আসুন জেনে নেই সুন্দর ত্বক কীকারো গায়ের রঙ যখন স্বাভাবিক, সুশ্রী এবং ফর্সা, বাইরে থেকে তার দেহের শিরাগুলো দ্দেখা যায়, তখন আমরা বলি তার ত্বক সুন্দর। ত্বক সুন্দর বা ফর্সা হবার অনেক কারন আছে। যদিও এর বেশিরভাগই বংশগত বা আমরা বলতে পারি জেনেটিক্যাল। তবে কিছু কিছু হোম রেমেডি ব্যবহার করে আপনিও আপনার ত্বককে করে তুলতে পারেন আরো ফর্সা, আরো উজ্জ্বল। এতে আপনার প্রয়োজন হবে না কোনবিউটি পার্লারে যাওয়ার আর কাড়ি কাড়ি টাকা খরচ করার। শুধু একটু যত্ন, ব্যাস!রোদে পোড়া আর দূষণ থেকে সুরক্ষালোকে বলে ‘রোদে বাইরে যেওনা, কালো হয়ে যাবে’। হ্যাঁ, এটা ঘটে ত্বকের মেলানিনের কারনে। রোদে গেলে সূর্যরশ্মির ক্ষতিকর দিক থেকে ত্বককে রক্ষারজন্য ত্বকে ব্যাপক মেলানিন উৎপন্ন হয়। আর এই ব্যাপক মেলানিনের উপস্থিতিত্বককে করে তোলে কালো কারন মেলানিনের রঙ কালো তাই।এবার আসুন জেনে নেই কিছু বিউটি টিপসআপনি যদি সত্যি সত্যি আপনার ত্বকের সৌন্দর্য্য বাড়াতে চান কিংবা হারানোসৌন্দর্য্য ফিরে পেতে চান, তাহলে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নাই। এমনকি আপনাকে ঘন ঘন বিউটি পার্লারেও যেতে হবে না। শুধুমাত্র ঘরে বসে কিছু টিপসআর নিয়ম মেনে চললেই আপনি পেতে পারেন সুন্দর লাবন্যময় ত্বক – যা আপনিচান।ত্বকের সৌন্দর্য্য চর্চা দুইভাবে করা যায়প্রাকৃতিক উপায়ঃ এটাই আসলে প্রকৃত উপায়। আমরা রুপচর্চায় সাধারনত প্রাকৃতিক কিছু উপাদানযেমন শাক-সবজী, ফল এবং এগুলোর পাল্প বা মন্ড ব্যবহার করি। এটা একদিকে যেমন নিরাপদ তেমনি সাশ্রয়ীও বটে – বলা হয়ে থাকে জিরো কস্ট।কসমেটিকসঃ এতে ব্যবহৃত হয় কেমিক্যাল আর কৃত্রিম উপাদান। এর মধ্যে আছে ‘মাড প্যাক এবং অন্যান্য ফেয়ারনেস ক্রীম অথবা বিভিন্ন কেমিক্যাল এজেন্টের মিক্সার।বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞরা ত্বকের সৌন্দর্য্য চর্চায় কসমেটিকসের পরিবর্তে প্রাকৃতিক পদ্ধতির পরামর্শ দিয়ে থাকেন। কসমেটিকস ব্যবহারে আপনি ফল পেতেও পারেন আবার নাও পেতে পারেন। তবে প্রাকৃতিক পদ্ধতি অবলম্বনে সবচেয়ে ভাল ফল পাবেন – এটা নিশ্চিত। হোম মেইড বিউটি টিপসমধুঃ ত্বকের যত্নে এবং উজ্জ্বল, সুন্দর ত্বক পেতে বহুল প্রচলিত এবং উত্তম পদ্ধতি হল মধুর ব্যবহার। একচামচ মধু নিন। মুখের ত্বকে লাগান। আস্তে আস্তে বৃত্তাকারে মেসেজ করুন। এইভাবে দিনে দুইবার সকালে আর রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ব্যবহার করুন। সপ্তাহ দুই পরে আপনি দেখবেন আপনার ত্বক কেমন উজ্জ্বল আর সোনালী রঙ ধারন করছে। তবে মনে রাখবেন এখানে শুধুই মধু কথা বলা হয়েছে, মধুর সাথে দুধ মিশানোর কথা বলা হয় নি।