আমি আমার মা বাবার সাথে বেশি ভালো ব্যবহার করতে পারি না,তাই অজান্তেই তাদেরকে কষ্ট দিয়ে ফেলি,আমি আমার মা বাবার সাথে সবসময় ভালো ব্যবহার করতে চাই,কিভাবে ভালো ব্যবহার করবো কিছু উপায় বলে দেন যাতে তাদেরকে খুশি রাখতে পারি?


শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
Rahid

Call

আপনি যে ভাবে আপনার মা বাবা কে খুশি রাখবেন :


নিজের গার্লফ্রেন্ডকে খুশি করতে হয়তো অনেকেই অনেক কিছু করে ফেলেছেন। বন্ধু বান্ধবের জন্মদিন থেকে শুরু করে নানা সময়ে নানাভাবে খুশি করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু বাবা-মাকে কয়বার খুশি করার চেষ্টা করলেন? যদি মনে করেন তা গুণে বের করা যাবে তাহলে কিছুটা লজ্জার ব্যাপারই হবে বটে। যাদের জন্যে আজকে আপনি এই দুনিয়ায় তাদেরকেই যদি খুশি রাখতে না পারেন তাহলে কি করে হবে?


বাবা-মা আমাদের ছোট থেকে বড় করেছেন। সারা জীবনের প্রতিটি মুহুর্তও যদি আমরা তাদের সেবায় ব্যায় করি তাতেও হয়তো তাদের প্রতি আমাদের যে ঋণ তা পুরণ হবে না। সময়ে অসময়ে কারণে-অকারণে বহুবার আমরা তাদের মন দুখিয়েছি, কাঁদিয়েছি। আমাদের খুশির কথা তারা সার্বক্ষণিক চিন্তা করেন। তাদের খুশির কথাও তো আমাদের ভাবতে হবে তাইনা? কি করে বাবা-মাকে খুশি করা যায় তা নিয়েই আমার আজকের এই ক্ষুদ্র প্রয়াস।




প্রাপ্য সম্মান দেয়া


জীবনে বাবা-মার সাথে উল্টা পালটা ব্যবহার করে নি এমন মানুষ খুজে পাওয়া দায়। বিভিন্ন সময়ে বাবা-মাকে আমরা কষ্ট দিয়েছি। তাদের প্রাপ্য সম্মান আমরা তাদেরকে দেই নি। অফিসের বস কে দেখলে আমরা নমনম শুরু করে দেই কিন্তু বাবা-মার ক্ষেত্রে কখনোই তা হয়না ! অথচ আমাদের থেকে সর্বোচ্চ সম্মানটা কিন্তু তাদেরই প্রাপ্য ! তাদের প্রাপ্য সম্মান তাদের দিন।


তাদের সাথে সদাচরণ করুন


বাবা-মাকে গালি দেয়া কিংবা তুই-তুকারি করা এখন অনেকটাই যুগের ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে। বলতে দ্বিধা নেই আমিও এমন করেছিলাম আমার জীবনে। এখন এর জন্যে অনেক আফসোস হয়। নিজেকে খুব ছোট মনে হয়। কি করে পেরেছিলাম আমি আমার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মানুষদের সাথে এভাবে করতে ? নিজেকে শুধরানোর চেষ্টা করেছি, করছি।


আর যাই করুন, অনুগ্রহ করে কখনো বাবা-মাকে গালি-গালাজ করবেন না। তাদেরকে তুই করে বলবেন না। মার্জিত ভাষায় নিচু স্বরে কথা বলতে হবে।


সবসময়ই তাদেরকে সত্য কথা বলুন




সত্য বলাটা পৃথিবীর কঠিনতম কাজগুলোর মধ্যে একটি। সবাই সত্য বলতে পারেনা। আপনি এটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিন। প্রতিজ্ঞা করুন কখনো বাবা-মাকে মিথ্যা বলবেন না। যদি নিজের বাবা-মাকেই মুখ ফুটে সত্য কথা বলতে না পারেন তো কাকে বলবেন? কারা আপনার এতোই প্রিয় যাদের কাছে সত্য কথা শেয়ার করা যায় কিন্তু বাবা-মার কাছে যায়না?


