জঙ্গিরা জিহাদের নামে যেসব ধ্বংসাত্মক কাজ করছে, যে সম্পর্কিত ধর্মীয় ব্যাখ্যা কি ?
শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
Mdnurnabi

Call

আরবী শব্দ ‘জিহাদ’ এর ওয়েবস্টার ডিকসনারীর মতেঃ হলি ওয়ার বা ধর্মযুদ্ধকেই বোঝায়। খৃষ্টানদের ‘ক্রুসেড’ দ্বারাও ধর্মযুদ্ধ বোঝায়। ঐতিহাসিকভাবে এই জিহাদ এবং ‘ক্রসেড’ দুটোই রক্তে-ভেজা ঘটনা, একথা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। কিন্তু তবু অনেকেই আজকাল আপ্রাণ চেষ্টা করছে জিহাদের মানেকে বিকৃত করতে। এখন দেখা যাক আরবী ভাষামতে জিহাদের মানেটা কি? আরবী ভাষামতে জিহাদের মানে হল সংগ্রাম (Struggle)। মুসলিম পণ্ডিতগণ জিহাদকে এভাবে শ্রেণীভুক্ত (Classify) করেছেনঃ (১) জিহাদ-আন-নাফস, অর্থাৎ নিজের আত্মার সঙ্গে সংগ্রাম করা; (২) জিহাদ-আশ-শায়তান, অর্থাৎ শয়তানের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করা; (৩) জিহাদ-আল-কুফ্‌ফর, অর্থাৎ অবিশ্বাসীদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করা; (৪) জিহাদ-আল-মুনাফিকুন, অর্থাৎ মুনাফেকদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করা; (৫) জিহাদ-আল-ফাসিকুউন, অর্থাৎ খারাপ মুসলিমদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করা। এখন এইসব কিতাবী অর্থ দিয়ে কি আমরা বিশ্বকে বোকা বানাতে পারব? সম্ভবতঃ তা কখনো সফল হবার নয়।

সত্যি কথা বলতে কি, আমি কিন্তু এসব কিতাবি আর্থে মোটেই সন্তুষ্ট নই। আমরা এও জানি যে, বিভিন্ন ভাষাতে অনেক শব্দ থাকে যার বিভিন্ন অবস্থায় ভিন্নতর মানে হতে পারে। তার মানে এই নয় যে কোন বিশেষ শব্দকে নিজের ইচ্ছেমত তার মানে নির্ণয় করা যাবে। অবশ্য কোন একটা শব্দের মানে একেক সময় একেক রকম হয়ে থাকে। যেমন ধরা যাক জিহাদ শব্দের অর্থ হল সংগ্রাম। এই সংগ্রামের মানে তার ব্যবহারিক গুণে বিভিন্নরকম হতে পারে। যেমন ব লা যায়, ‘‘আমি আমার মনের সঙ্গে সংগ্রাম করিতেছি’’, ‘‘আমি রাস্তায়  ট্রাফিকের সঙ্গে সংগ্রাম করিতেছি’’ , অথবা ‘‘আমি আমার শত্রুদের সঙ্গে অস্ত্র নিয়ে সংগ্রাম করিতেছি’’ এখন আমরা পরিস্কার দেখতে পাচ্ছি যে কোন একটা শব্দের মানে তার ব্যবহারিক গুনেই নির্ণয় হয়ে থাকে। কোন কোন সময় একটা শব্দের অর্থ তার ব্যবহারিক প্রয়োগে একেবারে বদলেও যেতে পারে। যেমন ধরা যাক, ফারসী-ইন্ডিয়ান শব্দ ‘‘রাজাকার’’ এর আসল অর্থ হল রাজার সাহায্যকারী এবং এটি একটি ভালো শব্দ নিঃসন্দেহে বলা যায়। কিন্তু একাত্তরে স্বাধীনতার সময় রাজাকারদের কুকর্মের জন্য ‘‘রাজাকার’’  শব্দটির মানেই পাল্টে যায়। অর্থাৎ এই ভাল শব্দের অর্থ এখন দারুণ খারাপ শব্দে পরিণত হয়ে গিয়েছে। তাই একাত্তরের পরে বাংলাদেশে কাউকে রাজাকার বললে তেড়ে আসবে মারতে। কারণ, ব্যবহারিক প্রয়োগের গুনে ভাল শব্দের অর্থ এখন খারাপ বা লজ্জাকর শব্দে পরিনত হয়ে গিয়েছে। ঠিক একই কারণে ভালো মানে হওয়া সত্বেও মীরজাফর নাম কেউ রাখেনা। বাংলাদেশে আরবী শব্দ জিহাদের মানেও বুঝতে হবে তার ঐতিহাসিক ব্যবহারিক প্রয়োগের গুনেই। এই নিবন্ধে আমি জিহাদের প্রকৃত অর্থ বোঝাতে চেষ্টা করব তার ঐতিহাসিক প্রয়োগের বিচারে। এখন দেখা যাক জিহাদের মানে বিভিন্ন সুত্রের মাধ্যমে কি কি পাওয়া যায়।

(ক) ঐতিহাসিকভাবে জিহাদের মানে

ইসলামের ইতিহাসে জিহাদকে বরাবর ‘‘ধর্মযুদ্ধ’’(holy war) হিসেবেই পাওয়া যায় এবং আমরা ছোট সময় থেকেই জিহাদকে ধর্মের খতিরে যুদ্ধ করা বুঝেছি এবং জেনেছি। সারা পৃথিবীর ইসলামিক চিন্তাবিদগণ, মাওলানা, ক্কারী, মুন্সী ও মোল্লাগণ সবাই একবাক্যে স্বীকার করবে যে জিহাদ মানেই হল ধর্মের কারণে বা ধর্মকে রক্ষা করার জন্য আল্লাহর পথে অস্ত্র নিয়ে শত্রুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা। জিহাদকে নিয়ে ইসলামিক চিন্তাবিদরা শত শত বই লিখেছেন এবং তাতে সবাই জিহাদকে ধর্মযুদ্ধ-ই বুঝিয়েছেন। ইসলামী ইতিহাসের অন্তত ৮০% ঘটনাই জুড়ে আছে এই জিহাদ। পবিত্র কোরানে এই জিহাদের কথা উল্লেখ আছে বহু বার এবং জিহাদকে আমরা ধর্মযুদ্ধ রূপেই দেখতে পাই। শুধু শান্তির জন্য জিহাদের ব্যবহার একেবারেই বিরল।

