নবিজী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর মা বাবা কি জান্নাতে যাবে? 

এখানে একটি বিষয় জানতে চাই? আমাদের নবিজীর নবুয়ত পাওয়ার আগেতো অন্য নবি দুনিয়াতে ছিলেন আল্লাহর পক্ষ থেকে, আর সে ছিলেন হযরত ঈসাঃ (আঃ)। তাই যদি কারো কাছে ঈসাঃ (আঃ) এর দেয়া দ্বীন এর বাণি পৌছয়,  আর তা যদি কেউ মানে, তাহলে কি জান্নাতে যাবেনা? 

নাকি হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর মা বাবা অন্য কোন ধর্মের অনুসারী ছিলেন? আমরা জানি যে, আগের সব নবি মূলত ইসলামই প্রচার করে গেছেন,  এক আল্লাহর কথাই বলতেন।


শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
Call

হা অবশ্যই তারা উভয়েই জান্নাতে যাবে। 

রাসূল সাঃ এর বাবা মা ঈসা আঃ এর

 ধর্মে বিশ্বাসী ছিলেন। তিনারা আল্লাহ

 কে এক বলেই স্বীকার করতেন।

 মুর্তি পুজা ইত্যাদি করতনা।

 অবশ্য সেটা ছিল খ্রিষ্ট ধর্ম।

 ইসলাম ধর্ম আসার পর সেটি বাতিল হয়ে যায়। 

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ
jinkuuu

Call

রাসুলুল্লাহ صلى الله عليه و آله وسلم এর পিতা-মাতা ইমানদার ছিলেন-

অত্যন্ত আফসোস ও দু:খজনক ব্যাপার না বললেই নয় বিধর্মীরা যেখানে ইসলাম নিয়ে তামাশা আর বিরোধীতা করছে তেমনি কিছু নামধারী মুসলিম (ওহাবী,আহলে আহলে হাদিস) প্রচার করছে রাসুল (দুরুদ) এর সম্মানিত পিতা মাতা নাকি ইসলাম কবুল করেন নি তাই ইমান ছাড়া দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন তাই জান্নাতী নয়। (নাউজুবিল্লাহ)

♦এ আয়াত থেকে প্রমানিত হয়েছে যে আদম (আ) থেকে হযরত আব্দুল্লাহ (রা) পর্যন্ত (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর) সকল পুর্বপুরুষই মুমিন ছিলেন (যাদের পৃষ্ঠের মাধ্যমে তিনি স্থানান্তরিত হয়েছিলেন)।
Reference :-
তফসিরে - মাদারিক


♦আমি প্রতিটি যুগে মানবজাতির সর্বস্থরের সর্বশ্রেষ্ঠ বংশে আবির্ভুত হয়েছি।
Reference :-
বুখারী : সিফাতুন্নবী (সা) অধ্যায়

♦আল্লাহ তায়ালা ধারাবাহিকভাবে পবিত্র  পৃষ্ঠদেশ ও পবিত্র গর্ভে স্থানান্তরিত করে ভু-পৃষ্ঠে আমার বরকতয় আবির্ভাব ঘটিয়েছেন।
Reference :-
ইমাম কাজী আয়াজ(রহ) : কিতাবুশ শিফা
♦হযরত আদম(আ) এর যুগ থেকে আজ পর্যন্ত আমার পিতা-মাতাও পুর্বপুরুষগনের  ওরসে পবিত্র নিকাহের মাধ্যমেই আমার আগমন হয়েছে। অপবিত্র 'সিফাহ' এর মাধ্যমে নয়। আমার পিতৃপুরুষগন আজীবন সিফাহ থেকে পবিত্র ছিলেন।
Reference :-
ইমাম তাবারানী (রহ) : তাবারানী শরীফ