যাদেরকে আপনি এতো প্রিয় ভাবছেন কিছুদিন তাদেরকে এড়িয়ে চলে দেখুনতো… কয়েকদিন তাদের ফোন ধরবেন না, মেসেজের রিপ্লাই দিবেন না। সবরকম যোগাযোগ বন্ধ। কিছুদিন সে নিজে থেকে খোজ নেয়ার চেষ্টা করতে পারে। কিন্তু একসময় হাল ছেড়ে দিবে! কিন্তু বাবা-মা ! কক্ষনো না ! তারা প্রতিদিন প্রতিটা মুহুর্ত আপনাকে নিয়ে ভাবে। তাদের এই ভালোবাসার মুল্যায়ন করুন। তাদের সাথে সবসময় সত্যি কথা বলুন। ভুলবশত যদি কোন খারাপ কাজ করেই ফেলেন তাহলে বলে ফেলুন সত্যটাই।


বিশেষ দিনগুলো মনে রাখুন


বন্ধু-বান্ধব কিংবা প্রিয় মানুষটার জন্মদিনসহ অন্যান্য বিশেষ দিনগুলো সব ঠোটস্থ ! ঠিক একইভাবে বাবা-মার জন্মদিন, বিবাহ বার্ষিকীও মনে রাখুন। তাদেরকে সারপ্রাইজ করুন। তারা আজীবন মনে রাখতে পারে এমন কিছু করুন। আপনার সেই একদিনের প্রয়াস তাদেরকে টানা অনেকদিন এমনকি কয়েক বছর পরেও খুশি করে তুলতে যথেষ্ট।


বন্ধু-বান্ধবদের সাথে পরিকল্পনা করুন। টাকা জমিয়ে তাদেরকে কিছু উপহার দিন। আনন্দে তাদের মন ভরে যাবে।


তাদের কথার মুল্যায়ন করুন


তাদের কথার সঠিক মুল্যায়ন করার চেষ্টা করবেন সবসময়। যদি তারা আপনাকে কোন কিছুতে নিষেধ করেন এবং যদি আপনার মনে হয় তারা ভুল করছেন, তাহলে রেগে যাবেন না। শান্ত থাকুন, হাসিমুখে তাদেরকে বোঝানোর চেষ্টা করুন। হয়তো তারা বুঝবে। তবে এরপরও যদি তারা নিষেধ করেন এবং সেটা যদি ক্ষতিকর না হয় তাহলে তাদের কথা শুনুন। তারা আপনার ভালোর কথা ভেবেই আপনাকে কিছু বলেছেন।


তাদের প্রশংসা করুন




অনেকের কাছেই এটা লজ্জার ব্যাপার হতে পারে। বাবা-মার প্রশংসা করতে লজ্জা করা ঠিক না। লজ্জাকে এড়ানোর চেষ্টা করুন আর তাদের প্রশংসা করুন। ধরুন আপনার মা আজকে যা রান্না করেছিলো সেটা স্বাদে-গন্ধে একদম সেরকম হয়েছে ! সরাসরি তাকে বলুন যে তার রান্নাটা খুব ভালো হয়েছে। আপনার বাবা ব্যবসায় বড় কোন সাফল্য অর্জন করেছে। সেজন্যে তাকে প্রশংসা করুন তার বিচক্ষণতার জন্যে, তার কঠোর পরিশ্রমের জন্যে। কোন কাপড়ে তাদের দেখতে সুন্দর লাগলে সেটাও বলতে ভুলবেন না। আপনার সামান্য একটু প্রশংসা হয়তো তাদেরকে সমস্ত দিনের জন্যেই খুশি রাখতে যথেষ্ট।

অপরিচিত এবং আত্মীয়দের সামনে তাদের লজ্জায় ফেলবেন না


বাবা-মার কথায় ভুল ধরা কিংবা তাদের কোন ভুলের জন্যে তাদেরকে সবার সামনে লজ্জায় ফেলে দেয়া অনেক গর্হিত কাজ। আপনি পরীক্ষায় রেজাল্ট খারাপ করেছেন। আর এজন্যে আপনার বাবা আপনাকে আপনার স্যারের সামনে বকা-ঝকা করছে, বুঝাচ্ছে। হঠাত আপনি বললেন, “বাবা তুমি তো তোমার সময়ে এই পরীক্ষায় ফেল করেছিলে”। এটা খুবই খারাপ কাজ হবে। এটা একটা উদাহরণ ছিলো মাত্র। এমনই অনেকভাবে বাবা-মাকে মানুষের সামনে আমরা লজ্জায় ফেলে দেই। এমনটা করা যাবেনা। তাদের বন্ধু-বান্ধব বা আত্মীয়দের সাথে মার্জিত ব্যবহার করুন। কারো সাথে কুরুচিপূর্ণ ব্যবহার করবেন না। তাদের সাথে নতুন কোথাও গেলে যথাসম্ভব ভদ্রতা বজায় রাখার চেষ্টা করুন। এছাড়াও অন্য যে কাজগুলো করলে আপনার বাবা-মা লজ্জায় পড়তে পারেন সেগুলো করা থেকে বিরত থাকবেন।