ইসলাম প্রচারে জিহাদের প্রয়োগঃ ইসলামের আগমনের পুর্বে আরবদেশে বিভিন্ন ধর্ম ছিল। তাই যখন ইসলামের নবী মহাম্মদ (দঃ) নতুন ধর্ম  ইসলাম প্রচার শুরু করলেন তখন আরবের বেদুঈনরা প্রচন্ড বিদ্রোহ করে ইসলামের বিরুদ্ধে। অমুসলিম বা বিধর্মীদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে আল্লাহ’র রসুলকে তার সাহাবীদেরকে নিয়ে মক্কা ছেড়ে মদিনায় চলে যেতে হয়। মদিনায় আসার পর মোহাম্মদের (দঃ) দলবল যখন ক্রমে ষ্কবা¡মে বেড়ে উঠে তখন আল্লাহ’র রসুল কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করেন। এই যুদ্ধে জয়ের কৌশল হিসেবেই জিহাদের উৎপত্তি ঘটে এবং চতুর রসুল মোহাম্মদ আল্লাহ র কাছ থেকে অনেক ওহি (Messages) আনতে থাকেন তার সাহাবীদের মধ্যে জিহাদী-জোশ জাগানোর জন্য। আমি কোরানের এসব জিহাদী আয়াৎ এবং হদিসের কিছু  নমুনা পরে উল্লেখ করব।

ইসলামের প্রারম্ভে আরবের মরুভুমিতে অমুসলিমদের সঙ্গে হযরত মোহাম্মদ ও তার সাথীদের সঙ্গে অনেক যুদ্ধবিগ্রহ ঘটে। ইসলামের নবী এবং তার সাহাবীরা পরবর্তীতে ইসলাম প্রচারের জন্য আরবের পেগান-বেদুঈন, খৃষ্টান এবং ঈহুদীদের সঙ্গে অনেক যুদ্ধে লিপ্ত হন। নবী মোহাম্মদ (দঃ)কে প্রায় ৭৮টি যুদ্ধ করতে হয় ইসলাম প্রচার করার জন্য।  এই ৭৮টি যুদ্বের মধ্যে ৭৭টি যুদ্ধই করতে হয় আক্রমানাত্মক যুদ্ধ (offensive war)। মাত্র একটি যু দ্ধকেই বলা হয় আত্মরক্ষা (defensive war) মুলক যুদ্ধ। এবং সেটা ছিল খন্দকের যুদ্ধ বা পরিখার যুদ্ধ।

অনেকে মনে করে থাকেন যে ইসলামের মহত্মে আকৃষ্ট হয়েই শুধু  সকল অমুসলিমরা ইসলাম ধর্মে  দীক্ষিত হন। বিশেষ করে আমাদের বাংলাদেশের মোল্লারা ছোট ছোট বাচ্চাদেরকে মাদ্রাসা-মক্তবে ধর্মীয় শিক্ষার সময়ে একথাই শিখিয়েছে। একথা কিন্তু মোটেই সত্যি নয়। মুলতঃ আরবে এবং তার আশেপাশের দেশগুলোতে জোরপুর্বক যুদ্ধ করেই সবাইকে ইসলামের ঝান্ডাতলে আনা হয়। আরব দেশের বাইরে যেমন: সিরিয়া, ইরান, জর্দান, মিশর, লিবিয়া, মরক্কো, তিউনিসিয়া, স্পেন এবং ইন্ডিয়াতে ইসলামী বাহিনীরা কখনো আত্মরক্ষামুলক যুদ্ধ করে নাই, সেসব যুদ্ধ গুলো আক্রমনাত্মক (Offensive raids) যুদ্ধই করতে হয়েছিল। কারন আত্মরক্ষামুলক যুদ্ধের জন্য দেশের বাহিরে হাজার মাঈল দুরে গিয়ে কাউকে যুদ্ধ করতে হয়না।

ইতিহাসের সাক্ষ্যেই (হাদিস, কোরান এবং ইসলামী চিন্তাবিদদের লিখার মাধ্যমে) জানা যায় যে এসব যুদ্ধে প্রথমে নবী (দঃ) শত্রুদেশে পরোয়ানা বা চিঠি পাঠাতেন ইসলামের দাওয়াৎ দিয়ে। এই দাওয়াতের নমুনা ছিলঃ ‘‘পবিত্র এবং সত্যধর্ম  ইসলামের ছায়াতলে আস, অথবা জিজিয়া কর দাও, নয়তো যুদ্বে মৃত্যু বরণ কর’’। নিঃসন্দেহে বলা যায় যে এইসব আক্রমনাত্মক যুদ্বগুলো কেবল ইসলাম ধর্ম প্রচার করার জন্যই সংঘটিত হয়েছিল এবং এই যুদ্ধের ইসলামীক কনসেÌট ছিলঃ আল্লাহর জন্য ধর্মযুদ্ধ এবং এই ধর্মযুদ্ধকে মুসলমানরা ‘‘জিহাদ’’ রূপেই জানে।

