শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে

হিন্দু ধর্মের মতে পরকাল বলতে কিছু নেই........তাদের ৭ বার জন্ম মৃত্যু হয়।অর্থাত এখন আপনি মানুষ হয়ে রয়েছেন।মৃত্যুর পরে অন্য কোনো প্রানি হয়ে আবার জন্ম গ্রহন করবেন।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ
Call

উপনিষদে জন্মান্তরবাদের কথা বলা হয়েছে। হিন্দু ধর্মগ্রন্থসমূহের মধ্যে অন্যতম ভগবদ গীতায়, পরকাল সম্পর্কে বিস্তারিত বলা হয়েছে। এখানে কৃষ্ণ বলেছেন যে, মানুষ যেমন তার পুরনো কাপড় ছেড়ে নতুন কাপড় পরিধান করেন, আত্মাও তেমনি তার পুরনো দেহ পরিত্যাগ করে নতুন দেহ গ্রহণ করে। হিন্দু ধর্মে বিশ্বাস করা হয়, দেহ একটি খোলসের মত, এর ভিতরের আত্মা অপরিবর্তনীয় এবং অবিনশ্বর, এবং এই আত্মা জন্ম মৃত্যুর চক্রে ভিন্ন দেহ ধারণ করে থাকে। এই চক্রের সমাপ্তিকে মুক্তি বা মোক্ষ বলা হয় যেখানে এই আত্মা ঈশ্বরের সাথে মিশে যায়।


গরুড় পুরাণেও মৃত্যুর পর ব্যক্তির সাথে কি ঘটে উল্লেখ করা হয়েছে। এখানে বলা হয়, যখন ব্যক্তির মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে আসে তখন মৃত্যুর দেবতা যম তার যমদূতদেরকে ব্যক্তির দেহ থেকে তার আত্মাকে নিয়ে আসতে পাঠান। উক্ত ব্যক্তির সকল ভাল ও মন্দ কাজের হিসাব যমের সহকর্মী চিত্রগুপ্ত লিখে রাখেন। গরুড় পুরাণ মতে আত্মা দেহ ত্যাগ করার পর দক্ষিণ দিকে একটি দীর্ঘ এবং অন্ধকার সুড়ঙ্গপথ পাড়ি দেয়। এজন্য মৃৎ ব্যক্তির দেহের পাশে একটি তেলের বাতি জ্বালিয়ে রাখা হয়, যাতে সুড়ঙ্গপথ আলোকিত হয় এবং মৃতব্যক্তির আত্মা স্বাচ্ছন্দে যেতে পারে।


পূর্বজন্মের কর্মের উপর নির্ভর করে পরের জন্মে আত্মা কোন দেহ নিয়ে জন্মগ্রহণ করবে। পূর্বজন্মে যদি কেউ পাপ কাজ করেন তাহলে পরের জন্মে তিনি পশু বা অন্য কোন নিম্নশ্রেণী জীবদেহে পুনর্জন্ম লাভ করবেন, যদি তিনি ভাল কাজ করেন তাহলে পরের জন্মে তিনি একটি ভাল পরিবারে মানুষ হিসেবে জন্মগ্রহণ করবেন এবং সুখী জীবন পাবেন। এই দুই জন্মের মাঝে ব্যক্তি তার অসৎ কর্মের জন্য নরকে শাস্তি ভোগ করেন এবং সৎ কাজের জন্য স্বর্গে প্রশান্তি উপভোগ করেন। যখন ব্যক্তির শাস্তি বা পুরষ্কার ভোগের সময়কাল শেষ হয়ে যায় তখন তাকে পুনরায় পৃথিবীতে পাঠানো হয় যাকে "মৃত্যুলোক"ও বলা হয়। আর এভাবে বারবার জন্মমৃত্যুর মধ্য দিয়ে ব্যক্তি জীবনের একটি চক্রে ঘুরপাক খেতে থাকে যা থেকে কেবল মোক্ষের মাধ্যমেই তার মুক্তি ঘটতে পারে।