তাদেরকে নিত্য নতুন বিষয় শেখান


উপরের শিরোনামটা একটু অবাক করতে পারে আপনাকে। কিন্ত এটা আপনার বাবা-মাকে বেশি মাত্রায় খুশি করতে সক্ষম। ছোটবেলায় যেমন তারা আপনাকে কথা বলতে শিখিয়েছে, লেখাপড়ায় হাতেখড়ি দিয়েছে, চারপাশের বিষয়াদি সম্পর্কে ধারণা দিয়েছে তার সমতুল্য কিছুই আপনি তাদের দিতে পারবেন না। কিন্তু আপনি তাদেরকে এমন কিছু শেখাতে পারেন যেগুল আপনি ভালো বুঝলেও তারা বুঝতে পারলে খুশি হবেন।  আপনার বাবা-মা হয়তো জানে না ফেসবুক কি, একদিন তাদেরকে আপনার পাশে বসিয়ে বোঝান ফেসবুক সম্পর্কে। তাদেরকে একটা পরিষ্কার ধারণা দিন। দেখবেন তাদের অনেক ভুল ধারণা দূর হয়ে গেছে। পাশাপাশি তারা খুশিও হবে।


তাদেরকে মোবাইলের বিভিন্ন ফাংশন বোঝাতে পারেন। কিভাবে মোবাইলে মেসেজ পাঠাতে হয় তা অনেকের বাবা-মাই হয়তো জানেন না। তাদেরকে সেটা শেখাতে পারেন। প্রযুক্তির বিভিন্ন বিষয় শেখানোর পাশাপাশিও আপনি আরও অনেক বিষয় তাদেরকে শেখাতে পারেন।


তাদেরকে সময় দিন


সারাদিন নিজেদের হাজারো কাজের ভীড়েও বাবা মার জন্যে সময় বের করতে হবে। তারা যেন নিজেদেরকে কখনো নিগৃহীত মনে না করেন। তাদের সাথে মন খুলে কথা বলুন। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করুন। অনেকেই আছে যারা নিজের বাবা মাকে সেকেলে মনে করেন। কিন্তু একটা বিষয় মনে রাখা জরুরী যে আপনি এখন অনেক কিছুই জানেন বলে ধরে নিয়েছেন। কিন্তু যখন আপনার ছেলে মেয়ে হবে তখন তারা আপনাকে সেকেলে ভাববে। তাদের ভাবাতে কি কিছু যায় আসে? আপনার যা জানার আপনার যা বোঝার আপনি তা ঠিকই বুঝেছেন ! ঠিক একই ভাবে নিজের বাবা মাকে সেকেলে ভেবে বসে থাকবেন না। এমন অনেক ব্যাপারই আছে যেগুলোতে তারা আপনার চেয়ে অনেক অনেক ভালো বোঝে। জীবনের বড় কোন সিদ্ধান্তও তাদের সাথে আলোচনা করে নিন। আপনার চেয়ে তারা অনেক ভালো সিদ্ধান্ত দিতে পারবেন।


ধর্ম-কর্ম করুন


সবার বাবা-মাই চান তার ছেলে-মেয়ে যেন ধার্মিক হয়। স্বাভাবিক কাজ কর্মের পাশাপাশি ধর্মের অনুসরণ আপনার বাবা-মাকে একই সাথে গর্বিত ও খুশি করতে সক্ষম। সপ্তাহে একবার শুধুমাত্র জুম্মার সালাতে হাজিরা দেয়ার অভ্যাস ত্যাগ করে পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করুন। এতে আপনি যেমন থাকতে পারবেন পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ঠিক একই ভাবে নিজেকে ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারবেন। জেনে নিতে পারেন কেন একজন পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায়কাকারী আপনার থেকে বেশি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন।