হযরত মোহাম্মদের মোট ২৩ বৎসর নবুয়ত জীবনের ১০ বৎসরই কেটেছে যুদ্ধ বিগ্রহ নিয়ে। এইসব যুদ্ব কোন তথাকথিত আত্মার সংগ্রামই কেবল ছিল না। এসব যুদ্ধ ছিল রক্তাক্ত বা রক্ত-বন্যার যুদ্ধ। যুদ্ধে নবী নিজে আহত হয়েছিলেন, তার কয়েকটি দাঁত ভেঙ্গে গিয়েছিল, তার চাচা আমির হামজাকে হত্যা করে তার কলিজা টেনে বের করেছিল শত্রুরা এবং হত হয়েছিল অসংখ্য মানুষ, বলতে গেলে রক্ত-বন্যা বয়ে গিয়েছিল। এ ছাড়াও ইমাম শাফি’র বর্ণনা মতে নবী নিজেও একজনকে হত্যা করেছিলেন। এখন সম্মানিত পাঠকগণ নিশ্চয় বুঝতে পেরেছেন যে জিহাদ শব্দটি কিছুতেই একটি শান্তিপ্রিয় শব্দ হিসেবে ব্যবহৃত হয় নাই।

(খ) এখন দেখা যাক কোরান কি বলছে জিহাদ সম্বন্ধেঃ

কোরানে জিহাদ শব্দটিকে বার বার উল্লেখ করা হয়েছে মুলতঃ ধর্মযুদ্ধকে নিয়েই। এই জিহাদকে বারবার উল্লেখ করা হয়েছে বহু কোরানের আয়াতে এবং এইসব আয়াত দিয়ে মুসলিমদেরকে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে ‘‘আল্লাহর নামে ধর্মযুদ্ধ’’ (ফি সাবিলিল্লাহ) করার জন্য কাফেরদের বিরুদ্ধে। এ সম্বন্ধে পরে অনেক আদেশ-নির্দেশ হাদিসে এবং শারিয়ার কানুনে আমরা দেখতে পাব। বলতে গেলে প্রায় শতকরা ৯০ ভাগ নিষ্ঠুর শাস্তি দেয়ার কথা এবং বেহেস্তের লোভ দেখানো আয়াৎগুলোই নাজিল হয়েছে এই জিহাদ কে অবলম্বন করে। একটা কথা আমাদের জানা উচিৎ যে  হযরত মোহাম্মদ (সঃ) প্রথমে যখন  মক্কাতে তাঁর নতুন ধর্ম প্রচার করছিলেন তখন তার সাথী ছিল একেবারে হাতে গোনা মাত্র কয়েকজন। আরব পেগানদের তুলনায় তিনি ছিলেন একেবারেই দুর্বল। কাজেই তখন ইসলামের নবী মোহাম্মদ সর্বদা নীতিবাচক নরম কথাই বলতেন এবং তখন কিছু কিছু হেদায়ত মুলক কোরানের আয়াৎ এনেছিলেন আল্লাহর কাছ থেকে যা মুলতঃ ছিল একেবারে আপোষের আয়াৎ। এই অল্পকিছু নরম বা ভদ্রসুলভ কোরানের আয়াৎ গুলোই আজ প্রায়ই  ইসলামিষ্ট মোল্লারা ব্যবহার করছে ইসলাম ধর্মকে শান্তির ধর্মরূপে দেখানোর কৌশল রূপে। এটা আসলে সাধারণ সরল মানুষদের কে বোকা বানানোর চেষ্টা মাত্র। আসল কথা হল, যখন মোহাম্মদ মদিনাতে গেলেন, তখন তিনি খুব তাড়াতাড়ি প্রচুর সাথী পেয়ে গেলেন এবং তার শক্তি বেড়ে গেল অতি দ্রুত। তিনি হয়ে উঠলেন একজন শক্তিশালী নেতা। আর ঠিক তখনি তিনি  হয়ে উঠলেন ক্ষমতালোভী একজন আরব জাতিয়তাবাদী নেতা। তার সাথে ছিল তার বড় শক্তি ইসলাম ধর্ম এবং আল্লাহ। তিনি তার মনের লালসা পুর্ণ করার সুযোগ নিলেন কোরানের আয়াৎ এর মাধ্যমে। তাই তিনি একের পর এক আনতে লাগলেন (নিজের ইচ্ছে মত) কঠোর শাস্তি এবং লালসা বা লোভ-সুলভ কোরানের বেহেস্তি আয়াৎ।

পবিত্র কোরানে  ইসলামের সাহাবীদেরকে ধর্মযুদ্ধে উৎসাহিত করার জন্য, অন্য ধর্মের লোকদেরকে, অবিশ্বাসী এবং কাফের দের কে হত্যা করার জন্য বহু আয়াত নাজিল করা হয়েছে। আমি এখন তার কিছু নমুনা দিচ্ছি নিচেঃ

