Masumakonda

Call

আপনাকে অবশ্যই ব্যাকরণ জানতে হবে। তাহলেই বুঝবেন।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ
Call

কাজী নজরুলের কবিতা মানেই এক মহাসমুদ্র। আর সেখানে যদি বিদ্রোহী কবিতা হয়, তো কথাই নেই। এ কবিতার ব্যাখ্যা যুগ যুগ ধরে করলেও শেষ হবার নয়। তারপরও আপনার বুঝার স্বার্থে নীচে ভেঙ্গে ভেঙ্গে কিছুটা ব্যাখ্যা সংকলন করে দিলাম। আশা করি যথেষ্ঠ সহায়ক হবে- বল বীর- বল উন্নত মম শির! শির নেহারী' আমারি নতশির ওই শিখর হিমাদ্রীর! বল বীর- বল মহাবিশ্বের মহাকাশ ফাড়ি চন্দ্র সূর্য্য গ্রহ তারা ছাড়ি ভূলোক দ্যূলোক গোলোক ভেদিয়া খোদার আসন আরশ ছেদিয়া, উঠিয়াছি চির-বিস্ময় আমি বিশ্ববিধাতৃর! মম ললাটে রুদ্র ভগবান জ্বলে রাজ-রাজটীকা দীপ্ত জয়শ্রীর! (ভূলোক মানে পৃথিবী, দ্যুলোক মানে স্বর্গ, আর গোলক মানে বিষ্ণুলোক অথবা স্বর্গে বিষ্ণু বা কৃষ্ণের বাসস্হান। কৃষ্ণ-রাধার বৃন্দাবন এখানেই অবস্থিত। ঋগ্বেদে রুদ্র বজ্রের দেবতা, গ্রীক মিথের 'থর' এর মত। ক্ষেপে গেলে বজ্র ছুড়ে মারেন। ইনি ব্রহ্মার পুত্র। তার ক্রোধে নেমে আসে ধ্বংস আর মহামারী।) বল বীর-আমি চির-উন্নত শির! আমি চিরদুর্দম, দূর্বিনীত, নৃশংস, মহাপ্রলয়ের আমি নটরাজ, আমি সাইক্লোন, আমি ধ্বংস! আমি মহাভয়, আমি অভিশাপ পৃথ্বীর, আমি দূর্বার, আমি ভেঙে করি সব চুরমার! (মহাদেব মহাপ্রলয়ের সময় তান্ডব নৃত্য নেচেছিলেন, গজাসুর ও কালাসুরকে বধ করেও তিনি তান্ডব নৃত্য নেচেছিলেন। এই তান্ডব নৃত্যকলার উদ্ভাবক হিসেবে তাকে নটরাজ ডাকা হয়। পৃথু ছিলেন অত্রি বংশের অত্যাচারী রাজা বেন এর পুত্র। রাজা বেন এর মৃত্যুর পর তার ডান বাহু থেকে পৃথুর জন্ম। প্রজা কল্যানার্থে পৃথু পৃথিবীকে বশ করেন। তার রাজত্বকে বলা হয় পৃথু।) আমি অনিয়ম উচ্ছৃঙ্খল, আমি দলে যাই যত বন্ধন, যত নিয়ম কানুন শৃঙ্খল! আমি মানি না কো কোন আইন, আমি ভরা-তরী করি ভরা-ডুবি, আমি টর্পেডো, আমি ভীম ভাসমান মাইন! আমি ধূর্জটী, আমি এলোকেশে ঝড় অকাল- বৈশাখীর আমি বিদ্রোহী, আমি বিদ্রোহী-সুত বিশ্ব- বিধাতৃর! বল বীর-চির-উন্নত মম শির! (ভীম পাঁচ পান্ডবদের একজন। কুন্তির গর্ভে এবং বায়ুর ঔরসে এর জন্ম। দুর্যোধন তাকে হত্যার জন্য তার খাবারে বিষ মিশিয়ে অজ্ঞান করে পানিতে ফেলে দেন। পানিতে নাগরাজ বাসুকীর কৃপায় ভীম বেঁচে যান এবং আরো শক্তিশালী হয়ে ফিরে আসেন। কবি 'ভাসমান মাইনে'র সাথে ভীম বিশেষন সম্ভবত একারনের এনেছেন। 