কথা বলতে বলতে কারো সাথে ঘনিষ্ঠতা হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়, আপনাদের ক্ষেত্রেও বিষয়টা পুরোপুরি স্বাভাবিক ছিলো।
সমস্যাটা বাধে তখনই যখন দুইজন এই 'ঘনিষ্ঠতা'-কে ভিন্ন ভাবে ইন্টারপ্রেট করে। আপনি তাকে শুধুই কথা বলার সঙ্গী হিসেবে বিবেচনা করেছেন, কিন্তু তিনি বিষয়টা অন্যভাবে নিয়েছেন।
তবুও, ঘটনার এই অংশ পর্যন্ত আপনারা দুজনই নির্দোষ।
উনি যখন তার মনের কথা আপনাকে জানান তখন আপনি তাকে সত্যি কথাটাই বলেন, আপনি তাকে ভালোবাসেননা। ঐ মুহুর্তে ওনার উচিত ছিলো বাস্তবতা মেনে নেয়া। কিন্তু অন্ধ প্রেম মানুষকে সত্যিই অন্ধ করে দেয়... সেই অন্ধত্ব থেকেই তিনি আপনাকে নানান কথা বলে ইমোশনালি ব্ল্যাকমেইল করতে শুরু করেন। প্রাথমিকভাবে একজন সুবুদ্ধি সম্পন্ন ব্যক্তি তার এসব অতিসাহিত্যিক বাক্য উপেক্ষা করতো, আপনি তা না করে তার কথার জালে ধরা দেন। আপনার মতো সেন্টিমেন্টাল মানুষরা এজাতীয় ঘটনায় সহজেই ভেঙ্গে পড়ে। অথচ একটু রিয়ালিস্টিকভাবে চিন্তা করলেই আপনি বুঝতে পারবেন যে উক্ত ব্যক্তি, রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা বখাটে ছেলেগুলোর চেয়েও নিকৃষ্ট, বিশেষ করে উনি যখন আপনাকে হুমকি দিতে শুরু করেন তখনই এবিষয়ে আপনার নিশ্চিত হওয়া উচিত ছিলো।
তো, এই পর্যন্ত যাচাই করে আমরা যে পয়েন্টগুলো পাই সেগুলো হলো-
-
আপনি আপনার এলাকার কোন একজনের সাথে ফেসবুকে কথাবার্তা বলতে শুরু করেন,
-
এক পর্যায়ে আপনাদের মধ্যে কিছুটা ঘনিষ্ঠতার উদ্ভব হয়,
-
তিনি আপনার বিরক্তিহীন কথা চালিয়ে যাওয়ার প্রবণতাকে প্রেম করার সবুজ সংকেত হিসেবে গ্রহণ করেন,
-
আপনাকে প্রপোজ করেন,
-
তার প্রতি এজাতীয় কোনো ফিলিংস না থাকায় আপনি তা প্রত্যাখ্যান করেন,
-
ওনার মনে হয় আপনি ওনাকে একটু একটু ভালোবাসেন, পুরোপুরি এক্সপ্রেস করতে সংশয় বোধ করছেন,
-
ভাবতে ভাবতে তার মাথায় একটা বুদ্ধি আসে, "আমি যদি ওকে ইমোশনাল কথাবার্তা বলি তাহলে সংশয়টা কেটে যাবে, নারিদের মনতো বরফের মতো"
-
শুরু হলো ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল,
-
আপনি সেগুলো প্রত্যক্ষভাবে এড়িয়ে গেলেও, পরোক্ষভাবে এগুলোর প্রভাবে আপনার মনের মধ্যে অপরাধবোধ সৃষ্টি হতে থাকে,
-
এদিকে উনি যখন দেখলেন "নারীর মন বরফের মত" -এই থিওরিটা ফেইল, তো এবার "নারীরা ভিতু" এই থিওরির এডভান্টেজ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন,
-
আপনাকে হুমকি দিলেন,
-
আপনি প্রত্যক্ষভাবে ভয় না পাওয়ার ভান করলেন, কিন্তু ঘুরেফিরে সেই ভয় মনের মধ্যে উঁকিঝুঁকি দেয়া শুরু করলো,
-
ইতোমধ্যে জন্মানো অপরাধবোধ আর ভয়ের তাড়নায় আপনি মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়লেন।
এতটুকু পর্যন্ত এসে আপনার চিন্তাধারায় কোনো পরিবর্তন আসলো কি? আপনার মস্তিষ্ক আর স্বাভাবিক মানুষের মস্তিষ্কে তফাত না থাকলে আশা করি এটুকু বুঝতে পেরেছেন যে আপনার অপরাধবোধটা একদমই নিরর্থক।
তাছাড়া, কার জন্য এই অপরাধবোধ? যাত্রাপালার নায়ক চরিত্রে অভিনয় করা ব্যক্তির জন্য?
নিজেকে বুঝিয়ে-শুনিয়ে কিছুদিন চুপচাপ নাটক দেখে যান... দেখবেন নায়ক ঠিকই নতুন স্টেজে, নতুন কোনো নায়িকা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।
আর যদি দ্বিতীয় নাটক দেখার আগেই উল্টাপাল্টা কিছু করে বসেন তাহলে নিজের নাটক আর পরবর্তী নাটক দুইটার সমাপ্তিই মিস করবেন।
আমার প্রতীকী কথাবার্তা বুঝতে কোনো সমস্যা হয়নি আশা করি। এটা একটা লাইফ লেসন, শিক্ষা নিন, তাহলে ভবিষ্যতে এরকম কিছুর পুনরাবৃত্তি ঘটবেনা। আপনি ইউনিক, দ্বিতীয় কোনো মিরা রহমান আপনাকে রিপ্লেস করবেনা, তাই অন্যের খেয়ালিপনায় নিজের সম্ভাবনাময় জীবন অন্ধকারের দিকে নিয়ে যাবেননা।
মাঝেমধ্যে খারাপ লাগলে ভালোভাবে কাউন্সিলিং করতে পারবে এরকম কারো সাথে কথা বলুন, একদিনে না হলেও শীঘ্রই আপনার মন থেকে সব আজেবাজে চিন্তা দূর হয়ে যাবে।