আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ সব ভাইকে...

খলিফাতুল মুসলিমীন হযরত উমর (রাঃ) জিবনী চাই?


শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
Call

পূর্ণ নাম উমর ইবনুল খাত্তাব (আরবি ভাষায়: عمر بن الخطاب‎) শাসনকাল ২৩ আগস্ট ৬৩৪ – ৩ নভেম্বর ৬৪৪ জন্ম ৫৮৩ খ্রিষ্টাব্দ জন্মস্থান মক্কা, আরব উপদ্বীপ মৃত্যু ৩ নভেম্বর ৬৪৪ (২৬ জিলহজ ২৩ হিজরি)[২] মৃত্যুস্থান মদিনা, রাশিদুন খিলাফত দাফনস্থল মসজিদে নববী, মদিনা পূর্বসূরি আবু বকর উত্তরসূরি উসমান ইবনে আফফান পিতা খাত্তাব ইবনে নুফায়েল মা হানতামাহ বিনতে হিশাম ভাই জায়েদ ইবনুল খাত্তাব বোন ফাতিমা বিনতে খাত্তাব স্ত্রী • জয়নব বিনতে মাজুন • কুরাইবা বিনতে আবি উমাইয়া আল মাখজুমি • উম্মে হাকিম বিনতে হারিস ইবনে হিশাম • উম্মে কুলসুম বিনতে আলি • আতিকা বিনতে জায়েদ ইবনে আমর ইবনে নুফায়েল • লুহইয়াহ • ফুকাইহা পুত্র • আবদুল্লাহ ইবনে উমর • আবদুর রহমান ইবনে উমর • উবাইদুল্লাহ ইবনে উমর • জায়েদ ইবনে উমর • আসিম ইবনে উমর • ইয়াদ ইবনে উমর • আবদুর রহমান ইবনে উমর • জুবায়ের ইবনে বাক্কার (আবু শাহমা) কন্যা • হাফসা বিনতে উমর • ফাতিমা বিনতে উমর • জয়নব বিনতে উমর উমরের শাসনামলে খিলাফতের সীমানা অকল্পনীয়ভাবে বৃদ্ধি পায়। এসময় সাসানীয় সাম্রাজ্য ও বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের দুই তৃতীয়াংশ মুসলিমদের নিয়ন্ত্রণে আসে।তার শাসনামলে জেরুজালেম মুসলিমদের হস্তগত হয়। তিনি পূর্বের খ্রিষ্টান রীতি বদলে ইহুদিদেরকে জেরুজালেমে বসবাস ও উপাসনা করার সুযোগ দিয়েছিলেন। প্রথম জীবন: উমর মক্কার কুরাইশ বংশের বনু আদি গোত্রে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম খাত্তাব ইবনে নুফায়েল এবং মায়ের নাম হানতামা বিনতে হিশাম। তার মা বনু মাখজুম গোত্রের সদস্য ছিলেন। যৌবনে তিনি মক্কার নিকটে তার বাবার উট চরাতেন। তার বাবা বুদ্ধিমত্তার কারণে গোত্রে সম্মান লাভ করেছিলেন।উমর বলেছেন : "আমার বাবা খাত্তাব ছিলেন একজন কঠোর প্রকৃতির মানুষ। তিনি আমাকে দিয়ে কঠোর পরিশ্রম করাতেন। যদি আমি কাজ না করতাম তবে তিনি আমাকে মারধর করতেন এবং ক্লান্ত হওয়া পর্যন্ত কাজ করাতেন।" ইসলাম পূর্ব আরবে লেখাপড়ার রীতি বেশি প্রচলিত ছিল না। এরপরও তরুণ বয়সে উমর লিখতে ও পড়তে শেখেন। নিজে কবি না হলেও কাব্য ও সাহিত্যের প্রতি তার আগ্রহ ছিল। কুরাইশ ঐতিহ্য অনুযায়ী তিনি তার কৈশোরে সমরবিদ্যা, অশ্বারোহণ ও কুস্তি শেখেন। তিনি দীর্ঘদেহী ও শারীরিকভাবে শক্তিশালী ছিলেন। কুস্তিগির হিসেবে তার খ্যাতি ছিল।এছাড়াও তিনি একজন সুবক্তা ছিলেন। তার বাবার পরে তিনি তার গোত্রের একজন বিরোধ মীমাংসাকারী হন। উমর একজন বণিক হিসেবে বাণিজ্য শুরু করেছিলেন। তিনি বাইজেন্টাইন ও সাসানীয় সাম্রাজ্যে বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে বেশ কয়েকবার গিয়েছেন। এখানে তিনি রোমান ও পারসিয়ান পণ্ডিতদের সাথে সাক্ষাৎ লাভ করেন এবং এসব সমাজের অবস্থা সম্পর্কে তিনি অবগত হন। খিলাফতের প্রতিষ্ঠা মুহাম্মদ (সা.) এর মৃত্যুর পর খিলাফতের প্রতিষ্ঠায় উমর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। মুহাম্মদ (সা.) এর দাফনের প্রস্তুতি চলার সময় কিছু মুসলিম শহরের উপকণ্ঠে সাকিফা নামক স্থানে তার উত্তরসূরির বিষয়ে আলোচনায় বসে। এরপর আবু বকর, উমর এবং আবু উবাইদা ইবনুল জাররাহ এখানে উপস্থিত হন। এসময় আনসারদের মধ্য থেকে দাবি উঠে যে উত্তরসূরি আনসারদের মধ্য থেকে নির্বাচিত করতে হবে। উমর এই দাবি প্রত্যাখ্যান করে বলেন যে উত্তরাধিকার মুহাজিরদের মধ্য থেকে হতে হবে।