Share with your friends
Call


উন্নত বিশ্বে ইন্টারনেটের গতি রকেটের মত। আর আমাদের দেশে ইন্টারনেটের গতি কিলোবাইটের মাধ্যেই সীমাবদ্ধ। ধীর গতির ইন্টারনেটের কারনে অনেকের কার্যক্রম থমকে আছে। অনেক তরুণ প্রতিভাবান ফ্রিল্যান্সার তো একটু বেশি ইন্টারনেট স্পিডের জন্য প্রতি মাসে হাজার হাজার টাকা খরচ করে শহর মুখী হচ্ছে। মাত্র কয়েকদিন আগেই মোবাইল অপারেটররা ৩জি সেবা দেওয়ার লাইসেন্স পেয়েছে। কিন্তু তাদের কার্যক্রম এখনও জেলা শহরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। এ ছাড়া রক্ত চোষা মোবাইল কোম্পানীর ইন্টারনেটের দাম এত বেশি যে সাধারণ মানুষের পক্ষে তাদের নেট প্যাকেজ ব্যবহার করা কঠিন। ওয়াইম্যাক্স সেবা দাতাদের অবস্থাও একই। কোন আনলিমিটেড প্যাকেজ তো নেই ই। কম টাকায় উচ্চ গতির নেট পাওয়ার একমাত্র মাধ্যম ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট। আনলিমিটেড প্যাকেজ, স্বল্প মূল্যের কারনে অধিকাংশ মানুষই ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবহার করতে চান। কিন্তু দেশের খুব কম জায়গাতেই আছে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট। ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের ব্যবসা কম ঝুকিপূর্ণ। দেখে নিন ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের আদ্যোপান্ত।
কিভাবে শুরু করবেনঃ 
ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের ব্যবসা করতে হলে প্রথমে রিসার্চ করে নিন আপনার ব্যবসায়ের এলাকায় ইন্টারনেট ব্যবহারকারী কেমন। যদি সন্তোষজনক মনে হয় তাহলে শুরু করতে পারেন। ব্রডব্যান্ড ব্যবসা করার জন্য বিটিআরসি থেকে লাইসেন্স করতে হবে। লাইসেন্স করার জন্য নির্ধারিত ফরমে আবেদন করতে হবে। ফরম পাবেন এখানে www.btrc.gov.bd । ফরমে বর্ণিত সকল কাগজপত্র সংযুক্ত করে বিটিআরসি হেড অফিসে নিয়ে জমা দিতে হবে। সব কিছু ঠিক থাকলে আবেদন করার ৩ মাসে ভিতর লাইসেন্স পেয়ে যাবেন। লাইসেন্স পাওয়ার পর কিনতে হবে ব্যান্ডউইথ।
ব্যান্ডউইথ পাবেন কোথায়ঃ
ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবসার জন্য সবার আগে প্রয়োজন ব্যান্ডউইথ। আর ব্যান্ডউইথ আসে অপটিক্যাল ফাইবারের মাধ্যমে। তাই প্রথমে দেখতে হবে যে আপনার ব্যবসায়ীক এলাকায় অপটিক্যাল ফাইবার আছে কিনা। শুধু ফাইবার থাকলেই হবে না কানেকশন দেওয়ার পপস পোর্টও থাকতে হবে। বিটিসিএলের ফাইবার লাইনের পপস পোর্ট আছে শুধু জেলা শহরগুলিতে। তাতে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। মোবাইল অপারেটরদের ৩জি নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণের কারনে এখন গ্রাম পর্যায়েও অপটিক্যাল ফাইবার পৌছে গেছে। বেসরকারি IIG (International Internet Gateway) গুলা প্রায় সারাদেশে তাদের নেটওয়ার্ক বিস্তৃত করেছে। আপনাকে ঐসব IIG এর কাছ থেকে জেনে নিতে হবে আপনার এলাকায় তাদের অপটিক্যাল ফাইবারের পপস পোর্ট আছে কিনা।
কম দামে ব্যান্ডউইথ বিক্রি করে ও সারাদেশে নেটওয়ার্ক বিস্তৃত করেছে এমন কয়েকটি IIG হল বিটিসিএল, ম্যাঙ্গো টেলিকম, সামিট কামিউনিকেশন, বাংলা ফোন, ভার্গো কামিউনিকেশন, ফাইবার এট হোম, নভোকম ও বিডি লিংক কামিউনিকেশন। দেশে মোট ৩৬টি ব্যান্ডউইথ প্রোভাইডার রয়েছে। সবগুলি ব্যান্ডউইথ প্রোভাইডার সম্পর্কে জানতে ভিজিট করুন -
http://www.btrc.gov.bd/…/International%20Internet%20Gateway…