♦হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস(রাঃ) বলেন একদিন নবী কারীম সাল্লাল্লাহুয়ালায়হি ওয়া সাল্লাম এর খেদমতে আরজ করলাম-“ইয়া রাসুলাল্লাহ(সাল্লাল্লাহুয়ালায়হি ওয়া সাল্লাম) হযরত আদম(আঃ) যখন জান্নাতে ছিলেন, তখন আপনি কোথায় ছিলেন”? হুজুর পুরনুর (সাল্লাল্লাহুয়ালায়হি ওয়া সাল্লাম) মুচকি হাসি দিয়ে বললেন – “আদমের ঔরসে(পৃষ্ঠে)। তারপর হযরত নূহ(আঃ) তাঁর ঔরসে আমাকে ধারণ করে নৌকায় আরোহণ করেছিলেন। তারপর হযরত ইব্রাহিম(আঃ) এর পৃষ্ঠ দেশে । তারপর পবিত্র(ঈমান্দার) পিতা মাতাগনের মাধ্যমে আমি পৃথিবীতে আগমন করি। আমার পূর্ব 

♦আপন বংশ পরিচয় নিজ জবানে ইরশাদ করেছেন," আমি হলাম মুহাম্মদ ইবনে আব্দিল্লাহ ইবনে আব্দিল মুত্তালিব ইবনে হাশেম ইবনে মান্নাফ। এইভাবে কখনো "আদনান " পর্যন্ত নিজের বংশ সুত্র বর্ননা করেছেন।

♦হযরত আব্দুল্লাহ' ওনার নামের অর্থ হল :- ""আল্লাহর বান্দা"" আর মাতা আমেনা ওনার নামের আভিধানিক অর্থ হল:- বিশ্বস্ত, আমানতদার,আল্লাহর উপর ভরসা কারীনী,সংরক্ষীতা।সুবাহানাল্লাহ এর দারা কি বুঝলেন?
তাদের নামেই ইমানদার এর পরিচয় পাওয়া যায় শুধু তাই নয় যারা এই নাম রেখেছেন তারাও নিশ্চয় ইমানদার ছিলেন তা না হলে এমন পবিত্র নাম কিভাবে রাখলেন?

♦আদম (আ) এর ঔরস হতে মাতা হাওয়া (আ) এর পবিত্র গর্ভে ২০ বার জমজ বাচ্চা জন্ম হয় কিন্তু শীস (আ) একক ভাবে জন্মগ্রহণ করেন।কারন তিনি ছিলেন নুরে মুহাম্মদীর ধারক ও বাহক। এই নুরে মুহাম্মদী হযরত শীস (আ) এর কপালে উজ্জল ও দিপ্তীমান ছিল।আল্লাহ পাক আদম(আ) নুরে মুহাম্মদীর কথা জানিয়ে দিলেন।

আদম(আ) এর ওফাতের পর হযরত শিস(আ) সমস্ত আদম সন্তানের অবিভাবক হলেন। অত:পর আল্লাহ ওনাকে ওহীর মাধ্যমে নির্দেশ দিলেন তিনি যেন তার সন্তান " আনুশ (আ) " কে অবিভাবক ঘোষনা করেন।
তিনি "আনুশ(আ)" কে খলিফা নিযুক্ত করে আদম(আ) এর উপদেশ অনুসারে তাকে বললেন,"" এ নুর মুবারককে নিয়ে কখনও কোন অবিত্র নারীর সংস্পর্শে যাবে না; বরং সব সময় যেকোন অবস্থাতে এ "নুর" মুবারক এর পবিত্রতা রক্ষা করে চলবে।"
পরবর্তীতে প্রতিটি যুগে এ নুরের বাহকগন বংশানুক্রমে এ "ওসীয়ত" রক্ষা করেছেন।

Reference :-
★মাওয়াহিবে লাদুনিয়াহ
★সিরাতে মুহাম্মদীয়া

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ
Call

আসলে এ বিষয়টি নিয়ে কথা না বলাই সবচে’ উত্তম হবে। এটি জানা ও না জানা আমাদের ঈমানের পূর্ণতা বা অপূর্ণতার কোন সম্পর্ক নেই। হাশরের ময়দানেও এ ব্যাপারে আমাদের কোন জিজ্ঞাসা করা হবে না। এটি খুবই নাজুক একটি আলোচনা। কি প্রয়োজন এ অপ্রয়োজনীয় বিষয়ে নাক গলানোর?

