ট্যারা কী? সাধারণত কোনো কিছুর দিকে তাকালে দুই চোখের মণি একই সঙ্গে একইভাবে নড়ে। এভাবে স্বাভাবিক চোখে মণি দুটো একই রেখায় থাকে। কিন্তু ট্যারা চোখে একসঙ্গে দুই চোখের মণি একইভাবে নড়াচড়া করে না। এ কারণে দৃষ্টি একটি নির্দিষ্ট বিন্দুতে মেলে না। অন্য কেউ দেখলে মনে হবে দুই চোখের মণি দুই দিকে তাকিয়ে আছে। সাধারণত ট্যারা হয় ডানে বা বাঁয়ে। তবে ওপরে-নিচের দিকেও হতে পারে। কিছু ট্যারা আছে, যা সব সময় বোঝা যায় না, বিশেষ কোনো দিকে তাকালে বোঝা যায়। ট্যারার কয়েকটি প্রকার আছে। প্রকারভেদে এর কারণ ও চিকিৎসাও আলাদা হতে পারে। ট্যারা কেন হয়? অনেক কারণে ট্যারা হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে কারণও জানা যায় না। সাধারণ কারণগুলো- * জন্মগত: শিশু জন্ম থেকেই ট্যারা চোখ নিয়ে জন্মায়। * মায়োপিয়া : স্বল্পদৃষ্টিজনিত সমস্যা। এতে দূরের বস্তু দেখার অসুবিধা দেখা যায়। * হাইপারোপিয়া : কাছের বস্তু দেখার অসুবিধাজনিত ত্রুটি। * অস্টিগম্যাটিজম : যখন চোখের কর্নিয়া অমসৃণভাবে বাঁকানো থাকে। এতে চোখে ঝাপসা দেখার সমস্যা তৈরি হয়। * দৃষ্টিশক্তিজনিত ত্রুটি থেকেও ট্যারা হয়। সাধারণত শিশুর বয়স দুই বছর হওয়ার পর থেকে এটা দেখা যায়। * ছোটবেলায় কিছু ভাইরাল ইনফেকশন হলে, যেমন হাম। * ডাউন সিনড্রোমের মতো কিছু জেনেটিক কারণ। * হাইড্রোসেফালাস বা মস্তিষ্কে পানি জমার মতো অসুখ হলে। * চোখের মাংসপেশির অস্বাভাবিক আচরণ। * মা-বাবার মতো নিকটাত্মীয়ের যদি চোখের ট্যারা সমস্যা থাকে। * সেরেব্রাল পালসি বা স্নায়ুতান্ত্রিক কিছু সমস্যা থাকলে। * সময়ের আগেই জন্মানো শিশু (প্রিম্যাচিউর বেবি) বা স্বল্প ওজন নিয়ে জন্মানো শিশু। * আঘাতে চোখের মাংসপেশি ক্ষতিগ্রস্ত হলে। কেন চিকিৎসা দরকার ট্যারা চোখের জন্য সৌন্দর্যহানি হয় কিন্তু তার চেয়ে বেশি ক্ষতি হয় চোখের। তাই রোগটি নির্ণিত হওয়ার পর যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসা করা জরুরি। প্রথমে নির্ণয় করা জরুরি কী কারণে ট্যারা হয়েছে। কারণের ওপর ভিত্তি করেই হয় চিকিৎসা। শিশুদের ক্ষেত্রে ট্যারা ধরা পড়ামাত্র চিকিৎসা করা দরকার। অন্যথায় চোখের গঠন ত্রুটিযুক্ত হতে পারে, দৃষ্টিশক্তির স্থায়ী ক্ষতি হতে পারে। সাধারণত প্রাপ্তবয়স্কদের যদি ট্যারা সমস্যা থাকে, তারা একই বস্তু দুটি দেখেন। শিশুদের ক্ষেত্রে দ্বি-দৃষ্টির এ সমস্যাটি হয় না। কারণ শিশুদের মস্তিষ্ক গঠন তখনো চলতে থাকে। মস্তিষ্ক দ্বি-দৃষ্টির সমস্যাটিকে নিজেই সমাধান করে।