যদি আপনার কাছাকাছি পোর্ট থাকে তাইলে ব্যবসা শুরু করতে আর বাধা নেই। কাছাকাছি না হয়ে একটু দূরে পোর্ট থাকলে ঐখান থেকেও রেডিও লিংক করে আনতে পারবেন। আর যদি পপস পোর্টের দুরত্ব বেশি হয় তাইলে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ব্যান্ডউইথ নিতে পারবেন বা মাইক্রোওয়েভ দ্বারা কানেক্টেড মোবাইল টাওয়ারের বিটিএস থেকে নিতে পারবেন ব্যান্ডউইথ। তবে এই দুই পদ্ধতিতেই ব্যান্ডউইথের দাম অনেক বেশি পরবে। বিভাগীয় শহরগুলিতে অনেক আইএসপি কম দামে সাবলাইন দিয়ে থাকে। তাদের থেকে ব্যান্ডউইথ নিয়েও ব্যবসা করতে পারেন।
কি কি লাগবেঃ 
ব্রডব্যান্ড ব্যবসা করতে হলে আপনাকে কিছু যন্ত্রপাতি কিনতে হবে। সেগুলি হল স্পিড কন্ট্রোল করার জন্য মাইক্রোটিক রাউটার, মিডিয়া কনভার্টার, ক্যাবল, একটি পিসি, বেজ স্ট্যাশন স্থাপন করার জন্য সুইচ ও বক্স। মাইক্রোটিক রাউটার ২৪ ঘন্টা অন রাখার জন্য নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুতের ব্যবস্থা করতে হবে।
পুঁজি লাগবে কতঃ 
পুঁজি কত লাগবে সেটা নির্ভর করবে আপনি কত কিলোমিটার এলাকায় লাইন টানবেন তার উপর। রাউটার ১৪,০০০, মিডিয়া কনভার্টার ৪৫০০, পিসি ২৫,০০০ (আগে থাকলে লাগবে না), সুইচ বক্স ও কানেকশন পোর্ট প্রতি কিলোমিটার লাইনে ১০,০০০, ক্যাবল প্রতি কিলোমিটার ১২,০০০, লাইসেন্স ফি ১০০০ টাকা (এইখানে ঘুষেরটাও যুক্ত করতে হবে tongue emoticon ), কানেকশন ফি ১০,০০০-২০,০০০, ব্যান্ডউইথ প্রতি মেগাবিট ১২০০-৩০০০ টাকা। প্রাথমিকভাবে ৫ এমবি ব্যান্ডউইথ আর ২ কিলোমিটার লাইন টেনে ১৫০,০০০-১৭০,০০০ টাকা হলেই এই ব্যবসা শুরু করতে পারবেন।
ঝুকি কতটুকুঃ 
ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবসায় ঝুকি অনেক কম। কারন এই ব্যবসায় একবার সব কিছু স্থাপন করে নিলে তারপর ব্যান্ডউইথ ছাড়া তেমন খরচ নেই। বর্ষাকালটা ব্রডব্যান্ড ব্যবসার জন্য শত্রু। বজ্রপাতে যন্ত্রপাতি পুড়ে যায়।
ব্যান্ডউইথ কিনব ৩০০০ করে বিক্রি করব ১২০০ করে তাইলে আমার লাভ কইঃ 
ধরুন ১ এমবিপিএস ডেডিকেটেড ব্যান্ডউইথ নিলেন ৩০০০ টাকা দিয়ে। ইউজার বেশি হলে এই ১ এমবি থেকে ৬ জনকে ১ এমবিপিএস করে দিতে পারবেন। কারন হচ্ছে ৩ জন থাকবে অফলাইনে, বাকি ৩ জন একটিভ থাকবে। এই ৩ জনের মধ্যে লোড দিবে ১ জন, বাকি দুইজন লোড বিহীন অবস্থায় নেটে একটিভ থাকবে। সুতরাং ১ এমবি থেকে ৬ জনকে দিলেও ফুল স্পিডই পাবে। আপনি ১ এমবি থেকে দিচ্ছেন ৬ এমবি। সুতরাং আপনি ১২০০ টাকায় বিক্রি করছেন না বরং ১২০০x৬=৭২০০ টাকায় বিক্রি করছেন। ৭২০০-৩০০০=৪২০০ টাকা আপনার লাভ থাকবে। কিন্তু ৬ জনকে দেওয়ার মত অবস্থায় যেতে হলে অন্তত ১৫০ ইউজার লাগবে। আবার ১৫০ ইউজারের জন্য যে পরিমাণ ব্যান্ডউইথ লাগবে সেগুলি পাইকারি রেটে পাবেন। খুচরা ৩০০০ করে হলে পাইকারি ২০০০ করে পাবেন। ইউজার কম হলে একটিভ রেশিও অনেক বেড়ে যায়। সে ক্ষেত্রে আপনি ৬ জনকে দিতে পারবেন না। দিলেও স্পিড পাবে না। তাই শুরুর দিকে ৩ জনকে দেওয়া হয়। এ কারনে প্রথম দিকে তেমন লাভ হয় না।


আয়-ব্যয়ঃ 
এই ব্যবসায় আয় গ্রাহকের উপর নির্ভরশীল। যদি গ্রাহক বেশি হয় তাহলে আয়ও বেশি হবে। আপনার এলাকায় যদি আপনিই একমাত্র আইএসপি হয়ে থাকেন তাইলে তো সোনায়-সোহাগা। আপনার ইচ্ছামত প্যাকেজের দাম বসিয়ে আয় করতে পারবেন। কিন্তু প্রতিদ্বন্দী থাকলে প্রথমদিকে বেশি আয় করা কঠিন হয়ে পরবে। ৫০ জন ইউজার পেলে প্রতি মাসে ১২,০০০-১৫,০০০ টাকা আয় করা যাবে। এরপর ইউজার যত বাড়বে আয়ও তত বাড়বে।

Talk Doctor Online in Bissoy App