পেঁপেঃ আপনারা হয়তো আগেই জেনে থাকবেন পেঁপের কথা। হ্যাঁ, পেঁপে খাওয়ার উপকারীতা আমরা সবাই জানি। তবে এটা আপনার ত্বকের জন্যও আশির্বাদস্বরুপ। এটাকে টপিক্যাল মেডিসিন হিসাবে ব্যবহার করা হয়। জানেন কি টপিক্যাল মেডিসিন কি? টপিক্যাল মেডিসিন হচ্ছে যা কিছু বাহ্যিকভাবে ব্যবহার করা হয়। ত্বকের যত্নে পেঁপে যেহেতু বাহ্যিকভাবে ব্যবহার করা হয়, সুতরাং পেঁপে একধরনের টপিক্যাল মেডিসিন।একটা পেঁপে নিন। খোসা ছাড়িয়ে নিন। শাঁসটা পিষে ঘন পেস্টের মত করুন। মুখে লাগান। ইচ্ছে করলে আপনি এই পেস্ট আপনার বাহু কিংবা যেসব স্থান রোদেপুড়ে তামাটে হয়ে গেছে, সেসব স্থানেও লাগাতে পারেন। ১ ঘন্টা এভাবে রাখুন। আপনি যদি ব্যস্ত মানুষ হয়ে থাকেন বা আপনার হাতে সময় কম, সেক্ষেত্রে পেস্ট লাগিয়ে রেখে অন্যান্য কাজ করতে থাকুন কিংবা সকালে অফিসে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে থাকুন। ১ ঘন্টা পর ধুয়ে ফেলুন। এভাবে কমপক্ষে ৩ মাস ব্যবহার করুন। পার্থক্যটা দেখুন।তুলসিঃ তুলসিকে বলা হয় ঈশ্বরের দান। এটা খেলে অনেক রোগের উপসম হয়। তবে ত্বকেরজন্যও এটা এক বিস্ময়। যারা তুলসির রস ত্বকে ব্যবহার করেন তারা বিভিন্ন ধরনের চর্ম রোগ থেকে আরোগ্য লাভ করেন, সাথে সাথে স্বাভাবিক ত্বকও হয় আরো সুন্দর আর লাবন্যময়। কাজেই রোদে পুড়ে তামাটে হয়ে যাওয়া প্রতিকারে অব্যর্থ ঔষধ তুলসির রস, সাথে উপহার সুন্দর ফর্সা ত্বক।তুলসির কিছু পাতা নিন। শীল-পাটা দিয়ে বেটে কিংবা পিষে পেস্ট করুন। আস্তে আস্তে ত্বকে লাগান। কয়েক মিনিট রেখে হালকা কুসুম পানিতে ধুয়ে ফেলুন। এভাবে ৩ সপ্তাহ লাগান।গোলাপ জলঃ খুব অল্প সময়ে সুন্দর ত্বক পেতে গোলাপ জল অনন্য। গোলাপ ফুল কিনে পাঁপড়িগুলো আলাদা করে একদিন জলে ভিজিয়ে রাখুন। এরপর প্রতিদিন মুখে ব্যবহার করুন। সম্ভব হলে যতবার মুখ ধোবেন, ততবারই গোলাপ জল ব্যবহার করবেন। মনে রাখবেন গোলাপ জলে মুখ ধোয়ার সময় কোন ধরনের সাবান ব্যবহার করবেন না। অনেকের ক্ষেত্রে এমনও দেখা গেছে যে গোলাপ জল নিয়মিত ব্যবহারেত্বকের রং শুধু সুন্দর ফর্সা হয়েছে তা-ই নয়, একটু গোলাপি বর্নও ধারন করেছে।