শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে

পেয়ারা গাছের পাতায় সাদা তুলার মতো, যার কারনে পেয়ারা নষ্ট হয়ে যায়।

*সমাধান: ১. আক্রমণের মাত্রা কম থাকা অবস্হায় আক্রান্ত স্হান পাতলা কাপড় কেরোসিন বা পেট্রোল দিয়ে মুছে দিলে এ পোকার আক্রমণ রোধ করা যায়। ২. আক্রান্ত পাতা, ডগা, ফুল ও ফল সংগ্রহ করে মাটিতে পুঁতে ফেলে এ পোকা দমন করা যায়। ৩. আক্রমণের মাত্রা বেশি হলে ডায়াজিনন ৬০ ইসি ২ মিলি/লি বা মারশাল ২০ ইসি ২ মিলি/লি হারে পানির সাথে মিশিয়ে ১০ থেকে ১২ দিন পর পর ২ থেকে ৩ বার স্প্রে করে অতি সহজেই এ পোকা দমন করা যায়।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ
Call

ন্যান্য ফসলের মতো পেয়ারাও প্রায় নানা রকমের পোকা দ্বারা আক্রান্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ দেশে অন্তত পাঁচ রকমের পোকা পেয়ারা ফল ও গাছের ক্ষতি করে বলে জানা গেছে। এগুলো হলো সাদা মাছি বা হোয়াইট ফ্লাই, ফল ছিদ্রকারী পোকা বা ফলের মাছি, ছাতরা পোকা, জাব পোকা ও কাণ্ডের মাজরা পোকা। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে ফলের মাছি ও ফল ছিদ্রকারী পোকা। ফল ছিদ্রকারী পোকা আক্রমণ করে কাঁচা অবস্খায় আর পাকার সময় আক্রমণ করে ফলের মাছি। ফল ছিদ্রকারী পোকার আক্রমণ হলে ফলের গায়ে কোথাও না কোথাও ছিদ্র হয়, ফল বিকৃত হয়ে যায়, ছিদ্রের মুখ দিয়ে পোকার মল পড়তে থাকে। কিন্তু ফলের মাছি পোকা আক্রমণ করলে গায়ে কোনো ছিদ্র হয় না, ফলও বিকৃত হয় না, রঙও ঠিক থাকে। শুধু ভেতরটা নষ্ট হয়ে যায়। অবশ্য খুব খেয়াল করলে মাঝে মধ্যে ফলের গায়ে তিলের মতো ক্ষুদ্র কোনো ক্ষত বা দাগ চোখে পড়ে। এর অর্থ ওখানে পেয়ারার খোসায় সূক্ষ্ম ছিদ্র করে সেখানে ফলের মাছি পোকা ডিম পেড়েছে। পেয়ারা যখন পাকতে শুরু করে তখন তার গন্ধে ফলের মাছি পোকা আকৃষ্ট হয়। বর্ষাকালে সাধারণত এদের আক্রমণ শুরু হয়।  

সমন্বিত ব্যবস্খাপনা পেয়ারা বাগান নিয়মিত পরিদর্শনে যেতে হবে। বিশেষ করে পেয়ারা ডাসা হওয়া শুরু করলে রোজই একবার গিয়ে গাছের তলায় দেখতে হবে। কোনো পেয়ারা সেখানে পড়ে থাকলে ছুরি দিয়ে দোফালা করে পোকার আক্রমণ হয়েছে কি না তা পরীক্ষা করতে হবে। যদি ঝরে পড়া পেয়ারা না পাওয়া যায় তাহলে গাছে পেকে ওঠা বা রঙ ধরা পেয়ারা দু-একটা ছিঁড়ে কেটে তার ভেতরটা পরীক্ষা করে দেখতে হবে। পোকার আক্রমণ দেখা গেলে দেরি না করে বাকি কাঁচা ফলগুলোকে ফলের মাছি পোকার আক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করার ব্যবস্খা নিতে হবে। এ অবস্খায় ম্যালথিয়ন ৫৭-ইসি বা ফেনিট্রথিয়ন প্রতি ১০ লিটার পানিতে ১০ মিলিলিটার পরিমাণ মিশিয়ে গাছে স্প্রে করতে হবে। গাছের নিচে ঝরে পড়া কোনো ফল রাখা চলবে না। 

