আমি যোহর এবং আসরের নামাজের ইমাম যখন সূরা চুপি চুপি পাট করেন তখন আমি কি সূরা পড়ব। কেউ যদি জানেন দলিল সহ দিলে খুশি হতোম ধন্যবাদ!
শুধু যোহর আসরেই নয় পাঁচ ওয়াক্ত নামাজেই মুক্তাদিকে সূরা পড়তে হবে না।
মুক্তাদীর কোন কিরাতই পড়তে হবে না। কারণ ইমামের কিরাতই মুক্তাদীর কিরাত। ইমাম সূরা ফাতিহার পর বাকি সূরা মিলালে যেমন তা মুক্তাদীর পক্ষ থেকে হয়ে যায়, তেমনি সূরা ফাতিহা পড়লেও তা মুক্তাদীর পক্ষ থেকে হয়ে যাবে। মুক্তাদীর আলাদাভাবে সূরা ফাতিহা ও পড়তে হবে না, সেই সাথে অতিরিক্ত সূরাও মিলাতে হবে না। কারণ তিলাওয়াত করলে পিছনে চুপ থাকার নির্দেশ পবিত্র কুরআনে যেমন এসেছে, তেমনি সহীহ হাদীসেও এসেছে। সেই সাথে ইমামের সকল কিরাতই মুক্তাদীর জন্য যথেষ্ট হয় মর্মে সহীহ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে।
ﻋَﻦْ ﺟَﺎﺑِﺮٍ ﻗَﺎﻝَ : ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ : « ﻣَﻦْ ﻛَﺎﻥَ ﻟَﻪُ
ﺇِﻣَﺎﻡٌ، ﻓَﻘِﺮَﺍﺀَﺓُ ﺍﻟْﺈِﻣَﺎﻡِ ﻟَﻪُ ﻗِﺮَﺍﺀَﺓٌ »
হযরত জাবের রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, যার ইমাম রয়েছে, তার ইমামের কিরাত মানেই হল তার কিরাত। {মুয়াত্তা মালিক, হাদীস নং-১২৪, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৪৬৪৩, সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-৮৫০, তাহাবী শরীফ, হাদীস নং-১২৯৪,মুজামে ইবনুল আরাবী, হাদীস নং-১৭৫৫,সুনানে দারা কুতনী, হাদীস নং-১২৩৩,মুসন্নাফ আব্দুর রাজ্জাক, হাদীস নং-২৭৯৭,মারেফাতুস সুনান ওয়াল আসার, হাদীসনং-৩৭৬৪, সুনানে কুবরা লিলবায়হাকী,হাদীস নং-২৮৯৭, মুসন্নাফ ইবনে আবীশাইবা, হাদীস নং-৩৭৭৯, মুসনাদে আবীহানীফা, হাদীস নং-২৫}
হাদীসটির ক্ষেত্রে মুহাদ্দিসীনদের বক্তব্য-
১
আল্লামা ইবনে কাসীর রহঃ বলেন, এটি মারফুর চেয়েও অধিক সহীহ। {আলআহকামুল কাবীর-২/৪৭২}
২
আল্লামা বুসিরী রহঃ বলেন, এর সনদটি বুখারী মুসলিমের সনদের মতই সহীহ। {ইতহাফুল খাইরাতিল মাহরাহ-২/১৬৮}
৩
আল্লামা কামাল ইবনে হুমাম রহঃ বলেন, মুসলিমের শর্তানুপাতে এ হাদীসটির সনদ সহীহ। {শরহে ফাতহুল কাদীর-১/৩৪৬}
৪
আল্লামা সানআনি রহঃ বলেন, অনেক সূত্রে তা বর্ণিত। এটি গ্রহণ করা আবশ্যক। {আলইদ্দাতু আলাল আহকাম-২/২৬৮}
৫
আলবানী রহঃ বলেন, হাদীসটি হাসান। {সহীহ ইবনে মাজাহ, বর্ণনা নং-৬৯৯, সহীহুল জামে, বর্ণনা নং-৬৪৮৭}
৬
আলবানী রহঃ আরো বলেন, মুসনাদে আহমদ বিন মানী এর সনদ প্রমাণিত হলে এটি সহীহ ও মাউসূল, নতুবা সহীহ সনদের মুরসাল। আর তার অনেক তুরুক রয়েছে যার একটি অপরটিকে শক্তিশালী করেছে। {আসলু সিফাতিস সালাত-১/৩৫৫}
৭
আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী রহঃ বলেন, এর অনেক তুরুক রয়েছে, যার একটি অপরটিকে শক্তিশালী করেছে। {উমদাতুল কারী-৬/১৭}
৮
আল্লামা মোল্লা আলী কারী রহঃ বলেন, এর সনদ সহীহ। {শরহে মুসনাদে আবী হানীফা, বর্ণনা নং-৩০৮}
