প্রতারণা জিনিসটা অনেকটা বিষের মতো। বিষ শরীরে প্রবেশ করায় আমাদের শারীরিক মৃত্যু হয় আর অন্যদিকে প্রতারিত হওয়ার পর আমাদের মানসিক মৃত্যু হয়। আর সেই প্রতারিত হওয়াটা যদি আপনার ভালোবাসার মানুষের কাছে থেকে হয়ে থাকে তাহলে এর যন্ত্রণাটা কয়েকশগুন বেশী বেড়ে যায়।
এটা সত্যি প্রিয় মানুষটি প্রতারণা করলে বেঁচে থাকাটা মূল্যহীন মনে হয় তবে এটা ভুললে চলবে না আমাদের জীবনটা ও কম মূল্যবান নয়। তাই প্রতারিত হওয়ার হতাশা থেকে বের হয়ে এসে নতুন করে জীবন গুছিয়ে নিতে জানতে হবে, জানতে হবে কিভাবে সামান্য একজন মানুষ যে আপনাকে বোকা বানিয়ে নিজে দূরে সরে গেছে তার চোখের সামনে নিজের জীবনটা আবার হাসি আনন্দে ভরিয়ে তুলতে হবে।
সত্যটা মেনে নিন (acceptance)
অযথা একজন প্রতারকের জন্য নিজেকে কষ্ট না দিয়ে যতো দ্রুত পারেন এই সত্যটা মেনে নিন। মনকে বোঝান যে আপনার ভালোবাসার মানুষটি আপনার সব বিশ্বাস আর আপনার উপস্থিতিকে অগ্রাহ্য করে আপনাকে ঠকিয়েছে। যতো তাড়াতাড়ি এই সত্যটা গ্রহণ করতে পারবেন একজন প্রতারকের জন্য আপনার হতাশা কমতে থাকবে।
ব্যথা সহ্য করতে শিখুন (savor the pain)
প্রতারিত হওয়ার যে যন্ত্রণা সেটা উপেক্ষা না করে বরং সেই ব্যথার স্বাদ গ্রহণ করুন। আপনার শরীরের কিছু অংশ কেটে গেলেও তো ব্যথা হয় যন্ত্রণা হয় তাই বলে কি আমরা সেই ব্যথার হাত থেকে পালাতে পারি? তাই প্রতারণা মেনে মিয়ে ব্যথার স্বাদ গ্রহণ করুন। চিৎকার করে কাঁদতে পারেন নিজের কষ্টটা কান্নার সাথে বের করে দিন। একবার প্রতারিত হওয়ার যন্ত্রণা মেনে নিতে পারলে দেখবেন সেই হতাশা থেকেও ঠিক বের হয়ে আসতে পারবেন।
অন্যদের সাথে সময় কাটান (spend time with other)
আপনার একদিনের সব থেকে প্রিয় মানুষটা আপনার সাথে প্রতারণা করেছে জানি কষ্টটা এতো বেশী তীব্র হবে যে আপনি হয়তো পুরো পৃথিবী থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখবেন, হয়তো বদ্ধ ঘরে নিজের সমস্ত আমিত্বটাকে আটকে রাখতে চাইবেন। যদি আপনার মনে এমন ভাবনাই আসে তবে বলতে হয় এই ভুলটা করবেন না। নিজেকে একা করে না ফেলে যতবেশি পারেন বাইরের মানুষের সাথে সময় কাটান, পরিবারের মানুষগুলোর সাথে সময় কাটান। দেখবেন হতাশা আপনার কাছে দীর্ঘস্থায়ী হতে পারবেনা।
দায়িত্ব নিন (take responsibility)
প্রতারনার জন্য অন্যকে দোষ দেওয়া বন্ধ করে নিজে দায়িত্ব নিন। এটা ভাবুন যে আপনার কোন দুর্বলতাটার সুযোগটাই সে গ্রহণ করেছে আপনাকে বোকা বানিয়েছে। এই দায়িত্বটা যদি নিজে নিতে পারেন তাহলে হতাশা আপনাকে কাবু করতে পারবে না। আপনি এই ভুল থেকে শিক্ষা নিতে পারেন যাতে পরবর্তীতে এমন কোন অবস্থার সামনাসামনি আপনাকে না হতে হয়।
ক্ষমা করুন এবং ভুলে যান (forgive and forget)