'ধূর' শব্দের অর্থ জটাভার বা ত্রিলোকের চিন্তাভার। শিব তার মাথায় জটাভার ধারণ করেন অথবা ত্রিলোকের চিন্তাভার ধারণ ও বহন করেন। এসকল ভার বহন ও ধারণের কারণে তারই নাম ধূর্জটি।) আমি ঝঞ্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সম্মুখে যাহা পাই যাই চূর্ণি। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বীর, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি ছমকি পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি ফিং দিয়া দেই তিন দোল আমি চপোলা-চপোল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝঞ্ঝা! আমি মহামারী, আমি ভীতি এ ধরীত্রির; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ণ চির অধীর। বল বীর-আমি চির-উন্নত শির! (হাম্বীর, হিন্দোল হল সান্ধ্য রাগিনী বিশেষ। ) আমি চির-দূরন্ত দুর্মদ আমি দূর্দম মম প্রাণের পেয়ালা হর্দম্ হ্যায় হর্দম্ ভরপুর্ মদ। আমি হোম-শিখা, আমি সাগ্নিক জমদগ্নি, আমি যজ্ঞ, আমি পুরোহিত, আমি অগ্নি। আমি সৃষ্টি, আমি ধ্বংস, আমি লোকালয়, আমি শ্মশান, আমি অবসান, নিশাবসান। আমি ঈন্দ্রাণী-সুত হাতে চাঁদ ভালে সূর্য মম এক হাতে বাঁকা বাঁশের বাঁশরী আর হাতে রণ তূর্য; আমি কৃষ্ণ-কন্ঠ, মন্থন-বিষ পিয়া ব্যথা বারিধির। আমি ব্যোমকেশ, ধরি বন্ধন-হারা ধারা গঙ্গোত্রীর। বল বীর-চির-উন্নত মম শির! (সাগ্নিক মানে যে আগুন সবসময় জ্বলে। জমদগ্নি হলেন চার প্রকার বেদেই পন্ডিত বৈদিক ঋষি। রেনুকা ছিলেন তার স্ত্রী। একদিন গোসল করতে গিয়ে রাজা চিত্ররথকে তার স্ত্রীদের সাথে জল-ক্রীড়া করতে দেখে রেনুকা কামোত্তেজিত হয়ে বাড়ি ফেরেন। স্ত্রীর চেহারা দেখে জমদগ্নি ভুল সন্দেহ করে বসেন এবং রেনুকাকে হত্যা করতে তার পুত্রদের নির্দেশ দেন। একে একে চার পুত্র অপারগতা প্রকাশ করলে ক্রোধান্ধ জমদগ্নি তাদের সবাইকে অভিশাপ দিয়ে পাথর করে দেন। ইন্দ্রানী ইন্দ্রের স্ত্রী এবং তার 'সুত' বা পুত্রের নাম জয়ন্ত। রমায়নে ইনি বিক্রমের সাথে রাক্ষসসেনাদের বিরুদ্ধে লড়েছিলেন। একদা সমুদ্র মন্থনের ফলে সমুদ্রের তলা থেকে ভয়ঙ্কর বিষ উঠে আসে, যাতে পৃথিবী ধংসের উপক্রম হয়। ব্রহ্মার অনুরোধে শিব বা মহাদেব সেই বিষ শুষে নেন। বিষের প্রভাবে তার গলা নীল হয়ে যায়। তাই তাকে ডাকা হয় নীলকণ্ঠ বা কৃষ্ণ কন্ঠ। ব্যোমকেশ মানেও শিব। স্বর্গ থেকে গঙ্গায় অবতরন কালে তার জটা আকাশময় ছড়িয়ে গিয়েছিল বলে এই নাম। অযোধ্যার রাজা সগরের অশ্বমেধযজ্ঞের অশ্ব চুরি করেছিলেন ইন্দ্র। সেই অশ্ব খুজতে খুজতে সগরের ৬০,০০০ সন্তান পাতালে কপিলের আশ্রমে গিয়ে তা খুঁজে পায়। কপিল মুনিকে ঘোড়াচোর ভাবার কারনে কপিল মুনি তাদের পুড়িয়ে ছাই করে দেন। একমাত্র গঙ্গার জলের ছোয়া পেলে এরা আবার বেঁচে