শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
প্রশ্নোক্ত প্রচলিত আরবী বাক্যগুলো কোনো দুআ নয়। বরং এগুলো আরবী কবিতা। আর ইসলামী শরীয়াহ মতে কবিতা রচনা করা, পাঠ করা বা আবৃত্তি করা বৈধ। তবে তার জন্য আবশ্যকীয় শর্ত হলো, কবিতার মর্মার্থ শরীয়তসম্মত হতে হবে। তাতে কোনো প্রকার শিরক-বিদাত কিংবা অশ্লীলতাসহ ইসলামী আইন বহির্ভূত কোনো বিষয়ের সংমিশ্রণ থাকতে পারবে না। প্রশ্নোক্ত কবিতাটি পাঠ করা বিধিসম্মত কি না এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার পূর্বে দেখতে হবে কবিতাটির মূলপাঠে গর্হিত কোনো বিষয় আছে কি না? থাকলে তা কোন পর্যায়ের? মূল আলোচনার পূর্বে কবিতাটি সম্বন্দে কিছুটা ধানণা লাভ করা যাক।

কবিতাটি রচনা করেছেন হিজরী সপ্ত শতকের পারস্যের খ্যাতিমান কবি মুসলিহুদ্দীন সাদী বিন আব্দুল্লাহ শিরাজী। যিনি শেখসাদী নামে সর্বমহলে পরিচিত। আলআনওয়ারুস সাতিআ ফিলমিআতিস সাবিআহএর গ্রন্থকার শায়খ আগা বুযুর্গ তেহরানীর ভাষ্যমতে তিনি সালাফী ভাবধারার একজন রক্ষণশীল কবি ছিলেন। তিনি ৬৯১ হিজরী সনে ইহলোক ত্যগ করেন এবং বর্তমান ইরানের শিরাজ শহরে সমাহিত হন।

কবিতার মূল আরবী পাঠ নিম্নরূপ-

بلغ العلى بكماله × كشف الدجى بجماله × حسنت جميع خصاله × صلوا عليه وآله.

আরবী কবিতাটির বাংলা রূপ-

বালাগাল উলা বিকামালিহী, কাশাফাদদুজা বিজামালিহী, হাসুনাত জামীউ খিসালিহী, সাল্লু আলাইহি ওয়া আলিহী।

কবিতাটির অর্থানুবাদ : আভিধানিক দৃষ্টিকোণ থেকে কবিতাটির প্রথম পংক্তির কয়েকটি অর্থের সম্ভাবনা রয়েছে। ১. উচ্চতা তাঁর পূর্ণতায় পৌঁছে গেছে। ২. তিনি তাঁর পূর্ণতার চূড়ান্ত উচ্চতায় পৌঁছে গেছেন। ৩. তিনি তাঁর পূর্ণতার মাধ্যমে বা ক্ষেত্রে উচ্চতায় পৌঁছে গেছেন। ৪. তিনি পরিপূর্ণ উচ্চতায় পৌঁছে গেছেন। পরবর্তী পংক্তিগুলোর অর্থানুবাদ যথাক্রমে নিম্নরূপ : তাঁর সৌন্দর্যে অন্ধকার বিদূরীত হয়েছে। তাঁর যাবতীয় স্বভাব চরিত্র সৌন্দর্যমণ্ডিত। তোমরা তাঁর উপর সালাত পাঠ করো।

আলোচিত এ আরবী কবিতাটির উপর অর্থগত দিক থেকে বিভিন্ন মহল থেকে কিছু আপত্তি উত্থাপিত হয়েছে। আমরা নিম্নে পর্যায়ক্রমে আপত্তিগুলোর উপর পর্যালোচনামূলক আলোচনা তুলে ধরতে চেষ্টা করবো।

