শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে

আফগান থেকে বাংলাদেশ  পাঠান বংশের হালনাগাদঃ -মুহাম্মদ হাবীবুর রহমান খান পনের শতকের মাঝামাঝি সময়ে অর্থাৎ ১৫৪০ইং সালে মোঘল সম্রাট হুমায়ুনকে যুদ্ধে পরাজিত করে আফগান পাঠান বীর শের খান পাঠান শের শাহ শূরী উপাধী ধারন করে দিল্লীর সিংহাসন দখল করেন এবং শূরী বংশের সূচনা করেন। যদিও পরবর্তীতে ১৫৫৫ইং সালে হুমায়ুন তার সিংহাসন পুনরুদ্ধারে সক্ষম হন। ১৫ বছরে শূরী বংশের সাতজন শাসক দিল্লীর সিংহাসনে অধিষ্টিত ছিলেন। সিংহাসন পুনরুদ্ধারের পর শূরী বংশের পতন ঘটে এবং এ বংশেরই বিচ্ছিন্ন একটি গোত্র কররানী বংশ নামে ভারতবর্ষের কোন অংশে শাসন কার্য পরিচালনা করতে থাকেন। কররানী বংশের চারজন শাসক গত হবার পর পরই মোঘলদের হাতে এ বংশেরও পতন ঘটে। এ বংশের অবশিষ্টদের নিয়ে পাঠান বীর খাজা ঈসা খান, লোহানী উপাধী ধারন করে ঢাকায় পারি জমান। অতঃপর তার পুত্র মাওলানা খাজা উসমান খান লোহানী মোঘলদেরকে উপেক্ষা করে ঢাকার শাসনভার গ্রহন করেন এবং ডেমড়ায় একটি মাদ্রাসা স্থাপন করেন। তিনি সে মাদরাসা থেকে মোঘলদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষনা করলে মোঘল সুবেদার ইসলাম খান তাকে দমন করেন। এরপর তিনি প্রথমে ফরিদপুর ও পরে সিলেটের ভাটি অঞ্চলে সম্রাজ্য গড়ে তুললে ইসলাম খান ১৫৯৫ সালে এক যুদ্ধে তাকে হত্যা করেন। তিনি ছিলেন একজন রোমান্টিক পাঠান বীর। খাজা উসমান খানের শাহাদাতের পর তার তিন ছেলে খাজা তাজ খান, খাজা আব্দুর রহীম খান, খাজা উমর খান ও তাদের এক বোন মোমেনশাহীর গৌরীপুরে চলে আসেন এবং ষোরষ শতাব্দীতে সেখানে তাজপুর বোখাই নগর নাম দিয়ে একটি পরগনা শাসন করতে থাকেন। এখানে আলোচনা করব তাদের বংশীয় দ্বরাবাহিকতা নিয়ে। খাজা তাজ খান ছিলেন নিঃসন্তান। আর তাদের বোন ছিলেন অবিবাহিতা। খাজা আব্দুর রহীম খানের ছিল দুই পুত্র যথাঃ বিরাম খান ও বৈরাম খান। আর খাজা উমর খানের ছিল একমাত্র কন্যা সখিনা। যিনি ছিলেন অপরুপা সুন্দরী। ফলে, বার ভূইয়ার সর্দার সরকারে আলা ইসা খাঁর নাতি ফিরোজ খাঁ তাকে বিবাহের প্রস্তাব দেন, উমর খান তাতে রাজী না হলে ফিরোজ খাঁ ক্ষিপ্ত হন এবং জোর করে সখিনাকে ওঠিয়ে নিয়ে যান ও বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করেন। এতে উমর খান অপমানবোধ করেন। ফলে উমর খান ও ফিরোজ খাঁর মধ্যে তুমুল যুদ্ধ হয়, এ যুদ্ধে ফিরোজ খাঁ পরাজিত ও বন্ধী হয়। এ খবর ফিরোজ খাঁর বাড়ীতে অবস্থানরত স্ত্রী সখিনার কাছে পৌছলে তিনি পিতার হাতে বন্ধী স্বামীকে মুক্ত করার লক্ষ্যে শাশুরীর দোয়া নিয়ে যোদ্ধার বেশ ধারন করে ঘোড়সওয়ার হয়ে পিতৃ বাহিনীর সাথে যুদ্ধ লিপ্ত হন। ছদ্মবেশী সখিনা ময়দানে নামার পর যুদ্ধের মোড় ঘুরে গেলে উমর খানের চৌকস সেনাপতি সখিনাকে