হিন্দুদের চূড়ান্ত উদ্দেশ্য হল মোক্ষলাভ করা যা বেদ অনুসারে জ্ঞানযোগ এবং ভগবতগীতা অনুযায়ী কর্মযোগ ও ভক্তিযোগের মাধ্যমেই অর্জন করা সম্ভব। জ্ঞানযোগ বলতে উপনিষদে এবং যোগসূত্রে উল্লিখিত সন্ন্যাসজীবনে গিয়ে ধ্যানের মাধ্যমে সমাধি অর্জনকে বোঝায়, জ্ঞানযোগ অনুসারে জগতের সবকিছুকে মায়া বা বিভ্রম হিসেবে চিন্তা করা হয় এবং এখানে ব্রহ্ম বা ঈশ্বরকেই একমাত্র সত্য ভাবা হয়। কর্মযোগ অনুসারে কর্মফলের আশা ত্যাগ করা এবং স্বত্তাভিমান ত্যাগ অর্থাৎ নিজেকে কোন কাজের কর্তা না ভেবে কর্ম করে যাওয়াকে কর্মযোগ বলা হয়। ভক্তিযোগ অর্থ হল নিজেকে ঈশ্বরের উপর সমর্পন করা এবং সবসময় ঈশ্বরের কথা চিন্তা করা। এই তিনটি পথের দ্বারা মোক্ষলাভ সম্ভব হয়, অর্থাৎ ঈশ্বরের সাথে আত্মার মিলন সম্ভব হয়। উল্লেখ্য বিশিষ্টাদ্বৈতবাদ নামে একটি বেদান্ত দর্শন অনুসারে ভক্তিযোগ ছাড়া কেবল জ্ঞানযোগ এবং কর্মযোগের মাধ্যমেই ঈশ্বরের সাথে মিলন সম্ভব নয়। হিন্দুধর্মের কোথাও এই মোক্ষকে চরম আনন্দের অবস্থা হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে, কোথাও দুঃখ থেকে মুক্তির অবস্থা হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে, আবার কোথাও আনন্দ, দুঃখ থেকে শুরু করে সকল প্রকার আবেগ মুক্ত একটি অবস্থা হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। ভগবদ গীতা অনুসারে আত্মা কখনও মরে না, শুধু মাত্র শরীরের মৃত্যু হয় যা পাঁচটি উপাদান - ক্ষিতি (মাটি), অপ (পানি), তেজ (আগুন), মরুৎ (বায়ু), ব্যোম (আকাশ) এর সমষ্টি। এই পাঁচটি উপাদানকে পঞ্চভূত বলা হয়। এই পাঁচটি উপাদানের কোনটাই আত্মার কোন ক্ষতি বা আত্মাকে প্রভাবিত করতে পারে না। গরুড় পুরাণে বিভিন্ন ধরণের স্বর্গ ও নরকের বর্ণনা দেয়া আছে। পৃথিবীতে কৃতকাযের উপর ভিত্তি করে কোন স্বর্গ বা নরক প্রাপ্তি হবে তা ঠিক হয়।


হিন্দুরা "কর্ম"তে বিশ্বাস করেন। কর্ম হল ব্যক্তির মোট ভাল ও মন্দ কাজের সমষ্টি। সৎকর্ম দ্বারা ভাল কাজ ও বিকর্ম দ্বারা মন্দ কাজ বোঝায়। হিন্দুধর্ম অনুসারে কর্মের মূল ধারণাটি হল "যেমন কর্ম, তেমন ফল"। সুতরাং, ব্যক্তি যদি একটি সৎ জীবন যাপন করেন তাহলে তিনি পরকালে পুরষ্কৃত হবেন। যদি অসৎ জীবন যাপন করেন তবে পরজন্মে সেই অসৎকর্ম প্রতিফলিত হবে। সৎকর্মে পুরষ্কার এবং বিকর্মে খারাপ ফল জোটে, এবং এখানে কোন ধরণের বিচার নেই। ব্যক্তি তার জীবদ্দশায় তার কর্ম এবং এমনকি চিন্তার দ্বারাও কর্ম সংগ্রহ করেন। ভগবদ গীতা অনুসারে, অর্জুন কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে তার আত্মীয় স্বজনকে হত্যা করতে দ্বিধা বোধ করছিলেন। তখন কৃষ্ণরূপে ঈশ্বর অর্জুনকে বলেন, "তুমি কি বিশ্বাস করো যে তুমি এই কাজের কর্তা? না। তুমি আমার হাতের নিছক একটি যন্ত্র। তুমি কি মনে করো যে তোমার সামনের এই মানুষগুলো জীবিত? হে অর্জুন, এরা ইতিমধ্যেই মৃৎ। ক্ষত্রিয় হিসেবে তোমার জনগণ এবং ভূমিকে রক্ষা করা তোমার দায়িত্ব। যদি তুই তোমার এই দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নাও, তাহলে তুমি ধর্মের নীতিকে অনুসরণ করবে না।"

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