প্রতারণার হতাশা থেকে বের হয়ে আসতে প্রথমে নিজে নিজেকে ক্ষমা করুন। এমন ভুল কেন করিছিলেন এটা ভেবে নিজেকে দোষারোপ না করে একজন ভুল মানুষ আপনার জীবন থেকে আপনাআপনি বের হয়ে গেছে এটা ভেবে নিজেকে ক্ষমা করে দিন। এরপর ক্ষমা করুন সেই মানুষটিকে যে আপনাকে আপনার জীবনের একটি অপরিচিত দিক সম্পর্কে ধারণা দিয়ে গেলো, আপনার সহ্য শক্তি, আপনার হতাশাকে জয় করার আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে তুলতে প্রতারকের কাছে কৃতজ্ঞ হয়ে তাকে ক্ষমা করুন। সময় বদলেছে তাই সবটা ভুলে গিয়ে নতুন করে আবার জীবনটা ধাপে ধাপে গোছাতে লেগে পড়ুন।
জীবন সংগ্রাম চালু রাখতে আপনার এই অভিজ্ঞতাটির দরকার ছিল। এই একটি অভিজ্ঞতা আপনাকে আগামীতে এই সংক্রান্ত আর কোন ভুল করতে দেবেনা। আগামীতে কেউ আর আপনার মানুষীর সুযোগ নিয়ে আপনাকে ঠকাতে পারবে না।
ভালোবাসায় প্রতারণা করা যেন আজকাল নিত্যদিনের ঘটনা। তবুও মানুষ ভালোবাসে, বিশ্বাস করে। প্রতারণায় কষ্ট পেয়ে ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যায়। হয়তো আপনার অবস্থাও ঠিক তাই, মানসিকভাবে ভীষণ ভেঙে পড়েছেন আপনি প্রতারণার শিকার হয়ে।এ হতাশা থেকে বের হতে আপনি কিছু কাজ করত পারেনঃ ১. আপনি হয়তো তাঁকে ছাড়া বেঁচেই থাকতে পারছেন না, প্রতি মুহূর্তে মনে হচ্ছে মরে যাবেন। কিন্তু তবুও ভুল করেও ফিরে আসার কাকুতি-মিনতি করতে যাবেন না। কোনো অবস্থাতেই না। এতে সে ফিরবে তো নাই-ই, উল্টো আপনিই ছোট হবেন। ২. কোন অবস্থাতেই নিজের কোন দুর্বলতা তাঁর সামনে আর প্রকাশ করে ফেলবেন না। যে মানুষ একবার প্রতারণা করতে পারে, সে মানুষ আপনার দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে অনেক বড় কোনো অপরাধও করতে পারে। ৩. আপনার মন ভেঙে গিয়েছে সত্যি, কিন্তু জীবন ভেঙে পড়তে দেবেন না। যেভাবেই হোক নিজের দৈনন্দিন রুটিন ধরে রাখার চেষ্টা করুন। ৪. 'আমি মরে যাবো, মরে গিয়ে ওকে শিক্ষা দেব'... এই ধরণের চিন্তাভাবনা ভুলেও করবেন না। যে প্রতারক, আপনার মৃত্যুতে তাঁর কিচ্ছু কিচ্ছু যাবে আসবে না। ৫. প্রতিশোধ নিতে চান? বেশ, নেবেন। তবে এখনই নয়। সঠিক সময়ের অপেক্ষ করুন। আবেগের বশে কিছু করলে নিজের বিপদে পড়ার সম্ভাবনাই বেশি। ৬. খুব কাছের কাউকে সম্পূর্ণ ব্যাপারটি খুলে বলুন। মন হালকা হবে। কাঁদতে চাইলে কাঁদুন। কষ্ট চেপে রাখার চাইতে কান্না ভালো। ৭. মানসিক অস্থিরতা ও কষ্ট খুব বেড়ে গেলে পেশাদার থেরাপিষ্টের কাছে যান। এই বিষয়ে সংকোচ করবেন না একদম। এতে কোনো দোষ নেই। ৮. কোথাও বেড়াতে চলে যান কিছুদিনের জন্য। নিজের স্বাভাবিক পরিবেশ পরিস্থিতি থেকে একদম দূরে কোথাও। ৯. নিজের চেহারা ও অন্যান্য ব্যাপারে উন্নতি করার দিকে মনযোগ দিন। ওজন বেশি থাকলে কমিয়ে দিন। নিজেকে নতুন