শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
RushaIslam

Call

বাণিজ্যিক ভিত্তিতে যেসব জাতের আবাদ হচ্ছে তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য জাতগুলো হচ্ছে বারিকলা-১ ও বারিকলা-২ (আনাজিকলা), অমৃতসাগর, সবরি, চম্পা, কবরি, মেহেরসাগর, বীচিকলা অন্যতম।   মাটি : পর্যাপ্ত রোদযুক্ত ও পানি নিকাশের সুবিধাযুক্ত উঁচু জমি কলা চাষের জন্য উপযুক্ত। উর্বর দো-আঁশ মাটি কলা চাষের জন্য উত্তম। চাষ ও মই দিয়ে জমি সমতল ও আগাছামুক্ত করে নিতে হবে।   চারা রোপণ : কলার চারা বছরে ৩ সময়ে রোপণ করা যায়। ১ম রোপণ কাল : আশ্বিন-কার্তিক সবচেয়ে ভালো সময়। ২য় রোপণ কাল : মাঘ-ফাল্গুন ভালো সময়। ৩য় রোপণ কাল : চৈত্র-বৈশাখ মোটামুটি ভালো সময়।   চারার দূরত্ব : সারি থেকে সারির দূরত্ব ২ মিটার এবং চারা থেকে চারার দূরত্ব ২ মিটার।   গর্ত তৈরি : চারা রোপণের মাসখানেক আগেই গর্ত খনন করতে হবে। গর্তের আকার হবে ৬০ সেমি. চওড়া ও ৬০ সেমি. গভীর। গর্ত তৈরি হয়ে গেলে গোবর ও টিএসপি সার মাটির সাথে মিশিয়ে গর্ত ভরে রাখতে হবে।   চারা রোপণ : রোপণের জন্য অসি তেউড় উত্তম। অসি তেউরের পাতা সরু, সুঁচালো এবং অনেকটা তলোয়ারের মতো, গুড়ি বড় ও শক্তিশালী এবং কা- ক্রমশ গোড়া থেকে ওপরের দিকে সরু হয়। তিন মাস বয়স্ক সুস্থ সবল তেউড় রোগমুক্ত গাছ থেকে সংগ্রহ করতে হয়।   সার ও সার প্রয়োগ পদ্ধতি অর্ধেক গোবর জমি তৈরির সময় এবং অবশিষ্ট অর্ধেক গর্তে দিতে হবে। অর্ধেক টিএসপি একই সঙ্গে গর্তে প্রয়োগ করতে হবে। রোপণের দেড় থেকে দুই মাস পর ৪ ভাগের ১ ভাগ ইউরিয়া, অর্ধেক এমপি ও বাকি টিএসপি জমিতে ছিটিয়ে ভালোভাবে কুপিয়ে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে হবে। এর দুই থেকে আড়াই মাস পর গাছ প্রতি বাকি অর্ধেক এমপি ও অর্ধেক ইউরিয়া প্রয়োগ করতে হবে। মোচা বের হওয়ার সময় অবশিষ্ট ৪ ভাগের ১ ভাগ ইউরিয়া জমিতে ছিটিয়ে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে হবে।   কলা গাছের পরিচর্যা : চারা রোপণের সময় মাটিতে পর্যাপ্ত রস না থাকলে তখনই সেচ দেয়া উচিত। এছাড়া শুকনো মৌসুমে ১৫-২০ দিন পর পর সেচ দেয়া দরকার। বর্ষার সময় কলা বাগানে যাতে পানি জমতে না পারে তার জন্য নালা থাকা আব্যশক। মোচা আসার পর গাছপ্রতি মাত্র একটি তেউড় বাড়তে দেয়া ভালো।   