কিছু গোত্র ইসলামপূর্ব গোত্রীয় নেতৃত্ব ব্যবস্থায় ফিরে যেতে ইচ্ছুক ছিল যাতে প্রত্যেক গোত্রের নেতা গোত্রকে নেতৃত্ব দিত। শেষপর্যন্ত আবু বকরকে খলিফা হিসেবে অধিক যোগ্য বলে দাবি করে তার প্রতি উমর আনুগত্য প্রকাশ করেন। এই সিদ্ধান্ত শেষপর্যন্ত সবাই মেনে নেয়। ইসলামী খিলাফতের প্রতিষ্ঠা উমরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান ধরা যায়। পৃথিবীর ইতিহাসেও এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। খলিফা হিসেবে শাসন ২২ আগস্ট আবু বকর মৃত্যুবরণ করেন। একই দিনে উমর খলিফার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। প্রাথমিক চ্যালেঞ্জ সম্পাদনা ক্ষমতাপ্রাপ্তি পর সকল মুসলিম তাকে বায়াত প্রদান করেন। তার ব্যক্তিত্বের কারণে জনতা তাকে সমীহ করত। মুহাম্মদ হুসাইন হায়কলের মতে উমরের প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল তার প্রজা ও মজলিশ আল শুরার সদস্যদের মন জয় করা। উমর বাগ্মী ব্যক্তি ছিলেন। জনগণের মনে স্থান করে নেয়ার জন্য তার এই দক্ষতা সাহায্য করেছে। শাসক হিসেবে উমর দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিতদের কল্যাণের জন্য কাজ করেছেন।ফিদাকের জমির ব্যাপারে তিনি আবু বকরের নীতির অনুসরণ করেছেন এবং একে রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি হিসেবে ব্যবহারের নীতি চালু রাখেন। রিদ্দার যুদ্ধে কয়েক হাজার বিদ্রোহী ও ধর্মত্যাগীকে দাস হিসেবে বন্দী করা হয়েছিল। উমর এসকল বন্দীদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেন এবং তাদের মুক্তির নির্দেশ দেন।এই ঘোষণা বেদুইন গোত্রগুলোর কাছে উমরের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি করেছিল। রাজনৈতিক ও বেসামরিক প্রশাসন উমরের সরকার এককেন্দ্রীক ব্যবস্থায় পরিচালিত হয়। এতে খলিফা ছিলেন সর্বোচ্চ রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষ। পুরো সাম্রাজ্যকে কয়েকটি প্রদেশে বিভক্ত করা হয়। পাশাপাশি আজারবাইজান ও আর্মেনিয়া এসব অঞ্চলের কিছু স্বায়ত্তশাসিত এলাকা খিলাফতের সার্বভৌমত্ব স্বীকার করে নেয়। প্রদেশগুলো প্রাদেশিক গভর্নর বা ওয়ালি কর্তৃক শাসিত হত। উমর ব্যক্তিগতভাবে ওয়ালিদের নিযুক্ত করতেন। প্রদেশগুলোকে বিভিন্ন জেলায় বিভক্ত করা হত। পুরো সাম্রাজ্যে প্রায় ১০০ এর মতো জেলা ছিল। প্রতিটি জেলা বা প্রধান শহর একজন অধস্তন গভর্নর বা আমিলের দায়িত্বে থাকত। আমিলরা সাধারণত উমর কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত হতেন তবে প্রাদেশিক গভর্নররাও তাদের নিয়োগ দিতে পারতেন। প্রাদেশিক স্তরে অন্যান্য অফিসাররা ছিলেন : কাতিব, প্রধান সচিব কাতিব উদ দিওয়ান, সামরিক সচিব সাহিব উল খারাজ, রাজস্ব আদায়কারী সাহিব উল আহদাস, পুলিশ প্রধান সাহিব বাইতুল মাল, কোষাগার কর্মকর্তা কাজি, প্রধান বিচারক অধিকাংশ ক্ষেত্রে ওয়ালি প্রদেশের