উঠবেন। কিন্তু গঙ্গা তো থাকেন স্বর্গে, শুরু হল তাকে পৃথিবীতে আনার উপাসনা। সগর ব্যর্থ, অংশুমান ব্যর্থ, দীলিপও ব্যর্থ। অবশেষে ৪র্থ পুরুষ ভগীরথ ব্রহ্মাকে তুস্ট করলেন। অতঃপর শিবের সহায়তায় গঙ্গাকে পৃথিবীতে আনা হয়েছিল।) আমি সন্ন্যাসী, সুর সৈনিক, আমি যুবরাজ, মম রাজবেশ ম্লান গৈরিক। আমি বেদুইন, আমি চেঙ্গিস, আমি আপনারে ছাড়া করি না কাহারে কূর্ণিশ আমি বজ্র, আমি ঈষাণ-বিষানে ওঙ্কার, আমি ইস্রাফিলের শৃঙ্গার মহা-হুঙ্কার, আমি পিনাক-পাণির ডমরু ত্রিশুল, ধর্মরাজের দন্ড, আমি চক্র-মহাশঙ্খ, আমি প্রণব-নাদ প্রচন্ড! আমি ক্ষ্যাপা দুর্বাসা, বিশ্বামিত্র-শিষ্য, আমি দাবানল-দাহ, দহন করিব বিশ্ব। আমি প্রাণ-খোলা হাসি উল্লাস, -আমি সৃষ্টি- বৈরী মহাত্রাস আমি মহাপ্রলয়ের দ্বাদশ রবির রাহু-গ্রাস! (চেঙ্গিশ খান ছিলেন মঙ্গোলিয়ান সম্রাট এবং দুর্ধর্ষ সমরনায়ক। যুবক চেঙ্গিসের স্ত্রীকে অপহরন করে নিয়ে যায় আরেক গোত্র প্রধান। চেঙ্গিস খান তার নিজ গোত্রকে পুনর্গঠিত করে অপহরনকারী গোত্রকে নৃশংস ভাবে পরাস্ত করে স্ত্রীকে উদ্ধার করেন। এরপর অন্যান্য মোঙ্গল গোত্রদের একীভুত করে অর্ধেক বিশ্ব জয় করেন। ইসলাম ধর্মমতে কেয়ামত বা মহাপ্রলয় শুরুর আগে ইস্রাফিল নাম্মী ফেরেস্তা শৃঙ্গার বাজাবেন। পিনাক-পানি শিবের অন্য নাম। পিনাক নামে তার ব্যবহৃত সরঞ্জাম যা যুদ্ধে ধনুক হিসেবে তিনি ব্যবহার করতেন, অন্যসময় বাদ্যযন্ত্র হিসেবে। ধর্মরাজ যমের অন্যনাম, যিনি নরকের অধীশ্বর দেবতা এবং দেবগনের মধ্যে সবচে পুন্যবান। দন্ডের সাহায্যে ইনি জীবের প্রান সংহার করেন। দুর্বাসা ক্ষ্যাপাটে এক মুনি।এমন ক্ষ্যাপা যে নিজের স্ত্রীকে কথা দিয়েছিলেন যে তার শত ত্রুটি তিনি মার্জনা করবেন, এবং ঠিক ১০১ তম বার শাপ দিয়ে পুরিয়ে ছাই করে ফেলেছিলেন। এর শাপে ইন্দ্র শ্রীভ্রষ্ঠ হন, শকুন্তলা দুষ্মন্ত কর্তৃক পরিত্যাক্তা হন, মানে পান থেকে চুন খসলেই তিনি রেগে গিয়ে শাপশাপান্ত দিয়ে অস্থির করে ফেলতেন। বিশ্বামিত্র ছিলেন ব্রহ্মার্ষি, যিনি ক্ষত্রিয় হয়ে জন্মেও তপস্যাবলে ব্রাহ্মন হয়েছিলেন। তার অধ্যবসায় দৃষ্টান্তমূলক। রাহু এক দানব, যিনি দেবতা সেজে কৃষ্ণের দেয়া সুধা পান করার সময় চন্দ্র আর সুর্য্যের কারনে ধরা পরে যান। ক্রুদ্ধ বিষ্ণু তার সুদর্শন চক্রের আঘাতে এর মাথা কেটে ফেললেও স্বর্গসুধা পানের কারনে ততক্ষনে সে অমরত্ব লাভ করেছে। সেই থেকে মাথার নাম রাহুই থাকল, আর দেহের নাম হল কেতু। রাহু চান্স পেলেই চন্দ্র সুর্য্যকে গিলে ফেলে গ্রহন ঘটায়।) আমি কভু প্রশান্ত, -কভু অশান্ত দারুণ স্বেচ্ছাচারী, আমি অরুণ খুনের তরুণ, আমি বিধির দর্পহারী! আমি প্রভঞ্জনের উচ্ছাস, আমি বারিধির মহাকল্লোল, আমি উজ্জ্বল, আমি প্রোজ্জ্বল, আমি উচ্ছল জল-ছল-ছল, চল ঊর্মির হিন্দোল-দোল!