রোগ ও প্রতিকার : কলা গাছের প্রধানতম রোগগুলো হচ্ছে পানামা, বানচিটপ ভাইরাস, সিগাটোকা ও কলার দাগ রোগ। পানামা রোগ প্রতিকারের জন্য আক্রান্ত গাছ গোড়াসহ উঠিয়ে পুড়ে ফেলতে হবে। আক্রান্ত গাছের তেউড় হিসেবে চারা ব্যবহার করা যাবে না। বানচিটপ ভাইরাস রোগ প্রতিকারের জন্য আক্রান্ত গাছ গোড়াসহ উঠিয়ে পুড়ে ফেলতে হবে। গাছ উঠানো আগে জীবাণু বহনকারী ‘জাব পোকা’ ও ‘থ্রিপস’ কীটনাশক ওষুধ দ্বারা দমন করতে হবে। সুস্থ গাছেও কীটনাশক ওষুধ স্প্রে করতে হবে। সিগাটোকা রোগ আক্রান্ত গাছের পাতা পুড়ে ফলতে হবে। প্রতি লিটার পানিতে ০.৫ মিলি লিটার টিল্ট ২৫০ ইসি ১ গ্রাম ব্যাভিস্টিন মিশিয়ে ১৫ দিন পর পর গাছে ছিটাতে হবে। বিটল পোকার আক্রমণে কলার গায়ে বসন্ত রোগের দাগের মতো দাগ হতে দেখলে কলার মোচা বের হওয়ার সময় ছিদ্রবিশিষ্ট পলিথিন ব্যাগ দিয়ে মোড়ে দিতে হবে। এছাড়াও অনুমোদিত কীটনাশক স্প্রে করে এ পোকা দমন করা যায়। যে কোনো ধরনের রোগের প্রতিকারের জন্য রোগ আক্রান্ত মাঠে বার বার কলা চাষ করা যাবে না। ফসল সংগ্রহ : কলার চারা রোপণের ১১-১৫ মাসের মধ্যেই সাধারণত সব জাতের কলা পাকার উপযুক্ত হয়। প্রতি হেক্টরে ১২-১৫ টন কলার ফলন পাওয়া যাবে। কলা ও কলা পাতার ভেষজ গুণ ক. রোগ নিরাময়ে কলার ব্যবহার ১. শুষ্ক কাশিতে : একটি পাকা কলা চটকে অল্প পানিতে মিশিয়ে হালকা গরম করে সেটাকে ছেঁকে নিয়ে সেই পানিটা সকাল ও বিকালে কয়েক দিন খেলে উপশম হবে। তবে প্রতিদিন নতুন করে তৈরি করতে হবে। ২. সন্ধিযুক্ত গলক্ষতে : গলায় ব্যথা, লাল দেখায়, কর্ণমূল পর্যন্ত ব্যথা, মনে হয় যেন গলায় ঘা হয়েছে, গলার স্বর ভাঙা ভাঙা; এ ক্ষেত্রে একটা পাকা কলা ১ কাপ পানি দিয়ে চটকে গরম করে ছেঁটে নিয়ে সকালে এবং নতুন করে তৈরি করে বিকালে খেতে হবে। মাসখানিক খেলেই উপশম হবে। ৩. কৃমিতে : ১ চা-চামচ কলাগাছের শিকড়ের রস সকালে খালি পেটে ১ সপ্তাহ খেতে হবে। প্রাপ্ত বয়স্ক ৩-৪ চা-চামচ, কিশোর বয়স্কদের ২ চা-চামচ আর শিশুদের ১ চা-চামচ খাওয়াতে হবে। ৪. প্রদর রোগে : ১টা কাঁচাকলা চাকা চাকা করে কেটে রাত্রে ১ গ্লাস পানিতে ভিজিয়ে রেখে পরদিন সকালে খালিপেটে সেই পানি খেলে মাসখানিকের মধ্যে প্রদর রোগ সেরে যাবে। ৫. ডায়রিয়াতে : কাঁচাকলা দুই তিনটা খোসাসহ দুই-টুকরো করে কেটে অল্প পানিকে সিদ্ধ করে কলার ভর্তা ৪-৫ বার খেলে দাস্ত বা বেশি পায়খানা বন্ধ হয়ে যাবে। পাশাপাশি খাবার স্যালাইনও চলবে। ৬. প্রসূতির কাঁচা নাড়ি শুকাতে : প্রসবের পর শরীরকে ঝরঝরে করার জন্য কাঁচা কলা পুড়ে ভর্তা করে ভাত খেতে দিতে হবে।   