তাদের নিয়ে ঘুরতে যান


সময় সুযোগ পেলেই বন্ধু বান্ধবের সাথে ঘুরতে যাওয়া আমাদের অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটাকে আমি খারাপ বলছি না, এটা ভালো। তবে ছুটি পেলে, সময় পেলে কখনো বাবা-মাকে নিয়েও ঘুরে আসুন কোথাও থেকে। বাবা-মা আমাদের জোর করে কোথাও ঘুরতে না নিয়ে গেলে সাধারণত তাদের সাথে ঘুরতে যাওয়া হয়না। কিন্তু এই অভ্যাসটা যদি আমরা ত্যাগ করতে পারি তাহলেই মঙ্গল। তাদের সাথে স্বেচ্ছাতেই ঘুরতে যাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। পাশাপাশি সময়-সুযোগ হলেই তাদেরকে নিতে কোথাও থেকে ঘুরে আসুন। এতে একই সাথে তাদের সাথে অনেক সময় কাটানো যাচ্ছে আর ঘোরাও হচ্ছে।


তাদের চাহিদা পূরণ করুন


তাদের কখন কি লাগে সেটার দিকে একটু নজড় রাখতে হবে। হয়তো দেখা গেলো কখনো আপনার বাবা-মার সরষে ইলিশ খেতে ইচ্ছে হলো। তখন সামর্থ থাকলে তাদের সেই ইচ্ছে পূরণ করে দিন। ঈদে-পূজোয় আর সবার পাশাপাশি তাদেরও যেন পর্যাপ্ত কাপড় সহ আরো বিষয়াদির শখ মিটে সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। খাবার দাবারের দিক দিয়ে কখনোই যেন তারা কম না পান, আর সবার মতোই সমান অধিকার পান সেটা নিশ্চিত করতে হবে।


সংসারের প্রয়োজনে তাদের সহায়তা করুন


যদি সংসারের কোন কাজে আপনার প্রয়োজন পড়ে তাহলে সেখানে সর্বাত্মক সহায়তা করার চেষ্টা করুন। বাবা-মা একদিন বাজার করতে দিলে বা সদাই পাতি আনতে দিলে হাজারো অজুহাত তৈরী করে ফেলি। কিন্তু কেন? যদি আমরা অজুহাত না বানিয়ে তাদেরকে কাজটা করে দেই তাহলে তাদের অনেক উপকার হচ্ছে। সেই সাথে সংসারের কাজেও সহায়তা করা হচ্ছে। এমনইভাবে সংসারের নানা প্রয়োজনে আমাদের  এগিয়ে আসতে হবে।


বাবা-মার অপছন্দের কাজ থেকে বিরত থাকুন


এমন অনেক কাজই হয়তো আছে যেগুলো আপনার বাবা-মা অপছন্দ করেন না। হতে পারে তা দেরী করে বাসায় ফেরা, সিগারেট খাওয়া, অযথা টাকা নষ্ট করা, কোথাও যাচ্ছেন না যাচ্ছেন তা বলে না যাওয়া সহ অন্য যেকোনো কিছু। যেসব কাজে আপনার বাবা মা বিরক্ত হন বা অপছন্দ করেন সেগুলো এড়িয়ে চললে তাদের মন রক্ষা করতে পারবেন।


আপনি কি করছেন না করছেন তা জানান তাদেরকে


আপনি কখন কোথায় কি করছেন না করছেন সেগুলো আপনার বাবা-মাকে জানান। সবসময়েই তারাই খোঁজখবর নিবেন এমনটা আশা না করে নিজে থেকেই বলার অভ্যাস করুন। এটা তাদেরকে অনেক নিশ্চিন্ত রাখবে এবং খুশি করবে।


প্রথম দিকে একটু বড় বড় করে লেখার চেষ্টা করেছিলাম। পরে দেখলাম খুব বড় হয়ে যাচ্ছে। তাই অনেকটা কাটছাট করে ছোট করলাম। বাবা মা আমাদের অভিভাবক। আমাদের অস্তিত্বই আছে তাদের জন্যে। তারা আমাদেরকে ছোট থেকে এতো আদর যত্নে মানুষ না করলে হয়তো আমরা আজকের অবস্থানে আসতে পারতাম না। তাই তাদের প্রতি দায়িত্ববোধ থেকেই আমাদের উচিৎ সর্বদা তাদেরকে খুশি রাখার চেষ্টা করা।


আপনি কি মনে করেন আপনার বাবা-মাকে আপনি খুশি করতে পেরেছেন?

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