  1. কোরান ৯:৫ - অতঃপর নিষিদ্ধ মাস অতিবাহিত হলে মুশরিকদের হত্যা কর যেখানে পাও, তাদের বন্দী কর এবং অবরোধ কর। আর প্রত্যেক ঘাটিতে তাদের সন্ধনে ওৎপেতে বসে থাক। কিন্তু যদি তারা তওবা করে, নামাজ কায়েম করে, যাকাত আদায় করে তবে তাদের পথ ছেড়ে দাও। নিশ্চই আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল এবং পরম দয়ালু।
  2. কোরান ৮:৬৫: হে নবী, আপনি মুসলমানগণকে উৎসাহিত করুন জেহাদের জন্য।  তোমাদের মধ্যে যদি বিশজন দৃঢ়পদ ব্যক্তি থাকে, তবে জয়ী হবে  দু’শোর মোকাবেলায়।  আর যদি তোমাদের মধ্যে থাকে একশত লোক, তবে জয়ী হবে হাজার কাফেরের উপর থেকে, কারণ ওরা জ্ঞানহীন।
  3. কোরান ২:২১৬ - তোমাদের উপর যুদ্ধ ফরয করা হয়েছে, অথচ তা তোমাদের কাছে অপছন্দীয়। পক্ষান্তরে তোমাদের কাছে কোন একটা বিষয় পছন্দের নয় অথচঃ তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। বস্তুত আল্লাহ ভাল জানেন, তোমরা জান না।
  4. কোরান ২:১৯১ - এবং তাদের কে হত্যা কর যেখানে পাও সেখানেই এবং তাদেরকে বের করে দাও সেখান থেকে যেখান থেকে তারা বের করেছে তোমাদেরকে। বস্তুতঃ ফেতনা-ফাসাদ বা দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টি করা হত্যার চেয়েও কঠিন অপরাধ। আর তাদের সাথে লড়াই কর না মসজিদুল হারামের নিকট যতক্ষণ-না তারা তোমাদের সাথে লড়াই করে। অবশ্য তারা যদি নিজেরাই লড়াই করে তবে তাদেরকে হত্যা কর। ইহাই তাদের (কাফের) যোগ্য শাস্তি।
  5. কোরান ৯:২৯ - তোমরা যুদ্ধ কর ‘আহলে-কিতাব’ এর ঐ লোকদের (ইহুদী এবং খৃষ্টান) সাথে যাহারা আল্লাহ ও রোজ হাশরে ঈমান রাখে না, আল্লাহ ও তার রসুল যা হারাম করে দিয়েছেন তা হারাম করে না এবং গ্রহন করেনা সত্য ধর্ম ইসলাম, যতক্ষণ-না করজোড়ে তারা জিযিয়া কর প্রদান করতে বাধ্য থাকে।
  6. কোরান ৪৮:২০ - আল্লাহ তোমাদেরকে বিপুল পরিমান যুদ্ধলব্ধ সম্পদের (war booty) ওয়াদা করেছেন, যা তোমরা লাভ করবে যুদ্ধে পরাজিত মুশরিকদের কাছ থেকে।
  7. কোরান ৪৮:১৬ - তোমরা কাফেরদের সাথে যুদ্ধ করবে যতক্ষণ-না তারা মুসলমান হয়ে যায়।
  8. কোরান ৮:৩৯ - তোমরা কাফেরদের সঙ্গে যুদ্ধ কর যতক্ষণ না ভ্রান্তি শেষ হয়ে যায় এবং আল্লাহ র সমস্ত হুকুম প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়।
  9. কোরান ৯:৩৮-৩৯: হে ঈমানদারগণ তোমাদের কি হল, যখন আল্লাহ র পথে বের হবার জন্যে তোমাদের বলা হয়, তখন মটি জড়িয়ে ধর, তোমরা কি আখেরাতের পরিবর্তে দুনিয়ার জীবনে পরিতুষ্ট হয়ে গেলে?  অথচ আখেরাতের তুলনায় দুনিয়ার জীবনের উপকরণ অতি অল্প।  যদি বের না হও, তবে আল্লাহ তোমাদের মর্মন্ুতুদ আজাব দেবেন এবং অপর জাতিকে তোমাদের স্থলাভিষিক্ত করবেন। তোমরা তার কোন ক্ষতি করতে পারবেনা, আর আল্লাহ সর্ব বিষয়ে শক্তিমান।
  10. কোরান ৮:১২ - ...আমি কাফেরদের মনে ভীতির সঞ্চার করে দেব, কাজেই তাদের গর্দানের উপর আঘাত হান এবং তাদেরকে কাট জোড়ায় জোড়ায়।
  11. কোরান ৮:১৭ - সুতরাং তোমরা তাদেরকে (কাফের) হত্যা কর নি, বরং আল্লাহই তাদেরকে হত্যা করেছেন। আর তুমি মাটির মুষ্টি নিক্ষেপ কর নি, যখন তা নিক্ষেপ করেছিলে, বরং তা নিক্ষেপ করেছিলেন আল্লাহ স্বয়ং যেন ঈমানদারদের প্রতি এহসান করতে পারেন যথার্থভাবে।
  12. কোরান ৯:১১১ - আল্লাহ ক্রয় করেছেন মুসলমানদের থেকে তাদের জান ও মাল এই মুল্যে যে, তাদের জন্য রয়েছে উৎকৃষ্ট জান্নাত। তারা যুদ্ধ করে আল্লাহর জন্য; অতপর হত্যা করে এবং হত হয়, তওরাত, ইঞ্জিল ও কোরানের এই প্রতিশ্রুতিতে আল্লাহ অবিচল এবং আল্লাহর চেয়ে প্রতিশ্রুতি রক্ষায় কে অধিক?
  13. কোরান ৯:৭৩ - হে নবী, কাফেরদের সাথে যুদ্ধ করুন এবং মুনাফেকদের সাথে; তাদের সাথে কঠোরতা অবলম্বন করুন। তাদের ঠিকানা হল দোযখ এবং সেটা হল নিকৃষ্ট ঠিকানা।
  14. কোরান ৯:১২৩ - হে ঈমানদারগণ, তোমাদের নিকটবর্তি কাফেরদের সঙ্গে যুদ্ধ চালিয়ে যাও এবং তারা তোমাদের মধ্যে কঠোরতা অনুভব করুক। আর জেনে রাখ, আল্লাহ মুত্তাকিনদের সাথে রয়েছেন।
  15. কোরান ৪:৯৫ - গৃহে উপবিষ্ট মুসলমান এবং যে মুসলমানগণ জান ও মাল দ্বারা আল্লাহর পথে জিহাদ করে  তারা একই সমান নয়। যারা জান ও মাল দ্বারা জেহাদ করে, আল্লাহ তাদের পদমর্যাদা বাড়িয়ে দিয়েছেন গৃহে উপবিষ্টদের তুলনায় এবং প্রত্যকের সাথেই আল্লাহ কল্যাণের ওয়াদা করেছেন। আল্লাহ মুজাহিদ দের ঘরে উপবিষ্টদের থেকে মহান প্রতিদানে শ্রেষ্ঠ করেছেন।