খ. কলাপাতার ব্যবহার কলাগাছের সবুজ পাতার রস, মোচা, থোড় সবই প্রয়োজনীয়। সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্ট, কোষ্ঠবদ্ধতা, আমাশয়, রক্তদুষ্টি, অম্লগ্যাস, উচ্চরক্তচাপ, লিভারের দোষ হলে কলাপাতার রস উপকারী। ইউরোপ ও অন্যান্য উন্নত দেশে কলাপাতার সাহায্যে বহু রোগের চিকিৎসা করা হয়। ফরাসি ডাক্তাররা শোথ, যক্ষ্মা;, আন্ত্রিক, আমাশয় ও অতিসারে কলাপাতার রস খেতে বলেন। না-কচি, না-শক্ত বিবর্ণ পাতা অর্থাৎ সবুজ পাতা বেটে বা থেঁথলে ছেঁকে সকালের দিকে আধা কাপ খেতে হবে। নুন, চিনি ইত্যাদি মিশিয়ে খাওয়া চলবে না। কলাপতায় থাকে ক্লোরোফিল। ক্লোরোফিল পেটে গেলে অন্ত্রের ঘা, লিউকোমিয়া, চর্মরোগ হয় না। কলাপাতার সবুজ রস রক্ত পরিষ্কার করে। শরীরের কোথাও ক্ষত, চর্মরোগ হলে কলাপাতার রস ঘষে লাগালে উপকার হয়। ব্রঙ্কাইটিস, নেফ্রাইটিস, রক্তক্ষরণ, জমা সর্দিতে কলাপাতার রস খুবই কার্যকরী। প্লুরিশি, কাশি, ক্ষয়রোগ ও থুথুর সঙ্গে রক্ত পড়লে সবুজ কলাপাতার রস প্রতিদিন ভোরে আধাকাপ পরিমাণ খেলে ভীষণ উপকার হবে। কচি কলাপাতা বেটে প্রলেপ দিলে কীট দংশন, হুল ফোটা, কাটায় উপকার হবে। সর্বপ্রকার দাঁতের ব্যথায় ‘প্ল্যান্টাগো’ (যা কলাপতা থেকে তৈরি হয়) হোমিওপ্যাথিক ডাক্তাররা সুনামের সঙ্গে ব্যবহার করে আসছেন। প্যান্টাগোর মাদার তুলার দ্বারা দাঁতের গোড়ায় বাহ্যিক ব্যবহারে দাঁত ব্যথা আরোগ্য হয়। দন্তশূল, কর্ণশূল, কাটা, পোড়া, আঘাতাদি, সর্পদংশন, ইরিসিপেলাস ইত্যাদি নানাবিধ রোগে প্যান্টাগো সার্থকভাবে ব্যবহৃত হয়। গলগ-, ফুলে উঠা, জ্বর, শিরপীড়া সারাতে প্যান্টাগো ব্যবহৃত হয়। কানের ব্যথায় : কলাগাছের মাঝের গোল অর্থাৎ খুলে যায়নি, সেই পাতাকে থেঁতো করতে হবে। রস নিংড়ে নিয়ে একটু গরম করতে হবে। ওই রস ২ ফোঁটা একবার কানে দিলেই বেদনা কমে যাবে। প্রয়োজনে আবার দিতে হবে।   সাবধানতা : কাঁচাকলা উপাদেয় ও সুস্বাদু তরকারি হলেও তরকারিতে খেলে কোষ্টকাঠিন্য দেখা দিতে পারে এবং পেটে বায়ু জমতে পারে। মোচা ও থোড়ের তরকারি সবসময় খেলে কিডনিতে পাথর সৃষ্টি হতে পারে। কারণ এদের মধ্যে অক্সালিড এসিড বিদ্যমান। পাকা কলা বেলা ৯টা থেকে ১২টার মধ্যে খাওয়া উচিত। যখন তখন পাকা কলা খেলে ক্ষতি হতে পারে। কলা ভালো করে চিবিয়ে খেতে হবে, গিলে খেতে নেই। পাকাকলা মুখের লালাতেই হজম হয়।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ

কলার চাষ পদ্ধতিঃ কলার চারা বছরে তিন মৌসুমে রোপণ করা যায়। প্রথম মৌসুম মধ্য জানুয়ারি থেকে মধ্য মার্চ। দ্বিতীয় মৌসুম মধ্য মার্চ থেকে মধ্য মে। তৃতীয় মৌসুম মধ্য সেপ্টেম্বর থেকে মধ্য নভেম্বর। সাত-আটবার চাষ দিয়ে জমি ভালোভাবে তৈরি করে নিতে হয়। অতঃপর জৈবসার (যেমন গোবর, কচুরিপানা ইত্যাদি) হেক্টরপ্রতি ১২ টন হিসেবে প্রয়োগ করতে হবে। অতঃপর ২–২ মিটার দূরত্বে গর্ত খনন করতে হবে। প্রতিটি গর্তে ৬ কেজি গোবর, ৫০০ গ্রাম খৈল, ১২৫ গ্রাম ইউরিয়া, ২৫০ গ্রাম টিএসপি, ১০০ গ্রাম এমপি, ১০০ গ্রাম জিপসাম, ১০ গ্রাম জিংক এবং ৫ গ্রাম বরিক এসিড প্রয়োগ করে মাটি দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। ১৫ দিন পর প্রতিটি গর্তে নির্ধারিত জাতের সতেজ ও সোর্ড শাকার (তরবারি চারা) চারা রোপণ করতে হবে। এভাবে একরপ্রতি সাধারণত ১ হাজার থেকে ১ শত চারা রোপণ করা যায়। চারা রোপণের পর ২ কিস্তিতে গাছপ্রতি ১২৫ গ্রাম ইউরিয়া ও ১০০ গ্রাম এমপি ৩ মাস অন্তর অন্তর প্রয়োগ করতে হবে। শুকনো মৌসুমে ১৫-২০ দিন পর পর সেচের প্রয়োজন হয়। গাছ রোপণের প্রথম অবস্থায় ৫ মাস পর্যন্ত বাগান আগাছামুক্ত রাখা জরুরি। কলাবাগানে জলাবদ্ধতা যেন না হয়, সেদিকে দৃষ্টি রাখতে হবে। সাধারণত কলাতে বিটল পোকা, পানামা রোগ, বানচিটপ ভাইরাস ও সিগাটোকা রোগ আক্রমণ করে থাকে। বিটল পোকায় আক্রান্ত হলে কলা সাধারণত কালো কালো দাগযুক্ত হয়। প্রতিরোধের জন্য ম্যালথিয়ন অথবা লিবাসিস ৫০ ইসিসহ সেভিন ৮৫ ডব্লিউপি প্রয়োগ করা যেতে পারে। পানামা রোগে সাধারণত কলাগাছের পাতা হলুদ বর্ণ ধারণ করে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে গাছ লম্বালম্বি ফেটে যায়। এ রোগের প্রতিরোধে গাছ উপড়ে ফেলা ছাড়া অন্য কোনো ব্যবস্থা নেই। বাঞ্চিটর ভাইরাসে আক্রান্ত হলে কলার পাতা আকারে ছোট ও অপ্রশস্ত হয়। এটি দমনের জন্য রগর বা সুমিথিয়ন পানিতে মিশিয়ে প্রয়োগ করা যেতে পারে। সিগাটোগায় আক্রান্ত হলে পাতায় ছোট ছোট হলুদ দাগ দেখা যায়। এক সময় এ দাগগুলো বড় ও বাদামি রং ধারণ করে। এ অবস্থা দেখা দিলে আক্রান্ত গাছের পাতা পুড়িয়ে ফেলতে হবে এবং মিলিটিলট-২৫০ ইসি অথবা ব্যাভিস্টিন প্রয়োগ করা যেতে পারে।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