আর উক্ত সহীহ হাদীসের উপর ভিত্তি করে আমরা বলি ইমামের পিছনে কোন কিরাত পড়বে না। চাই তা সূরা ফাতিহা হোক বা অন্য কোন সূরা। অথচ একাকি নামায পড়লে সূরা ফাতিহা না পড়লেও নামায পূর্ণ হয় না, তেমনি সূরা ফাতিহার পর অন্য সূরা না মিলালেও নামায পূর্ণ হয় না।
কুরআনে কারীমে এসেছে-
ﻭَﺇِﺫَﺍ ﻗُﺮِﺉَ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥُ ﻓَﺎﺳْﺘَﻤِﻌُﻮﺍ ﻟَﻪُ ﻭَﺃَﻧﺼِﺘُﻮﺍ ﻟَﻌَﻠَّﻜُﻢْ ﺗُﺮْﺣَﻤُﻮﻥَ [ ٧: ٢٠٤
আর যখন কোরআন পাঠ করা হয়, তখন তা শ্রবণ কর এবং নিশ্চুপ থাক যাতে তোমাদের উপর রহমত হয়। {সূরা আরাফ-২০৪} কুরআন তিলাওয়াতের সময় দুটি কাজের নির্দেশ দিয়েছেন আল্লাহ তাআলা। যথা-
১- শ্রবণ করা।
২- নিশ্চুপ থাকা।
কোন একটি বিষয় শুনার জন্য চুপ থাকতে হয়, তা সর্বজন বিদিত বিষয়। কথা বলতে বলতে কারো কথা শুনা যায় না। সুতরাং কোন কিছু শ্রবণ করতে মনযোগি হওয়া মানেই হল, তাকে চুপ থাকতে হবে, তাহলে আল্লাহ তাআলা দ্বিতীয়বার কেন চুপ থাকার কথা বললেন? শ্রবণের জন্যতো চুপ থাকা আবশ্যক। এর জবাব হল, শ্রবণ করার সম্পর্ক হল, যেসব কিরাত ইমাম সাহেব জোরে জোরে পড়েন তার সাথে। অর্থাৎ যে কিরাত শুনা যায়, তা শুন। আর যে কিরাত শুনা যায় না, ইমাম আস্তে আস্তে পড়ে থাকেন, তাহলে সেক্ষেত্রে মুসল্লি চুপ করে থাকবে। তাহলে আয়াতর শ্রবণ করা ও নিশ্চুপ থাকা উভয় বক্তব্যই যথার্থ। কোনটি অতিরিক্ত বা অযথা আনা হয়নি।
সূরা ফাতিহা ছাড়া নামায হয় না যেমন খুতবা ছাড়া জুমআ হয় না খুতবা ছাড়া জুমআ হয় না, তেমনি সূরা ফাতিহা ছাড়া নামায হয় না। কিন্তু খুতবা যেমন ইমাম পড়লেই সবার পক্ষ থেকে হয়ে যায়, সবার খুতবা পড়ার দরকার নেই। তেমনি সূরা ফাতিহা ছাড়া নামায হয় না, কিন্তু ইমাম সূরা ফাতিহা পড়লেই মুক্তাদীর সূরা ফাতিহা আদায় হয়ে যায়, তার আলাদাভাবে সূরা ফাতিহা পড়ার দরকার নেই। মুক্তাদীর আলাদা কিরাত পড়তে হয় না ইমামের কিরাত মানেই মুক্তাদীর কিরাত। যেমন ইমামের নামায শুদ্ধ হওয়া মানেই মুক্তাদীর নামায শুদ্ধ হওয়া। ইমামের নামায অশুদ্ধ হওয়া মানেই মুক্তাদীর নামায অশুদ্ধ হওয়া। যেমন ইমামের খুতবা পড়ার মানেই হল মুসল্লিদের খুতবা পড়া হয়ে যায়। আলাদাভাবে সবার খুতবা পড়ার দরকার নেই। যেমন একজন আজান দেয়ার দ্বারাই মুসল্লিদের সবার আজান দেয়া হয়ে যায়, আলাদাভাবে সবার আজান দিতে হয় না। যেমন একজন ইকামত দেয়ার দ্বারাই মুসল্লিদের সবার ইকামত হয়ে যায়, আলাদাভাবে সবার ইকামত দেয়ার দরকার নেই। তেমনি ইমামের সূরা ফাতিহা ও কিরাত পড়ার দ্বারাই মুসল্লিদের পক্ষ থেকে সূরা ফাতিহা ও কিরাত পড়া হয়ে যায়, তাই মুক্তাদীর জন্য আলাদাভাবে সূরা ফাতিহা বা কিরাত পড়ার কোন দরকার নেই।
তথ্য সূত্রঃ ahlehaqmedia.com/4937-2/