(গ) হাদিছে জিহাদ সম্বন্ধে কি বলছেঃ

ধর্মযুদ্ধ অর্থাৎ আল্লাহর পথে (ফি সাবিলিল্লাহ) যুদ্ধ করার কথা হাদিসে বার বার বলা হয়েছে। সহি বোখারীর এক তৃতীয়াংশ জুড়ে জিহাদকে শারীরিক যুদ্ধ রূপেই দেখানো হয়েছে। হাজার হাজার সহি হাদিসে মুসলমানদেরকে ধর্মযুদ্ধে প্ররোচিত করা হয়েছে। এখানে কিছু হাদিসের নমুনা দেওয়া  গেলঃ

সহি বুখারী # ৩৫, পৃষ্টা ১০২:

হযরত মহাম্মদ (সঃ) বর্ণনা করেছেন, “যে মুসলিম ধর্মযুদ্ধে বের হবে তাকে আল্লাহ নিজে রক্ষা করে। কারণ সে ধর্ম যুদ্বে যোগ দেয় তখনি যখন  সে আল্লাহ এবং রসুলের প্রতি অগাধ বিশ্বাস রাখে। আল্লাহ তাকে পুরস্কৃত করে গনিমতের মাল (spoil of war) যাহা নিয়ে সে ঘরে ফিরে, নতুবা সে আল্লাহর জন্য মৃত্যুবরন করে শহীদ হয়ে বেহেস্তে চলে যায়” রসুলুল্লাহ আরও বলেন, “আমার কাছে জিহাদ অত্যন্ত পছন্দ যে আমি যুদ্ধে গিয়ে শহীদ হব, তারপর জীবিত হব, তারপর শহীদ হব, তারপর আবার জীবিত হব, তারপর পুনরায় শহীদ হব।”

সহি বুখারী# ৪৬, ভলিউম ৪, বুক- ৫২:

আবু হুরায়রা বর্ণনা করেছেন, “আমি শুনেছি আল্লাহর রসুল বলেছেন উৎকৃষ্ট মুজাহিদের মর্যাদা একজন ভাল রোজাদার এবং নামাজী যে দিন রাত আল্লাহর উপাসনায়  ব্যস্ত থাকে তার চেয়ে ও বেশী হয়। আল্লহ গ্যারান্টি রাখে তার জন্য যাতে মৃত্যু হলে সে বেহেস্তে স্থান পায়; অথবা বেঁচে থাকলে গনিমতের মাল নিয়ে ঘরে ফিরতে পারে।”

সহি বুখারী ৫৩/৪/৫২

আবু আন্নাস বিন মালিক বর্ণনা করেছেন, “নবী (সাঃ) বলেছেন-মৃত্যুর  পর যে ব্যক্তি বেহেস্ত পাবে সে কখনো দুনিয়াতে আর ফিরে আসতে চাইবেনা বেহেস্তের সুখশান্তি ফেলে। কিন্তু একমাত্র শহীদ (martyr) আবার এ দুনিয়াতে ফিরে আসতে চাইবে এবং আবার আল্লাহর কারণে জিহাদে মৃত্যু বরন করতে ইচ্ছা পোষণ করবে, কারণ সে দেখেছে শহীদদের বেহেস্ত কত উন্নতমানের হয়”।

সহি বুখারী ৪/৫২/৪৮

আবু আন্নাস বর্ণনা করেন, “নবী (সাঃ) বলেছেন-মাত্র একবার আল্লাহর নামে সকাল বা বিকালে জিহাদে অংশগ্রহন করার সওয়াব পৃথিবীতে যা কিছু আছে তার চেয়েও অনেক মূল্যবান হবে। বেহেস্তের একটুকরা অংশ সারা পৃথিবীর চেয়েও শ্র্রেষ্ঠ হবে। আর যদি বেহেস্ত থেকে একজন হুরী পৃথিবীতে নেমে আসে তাহলে তার শরীরের সুগন্ধিতে সমস্ত পৃথিবী ভরে যাবে এবং হুরীর হিজাবের মূল্য এ নশ্বর পৃথিবীর সবকিছু থেকে বেশী মূল্যবান হবে।”

সহি বুখারী ৪/৫২/৪৪

আবু হুরায়রা বর্ণনা করেছেন, “একজন মানুষ এসে রসুল (সাঃ) কে জিজ্ঞেস করলঃ ‘‘জিহাদের সমান মানের একটি জিনিষের নাম বলুন”। আল্লাহর রসুল বললেন, “আমি এমন বস্তুর নাম জানি না” আবু হুরায়রা আরও বলেন, “মুজাহিদের (আল্লাহ র নামে যারা যুদ্ধ করে) ঘোড়ার ক্ষুরের প্রতিটি পদক্ষেপ আল্লাহ পুরস্কৃত করেন।”

সহি বুখারী ৪/৫২/৪৯

সামুরা বর্ণনা করেন, ‘‘রসুল (সাঃ) বলেছেন - গতরাত দু’জন লোক এসেছিল স্বপ্নে। ওরা আমাকে একটি গাছের উপরে উঠালেন এবং পরে একটি ঘরে স্থাপন করলেন যে ঘরটি পৃথিবীর সকল ঘর থেকে উৎকৃষ্ট। তাদের একজন আমাকে বলল ‘‘এ ঘরটি শহীদের ঘর’’।

সহি বুখারী ১১৪৭, খন্ড ৫,  পৃ ৫৩৫

আবু হোরায়রা বর্ণনা করেন, ‘‘ রসুলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেছেন, যে সত্বার হাতে আমার প্রাণ তার শপথ। আল্লাহর রাস্তায় জিহাদে শরিক হয়ে কেউ জখমী হয় না; বরং আল্লাহ ভাল করেই জানেন কে জখমী হয়েছে; কিয়ামৎ-এর সময় সে এমন অবস্থায় স্বীয় কবর থেকে গাত্রোত্থান করবে যে তার রং হবে খুনের রঙ্গে রঞ্জিত এবং তার থেকে প্রবাহিত হবে মিঁশক আম্বরের সুবাস।’’

