আপনি একটি ফুটবলের উপর পানি ঢাললে সেগুলো নিচে পড়ে যাবে, আপনার প্রশ্ন "পৃথিবীর ক্ষেত্রে এমনটা হয়না কেনো?"।
এক কথায় উত্তরটা হলো পৃথিবীর "Gravity" বা "অভিকর্ষ বল" সমুদ্রের পানিকে সকল পৃষ্ঠে প্রায় সমানভাবে কেন্দ্রের দিকে আকর্ষণ করে।
ফুটবলেরও গ্রাভিটি আছে, এটিও পানিকে নিজ কেন্দ্রের দিকে আকর্ষণ করে। কিন্তু পৃথিবীর ভর যেহেতু ফুটবলের ভরের চেয়ে বেশি তাই পৃথিবীর অভিকর্ষ বলও ফুটবলের অভিকর্ষ বলের চেয়ে অনেক বেশি।
পৃথিবীর অভিকর্ষ বলের প্রভাব নেই এরকম স্থানে ফুটবলটি নেয়া হলে পানিগুলো গড়িয়ে না পড়ে ফুটবলের চারপাশে সমানভাবে ছড়িয়ে পড়বে (শর্ত থাকে যে পানির ভর ফুটবলের ভরের চেয়ে কম হতে হবে)।
পৃথিবীর ক্ষেত্রে আপনার কনফিউশন সৃষ্টির কারণ আপনি পৃথিবীর উপর-নিচ হিসেব করছেন। বাস্তবে পৃথিবীর কোনো উপরের দিক বা নিচের দিক নেই।
আমরা জানি ভর থাকলেই পদার্থের আকর্ষণী শক্তি (AKA অভিকর্ষ বল) থাকবে। সমুদ্রের পানির ভরের চেয়ে পৃথিবীর ভর বেশি। তাই সমুদ্রের পানি পৃথিবীর অভিকর্ষ বলের নিকট বন্দি। পৃথিবীর আশেপাশে এমন কোনো গ্রহ নক্ষত্র নেই যার অভিকর্ষ বল পৃথিবীর চেয়ে বেশি, যেগুলো আছে সেগুলো বহু দূরে অবস্থিত। যদি কাছাকাছি তুলনামূলক বেশি ভরের তথা অধিক অভিকর্ষ বল বিশিষ্ট গ্রহ-নক্ষত্র থাকতো তাহলে সমুদ্রের পানি এবং পৃথিবী স্বয়ং উক্ত গ্রহ বা নক্ষত্রে পতিত হতো।
সূর্য দূরে অবস্থিত হলেও এর শক্তিশালী অভিকর্ষ বলের সামান্য প্রভাব ১৫ কোটি কিলোমিটার পেরিয়ে পৃথিবীর সমুদ্রের উপর সামান্য প্রভাব বিস্তার করে। একইভাবে চাঁদ ছোট হয়েও কাছাকাছি থাকার কারণে এর অভিকর্ষ বলও সমুদ্রের পানিকে মৃদুভাবে আকর্ষণ করে।
চাঁদ-সূর্যের এই প্রভাবের কারনেই জোয়ার ভাটা সংঘটিত হয়।
বোঝার সুবিধার্থে আরেকটি উদাহরণ দিচ্ছি- একটি গোলাকার চুম্বক একগাদা লোহাড় গুড়োর মাঝে রেখে উঠিয়ে নিন, দেখবেন চুম্বকের চারপাশেই সমান পরিমাণ লোহার গুড়ো লেগে আছে। ঠিক এরকম ঘটনাই পৃথিবী এবং সমুদ্রের পানির ক্ষেত্রে ঘটে, পার্থক্য শুধু এটুকুই যে চৌম্বক বল অভিকর্ষ বলের চেয়ে বহুগুণ বেশি শক্তিশালী।
এখন উক্ত চৌম্বকের নিকট আরেকটি বড় এবং অধিকতর শক্তিশালী চৌম্বক নিয়ে আসলে দেখা যাবে লোহাড় গুড়া সমেত ছোট চুম্বকটি বড় চৌম্বকে পতিত হচ্ছে।
পৃথিবীর আশেপাশে এরকম কোনো বড় চৌম্বক তথা গ্রহ-নক্ষত্র নেই বলেই সমুদ্রের পানি গড়িয়ে পড়েনা।
কোনো অংশ বুঝতে সমস্যা হলে মন্তব্যে জানাবেন।