হলুদঃ ত্বকের সৌন্দর্য্যে হলুদের ব্যবহার ভারতীয় উপমহাদেশে ব্যাপকমাত্রায় প্রচলিত। হিন্দু মেয়েরা তাদের পায়ে রঙ মাখাতে হলুদ ব্যবহার করে এবং এটা তাদের কাছে পবিত্র আচার। তবে এখন আর এটা ধর্মীয় আচারে সীমাবদ্ধ নয়। গবেষণায় প্রমানিত যে হলুদের ত্বকের রঙ ফর্সা করার গুন আছে। যেহেতুহলুদ দামী বস্তু নয়, তাই আপনি ইচ্ছে করলে আজই এর ব্যবহার শুরু করতে পারেন। মুখে, হাতে, পায়ে নিয়মিত সকালে এবং রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে হলুদ লাগান। কিছুদিন পরই পার্থক্যটা বুঝবেন। ফর্সা ত্বক! কোন ব্যাপারই না।দইঃ দই ছাড়া ডিনার? অসম্ভব! কারন দই ছাড়া আহারের স্বাদটাই যে অপূর্ণ থেকেযাবে! অন্ততঃ দক্ষিন ভারতীয়দের কাছে দই এমনই। সেই দই কি-না আপনার ত্বকও ফর্সা করে! শুনতে অবিশ্বাস্য মনে হলেও এটা সত্যি। প্রতিদিন সকালে ১ টেবিল চামচ দই নিন। মুখে মাখুন। ৪ সপ্তাহের বেশি লাগবে না আপনার মুখে ত্বক ফর্সা হতে। সেই সাথে ব্রণ থাকলে তাও দূর হবে। দইয়ে যাদের এলার্জি আছে, তারা বিকল্প পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারেন।
স্হায়ি ভাবে পেতে চান দুধের মত ফর্সা ত্বক? জেনে নিনঃ দূষণ ও ক্লান্তির কারণে ত্বকের উজ্জ্বলতা হারিয়ে যায়। তাই অনেকেই ত্বকের যত্নে ব্যবহার করতে শুরু করেন বাজারে সহজলভ্য রং ফর্সা করা প্রসাধনী। তবে এসব পণ্যে এমন কিছু রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার করা হয় যা ত্বকের জন্য ক্ষতিকর। তাই ত্বকের যত্নে ঘরোয়া মাস্ক ব্যবহার করা সব থেকে বেশি উপকারী। মাস্কগুলো প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে তৈরি। এই প্রতিবেদনে এমনই মাস্ক তৈরির পদ্ধতি দেওয়া হল। মধু ও লেবুর ফেইস মাস্ক এক টেবিল-চামচ মধুর সঙ্গে এক টেবিল-চামচ লেবুর রস ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। ত্বক ভালোভাবে পরিষ্কার করে মিশ্রণটি পুরো মুখে ও গলায় ভালোভাবে লাগিয়ে নিতে হবে। শুকিয়ে আসলে ১৫ মিনিট পরে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে। ময়দার ফেইস মাস্ক গম ছোলা, ডাল, ভুট্টা ইত্যাদি যে কোন শস্যের তৈরি ময়দা ২ টেবিল-চামচ, এক চিমটি হলুদগুঁড়া এবং পরিমাণ মতো দুধ মিশিয়ে ঘন পেস্ট তৈরি করতে হবে। যাদের ত্বক তৈলাক্ত তারা এ মিশ্রণের সঙ্গে সামান্য লেবুর রস মেশাতে পারেন। মিশ্রণটি তৈরি করার পর পরিষ্কার মুখে ও গলায় লাগিয়ে ১৫ থেকে ২০ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। মাস্কটি শুকিয়ে গেলে হালকা হাতে স্ক্রাব করে ধুয়ে ফেলতে হবে। গুঁড়াদুধের ফেইস মাস্ক এক চামচ গুঁড়াদুধ, এক চামচ মধু এবং এক চামচ লেবুর রস একটি