বন করো এবং নেককারগণের সাথে থাকো। (সূরা তাওবা, আয়াত নং ১১৯)

তবে বর্তমানে পীরতন্ত্রের নামে সীমাহীন বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়িমূলক আচরণ ও কর্মকা- পরিলক্ষিত হয় যা থেকে নিবৃত্ত থাকা আবশ্যক। (সহীহ বুখারী, হাদীস ১৮, তাফসীরে কুরতুবী ১০/৩২২, তাফসীরে মাআরিফুল কুরআন ৪/৪৭

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