- আমি বন্ধনহারা কুমারীর বেনী, তন্বী নয়নে বহ্নি, আমি ষোড়শীর হৃদি-সরসিজ প্রেম উদ্দাম, আমি ধন্যি! আমি উন্মন, মন-উদাসীর, আমি বিধবার বুকে ক্রন্দন-শ্বাস, হা-হুতাশ আমি হুতাশীর। আমি বঞ্চিত ব্যথা পথবাসী চির গৃহহারা যত পথিকের, আমি অবমানিতের মরম-বেদনা, বিষ-জ্বালা, প্রিয় লাঞ্ছিত বুকে গতি ফের আমি অভিমানী চির ক্ষূব্ধ হিয়ার কাতরতা, ব্যাথা সূনিবিড়, চিত চুম্বন-চোর-কম্পন আমি থর থর থর প্রথম পরশ কুমারীর! আমি গোপন-প্রিয়ার চকিত চাহনি, ছল করে দেখা অনুখন, আমি চপল মেয়ের ভালোবাসা, তাঁর কাঁকণ-চুড়ির কন-কন। আমি চির শিশু, চির কিশোর, আমি যৌবন-ভীতু পল্লীবালার আঁচর কাঁচুলি নিচোর! আমি উত্তর-বায়ু মলয়-অনিল উদাস পূরবী হাওয়া, আমি পথিক-কবির গভীর রাগিণী, বেণু-বীণে গান গাওয়া। আমি আকুল নিদাঘ-তিয়াসা, আমি রৌদ্র-রুদ্র রবি আমি মরু-নির্ঝর ঝর-ঝর, আমি শ্যামলিমা ছায়াছবি! আমি তুরীয়ানন্দে ছুটে চলি, এ কি উন্মাদ আমি উন্মাদ! আমি সহসা আমারে চিনেছি, আমার খুলিয়া গিয়াছে সব বাঁধ! আমি উত্থান, আমি পতন, আমি অচেতন চিতে চেতন, আমি বিশ্বতোরণে বৈজয়ন্তী, মানব-বিজয়- কেতন। ছুটি ঝড়ের মতন করতালী দিয়া স্বর্গ মর্ত্য-করতলে, তাজী বোর্রাক্; আর উচ্চৈঃশ্রবা বাহন আমার হিম্মত-হ্রেষা হেঁকে চলে! আমি বসুধা-বক্ষে আগ্নেয়াদ্রী, বাড়ব বহ্নি, কালানল, আমি পাতালে মাতাল, অগ্নি-পাথার-কলরোল- কল-কোলাহল! আমি তড়িতে চড়িয়া, উড়ে চলি জোড় তুড়ি দিয়া দিয়া লম্ফ, আমি ত্রাস সঞ্চারি ভুবনে সহসা, সঞ্চারি ভূমিকম্প। ধরি বাসুকির ফণা জাপটি ধরি স্বর্গীয় দূত জিব্রাইলের আগুনের পাখা সাপটি। (বোররাক দ্রুতগতির স্বর্গীয় বাহন, যাতে করে মহানবী (সাঃ) মেরাজে গিয়েছিলেন। উচ্চৈঃশ্রবা ইন্দ্রের বাহন, যা সমুদ্রমন্থনের সময় জন্ম নেয় এবং অশ্বশ্রেষ্ঠ বলে পরিগনিত। বাসুকি নাগরাজ, ইনি কশ্যপ ও কদ্রুর পুত্র এবং মনসার ভাই। জিব্রাইল একজন ফেরেস্তা যিনি স্বর্গীয় দুত হিসেবে কাজ করেন।) আমি দেবশিশু, আমি চঞ্চল, আমি ধৃষ্ট, আমি দাঁত দিয়া ছিঁড়ি বিশ্ব-মায়ের অঞ্চল! আমি অর্ফিয়াসের বাঁশরী, মহা-সিন্ধু উতলা ঘুম্ঘুম্ ঘুম্ চুমু দিয়ে করি নিখিল বিশ্বে নিঝ্ঝুম মম বাঁশরীর তানে পাশরি’। আমি শ্যামের হাতের বাঁশরী। আমি রুষে উঠে যবে ছুটি মহাকাশ ছাপিয়া, ভয়ে সপ্ত নরক হাবিয়া দোযখ নিভে নিভে যায় কাঁপিয়া! আমি বিদ্রোহ-বাহী নিখিল অখিল ব্যাপিয়া! আমি শ্রাবণ-প্লাবন-বন্যা, কভু