সেনাবাহিনীর প্রধান সেনাপতি হিসেবে কর্মরত থাকলেও কিছু প্রদেশে পৃথক সামরিক অফিসার থাকত। প্রতিটি নিয়োগ লিখিত আকারে দেওয়া হত। নিয়োগের সময় গভর্নরদের জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হত। দায়িত্বগ্রহণের পর গভর্নররা জনতাকে প্রধান মসজিদে জড়ো করে তাদের সামনে নির্দেশনা পড়ে শোনাতেন। কর্মকর্তাদের প্রতি উমরের সাধারণ নির্দেশনা ছিল : “ স্মরণ রেখ, আমি তোমাকে জনগণের উপর নির্দেশদাতা ও স্বেচ্ছাচার হিসেবে নিয়োগ দিই নি। আমি তোমাকে একজন নেতা হিসেবে পাঠিয়েছি যাতে জনগণ তোমার উদাহরণ অনুসরণ করতে পারে। মুসলিমদেরকে তাদের অধিকার প্রদান কর যাতে তারা অন্যায়ে পতিত না হয়। তাদের মুখের উপর নিজেদের দরজা বন্ধ কর না যাতে ক্ষমতাশালীরা দুর্বলদের ধ্বংস করতে না পারে। এবং নিজেকে তাদের চেয়ে উচ্চ মনে হয় এমন কোনো আচরণ কর না যা তাদের প্রতি স্বৈরাচারী শাসকরা করে থাকে। ” এছাড়াও আরো কিছু বিধিনিষেধ গভর্নর ও রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তাদের উপর জারি করা হয়। প্রধান কর্মকর্তাদেরকে হজ্জের সময় মক্কায় আসতে হত এবং এসময় জনগণ তাদের বিরুদ্ধে যে কোনো অভিযোগ তুলতে পারত। দুর্নীতি রোধ করার জন্য উমর তার কর্মকর্তাদের উচ্চ বেতন দিতেন। নিজ অঞ্চলে সেনাবাহিনীর সর্বোচ্চ প্রধান থাকাবস্থায় গণিমতের সম্পদ ছাড়াও গভর্নররা বার্ষিক পাঁচ থেকে সাতহাজার দিরহাম করে পেতেন। উমরের অধীনে সাম্রাজ্যকে নিম্নোক্ত প্রদেশে বিভক্ত করা হয় : আরবকে মক্কা ও মদিনা প্রদেশে বিভক্ত করা হয়; ইরাককে বসরা ও কুফা প্রদেশে বিভক্ত করা হয়; টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস নদীর উচ্চ অংশে আল-জাজিরা প্রদেশ ছিল।; সিরিয়া ছিল একটি প্রদেশ; ফিলিস্তিনকে ইলিয়া ও রামলাহ প্রদেশে বিভক্ত করা হয়; মিশরকে উচ্চ মিশর ও নিম্ন মিশর প্রদেশে বিভক্ত করা হয়; পারস্যকে খোরাসান, আজারবাইজান ও ফারস প্রদেশে বিভক্ত করা হয়। রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তের জন্য উমর সর্বপ্রথম বিশেষ বিভাগ গঠন করেন। এই বিভাগ প্রশাসনিক আদালত হিসেবে কাজ করত এবং এর আইনি কর্মকাণ্ড উমর ব্যক্তিগতভাবে তদারক করতেন।এই বিভাগ মুহাম্মদ ইবনে মাসলামার দায়িত্বে দেওয়া হয়। গুরুত্বপূর্ণ অভিযোগগুলোর ক্ষেত্রে তিনি ঘটনাস্থল, অভিযোগ তদন্ত ও পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষেত্রে উমরের সহায়তা করতেন। কিছু ক্ষেত্রে অনুসদ্ধান কমিটির সাথে তদন্তের বিষয়ে আলোচনা করা হত। ক্ষেত্রবিশেষে অভিযুক্ত কর্মকর্তাকে মদিনায় তলব করে আদালতের সম্মুখীন করা হত। উমর তার গোয়েন্দা বিভাগের সহায়তায় কর্মকর্তাদের জবাবদিহির আওতায় আনেন। কিছু ক্ষেত্রে উমর পথপ্রদর্শকের ভূমিকা পালন করেছেন : উমর সর্বপ্রথম পাবলিক মিনিস্ট্রি প্রথা চালু করেন যেখানে সরকারি কর্মকর্তা ও সৈনিকদের রেকর্ড লিপিবদ্ধ করা থাকত। গভর্নর ও রাষ্ট্রপ্রধানদের কাছে পাঠানো চিঠির অনুলিপিও রেকর্ড হিসেবে রক্ষিত থাকত। আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য তিনি প্রথম পুলিশ বাহিনী নিয়োগ দেন। জনতা বিশৃংখল পরিস্থিতির সৃষ্টি করলে তিনি প্রথম তাদের শৃঙ্খলায় আনেন। #অসমাপ্ত

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