একবার রাসুলুল্লাহ (সঃ) এরূপ এক নামায হতে অবসর গ্রহণ করলেন যাতে তিনি জেহরী (আওয়াজ) কিরাআত পড়েছিলেন । অতঃপর বললেনঃ তোমাদের মধ্যে কি কেউ এখন আমার সাথে কিরাত পড়েছ ? একব্যক্তি উত্তর করলঃ জ্বি, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! তা শুনে রাসূলুল্লাহ (সঃ) বললেনঃ আমি নামাযে মনে মনে বলতেছিলাম আমার কী হল, কোরআন পড়তে আমি এরূপ টানা হেঁচড়া অনুভব করতেছি কেন ? আবূ হুরায়রা বলেন, যখন লোকেরা রাসূল (সঃ) এর মুখে এটা শুনল, তখন হতে তারা জেহরী নামাযে (ইমামের পিছনে) করাত পড়া হতে বিরত হয়ে গেল ।
— মালেক, আহমদ, আবূ দাউদ, তিরমিযী, নাসায়ী ও ইবনু মাজাহ্
ইমাম আবূ বিন হুমাইদ ও ইমাম বায়হাকী কিরাআতের অধ্যায়ে হযরত আবুল আলিয়া হতে বর্ননা করেছেন- নবী করীম (সঃ) যে সময় নামাযে কোরআন পাঠ করতেন সে সময় সাহাবাগণও (মুক্তাদি) কোরআন পড়তেন, সেহেতু উক্ত আয়াত নাযিল হয়েছিল । তৎপরে নবী করিম (সঃ) নামাযে কিরাআত পাঠ করতেন, কিন্তু মুক্তাদি সাহাবাগণ কিরাআত পাঠ করতেন না ।
— তাফসীরে দুররে মানসুরে
মুসলিম, আবূ দাউদ, নাসায়ী ও ইবনু মাজাহ হাদীস গ্রন্থে বর্ণিত আছেঃ
হযরত আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেনঃ
রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ ইমাম এজন্যই নির্ধারিত হয়েছেন যাতে তার অনুসরণ করা হয় । সুতরাং যখন ইমাম আল্লাহু আকবার বলবে তোমরাও আল্লাহু আকবার বলে এবং যখন তিনি কোরআন পড়বেন তোমরা চুপ থাকবে ।
মুসলিম শরীফে উল্লেখ হয়েছেঃ
হযরত আবূ হুরায়রা ও হযরত কাতাদা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে,
যখন (ইমাম) কিরাআত পড়ছেন, তখন তোমরা (মুক্তাদি) চুপ থাকবে । এতে মুক্তাদিগণের পক্ষে কিরাআত পাঠ করা ঠিক নয় ।
উক্ত কিতাবে আরও উল্লেখ হয়েছেঃ
হযরত আলী (রাঃ) বর্ননা করেছেন,
এক ব্যক্তি নবী করীম (সঃ)কে বললেন, আমি কি ইমামের পিছনে কিরাআত পড়ব, না চুপ থাকব ? নবী করিম (সঃ) বললেন, চুপ থাকবে । কেননা ইমামের কিরাআতই তোমার জন্য যথেষ্ট ।
মুয়াত্তায়ে ইমাম মুহাম্মদ নামক কিতাবে উল্লেখ আছে,
হযরত ইবনে হযরত ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে যে,
জনৈক ব্যক্তি তার নিকট ইমামের পিছনে কিরাআত পড়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেনঃ অর্থাৎ যখন তোমাদের মধ্যে কেউ ইমামের পিছনে নামায পড়ে, তখন ইমামের কিরাআত তার জন্য যথেষ্ট । হযরত ইবনে উমর (রাঃ) নিজেই ইমামের পিছনে কিরাআত পড়তেন না
মুসনাদে ইমাম আযম আবূ হানীফা হাদীস গ্রন্থে উল্লেখিত আছেঃ
এক রেওয়ায়েতে আছে,
এক ব্যক্তি নবী করিম (সঃ) এর পিছনে যোহর অথবা আসর নামাজে কিরাআত পাঠ করে, তখন এক ব্যক্তি ইঙ্গিতে এটা পড়তে নিষেধ করে । যখন তিনি নামায থেকে অবসর হলেন তখন বললেনঃ তুমি কি আমাকে নবী করিম (সঃ) এর পিছনে নামায পড়া থেকে বাধা প্রদান করছ ? অতঃপর উভয়ে এটা নিয়ে তর্ক করতে লাগল । এমনকি নবী করিম (সঃ) এটা শুনে ফেললেন, তখন তিনি বললেন- যে ব্যক্তি ইমামের পিছনে নামায পড়বে এই অবস্থায় ইমামের কিরাআত তার কিরাআত হবে । অর্থাৎ মুক্তাদি হিসেবে তার কিরাআত পড়বে হবে না ।
কাজেই মুক্তাদীর কোন কিরাতই পড়তে হবে না