মেকওভার দিন। নিজের ক্যারিয়ার ও অর্থনৈতিক অবস্থা উন্নত করার চেষ্টা করুন। কথাগুলো শুনতে হাস্যকর মনে হলেও যখন সকলে আপনার প্রশংসা করবে তখন ভালো লাগবে আপনার। ১০. খুব রাগ হচ্ছে তাঁর ওপর? মনে হচ্ছে কেন আপনার সাথে প্রতারণা করলো, কী দোষ করেছিলেন আপনি? তাঁকে একবার হলেও কল করুন, আর ইচ্ছামত নিজের রাগ ঝেড়ে ফেলুন। যা মনে আসে মন খুলে বলে দিন। স্বস্তি লাগবে। ১১. সম্পর্ক ভাঙনের পর, কিংবা প্রতারিত হবার পর আমরা অনেকেই মানুষটিকে ভুলতে পারি না। দেখা যায় তাঁর বন্ধু বান্ধব বা আত্মীয়দের সাথে যোগাযোগ রাখি। এই কাজটি ভুলেও করবেন না। তাঁর সম্পর্কে জানার চেষ্টা করবেন না। সে ভালো আছে জেনে আপনার কষ্ট আরও বাড়বে। ১২. প্রেমের সময়ে নিশ্চয়ই অনেক স্মৃতি আর সেসবের নিদর্শন জমেছে? কিছুই আর নিজের কাছে রাখবেন না। নষ্ট করে ফেলুন। মানুষটার সাথে ফেসবুক ফ্রেন্ড হিসাবেও সম্পর্ক রাখবেন না।
হতাশা, আহা কত ওড একটি শব্দ। এই হতাশা যদি ভালবাসা অথবা প্রেম সংক্রান্ত হয় তাহলে তো কথাই নেই।
আমার মনে হয় ভালোবাসা হওয়া উচিত নি:স্বার্থ এবং পবিত্র। সুতরাং যখনই ভালোবাসার মাঝে থেকে এদুটো জিনিষ হারিয়ে যায় তখনই জন্ম নেয় প্রতারণার সন্দেহ। তাই ভালোবাসার মানুষটিকে বিনিময় প্রাপ্তির আশা ছাড়া ভালোবাসা উচিত। তাহলে তার দ্বারা প্রতারিত হওয়ার ভয় নেই।দু:খজনক হলেও সত্য! আজকাল যা হয় তাহলো- ভালোবাসার শুরু না হতেই সবাই অংক কষে কী দিলাম আর কিইবা পেলাম; শুরু হয় হিসেব নিকেশ। ফশ্রুতিতে ভালোবাসার পতন শুরু হয়। শুরু হয় সন্দেহ ও দূরত্ব। তাই ভালোবাসার মানুষের কাছ থেকে প্রতারিত হওয়ার হতাশা থেকে বের হয়ে আসতে প্রয়োজন একটি আদর্শ ভালোবাসা; একটি আদর্শ প্রেম। যেটির ভিত হবে নি:স্বার্থ এবং পবিত্র। দেয়ালগুলো হবে সৌহার্দ্য সম্প্রীতির। তাহলে আমার বিশ্বাস এমন ভালোবাসার নীড়ে প্রতারণার ভয় নেই।
একজন ভন্ড মানুষের জন্য মন খারাপ করে থাকা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। আপনি যেহেতু জানেন সে প্রতারক, আরো বড়ো ক্ষতি হবার আগে আল্লাহ পাক আপনাকে তার আসল রূপ দেখিয়ে দিয়েছেন এটা কি আপনার জন্য অনেক ভালো হলোনা? আজকে যে আপনাকে ছেড়ে গেছে, কাল যে সে আপনার জন্য আরো বেশি কষ্টের কারণ হতোনা তার কি নিশ্চয়তা আছে? সে আসলে আপনার যৌগ্য ছিল না বলেই আপনাকে পায়নি। এটা তার ব্যর্থতা, আপনার নয়। আপনি যদি সৎ হোন আপনার জন্য সৎ মানুষ আল্লাহ তায়ালা তৈরি করে রেখেছেন। আপনি হয়তো জানেন সুরা নিসায় আল্লাহ তায়ালা এ সম্পর্কে জানিয়ে দিয়েছেন। কাজেই আপনি অযথা সময় নষ্ট না করে জীবনকে সুন্দর করে সাজিয়ে নিন আপনার পছন্দের মতো করে। যা কিছু ভালো লাগে তাই করুন। নিজেকে সফল করতে সচেষ্ট হোন। আপনার সুন্দর জীবন কামনা করছি।