আপত্তি ১ : সালাফী ভাইদের সম্পাদনায় প্রকাশিত মাসিক ম্যাগাজিনআত-তাহরীকএ কবিতাটির প্রথম পংক্তির উপর আপত্তি করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, “এটি শিরক মিশ্রিত। এখানে বলা হয়েছে, ‘উচ্চতা তার পূর্ণতায় পৌঁছে গেছে। অথচ এটি কেবল আল্লাহর জন্য খাছ।” (আত-তাহরীক, জুন ২০১৫ইং)। অর্থাৎ পূর্ণতার উচ্চ আসনে সমাসীহ হওয়া বা পূর্ণতায় পৌঁছে যাওয়া এটা তো কেবলমাত্র আল্লাহ তাআলার জন্যই প্রযোজ্য। মানুষের পক্ষে তো পূর্ণাঙ্গ এ উচ্চতা অর্জন করা সম্ভব নয়। কারণ মানুষ হলো সসীম আর আল্লাহ তাআলা হলেন অসীম। কুষ্টিয়া ইসলামী ভার্সিটির প্রফেসর ড. সাইফুল্লাহ সাহেবও তার এক আলোচনায় পংক্তিটির উপর এ দৃষ্টিকোণ থেকে আপত্তি করেছেন।

পর্যালোচনা : বস্তুত পূর্ণতা দু শ্রেণীতে বিভক্ত। এক. মানবীয় পূর্ণতা। ২. অমানবী পূর্ণতা। অর্থাৎ মহা পরাক্রমশালী আল্লাহ তাআলার পূর্ণতা। এ দুই পূর্ণতার মাঝে রয়েছে তুলনাহীন ব্যবধান। এখন জানার বিষয় হলো, কবি এখানে কোন শ্রেণীর পূর্ণতাকে উদ্দেশ্য নিয়েছেন? একথা সর্বজন স্বীকৃত, শেখসাদী রাহ. নিছক একজন কবিই ছিলেন না। তিনি দীনের একজন বড় আলেম ও ধর্মীয় পণ্ডিতজন ছিলেন। তিনি একজন আলেম কবি হিসেবে তার কবিতায় আল্লাহ তাআলার সাথে সংশ্লিষ্ট পূর্ণতাকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে পারেন না। যদি তিনি দ্বিতীয় শ্রেণীর পূর্ণতাকে উদ্দেশ্য নিয়ে থাকেন এবং এ বিশ্বাস নিয়েই কবিতাটি রচনা করে থাকেন তবে তিনি তো (নাউযুবিল্লাহ) মুশরিক হয়ে যাবেন। শেখসাদী রাহ. ইন্তেকাল করেছেন ৬৯১ হিজরী সনে। তাঁর ইন্তেকালের পর থেকে নিয়ে অদ্যবধি আরব অনারবের কোনো আলেম কিংবা ইসলামিক স্কলার তাঁর এ কবিতার কারণে তাকে মুশরিক বলে অভিহিত করেন নি। এতে প্রমাণিত হয়, তিনি তার কবিতায় পূর্ণতার দ্বিতীয় অর্থটি গ্রহণ করেন নি। তাছাড়া কবিতার আভিধানিক অর্থের দিকে বিবেচনা করলেও প্রতীয়মান হয়, এখানে পূর্ণতার দ্বিতীয় অর্থটি গ্রহণের কোনো সুযোগ নেই। কারণ কবিতার প্রথম পংক্তিটির আভিধানিক একটি অর্থ হলো, তিনি তাঁর পূর্ণতার মাধ্যমে উচ্চতায় পৌঁছে গেছেন। (এ অর্থকে কেন্দ্র করেই মতিউর রহমান মাদানী সাহেব পংক্তিটির উপর আপত্তি করেছেন। যার আলোচনা সামনে আসছে।) এখানে আরবী বালাগাক্রিয়াটির কর্তা হলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। আর বিকামালিহীএর মধ্যকার সর্বনামটির মারজাবা উদ্দিষ্ট পুরুষও হলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। সুতরাং এখানে কবি কামাল বা পূর্ণতার সাথে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সম্বন্ধকরণ করে স্পষ্ট করে দিয়েছেন, এখানে যে পূর্ণতার কথা বলা হয়েছে সেটা কামালাতে ইনসানিয়া বা মানবীয় পূর্ণতা; কামালাতে ইলাহিয়া বা আল্লাহ তাআলার সাথে সংশ্লিষ্ট পূর্ণতা নয়। আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন যাবতীয় মানবীয় অপূর্ণতা থেকে পবিত্র। তাঁর মাঝে মানবীয় কোনো অপূর্ণতা ছিল না। একজন ব্যক্তিকে পূর্ণাঙ্গ মুমিন হতে হলে তাকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানবীয় যাবতীয় অপূর্ণতা থেকে পবিত্র- এ বিশ্বাসটি হৃদয়ে ধারণ করতে হবে। নতুবা তার ঈমানে পরিপূর্ণতা আসবে না।