কিছুটা চিনতে পেরে নিশ্চিত হওয়ার জন্য এক কুটনৈতিক চাল চালেন। আর তাহল এই, সেনাপতি হঠাৎ ঘোষনা করলেন যে, ফিরোজ খাঁ সখিনাকে তালাক দিয়েছে তাই যুদ্ধ সমাপ্ত করা উচিৎ। এমনকি একটি জাল তালাকনামাও দেখান। এ কথা শোনার সাথে সাথে সখিনার হাত থেকে তরবারি ছিটকে পরে এই ভেবে যে, যার জন্য আমি আমার প্রাণের চেয়েও প্রিয় পিতার সাথে ছদ্মবেশে যুদ্ধ করছি সেই কিনা আমাকে তালাক দিল! তিনি আর সহ্য করতে পারলেন না, হার্ট এটাক করেন এবং ঘোড়া থেকে মাটিতে পরে মৃত্যু বরন করেন। এবার পিতা তার একমাত্র কণ্যাকে চিনতে পেরে শোকে কাতর হয়ে পরেন এবং মামণিকে বুকে ঝড়িয়ে শিশুর মত ডুকরে কাঁদতে থাকেন। যুদ্ধ শেষ হয়। এদিকে ফিরোজ খাঁ এরকম নজির বিহীন পতিপ্রাণা স্ত্রীকে হারিয়ে পাগল হয়ে যান। যে কারনে ইতিহাসে তিনি বিরঙ্গনা সখিনা নামে খ্যাত। এ ঘটনার পর শোকার্ত খাজা আব্দুর রহীম খান তার দুই পুত্রকে নিয়ে তাজপুর ছেড়ে নিকলী থানার সিংপুর গ্রামে চলে আসেন এবং এখানে তারা বসতি স্থাপন করেন। বিরাম খানের ছিল দুই পুত্র, যথাঃ বাহরাম খান ও বাহাদুর খান। আর বৈরাম খানের ছিল দুই পুত্র, যথাঃ খিজির খান ও কিশওয়ার খান। পরবর্তীতে বিরাম খান তার দুই পুত্রকে নিয়ে সিংপুর ছেড়ে মিঠামইনের গোপদিঘী গ্রামে চলে আসেন। এখানে দীর্ঘ দিন একত্রে বসবাস করার পর বাহরাম খান চলে আসেন ইটনা উপজেলার শিমুলবাগ গ্রামে। বাহরাম খানের ছিল এক ছেলে ইন্তাজ খান। আর বাহাদুর খানের ছিল দুই ছেলে, যথাঃ সুজাত খান ও লাল খান। সুজাত খানের কোন পুত্র সন্তান ছিলনা। আর লাল খানের ছিল তিন পুত্র, যথাঃ আল্মামা ইবারত খান, সালামত খান ও মুসলিম খান। পিতার মৃত্যুর পর তিনিও গোপদিঘী ছেড়ে স্বপরিবারে চলে আসেন ইটনা উপজেলার বড় হাতকবিলা গ্রামে এবং সেখানে স্থায়ী ভাবে বসবাস করতে থাকেন। আল্লামা এবারত খানের ছিল তিন পুত্র, যথাঃ আল্লামা আহমদ আলী খান, ইসমাঈল খান ও মাওলানা ইলিয়াস খান। সালামত খানের ছিল পাঁচ পুত্র তন্মদ্ধে সর্ব কনিষ্ট ছিলেন সুলতান উদ্দীন পাঠান। আর মুসলিম খানের ছিল তিন পুত্র, যথাঃ তাহের আলী খান, আশরাফ আলী খান ও আব্দুস সালাম খান পাঠান স্যার। এদিকে আল্লামা আহমদ আলী খানের ছিল একমাত্র পুত্র সাবেক এমপি মাওলানা আতাউর রহমান খান (রহঃ)। এরপর থেকে আমরা ভাই ও চাচাতো ভায়াচারী সবাই মিলে বড় হাতকবিলা গ্রামের খান বাড়ীতেই বসবাস করছি।  এই ছিল আমাদের বংশের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস। এরিমধ্যে যেসব স্থান আমাদের পূর্ব পুরুষরা ছেড়ে এসেছেন সেসব স্থানে এবং সেসব স্থান থেকেও বিভিন্ন জায়গায় বিস্তারের মাধ্যমে পাঠান বংশ বা খান বংশ আজ বাংলা দেশের বনেদী বংশ গুলোর মধ্যে শ্রেষ্টত্বের দাবীদার।। 

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