সহি বুখারী ৪/৫২/৬৪

আন্নাস-বিন-মালিক বর্ণনা করেন, ‘‘ওম-অর-রুবায়বিন্ত-আল-বারা একদিন রসুলুল্লার নিকট এসে জিজ্ঞেস করেন, ‘‘ও আল্লাহর রসুল আপনি কি আমার ছেলে হার্থার (হার্থা বদরের যুদ্বে শহীদ হয়) কথা বলবেন? সে যদি এখন বেহেস্তে থাকে তবে আমি ধৈর্য্য ধরব, নয়তো আমি অনেক কান্না করব’’ তখন রসুল্লাহ বলেন-হে হার্থার মা, বেহেস্তে অনেক বাগান আছে তার মধ্যে থেকে তোমার ছেলে পেয়েছে ফেরদৌস-আলা - যা সবচেয়ে উৎকৃষ্ট।’’ (একজন নিরীহ অশিক্ষিত মা’কে বোকা বানানোর কৌশলে আল্লাহর রসুল খুব চমক দেখিয়েছেন বৈকি)।

বুখারী ৯/১১৫১ (পৃ ৫৩৬)

আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মাদ আবদুল্লাহ-বিন-আবি আওফা (রাঃ) বর্ণনা করেন, ‘‘যে তলোয়ারের চমকের নিচেই আছে বেহেস্ত।’’

মিঁশকাত আল-মাসাবিহ (অনুবাদ - জেমস রবশন, লাহোর, আসরাফ, ১৯৭৫), ১:৮০৭

আবু আবস বর্ণনা করেন, ‘‘রসুলুল্লাহ বলেছেন-যে ব্যক্তির পায়ে ধুলা লেগেছে আল্লাহ’র পথে জিহাদ করার সময়, তার শরীর কখনো দোজখের আগুন স্পর্শ করবেনা।’’

মিঁশকাত-আল-মাসাবিহ ১:৮১৪

আল-মিকদাম-বি-মাদিকারিব বর্ণনা করেছেন, একদা রসুলুল্লাহ বলেন-শহীদেরা আল্লাহ’র কাছ থকে ছয়টি ভাল জিনিষ লাভ করেঃ (১) প্রথম ফোটা রক্ত ঝরতেই তার সমস্ত পাপ মোচন হয়ে যায়, (২) তাকে তখনি  বেহেস্ত দেখানো হয় (৩) তাকে কবরের আজাব থেকে রক্ষা করা হয় (৪) তাকে ভয়ংকর ত্রাস থেকে রক্ষা করা হয় (৫) তার মাথায় দামী মুকুট পরানো হয় যার মাঝে খচিত থাকে রুবী যার মূল্য এই পৃথিবীর চেয়েও বেশী মূল্যবান এবং (৬) তাকে বিবাহ দেওয়া হয় ৭২টি সুন্দরী হুরের সঙ্গে যাদের ডাগর ডাগর কালো চোখ থাকে এবং তার সত্তুরজন আত্মীয়কে বেহেস্তে স্থান  দেওয়া হয়।’’

উপরের সহি হাদিসগুলো পড়ে এটা বুঝতে কষ্ট হয় না যে ইসলামে জিহাদকে আল্লাহর নামে ধর্মযুদ্ধের কথাই বলা হয়েছে।

(ঘ) এখন দেখা যাক ইসলামের ইতিহাস এবং ইসলামী চিন্তাবিদগণ জিহাদ সম্বন্ধে কি বলেনঃ

বিশ্বের বিখ্যাত ইসলামিক চিন্তাবিদগনের দ্বারা জিহাদের আলোকে শত শত বই লেখা হয়েছে আজ পর্যন্ত। ইসলামিক চিন্তাবিদগণ যে জিহাদকে সর্বদা ইসলামের জন্য ধর্মযুদ্ধকেই (কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ) বুঝিয়েছে তার কিছু  প্রমান আমি এখন পাঠকদের সামনে তুলে ধরব।

ডঃ মুহাম্মদ সা’য়েদ রমাদান আল-বুতি তার বইতে (জুরিস্প্রডেন্‌স্‌ ইন মুহাম্মদ বায়োগ্রাফী; পৃষ্ঠা ১৩৪, ৭ম পাবলিকেশন) লিখেছেন - ‘‘হলি ওয়ার অর্থাৎ ইসলামিক জিহাদ হলো একটি আক্রমণাত্মক যুদ্ধ। এই ধর্মযুদ্ধ বা জিহাদ হলো সর্বকালের সকল মুসলমানের পবিত্র কর্তব্য বা ডিউটি; যখনি তাদের হাতে প্রয়োজনীয় ক্ষমতা থাকবে, তখনি মুসলিমগণ ধর্মযুদ্ধে লিপ্ত হবে। আল্লাহর রসুলও তাই বলেছেন - ‘‘আল্লাহ আমাকে হুকুম করেছেন কাফের দের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে যতক্ষণ না তারা আল্লাহ র উপরে বিশ্বাস রাখবে’’।

আল আজহার বিশ্ববিদ্ব্যালয়ের বিখ্যাত পন্ডিত ডঃ বুতি তার বইতে (পৃষ্টা ২৬৩) আরও বলেন-আল্লাহর রসুল তার সেনাদলকে ভাগে ভাগে বিভিন্ন আরব উপজাতিদেরকে ইসলামের দাওয়াৎ পাঠাতেন যাতে লেখা থাকত, ‘‘পবিত্র ইসলামের আমন্ত্রন গ্রহন কর; অথবা যুদ্ধকর এবং মৃত্যুবরণ কর।’’ এটা ঘটেছিল ৭ম হিজরীসালে এবং এই সেনাদলের মোট ভাগ ছিল দশটি।

অন্য এক জায়গাতে ডঃ  আল-বুতি তার বইতে বলেন - ‘‘ইসলামে জিহাদের অর্থ শুধুই আত্বরক্ষার যুদ্ধ নয়; জিহাদ আত্মরক্ষা এবং আক্রমনাত্মক দুই বুঝায়। এই জিহাদের আসল উদ্দেশ্য হলো সারা দুনিয়ার বুকে আল্লাহর পবিত্র ধর্ম  ইসলামকে কায়েম করা এবং দুনিয়াতে ইসলামী সরকার গঠন করা। জিহাদে অংশগ্রহন করা প্রত্যেক মুসলমানের পবিত্র কর্তব্য।’’

