‘জিনোম’ কথাটি প্রথম ব্যবহার করেন জার্মানির হামবুর্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যার অধ্যাপক হান্স ভিঙ্কলার। তিনি “জিন” ও “ক্রোমোসম”-এ দুটি শব্দ জোড়া লাগিয়ে তৈরি করেন জিনোম শব্দটি। জীববিজ্ঞানে কোন জীবের জিনোম (ইংরেজি: Genome) বলতে সেটির সমস্ত বংশগতিক তথ্যের সমষ্টিকে বোঝায়, যা সেটির ডিএনএ (কোন কোন ভাইরাসের ক্ষেত্রে আরএনএ)-তে সংকেতাবদ্ধ থাকে। বংশ গতির তথ্য বলতে কোন জীবের মধ্যে বংশ পরম্পরায় যে তথ্যগুলো উপস্থিত থাকে সেগুলোকে বোঝানো হয়। যেমন অনেক সময় আমরা পূর্ব পুরুষদের অনেক বৈশিষ্ট্য, হোক তা দৈহিক কিংবা চারিত্রিক -পরবর্তী প্রজন্মের মাঝে দেখতে পাই। এভাবে কোন জীবের এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মে স্থানান্তরিত বৈশিষ্ট্যগুলোকে ‘বংশগতির তথ্য’ বলা হয়, যা লুকায়িত থাকে জিনোমে।
ডিএনএ বা আরএনএ-তে থাকা জিনোমের বিষয়টিকে বোঝার জন্য আমরা জিনোমকে একটি বইয়ের সাথে তুলনা করতে পারি। জিনোম যদি একটি বই হয় তবে তাতে রয়েছে ২৩ টি অধ্যায়(ক্রোমোজম), তাতে রয়েছে চারটি বর্ণ (A,C,T,G বা বেইস/ক্ষারক), আর সেগুলো দিয়ে গঠিত ৪৮ থেকে ৩ দশমিক ২ মিলিয়ন শব্দের (বেইস পেয়ার) মাঝে লুকিয়ে আছে একটি জীবের জীবনের নীল নকশা বা প্রস্তুত প্রণালী। আর এই তথ্যগুলোকে যদি কোনো এক হাজার পৃষ্ঠার বইতে লিপিবদ্ধ করা হয় তবে সেই বইয়ের খন্ড হবে দুশোটা। আর কেউ যদি প্রতি সেকেন্ডে দশটি বেইস-পেয়ারের তথ্য পড়তে পারে তবে তিনশো কোটি শব্দের বা বেইস পেয়ারের ‘জিনোম’ নামের সেই বই পড়ে শেষ করতে তার সাড়ে নয় বছর সময় লাগবে। তবে শর্ত থাকবে এটাই যে,আপনি এক সেকেন্ডের জন্যও পড়া থামাতে পারবেন না।
জিনোম নামের এই বইয়ের পুরো তথ্য পড়ার ব্যপারটাই হলো জিনোম সিকোয়েন্সিং। যে কোন জীবের জীবন থেকে মরন পর্যন্ত সকল কার্যক্রমই নিয়ন্ত্রিত হয় তার জিনোম বা কিছু ক্রোমোজোম বা অনেক অনেক অনেক জিনের দ্বারা। জিনগুলি তৈরি ডিএনএ দ্বারা, আর ডিএনএ তৈরি নিউক্লিওটাইড দ্বারা। এই নিউক্লিওটাইডের বেস আবার চার ধরনের, এডেনিন (A), গুয়ানিন (G), সাইটোসিন (C) ও থাইমিন (T)। আসলে জীবের ক্রোমোজোমে এই চারটি বেসই ঘুরে ফিরে নাকি সাজানো অবস্থায় আছে, এবং এদের কম্বিনেশন ও বিন্যাসের উপরেই নির্ভর করছে বিভিন্ন বৈশিষ্ঠ্যের প্রকাশ। তাই কোন জীবের এই জিনোম ডিকোড অথবা উন্মোচন বলতে এই ATGC এর পারস্পরিক বিন্যাসটা আবিস্কার করা বোঝায়। আর এর মাধ্যমে সেই জীবের বিভিন্ন বৈশিষ্ঠ্য নিয়ন্ত্রনকারী জিনগুলির অবস্থান ও ফাংশন সম্বন্ধে একটা ধারনা পাওয়া।
এখন প্রশ্ন উঠতে পারে এই যে পাটের জিনোম সিকুয়েন্স করা হলো এতে আমাদের কি লাভ? যেহেতু একটি জীবের যাবতীয় বৈশিষ্ট্য ও কার্যাবলী জিন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় সেহেতু এর বিন্যাস ও যাবতীয় তথ্য জানা যাবে জিনোম সিকুয়েন্সিং করে। ফলে ভবিষ্যতে আরো উন্নত প্রজাতির পাট উৎপাদন করা সম্ভব হবে। যা হবে রোগ-বালাই মুক্ত ও প্রতিকূল পরিবেশে খাপ খাওয়াতে সক্ষম। এভাবে যদি ধীরে ধীরে অন্যান্য ফসলের জিনের বৈশিষ্ট্যগুলো জেনে নেয়া যায় তবে সেসব ফসলেরও উন্নত প্রজাতি উৎপাদন করা সম্ভব হবে।
আমরা বাংলাদেশের এই গবেষক দল বা এরকম কাজে আরো যেসব বিজ্ঞানী নিযুক্ত আছেন তাদের সবার আরো অনেক সাফল্য কামনা করছি ।