আসুন জেনে নিই: চোখ ওঠা বা কনজাঙ্কটিভাইটিসঃ চোখের গোলকের সাদা অংশ এবং চোখের পাতার ভিতরের অংশ পাতলা একটি স্বচ্ছ পর্দা দিয়ে ঘেরা থাকে যার নাম কনজাঙ্কটিভা (Conjunctiva) আর এর প্রদাহ বা inflammation ই হলো চোখ ওঠা বা কনজাঙ্কটিভাইটিস। আমাদের সমাজে এটি খুবই একটি পরিচিত রোগ যার বহুবিধ চিকিতসা পদ্ধতি অল্পবিস্তর সবাই জানেন। আমরা আশেপাশে যে কনজাঙ্কটিভাইটিস এর রোগীদের দেখে থাকি সেটা সচরাচর ভাইরাসের আক্রমনে হয় তবে বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া, এলার্জী বা আঘাত পাবার কারনেও এ রোগ হতে পারে। যেকোনো বয়সের নারী পুরুষের এ রোগটি যেকোনো সময় হতে পারে তবে অপরিস্কার বা নোংরা জীবন যাপন পদ্ধতি এরোগ হতে সহায়ক ভূমিকা রাখে। চোখ ওঠা রোগে যে চোখ লাল হয়ে যায় এটা কিন্ত সবাই জানেন আর এমনটি হয় এই কনজাঙ্কটিভার রক্তনালীগুলো প্রদাহর কারনে ফুলে বড় হয়ে যাওয়া এবং তাতে রক্তপ্রবাহ বেড়ে যাবার কারনে। ঘুম থেকে উঠলে চোখ আঠা আঠা লাগা, সব সময় চোখের ভেতর কিছু একটা পড়েছে এমন অনুভূতি, চোখ চুলকানো এবং জ্বালাপোড়া করা, আলোর দিকে তাকালে অস্বস্তি লাগা, সবকিছু ঘোলা ঘোলা দেখা, চোখ দিয়ে পানি পরা, চোখের কোনায় ময়লা (যা কেতুর নামে প্রচলিত) জমা, চোখ ফুলে যাওয়া ইত্যাদি সব ই রোগের লক্ষন। কনজাঙ্কটিভাইটিস প্রথমে এক চোখে হয় এরপর তা অন্য চোখে ছড়িয়ে পরে এজন্য অন্য চোখটিকে সংক্রমিত হতে না দেয়া চিকিতসার একটি উদ্দেশ্য। এজন্য রোগিকে অসুস্থ চোখের পাশে কাত হয়ে শুতে বলা হয়। এছাড়া চোখে বার বার হাত না দেয়া বা চোখ না কচকানো, বার বার পানি দিয়ে না ধোয়া, কালো চশমা পড়া ইত্যাদি উপদেশ রোগটির বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রনে সাহাহ্য করে। এ রোগে চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে জেনে নেয়া উচিত রোগের কারন কি এবং এখন কি করনিয়। আরো খারাপ কোনো ইনফেকশন এর হাত থেকে বাচাতে বা এই ইনফেকশন সারাতে এন্টিবায়োটিক ড্রপ দিতে হলে তিনিই দিবেন। অপচিকিৎসা করা হলে রোগটি জটিল আকার ধারন করে চোখের ব্যপক ক্ষতি করতে পারে। ******দুরদৃষ্টির সমস্যা********** আমাদের চোখের ভেতরে ক্যামেরার মতো যে লেন্স (Lens) আছে তা অনেক সময় ঠিকমতো সংকোচিত হতে না পারলে আমরা দুরের অনেক জিনিস স্পষ্ট দেখতে পাইনা। এই রোগটির নাম মায়োপিয়া বা দুরদৃষ্টি। এই রোগে কাছের কোনো জিনিস দেখতে কোন অসুবিধা হয়না। সাধারণত মাথা ব্যথা বা এই জাতীয় সমস্যা নিয়ে রোগীকে এই রোগে অভিযোগ করতে শোন যায়না। বয়স্ক লোকদের তুলনায় কমবয়সী লোকজনেরই এই রোগটি বেশী হতে দেখা যায়। অনেক সময় জন্মগত কারনেও এটি হতে