বিশ্ববিখ্যাত ইসলামী পন্ডিত বাদাওয়ী তার লেখা বইতে (দি লাইট অব রিভিলেশন; পৃষ্ঠা ২৫২) বলেছেন-‘‘খৃষ্ঠান এবং ইহুদীদের সঙ্গে যুদ্ধ করা ফরজ কারণ তারা উভয়ে তাদের আদি ধর্ম ত্যাগ করেছে এবং তারা ইসলামে বিশ্বাসী নয়।  ইসলাম এসে পুর্বে র সকল ধর্মকে নিষিদ্ধ করেছে।  সুতরাং মুসলিমদেরকে তাদের বিরুদ্ধে যদ্ধ চালিয়ে যেতে হবে যতক্ষণ না তারা রাজী হয় ইসলাম গ্রহন করতে নতুবা জিজিয়া কর দিতে বাধ্য থাকে বিনয়ের সাথে।

ইবনে হাসিম-আল সোহেইলি তার লেখা বিখ্যাত বইতে (আল-রাউদ আল আনাফ; পৃষ্টা ৫০-৫১) বলেছেন - ‘‘আরব পেনিনসুলাতে কোন দুইটি ধর্ম একসাথে থাকতে পারে না।’’ আর সেইজন্য আজ সৌদি আরবে ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্ম নেই।  মোদ্দাকথা হল আজ সৌদী আরবে অন্য আর কোন ধর্মীয় কাজ পালন করতে দেওয়া হয় না। এদিকে মোল্লারা দাবী করে থাকে ‘‘ইসলামে সহনশীলতা (tolerance) অনেক’’! এর চেয়ে ডাঁহা মিথ্যা কথা আর কি হতে পারে!

মিশরের বিখ্যাত ইসলামি চিন্তাবিদ সায়ীদ-কুতুব তার বইতে বলেছেন - ‘‘জিহাদের চারটি স্তর আছে এবং সেইগুলো নিম্নরূপঃ

১) ইসলামের প্রথম স্তরে যখন মুসলিমরা মক্কাতে ছিল তখন আল্লাহ তাদেরকে যুদ্ধ করতে হুকুম দেন নাই।

২) তারপর আল্লাহ মুসলিমদের হুকুম করেন অত্যাচারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে।

৩) তারপর আল্লাহ মুসলিমদের হুকুম দেন আক্রমনকারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে।

৪) তারপর আল্লাহ মুসলিমদের হুকুম দেন সকল বিধর্মী-পৌত্তলিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতে।

সায়ীদ কুতুবের মতে এই উপরের চারটি স্তর একটি অন্যটি দ্বারা প্রতিস্থাপিত (রিপ্লেস্‌ড); অর্থাৎ চার নং স্তরটি শেষ পর্য্যন্ত স্থায়ী হয়।

তাঁর এই মতামতকে ন্যায্যতা দান করার জন্য তিনি  নিচের কোরানের আয়াৎগুলো উল্লেখ করেন।

  1. কোরান ৪:৭৪-৩২: যেসব বিশ্বাসীরা তাদের জীবনকে বিক্রি করেছে আল্লাহর কাছে পরকালের বিনিময়ে তারা অনবরত যুদ্ধ করবে আল্লাহর পথে;  যারা মৃত্যুবরন করবে তারা অবশ্যই আল্লাহর কাছ থেকে মহা পুরস্কার পাবে।
  2. কোরান ৮:৩৮-৪০: মুসলিমগণ যুদ্ধ কর যতক্ষণ কোন নির্যাতন না থাকে পৃথিবীতে এবং একমাত্র ধর্ম থাকবে শুধু ইসলাম বা আল্লাহ’র ধর্ম।
  3. কোরান ৯:২৯-৩২: যুদ্ধ কর আহলে কিতাব (ইহুদী এবং খৃষ্ঠান)দের সঙ্গেও  যারা আল্লাহ কে বিশ্বাস করেনা এবং আল্লাহর অপছন্দের কাজ করে। তারা যতক্ষণ না পরাজিত হয় এবং বিনয়ের সাথে জিজিয়া কর (অমুসলিমদের উপর ট্যাক্স) দিতে রাজী হয় ততক্ষণ যুদ্ধ চালিয়ে যাবে।

যে সকল ইসলামি চিন্তাবিদগণ জিহাদকে মনে করেন শুধু আত্মরক্ষার যুদ্ধ তাঁদের বিরুদ্ধে সায়ীদ কুতুব বলেন - ‘‘তারা ইসলামের ধরন এবং কর্তব্য সম্বন্ধে কোন জ্ঞান রাখে না এবং মানুষের মুক্তির জন্য ইসলামের মহৎ কর্তব্য কি তাও জানে না। মুসলিমরা যেখানেই বাস করবে তাদের পবিত্র কর্তব্য হয়ে যায় সেখানের রাজনীতিতে জড়িয়ে যাওয়া যাহাতে মুসলিমরা সে দেশের শাসন ক্ষমতা হাতে নিতে পারে যাহাতে তারা আল্লাহ’র ধর্মে ক সেখানে স্থাপন করতে সক্ষম হয়।’’

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ

জিহাদ (আরবি: جهاد‎‎), যার অর্থ সংগ্রাম; কোনো নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য লাভের জন্য সমগ্র শক্তি নিয়োগ করাকে বোঝানো হয়। তবে সচরাচর ইসলামী পারিভাষিক অর্থে 'জিহাদ' কথাটি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। কুরআনে জিহাদের কথা ৪১ বার উল্লেখ করা হয়েছে যেখানে "আল্লাহের পথে সংগ্রাম করা" অর্থে 'জিহাদ' কথাটি ব্যবহৃত হয়েছে। জিহাদের সাথে জড়িত ব্যক্তিকে মুজাহিদ বলা হয়। জিহাদকে মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হিসাবে গণ্য করা হয়।

