সুরা ফাতেহা ও দরূদ শরীফ যদি 100 বার পড়া হয় ,তাহলে কার ফযীলত সবচেয়ে বেশি ? দরূদ শরীফের নাকি সুরা ফাতেহার ?
অবশ্যই দুরুদ শরীফ পাঠের ফযিলত বেশী হবে।
দলিলঃ
হজরত রসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কিয়ামতের দিন আমার সঙ্গী হওয়ার সবচেয়ে অধিক উপযুক্ত ওই ব্যক্তি যে আমার প্রতি সবচেয়ে বেশি দরুদ পাঠ করে। (তিরমিজী শরিফ)
ওই সাহাবি হতে বর্ণিত, হজরত রসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহপাকের মনোনীত কিছুসংখ্যক ফেরেস্তা রয়েছে যারা জমিনের বুকে সফর করছেন। তাদের কাজ হলো উম্মতের দরুদ আমার নিকট পৌঁছে দেওয়া। (নাসায়ী শরিফ)। হজরত
আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, রসুলসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি আমার প্রতি একবার দরুদ পাঠ করে, আল্লাহপাক তার প্রতি দশটি রহমত নাজিল করেন, তার দশটি গুনাহ মিটিয়ে দেওয়া হয় এবং তার জন্য দশটি মর্তবা বুলন্দ করা হয়। (নাসায়ী শরিফ)।
হজরত ওমর বিন খাত্তাব (রা.) বলেন, নিশ্চয় বান্দার দোয়া-মোনাজাত আসমান ও জমিনের মাঝখানে ঝুলানো থাকে, তার কোনো কিছু আল্লাহপাকের নিকট পৌঁছে না যতক্ষণ না বান্দা তোমার নবীর প্রতি দরুদ পাঠ করবে। (তিরমিজী শরিফ)।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত হজরত রসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, দরুদ শরিফের আমল কাল কিয়ামতের পুলসিরাতের অন্ধকারে আলোর কাজ করবে। যে ব্যক্তি জুমার দিন আমার প্রতি ৮০ বার দরুদ পাঠ করবে আল্লাহপাক তার ৮০ বছরের ছগিরা গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন।
হযরত আবু উমামা (রা.) হতে বর্ণিত, হযরত রসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, মানুষের যে দল কোনো মজলিসের কাজ শেষ করে আল্লাহপাকের জিকর ও দরূদ পাঠ না করে সেখানে থেকে উঠে পড়বে তাদের ওই মজলিস তাদের জন্য দুঃখ-কষ্টের কারণ হবে।
হযরত আলী (রা.) হতে বর্ণিত, হযরত রসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কৃপণ ওই ব্যক্তি যার নিকট আমার নাম উচ্চারিত হলো, কিন্তু সে আমার নাম শুনে আমার প্রতি দরূদ পাঠ করল না। (তিরমিজি শরিফ)
আব্দুল্লাহ্ বিন আমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত। তিনি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন, তিনি বলেছেন: “যখন তোমরা মুআযযিনের আযান শুনবে, তখন তোমরাও তার সাথে অনুরূপ বলবে। তারপর আমার উপর দরূদ পাঠ করবে। কেননা, যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দরূদ পাঠ করে, তার উপর আল্লাহ্ দশটি রহমত বর্ষণ করেন।” [মুসলিম: ৮৪৯]
কথায় বলে জিজ্ঞাসা বা প্রশ্ন হলো জ্ঞানের অর্ধেক। আর নিছক জানার জন্যই প্রশ্ন নয়; বরং সে জানার মর্মকে বাস্তবে রূপ দেয়ার স্বার্থেই প্রশ্ন বা জিজ্ঞাসা করতে হয়। কুরআনের মাহাত্ম বেশি না দরূদের মাহাত্ম বেশি ? এটি একটি তুলনামূলক শ্রেষ্ঠত্বের প্রশ্ন। এ প্রশ্নোত্তরের পরিণতি ফল বা উদ্দেশ্য কি হবে ? বেশি মাহাত্মের ধারক বিষয়টিকে গ্রহণ করা আর তুলনামূলক কম মাহাত্মের ধারক বিষয়টিকে সম্পূর্ণরূপে বর্জন করা ? যদি প্রশ্নোত্তর দ্বারা উদ্দেশ্য এই হয় তাহলে এ জাতীয় প্রশ্ন করা ও উত্তর প্রদান করা উভয়টিই অবিধানিক এবং নিয়মবহির্ভুত। বস্তুত পবিত্র কুরআন এবং দরূদ পাঠ উভয়টিই অতিশয় গুরুত্বপূর্ণ দুটি আমল। এ দুটি আমলের মাঝে মাহাত্মের অন্তরায় সৃষ্টি না করে সময় সুযোগমত উভয়টির উপরই আমল করা বাঞ্ছনীয়। কুরআন পাঠ পরিত্যাগ করে সম্পূর্ণরূপে দরূদ পাঠে আত্মনিয়োগ করা কিংবা দরূদ পাঠ পরিত্যাগ করে সম্পূর্ণরূপে কুরআন পাঠে আত্মনিয়োগ করা কুরআন ও দরূদের আবেদন ও আহ্বানের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। কারণ এতে আল্লাহ এবং রাসূল উভয়েরই নির্দেশনা লঙ্ঘিত হয়। আল্লাহ যেমন দরূদ পাঠ করতে বলেছেন তদ্রূপ কুরআন পাঠ করতেও বলেছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেমন দরূদ পাঠ করতে বলেছেন তদ্রূপ কুরআন পাঠের নির্দেশনাও দিয়েছেন। তাই উভয়টির উপরই আমল করতে হবে। কুরআন পাঠ ও দরূদ পাঠ উভয়টির উপর আমল করার দৃষ্টিভঙ্গি বলবৎ রেখে যদি নিছক জটিলতা নিরসন বা সমাধান লাভের সৎ উদ্দেশে প্রশ্ন করা হয়, মান ও মহত্ত্বগত দিক থেকে কুরআন ও দরূদের মধ্য হতে কোনটি অগ্রগণ্য ? তাহলে এর সাবলীলও সহজ উত্তর হলো সার্বিক বিবেচনায় মান ও মহত্ত্বগত দিক থেকে কুরআন অগ্রগণ্য। কুরআন এটা আল্লাহর বাণী। আল্লাহ তাআলার পরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অবস্থান। সুতরাং আল্লাহ তাআলার সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়টি রাসূল সংশ্লিষ্ট বিষয় থেকে অগ্রগণ্য হবে- এটা সহজেই অনুমেয়। শেকড়ের গুরুত্ব বা মান অধিক বলে কাণ্ড ও শাখাকে ফেলে দিলে শেকড়ের কোনো আবেদনই অবশিষ্ট থাকবে না। শেকড়, কাণ্ড ও শাখা প্রশাখা মিলেই একটি পূর্ণাঙ্গ মহীরুহের বহিঃপ্রকাশ ঘটে। এক্ষেত্রে মানগত প্রবেধ দাঁড় করিয়ে কোনো একটি অকেজো জ্ঞান করা কিংবা তুচ্ছ জ্ঞান করা খুবই বেমানান। চোখ কান কিংবা নাক মুখের মান বা শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে বিতর্ক করা বিজ্ঞতার পরিচয়ক নয়। প্রশ্নে দরূদ এবং সূরা ফাতেহার মহত্ত্বকে তুলনা করে প্রশ্ন করা হয়েছে। হাদীসে এক দরূদ পাঠে দশ রহমতের কথা এসেছে। তদ্রূপ কুরআনের এক বর্ণ পাঠে দশ পুণ্যের কথা এসেছে। সহজ এ পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, দরূদের তুলনায় সূরা ফাতেহার মান অধিক। কারণ এক দরূদে দশ রহমত লাভ হয়। আর এক সূরা ফাতেহা পাঠে (১২০×১০=১২০০) প্রায় বার শত পুণ্য লাভ হচ্ছে। উপরন্তু সূরা ফাতেহা হলো, পবিত্র কুরআনের মূল। স্বতন্ত্রভাবেই সূরা ফাতেহার অসংখ্য মাহাত্ম ও শ্রেষ্ঠত্ব বিবৃত হয়েছে। কুরআন হাদীসে মুমিনের প্রতিদানকে কখনো রহমত কখনো হাসানা কখনো সাওয়াব শব্দে ব্যক্ত করা হয়েছে। ওজন, দৈর্ঘ ও প্রস্থ উল্লেখ করে শব্দগুলোর মাঝে পার্থক্য সৃষ্টি করা হয় নি। সুতরাং এ কথা বলার অবকাশ নেই, রহমতের তুলনায় হাসানাহ বা সাওয়াব এর মূল্যমান কম। রহমত অর্থ দয়া, অনুগ্রহ। হাসানাহ অর্থ কল্যাণ, সুন্দর। সাওয়াব অর্থ প্রতিদান। এগুলোর সবি শব্দগত ব্যবধান। মূল মর্ম একই। ইমাম জুরজানী রহ. বলেন, সাওয়াব বলা হয় এমন বিষয়কে যার মাধ্যমে আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমত এবং মাগফিরাত ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শাফাআত প্রাপ্তির উপযুক্ততা লাভ হয়।- আলমাউসূআতুল ফিকহিয়্যাহ আলকুওয়াইতিয়্যাহ। আর হাসানাহ বলা হয় এমন বিষয়কে যার মাধ্যমে তাৎক্ষণিক লাভ হয় প্রশংসা এবং পরবর্তীতে লাভ হয় প্রতিদান।- প্রাগুক্ত। সুতরাং হাসানাহ, সাওয়াব এবং রহমতের মাঝে মৌলিকভাবে কোনো পার্থক্য নেই। তবে পূর্বসূরী উলামায়ে কেরামের মতানুসারে হাদীসে যেসব স্থান বা সময়ের সাথে বিশেষ জিকর, দুআ বা দুরূদ পাঠের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট করা হয়েছে সেসব জায়গা বা সময়ে কুরআন পাঠের তুলনায় নির্দিষ্ট সে জিকর, দুআ বা দুরূদ পাঠে রত থাকাই শ্রেয়। আরবের গবেষণা ও ফতওয়া প্রদান বিষয়ক স্থায়ী কমিটিতে এ জাতীয় একটি প্রশ্ন করা হয়েছিল। সেখান উত্তরে বলা হয়েছে, দুরূদ একটি শরীয়তসিদ্ধ বিষয়। এতে অনেক শ্রেষ্ঠত্ব ও মহত্ত্ব বিদ্যমান। তবে দরূদ পাঠ কুরআন পাঠ থেকে শ্রেষ্ঠ নয়। এবং এ দুটি আমল পারস্পারিক সাংঘর্ষিকও নয়। বস্তুত একটি অপরটির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। (কারণ পবিত্র কুরআনেই দরূদ পাঠের কথা এসেছে। অন্য দিকে যে মহান ব্যক্তি সত্তার উপর দরূদ পাঠের কথা এসেছে তিনি কুরআন পাঠ করতে বলেছেন। এবং এ কথাও বলেছেন, কুরআন পাঠ হলো, সর্বোত্তম ইবাদত।
fatwa.islamweb.net/fatwa/index.php?page...Id., http://almoslim.net/node/213622