পারে। চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে গেলে এই রোগটি আছে কিনা তা তিনি Retinoscopy পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত করেন। চোখে শুধুমাত্র Myopia রোগ থাকলে চশমায় একটি অবতল লেন্স (Concave lens)ব্যবহার করে চোখের এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার করে চশমা ব্যবহার না করেও এই সমস্যার হাত থেকে রেহাই মেলে। ******নিকটদৃষ্টির সমস্যা ****** আমাদের চোখের ভেতরে ক্যামেরার মতো যে লেন্স (Lens) আছে তা অনেক সময় ঠিকমতো প্রসারিত হতে না পারলে আমদের কাছের জিনিস দেখতে অনেক সময় কষ্ট হয়। এই রোগটির নাম হাইপারমেট্রোপিয়া বা হ্রস্বদৃষ্টি। এই রোগে দূরের কোনো জিনিস দেখতে কোন অসুবিধা হয়না। যেতেতু কাছের জিনিস দেখতে অসুবিধা হয় তাই অনেকেই কষ্ট করে বই বা লেখা কাগজ চোখের কাছে এনে পড়া শুরু করেন ফলে তিনি প্রথম দিকে টের পাননা যে তার চোখের দৃষ্টিতে কোনো সমস্যা আছে। অনেক্ষন ধরে চোখে চাপ লাগিয়ে পড়ার জন্য অনেক সময় চোখে ব্যথা হতে পারে। মাথা ব্যথা এই রোগের রোগীদের খুব পরিচিত একটা অভিযোগ। চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে গেলে এই রোগটি আছে কিনা তা তিনি Retinoscopy পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত করেন। চোখে শুধুমাত্র Hypermetropia রোগ থাকলে চশমায় একটি উত্তল (Convex) লেন্স ব্যবহার করে চোখের এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার করে চশমা ব্যবহার না করেও এই সমস্যার হাত থেকে রেহাই মেলে।
হচ্ছে চোখের ভাইরাস জনিত ইনফেকশন । সাধারণভাবে প্রচলিত কথা ‘চোখ ওঠা’ বলতে চোখ লাল হওয়া বুঝানো হয়ে থাকে। কিন্তু চোখ লাল হওয়া একটি উপসর্গ মাত্র। বিভিন্ন কারণে চোখ লাল হতে পারে। যেমন- জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হলে, এডিনো ভাইরাস জনিত কারণে, হারপিস সিমপ্লেক্স ভাইরাস জনিত কারণে এটা হতে পারে যেসব সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে তা হলো-ধুলাবালি, আগুন-আলো- রোদে কম যাওয়া, ময়লা-আবর্জনাযুক্ত স্যাতসেঁতে জায়গায় না যাওয়া, পুকুর বা নদী-নালায় গোসল না করা, চোখে কালো চশমা ব্যবহার করা, টিভি না দেখা। সম্ভব হলে ১০ থেকে ১৫ দিন সম্পুর্ণ বিশ্রাম নেয়া এবং চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া।