পরিষ্কার পাত্রে নিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। মুখ ও গলা ভালোভাবে পরিষ্কার করে মিশ্রণটি লাগিয়ে ১০ মিনিট অপেক্ষা করে ধুয়ে ফেলতে হবে। শসা ও লেবুর রসের ফেইস মাস্ক এক চামচ শসার রস ও এক চামচ লেবুর রস মিশিয়ে এই মাস্ক তৈরি করতে হবে। মাস্কটি মুখে ও গলায় লাগিয়ে ১৫ মিনিট পর শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলতে হবে। টমেটো এবং ময়দার ফেইস মাস্ক দুই চামচ ময়দা এবং দুই থেকে তিন চামচ টমেটোর রস নিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করতে হবে। মুখে ও গলায় লাগিয়ে ১৫ মিনিট পর তা ধুয়ে ফেলতে হবে। উপরের প্রতিটি মাস্ক তৈরির উপাদানই আমাদের হাতের কাছেই পাওয়া যায়। মাস্কগুলো তৈরি করতে ঘরে সহজলভ্য এমন দু’ থেকে তিনটি উপকরণ প্রয়োজন হয়। আর মাস্কগুলো সহজে এবং চটজলদি ব্যবহার উপযোগী। এই মাস্কগুলো ব্যবহারে ত্বকের কোন ধরনের ক্ষতি হওয়ারও সম্ভাবনা থাকে না। ভালো ফলাফলের জন্য প্রথম পর্যায়ে সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার এবং পরের মাসে দুই থেকে তিনবার এই মাস্কগুলো ব্যবহার করা যাবে।
প্রাকৃতিক ভাবে রঙ স্থায়ীভাবে ফর্সা করার দুটি পদ্ধতি… ১)ভেতর থেকে রঙ করুন উজ্জ্বল…রূপচর্চায় দুধ ও কাঁচা হলুদের ব্যবহার যুগ যুগ ধরে হয়ে আসছে। প্রতিদিন এক গ্লাস উষ্ণ গরম দুধে আধা চা চামচ কাঁচা হলুদ বাটা মিশিয়ে পান করুন। এভাবে পান করতে না পারলে এর সঙ্গে মধু মিশিয়ে নিন। নিয়মিত হলুদ মেশানো দুধ পান করলে আপনার রং হয়ে উঠবে ভেতর থেকে ফরসা। দুধে কাঁচা হলুদ বাটা না মিশিয়ে করতে পারেন আরেকটি কাজ। দেড় ইঞ্চি সাইজের এক টুকরো হলুদ নিন। তারপর টুকরো করে কেটে এক গ্লাস দুধে দিয়ে ভালো করে ফুটিয়ে নিন। দুধে গাঢ় হলুদ রঙ ধরলে পান করুন। এভাবে প্রতিদিন একবার পান করবেন। ২)রূপচর্চায় হলুদ- নিচের পদ্ধতি আপনার ত্বক ফর্সা করতে সহায়তা করবে। বিশেষ করে কালচে ছোপ দূর করতে এই পদ্ধতি খুব কার্যকর। উপকরণ…দুধ ৩ টেবিল চামচ,লেবুর রস ১ টেবিল চামচ এবং কাঁচা হলুদ বাটা ১ চা চামচ। *…দুধ, লেবুর রস ও হলুদ গুঁড়ো একসঙ্গে মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন। সারা মুখে এই পেস্ট ভালভাবে লাগিয়ে প্যাকটি শুকনো হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা পানিতে পরিষ্কার করে ধুয়ে নিয়ে নরম তোয়ালে দিয়ে আলতো করে মুছে নিন। গরম পানিতে মুখ ধোবেন না এবং অন্তত ১২ ঘণ্টা রোদে যাবেন না।