প্রাচ্য বিশেষজ্ঞ বার্নার্ড লুইসের মতে কুরআন ও হাদীসের অধিকাংশ জায়গাতেই জিহাদ শব্দটি ধর্মযুদ্ধ অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। তবে সহিহ মুসলিমের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে ইসলামী পণ্ডিত ইয়াহিয়া ইবন শরাফ আল-নাদভী বলেছেন, (জিহাদ অর্থ) "সমাজের সবার সামগ্রিক দায়িত্ব হলো ন্যায্য প্রতিবাদে অংশ নেয়া, ধর্মের সমস্যা দূর করা, স্রষ্টার আইনের কথা জানা, ন্যায়কে প্রতিষ্ঠা করা ও অন্যায়কে দূর করা।". কুরআন ও হাদীসের ব্যাখ্যা অনুযায়ী স্থানভেদে জিহাদ তিন রূপ হতে পারেঃ (ক) পাপ থেকে বেঁচে থাকার জন্য স্বীয় কৃপ্রবৃত্তির বিরূদ্ধে জিহাদ, (খ) মুসলিম সমাজকে উন্নয়নের সংগ্রাম, এবং যুদ্ধক্ষেত্রে সংগ্রাম।

আরবের বাইরে জিহাদ শব্দটি বর্তমানে সশস্ত্র ও নিরস্ত্র সংগ্রাম - দুই রকমেরই অর্থে বর্তমানে ব্যবহৃত হয়। এটি ন্যায়নিষ্ঠ জীবনযাপন করে ইসলাম ধর্ম পালন এবং অন্যায় ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম বোঝায়। জিহাদের দুই রকমের অর্থ্য করা একটি বিতর্কিত বিষয়। গ্যালাপ পরিচালিত একটি জরিপে দেখা গেছে, ইন্দোনেশিয়ার অধিকাংশ ব্যক্তি এই শব্দটির অর্থত "ইসলামের ও ন্যায়ের জন্য জীবন বিসর্জন করা", অথবা "ইসলামের শত্রুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা" বলে মনে করেন। লেবানন, কুয়েত, জর্ডান ও মরক্কোতে অধিকাংশ ব্যক্তি এই শব্দটি দিয়ে স্রষ্টার প্রতি কর্তব্য, বা উপাসনা বোঝেন, এবং শব্দটির সাথে কোনোরকম সশস্ত্র সংগ্রামকে জড়ান না। অন্যান্য দেশের লোকদের মতে পাওয়া গেছে,:

  • "কঠিন পরিশ্রম করা" ও "জীবনের লক্ষ্যে পৌছানোর জন্য কাজ করা"
  • "ন্যায়ের জন্য সংগ্রাম করা"
  • "শান্তি, সমৃদ্ধি ইত্যাদির জন্য কাজ করা"
  • "ইসলামের নীতি মেনে চলা"

মুহাম্মদ - এ বায়োগ্রাফি অফ দ্য প্রফেট বইতে বি এ রবিনসন লিখেছেন: :"Fighting and warfare might sometimes be necessary, but it was only a minor part of the whole jihad or struggle." 'যুদ্ধ' এবং 'জিহাদ' সমার্থক নয়। 'যুদ্ধ' (হারব, কিতাল, war) জিহাদের একটি অংশ মাত্র। অনেকেই 'পবিত্র যুদ্ধ' বা 'ধর্মযুদ্ধ' বা 'holy war' শব্দসমষ্টিকে জিহাদের অর্থ বলে প্রচার করে থাকেন, যা সঠিক নয়। কুরআন বা হাদিসে কোথাও 'পবিত্র যুদ্ধ' বা 'ধর্মযুদ্ধ' বা 'holy war' শব্দসমষ্টি (হারবে মুক্বাদ্দাসা) ব্যবহৃত হয় নি।  আরবি ভাষায় 'হারব' শব্দটি 'যুদ্ধ' বা 'war' শব্দের সমার্থক। এই ভুল অর্থে ব্যাপক প্রয়োগের কারণে সারা বিশ্বে জিহাদ শব্দটি 'সন্ত্রাস' বা 'ইসলামী সন্ত্রাস' শব্দের সমার্থক হয়ে দাঁড়িয়েছে।

অর্থাৎ, জঙ্গিরা জিহাদের নামে যেসব ধ্বংসাত্মক কাজ করছে তা আসলে জিহাদ নয়।

সুত্রঃ উইকিপিডিয়া

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ

জিহাদ ( আরবি: ﺩﺎﻬﺟ), যার অর্থ সংগ্রাম; কোনো নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য লাভের জন্য সমগ্র শক্তি নিয়োগ করাকে বোঝানো হয়।জিহাদ দুই প্রকার। ০১)যাহিরী তথা প্রকাশ্য জিহাদ। ০২)বাতিনী তথা অপ্রকাশ্য জিহাদ। যাহিরী জিহাদ হল কাফির,মুশরিক,ইসলাম এর শত্রুদের বিরুদ্ধে নিজের জান ও মাল নিয়ে প্রকাশ্য যুদ্ধ করা। আল্লাহ তালা বলেন ঃতোমরা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ কর, যেমন জিহাদ করা উচিত। (সূরা হজ্জ,আয়াত নং-৭৮) বাতিনী জিহাদ হল শয়তান এর বিরুদ্ধে জিহাদ। শয়তান মানুষকে ধোকা দিয়ে কুপথে পরিচালিত করে।নবী কারিম(সাঃ) বলেন ঃপ্রকৃত মুজাহিদ হচ্ছে ঐ ব্যক্তি যে নিজের নফসের সাথে জিহাদ করে।(বায়হাকী শরিফ,হাদীস সংকলন-১৪২ পৃ.)

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