চোখ ওঠা রোগের সময় করণীয়- - বেশ ছোঁয়াচে রোগ বিধায় রোগীকে এ ব্যাপারে বেশি সচেতন হতে হবে। – এদিক-সেদিক বেশি ঘোরাঘুরি না করাই ভালো। – পরিষ্কার কাপড় অথবা টিস্যু দিয়ে চোখের কোণে জমে থাকা পিঁচুটি পরিষ্কার করতে হবে। যতটা সম্ভব ওই কাপড় ঘন ঘন গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ব্যবহার করা ভালো। – অন্য চোখেও এ রোগের আক্রমণ ঠেকাতে যতটা সম্ভব ভালো চোখে হাত না দেওয়াটা মঙ্গলজনক। তবে সাধারণত এ রোগে এক সঙ্গে অথবা পর্যায়ক্রমে দুই চোখই আক্রান্ত হয়। – রাতে ঘুম থেকে ওঠার পর ব্যবহার্য জিনিসপত্র; যেমন- বালিশের কভার, তোয়ালে, স্লিপিং স্যুট ইত্যাদি গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলা উত্তম। – চোখে কালো চশমা পরা উচিত। এতে আলোর প্রতি সংবেদনশীলতা কমে আসে। – ডাক্তারের পরামর্শে চোখ পরীক্ষা করিয়ে চোখে ওষুধ দেওয়া ভালো।
চোখ ওঠা একটি স্পর্শকাতর রোগ। চোখ ওঠাকে কনজাংটিভাইটিস বা রেড/পিংক আই বলে। কনজাংটিভা নামে চোখের পর্দায় প্রদাহ হলে তাকে চোখ ওঠা রোগ বলা হয়। চোখ ওঠার মূল কারণ হলো ভাইরাসজনিত এবং এটি অতিমাত্রায় ছোঁয়াচে। ব্যাকটেরিয়া ও অ্যালার্জির কারণেও চোখ ওঠে। চোখ ওঠা চোখের দিকে তাকালে কারোর চোখ ওঠে না। ভাইরাসে আক্রান্ত চোখ কিছুদিন পর ভালো হয়ে যায়। কিন্তু আশপাশে অনেককেই আক্রান্ত করে বা করতে পারে। কারও হয়তো তিন দিনে ভালো হয়ে যায়, কারও আবার তিন সপ্তাহ লাগতে পারে। সেটা নির্ভর করে কী ধরনের ভাইরাসে আক্রান্ত করেছে এবং সেই রোগীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কেমন। যেভাবে ছড়ায় প্রদাহ হলে অশ্রুতে ভাইরাস ভেসে বেড়ায়। এই অশ্রু মোছার সময় এটি আমাদের হাতে এসে যায়। এর পর থেকে সেই হাত দিয়ে আমরা যা কিছুই ছুঁই না কেন, সেখানে ভাইরাস চলে আসে। যেমন কারও সঙ্গে করমর্দন, টিভি-এয়ার কন্ডিশনার রিমোর্ট, ব্যবহূত তোয়ালে, বিছানার চাদর, বালিশের কাভার, এমনকি মুঠোফোন ইত্যাদি। তাই আক্রান্ত ব্যক্তিকে এ সময়ে বাসায় থাকতে পরামর্শ দেওয়া হয়। লক্ষণ চোখ দিয়ে পানি পড়া, চোখ লাল হওয়া, অনেক সময় চোখের পাতা ফুলে যায়, কারও চোখের কর্নিয়া আক্রান্ত হলে তার দৃষ্টি ঝাপসা হয় এবং আলোর প্রতি সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি পায় চিকিৎসা ও প্রতিরোধ চোখের পানি বা ময়লা মোছার জন্য আলাদা তোয়ালে বা রুমাল ব্যবহার করা। পরিছন্ন থাকতে হবে। ধুলাবালু থেকে রক্ষা পেতে কালো চশমা পরতে পারেন বাইরের পানি দিয়ে ঝাপটা দেওয়া যাবে না চোখের পাতা বেশি ফুলে গেলে বরফ দেওয়া যেতে পারে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী কিছু ওষুধ খাওয়া উচিত হাত না ধুয়ে যখন-তখন চোখ ঘষা বা চুলকানো যাবে না চোখ ওঠা বাচ্চাদের আলাদা বিছানায় শোয়াতে হবে কর্নিয়ায় প্রদাহ হলে সময়মতো চিকিৎসাসেবা না নিলে স্থায়ীভাবে দৃষ্টিশক্তি কমে যেতে পারে; এমনকি কর্নিয়া সংযোজনের মতো অবস্থা সৃষ্টি হতে পারে। তাই জরুরিভাবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।