সবচে’ উত্তম হল এ বিষয়  চুপ থাকা। আল্লাহ তাআলাই ভাল জানেন তাদের হালাত কি? এ বিষয়ে নিশ্চুপ থাকাই সবচে’ নিরাপদ পদ্ধতি। বিজ্ঞ উলামাগণ এ ব্যাপারে তাই চুপ রয়েছেন। আর চুপ থাকাকেই নিরাপদ বলে আখ্যায়িত করেছেন। এমনকি এ ব্যাপারে কথা বলাকে নাজায়েজও বলেছেন অনেকে। [রাদ্দুল মুহতার-২/১৮৫, কাফেরকে বিবাহ করার অধ্যায়, ফাতাওয়া রহিমীয়া-৩/৫২, আপকি মাসায়েল আওর উনকা হল-১/৭২}

তারপরও যেহেতু কিছু ভাই এ বিষয়ে বারবার বক্তব্য দিচ্ছেন। এটিকে মূল বানিয়ে মানুষের সামনে এ বিষয়টি নিয়ে আসছেন। তাই বাধ্য হয়ে আমরাও দু’কলম লিখতে বাধ্য হলাম। বাকি আল্লাহ তাআলার কাছে অযথা কথন ও লিখনের গোনাহ থেকে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। [বিস্তারিত- রদ্দুল মুহতার-৩/১৮৫, ৪/২৩১, হাওয়ী লিলফাতওয়া-২/২০২}

মূল মাসআলা

আসলে এ বিষয়ে ৫টি মত রয়েছে। যথা-

১–

জাহান্নামী।

যেহেতু তারা ঈমান আনতে পারেননি। [আল্লাহ তাআলা আমাদের এসব কথা বলা থেকে হিফাযত করুন!]

তারা মাজুর। তাই তাদের উপর জাহান্নামের শাস্তি আসবে না।

مَّنِ اهْتَدَىٰ فَإِنَّمَا يَهْتَدِي لِنَفْسِهِ ۖ وَمَن ضَلَّ فَإِنَّمَا يَضِلُّ عَلَيْهَا ۚ وَلَا تَزِرُ وَازِرَةٌ وِزْرَ أُخْرَىٰ ۗ وَمَا كُنَّا مُعَذِّبِينَ حَتَّىٰ نَبْعَثَ رَسُولًا [١٧:١٥]

যে কেউ সৎপথে চলে,তারা নিজের মঙ্গলের জন্যেই সৎ পথে চলে। আর যে পথভ্রষ্ট হয়,তারা নিজের অমঙ্গলের জন্যেই পথ ভ্রষ্ট হয়। কেউ অপরের বোঝা বহন করবে না। কোন রাসূল না পাঠানো পর্যন্ত আমি কাউকেই শাস্তি দান করি না। [সূরা ইসরা-১৫]

যেহেতু ঈসা আঃ এর পর রাসূল সাঃ এর আগমনের পূর্ব মুহুর্তে কোন নবী ছিলেন না। তাই এ সময়ে যারা ইন্তেকাল করেছেন তারা জাহান্নামী হবেন না।

৩-

কিয়ামতের ময়দানে তাদের পরীক্ষা করা হবে। সঠিক জবাব দিতে পারলে জান্নাতী হবেন। আর সঠিক জবাব দিতে না পারলে জাহান্নামী হবেন।

৪-

রাসূল সাঃ নবুওয়ত পাবার পর তাদের উভয়কে আবার জিন্দা করা হয়। তখন তারা উভয়ে ঈমান আনয়ন করেন। তারপর আবার ইন্তেকাল করেন।