তবে প্রথম থেকেই পেয়ারা বাগানে ধারাবাহিকভাবে কিছু কাজ করলে বাগানে আর এ পোকার আক্রমণ হয় না। যেমন- বর্ষাকালে পাকে এমন জাতের পেয়ারা না লাগিয়ে আগাম জাতের পেয়ারা লাগানো ভালো। অথবা গ্রীষ্ম-বর্ষায় ফল না নিয়ে শীতকালে ফল নেয়া যেতে পারে। এ জন্য ফুল ও ফল ছাঁটাই করে এ মৌসুমে গাছে কোনো ফল ধরতে না দিলে সেসব গাছে শীতে ফল ধরবে। শীতকালে এ পোকার আক্রমণ তেমন হয় না। 



পেয়ারাগাছে সেক্স ফেরোমন ফাঁদ ঝুলিয়েও এ পোকা নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে। সাদা বা হলুদ রঙের বয়াম বা থালা দিয়ে এ ফাঁদ বানানো যেতে পারে। পাত্রের নিচে থাকবে সাবান-পানি আর ওপরে একটা তারে সামান্য তুলা গুটি করে ঝুলিয়ে দিতে হবে। তুলার গুটিতে সেক্স ফেরোমন মিথাইল ইউজিনল ভিজিয়ে দিতে হবে। একটা তুলার গুটি ভেজানোর জন্য ৪ মিলিলিটার ফেরোমনই যথেষ্ট। এক একর পেয়ারা বাগানে এরূপ ফাঁদ ১ থেকে ২টি পাততে পারলেই যথেষ্ট। এসব ফাঁদে পেয়ারা মাছি পোকার পুরুষ পোকারা আকৃষ্ট হয়ে আটকা পড়ে মরে। ফলে বাগানে এ পোকার আক্রমণ অনেক কমে যায়। ফাঁদের সাদা বা হলুদ রঙ মাছি পোকাদের খুব আকৃষ্ট করে। তাই এ রঙের ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার করে আটকা পড়ার হার বাড়ে। মাটি থেকে ৫ ফুট বা প্রায় দেড় মিটার উঁচুতে পেয়ারা গাছের ডালে এ ফাঁদ ঝুলিয়ে দেয়া যায়। এ দেশের বাজারে এখন সেক্স ফেরোমন ফাঁদ পাওয়া যাচ্ছে। 

সেক্স ফেরোমন ফাঁদ পাততে না পারলে একটা মাটির সানকিতে পাকা পেয়ারার ১০০ গ্রাম পরিমাণ শাঁস পিষে কাই করে তার ভেতরে ১২ ফোঁটা ডিপটেরক্স বা গìধ কম এমন যেকোনো কীটনাশক মিশিয়ে বিষ ফাঁদ তৈরি করে ব্যবহার করা যায়। সে ফাঁদে পুরুষ ও স্ত্রী উভয় মাছিই আটকা পড়ে। এ ফাঁদও ফেরোমন ফাঁদের মতো গাছে ঝুলিয়ে দেয়া যেতে পারে বা মাটিতে বাঁশের খুঁটি পুঁতে তাতে বেঁধে দেয়া যেতে পারে। 

পেয়ারা গাছে যাতে এ পোকার আক্রমণ না হয় সে জন্য ফুল আসার মুহূর্ত থেকে তিনবার স্প্রে করে এ পোকার আক্রমণ প্রতিহত করা যেতে পারে। ফুল আসার মাস দেড়েক পর থেকে স্প্রে করা শুরু করতে হবে। প্রতি এক মাস পরপর মোট তিনবার গাছ ও ফলে কীটনাশক স্প্রে করতে হবে। ম্যালথিয়ন ৫৭-ইসি বা ফেনিট্রথিয়ন প্রতি ১০ লিটার পানিতে ১০ মিলিলিটার পরিমাণ মিশিয়ে গাছে স্প্রে করতে হবে। তবে কীটনাশক দেয়ার পর সপ্তাহ খানেকের মধ্যে কোনো পেয়ারা তোলা যাবে না।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