ধরনীরে করি বরণীয়া, কভু বিপুল ধ্বংস ধন্যা- আমি ছিনিয়া আনিব বিষ্ণু-বক্ষ হইতে যুগল কন্যা! আমি অন্যায়, আমি উল্কা, আমি শনি, আমি ধূমকেতু জ্বালা, বিষধর কাল-ফণী! আমি ছিন্নমস্তা চন্ডী, আমি রণদা সর্বনাশী, আমি জাহান্নামের আগুনে বসিয়া হাসি পুষ্পের হাসি! (অর্ফিয়াস বা ওর্ফেউস একটি গ্রিক পৌরাণিক চরিত্র, যিনি বাদ্যযন্ত্রের সুরের মুর্ছনায় পাথরেও প্রান সঞ্চার করতে পারতেন। শ্যাম মানে কৃষ্ণ, ইনিও তার বাঁশি বাজিয়ে মুগ্ধ করতেন। যুগল কন্যা সমুদ্র মন্থনের সময় উত্থিত কৌস্তভ মনি যা বিষ্ণু ও কৃষ্ণ বক্ষে ধারন করতেন। ছিন্নমস্তা দশ মহাবিদ্যা বা দশ প্রকার শক্তির রুপের একটি। চন্ডী অসুর বধের সময় দুর্গার এক ভীষন রূপ।) আমি মৃন্ময়, আমি চিন্ময়, আমি অজর অমর অক্ষয়, আমি অব্যয়! আমি মানব দানব দেবতার ভয়, বিশ্বের আমি চির-দুর্জয়, জগদীশ্বর-ঈশ্বর আমি পুরুষোত্তম সত্য, আমি তাথিয়া তাথিয়া মাথিয়া ফিরি স্বর্গ- পাতাল মর্ত্য! আমি উন্মাদ, আমি উন্মাদ!! আমি সহসা আমারে চিনেছি, আজিকে আমার খুলিয়া গিয়াছে সব বাঁধ!! আমি পরশুরামের কঠোর কুঠার, নিঃক্ষত্রিয় করিব বিশ্ব, আনিব শান্তি শান্ত উদার! আমি হল বলরাম স্কন্ধে, আমি উপাড়ি' ফেলিব অধীন বিশ্ব অবহেলে নব সৃষ্টির মহানন্দে। মহা- বিদ্রোহী রণ-ক্লান্ত আমি সেই দিন হব শান্ত, যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দন-রোল, আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না, অত্যাচারীর খড়গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না - বিদ্রোহী রণ-ক্লান্ত আমি আমি সেই দিন হব শান্ত! আমি বিদ্রোহী ভৃগু, ভগবান-বুকে এঁকে দিই পদ- চিহ্ন আমি স্রষ্টা-সুদন, শোক-তাপ-হানা খেয়ালী বিধির বক্ষ করিব ভিন্ন আমি বিদ্রোহী ভৃগু, ভগবান-বুকে এঁকে দিব পদ- চিহ্ন আমি খেয়ালী বিধির বক্ষ করিব ভিন্ন আমি চির-বিদ্রোহী বীর--বিশ্ব ছাড়ায়ে উঠিয়াছি একা চির-উন্নত শির ! (পরশুরাম জমদগ্নি ও রেনুকার পঞ্চম পুত্র।কুঠার ছিল তার প্রিয় অস্ত্র। একবার ক্ষত্রিয়রাজ কার্তবীর্য জমদগ্নির আশ্রমে এসে আশোভন আচরন করেন। পরশুরাম তখন আশ্রমে উপস্থিত ছিলেন না। ফিরে এসে ঘটনা শুনে ক্ষিপ্ত হয়ে তিনি কার্তবীর্যকে ধাওয়া করেন, এবং পরে হত্যা করেন। এতে কার্তবীর্যের পুত্ররা জমদগ্নিকে হত্যা করে পিতৃহত্যার শোধ নেন। এবার পরশুরাম পিতৃহত্যার প্রতিশোধ নিতে সারা পৃথিবী থেকে ক্ষত্রিয়দের নিঃশ্চিহ্ন করতে পন করেন এবং পরপর একুশ বার পৃথিবীকে নিঃক্ষত্রিয় করে তবে থামেন।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