৫-

ইমাম রাজী রহঃ বলেন, রাসূল সাঃ এর পিতা মাতা মূলত মিল্লাতে ইবরাহীমীর উপর ইন্তেকাল করেছেন। তারা মুর্তিপূজা করেছেন মর্মে কোন প্রমাণ নেই। তাই তারা জান্নাতী হবেন। তাদের নামও প্রমাণ করে তারা মুশরিক ছিলেন না।

যারা জাহান্নামী হবার দাবি করেন। তাদের দলীল হল মুসলিম, আবু দাউদ ও মুসনাদে আহমাদের হাদীস। যাতে নবীজী সাঃ এর পিতামাতার জন্য নবীজী সাঃ এর দুআ করতে নিষেধ করা হয়েছে। এবং রাসূল সাঃ এক সাহাবীর পিতা সম্পর্কে মন্তব্য করে বলেছেন যে, আমারও তোমার পিতা জাহান্নামী।

এ হাদীসের জবাব হল, এটি রাসূল সাঃ বলেছেন তার পিতামাতার আসল হালাত সম্পর্কে তখন তিনি জানতেন না, তাই বলেছেন। আসলে তারা জান্নাতী। {রদ্দুল মুহতার, মুরতাদ অধ্যায়-৪/২৩১]

আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ুতী রহঃ এ বিষয়ে আলাদা ৪টি পুস্তিকা লিখেছেন। ৯টি প্রবন্ধ লিখেছেন। যাতে তিনি প্রমাণ করেছেন যে, রাসূল সাঃ এর পিতা মাতা জান্নাতী। জাহান্নামী নয়।

রাসূল সাঃ এর পিতামাতা জান্নাতী জাহান্নামী বিষয়ে কথা বলা জায়েজ নয়!

রাসূল সাঃ কে কষ্ট দেয়া হারাম। এতে কোন সন্দেহ নেই। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন-

إِنَّ الَّذِينَ يُؤْذُونَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ لَعَنَهُمُ اللَّهُ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ وَأَعَدَّ لَهُمْ عَذَابًا مُّهِينًا [٣٣:٥٧

যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলকে কষ্ট দেয়, আল্লাহ তাদের প্রতি ইহকালে ও পরকালে অভিসম্পাত করেন এবং তাদের জন্যে প্রস্তুত রেখেছেন অবমাননাকর শাস্তি। {সূরা আহযাব-৫৭}

আর রাসূল সাঃ মাতা পিতাকে জাহান্নামী বললে কি রাসূল সাঃ খোশ হবেন? এতে কি রাসূল সাঃ কষ্ট পাবেন না। বরং অসহনীয় কষ্টের বিষয় পিতামাতাকে জাহান্নামী বলায়। তাই একাজটি করা জায়েজ নয়। এ আলোচনা জায়েজ নয়।

না এটি আমাদের ঈমানের অংশ। না এ ব্যাপারে আখেরাতে জিজ্ঞাসিত হবো। তাহলে কেন এ নাজুক বিষয় নিয়ে অহেতুক আলোচনার অবতারণা করা হচ্ছে। যারা করছে তাদের মাকসাদ কি? কিছু নতুন মাসআলা বলতে পারাই কি ক্রেডিট? দুনিয়াতে আর কোন বিষয় নেই? এরকম নাজুক বিষয় নিয়ে কেন অযাচিত আলোচনার সূত্রপাত করছেন আমাদের কথিত আহলে হাদীস ভাইয়েরা?

আল্লাহ তাআলা আমাদের এসব অপ্রয়োজনীয় ও নাজুক বিষয়ে অহেতুক আলোচনা থেকে মুক্ত থেকে তার বন্দেগী করার তৌফিক দান করুন। আমীন।

উত্তর লিখনে

লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