শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
Call

আমার লেখার এই গল্পটি পড়ুনঃ-


প্রকৃত বন্ধু”
রাজু দাশ রুদ্র

একজনকে বন্ধু বলা যতটা সহজ, ততটাই কঠিন বন্ধুত্ব রক্ষা করা । ডাক্তার এ.পি.জে আব্দুল কালাম বলেছেন – “একটি ভালো বই একশত বন্ধুর সমান । কিন্তু একজন ভালো বন্ধু একটি লাইব্রেরীর সমান” । বন্ধুত্ব হচ্ছে ঠিক চুইংগামের মতো । চুইংগামের আটার মতো একবার মনের ভিতর স্থান নিয়ে নিলেই হলো, পড়ে আর হাজার চেষ্টা করে ছাড়াতে চাইলেও তা ছাড়াতে সম্ভব না ।

বিখ্যাত সমাজসেবক হেলেন কেলারের কথা মনে আছে নিশ্চয়ই? যিনি বলেছিলেন – “একাকী আলোয় হাঁটার চেয়ে একজন বন্ধুর সাথে হাঁটা উত্তম” । তাই মানবজীবনে ভালো একজন বন্ধু বানাতে হলে তাকে প্রথমে পরিক্ষা করে নিতে হয় যে, তার মধ্যে কি বন্ধুত্বের গুণ আছে? সে কি পারবে বন্ধুত্ব রক্ষা করতে?
বন্ধুত্ব সবার সাথেই করা যায় । বন্ধুত্বের জন্য প্রয়োজন ভালো মনমানসিকতা । বন্ধু কখনো হয় বিদ্যালয়ের শিক্ষকের সাথে, কখনো হয় দুষ্টু ছেলেদের সাথে । যারা অনেক দুষ্টু হওয়া সত্বেও জানে কিভাবে বন্ধুত্ব রক্ষা করতে হয় । বন্ধুত্ব সবকিছুর একমাত্র সঙ্গী । মনের বাঁধ ভাঙ্গা উচ্ছ্বাস, আবেগ আর ছেলেমানুষী হুল্লোলের অপর নামই তো হলো বন্ধুত্ব । সেই তো বন্ধু; যে জানে কিভাবে বন্ধুত্ব রক্ষা করতে হয় । সেই তো বন্ধু; যার বন্ধুত্ব অর্থ দিয়ে কেনা যায় না, না বন্ধুত্ব করে নেওয়া যায় গায়ের প্রবল জোড় দিয়ে । বন্ধুত্বের জন্য চাই শুধু গুণ ।
দুজনকে পাশাপাশি রেখে বন্ধু হতে বললেই বন্ধুত্ব হয়ে যায় না । প্রেমের মতোই বন্ধুত্ব হলো সাবলীল এবং স্বতঃস্ফুর্ত । ফলে কোনো প্রিয় বন্ধুরা কখনোই একসঙ্গে থাকলে চুপচাপ থাকবে না । বন্ধুত্ব হওয়ার পর যদি হাসি, ঠাট্টা – মশকরা নাইবা করে তাহলে সে বন্ধুত্ব না করাই শ্রেয় । জোর করে বন্ধুত্ব রাখা বা আদায় করা যায় না ।

বন্ধুত্ব চিরকালের । হতে পারে স্কুল জীবন শেষ করে আমরা অনেকে আলাদা হয়ে যাব । দুজন নতুন শহরে আলাদাভাবে বসবাস করব । তারপর প্রাত্যহিক জীবনের নানা কর্মকান্ডে ব্যস্ত হয়ে পড়ব । কিন্তু এত কিছুর পরও ভালো বন্ধুত্ব কখনো হারিয়ে যায় না । কেনোনা বন্ধুত্ব চিরকালের । দুজন ভালো বন্ধু কখনো একে অপরকে ভুলে যাবে না । শত কষ্টের মাঝেও তার খোঁজ-খবর নিবে । বরং আরো বেশি করে একে অপরকে মনে করবে এবং ব্যস্থতা কাটিয়ে সময় পেলে দুজনে দেখা করবে নিজেদের পুরোনো বন্ধু মহলে । যেখানে বসে আড্ডা দিত সবাই মিলে । দেখা হলেই বন্ধু পিঠে কিল বসিয়ে বলবে, “এতদিন একবারও খবর নিস নি, বেঁচে আছি কি না মরে গেছি একবারও জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন মনে করিস নি” । বন্ধুত্ব এমনই হওয়া উচিৎ । যে বন্ধুত্বে মিথ্যে ঝগড়ার বদলে থাকবে আড্ডা, রাগ ও অভিমান । আবার রাগ অভিমান করে পরস্পরকে ভুলে গেলে সেটা কখনোই প্রকৃত বন্ধুত্ব নয় । যে যেখানেই, যে অবস্থাতেই থাকুক না কেন, যেকোনো উপায়ে একে অপরের সাথে সংযুক্ত থাকা এবং মনের ভাব আদা-প্রদান করার চেষ্টার মধ্য দিয়ে বন্ধুত্ব জিইয়ে রাখতে হয় ।

কথায় আছে বিশ্বাস ভালোবাসার শক্তি । বিশ্বাস ছাড়া ভালোবাসা বা বন্ধুত্ব কখনোই ঠিকসই হয় না । আর বন্ধুত্বে বিশ্বাস রক্ষা করা খুবই জরুরী । এই পৃথিবীর কোনো মানুষই মানুষের ভালো চায় না । তারা সবসময় চাইবে কিভাবে দুজন বন্ধুর বন্ধুত্ব ভাঙ্গা যায় । তৃতীয় পক্ষের কোনো ব্যক্তির কথার সূত্র ধরে কখনোই নিজেদের এতবছরের বন্ধুত্ব নষ্ট করে ভুল করো না । প্রকৃত বন্ধু কখনোই একে অপরের ক্ষতি চাইবে না বরং কোথায় নিজেদের দোষ আছে সেটা দুজন দুজনকে ধরিয়ে দিবে । একজন প্রকৃত বন্ধুকে সর্বদা এই বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হয়, তবেই তো সে একজন প্রকৃত বন্ধু হিসেবে বিবেচিত হবে ।

এক বন্ধুর বিপদে কোনোরকম চিন্তা-ভাবনা ছাড়াই অন্য বন্ধুর বিপদ-আপদে সাড়া দেওয়াই হচ্ছে প্রকৃত বন্ধুত্বের পরিচয় । প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে, সময়-অসময়ে অন্য বন্ধুর সাহায্য করা উচিৎ । এতে পিছপা হয়ে গেলে সে প্রকৃত বন্ধুত্বের মর্যাদাকে সেখানেই নষ্ট করে ফেলে ।

একজন প্রকৃত বন্ধু সর্বদা চায় বন্ধুর ভালো । নিজের ভালো হোক সকলেই চায়, তবে তার জন্য বন্ধুর ক্ষতি হোক এমন ভাবা কিন্তু প্রকৃত বন্ধুর পরিচায়ক নয় । একজন ভালো বন্ধুর সর্বদাই চাইবে তার ভালোর পাশাপাশি তার বন্ধুরও ভালো হোক ।
ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