আপত্তি ২ : মুহতারাম মতীউর রহমান মাদানী সাহেব সৌদি আরবস্থ দাম্মামের একটি লেকচারে কবিতাটির এ প্রথম পংক্তিটির একটি অর্থকে কেন্দ্র করে আপত্তি করেছেন। তিনি সেখানে বলেছেন, ‘তিনি তাঁর পূর্ণতার মাধ্যমে উচ্চতায় পৌঁছে গেছেন- এটা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্বন্ধে অতিরঞ্জনমূলক কথা।তিনি অবশ্য সেটাকে সরাসরি শিরকী কথা বলে উল্লেখ করেন নি। অর্থাৎ লেকচারার মহোদয় বলতে চেয়েছেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজস্ব যোগ্যতা বলে কিংবা স্বীয় মানবীয় ইচ্ছা শক্তিতে উচ্চতার আসনে সমাসীন হতে পারেন না। তিনি আল্লাহ তাআলার রহমতে সুউচ্চ আসনে সমাসীন হয়েছেন।

পর্যালোচনা :  বস্তুত আলোচিত পংক্তিটির মাঝে বেশ কয়েকটি অর্থের সম্ভাবনা রয়েছে। কবি ঠিক কোন অর্থে পংক্তিটি রচনা করেছেন তা অজ্ঞাত। কবিরা সাধারণত তাদের কবিতার ক্ষেত্রে প্রচুর পরিমাণ রূপকল্প ও উপমা-উৎপ্রেক্ষা ব্যবহার করে থাকেন। অলঙ্কার শাস্ত্র সাহিত্যের অন্যতম একটি অনুষঙ্গ। কুরআন হাদীস এবং সালাফদের রচনা শৈলিতে প্রচুর পরিমাণ অলঙ্কার শাস্ত্রীয় রূপকল্প ও উপমা-উৎপ্রেক্ষার ব্যবহার লক্ষ করা যায়। সাহিত্যের এ নীতি-বিধানকে আভিধানিক অর্থে যদিও অতিরঞ্জন বলার অবকাশ রয়েছে কিন্তু সাহিত্য এবং অলঙ্কার শাস্ত্রে এগুলো অতিরঞ্জন নয়; বরং শব্দের কান্তিময়তা ও মাধুর্যতা। মতীউর রহমান মাদানী সাহেব পংক্তিটির একটি অর্থানুবাদকে কেন্দ্র করে প্রশ্নের অবতারণা করেছেন। যদি ধরে নেয়া হয়, কবি মাদানী সাহেবের মর্মার্থটিকে মাথায় রেখেই পংক্তিটি রচনা করেছেন তবুও তিনি একজন খ্যাতিমান মুসলিম কবি হিসেবে পংক্তিটির এ আভিধানিক অর্থের দৃশ্যমান মর্মার্থটি  গ্রহণ করেছিলেন বলে আমরা বিশ্বাস করতে পারি না।  কারণ একজন সাধারণ মুসলিমও যখন বলে, আমি নিজের প্রচেষ্টায় এ প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তুলেছি তখন সে আদৌ একথা বুঝাতে চায় না, এক্ষেত্রে আল্লাহর কোনো শক্তি বা সহায়তা সে গ্রহণ করে নি। কিংবা এ প্রতিষ্ঠান গড়ার ক্ষেত্রে আল্লাহর কোনো হাত নেই। আমরা যাপিত জীবনে কথা বার্তার শিংহভাগই রূপক অর্থে প্রয়োগ করে থাকি। মৌলিক এবং প্রকৃত অর্থে আমরা সে কথায় বিশ্বাস করি না। তো একজন আলেম কবির পক্ষে কি করে পংক্তিটির আভিধানিক মূল অর্থ গ্রহণ করা সম্ভব হতে পারে? মূলত কবি এখানে একথা বুঝাতে চান নি, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজস্ব পূর্ণতা বা যোগ্যতা বলে উচ্চাসনে সমাসীন হয়েছেন। বস্তুত কবি এখানে রূপক অর্থে এ পংক্তিটি রচনা করেছেন। তিনি প্রকৃত অর্থে এ বাক্যটি ব্যবহার করেন নি। অনেক লা-মাযহাবী ভাই পংক্তিটির এ অর্থ বিবেচনায় এটিকে একটি শিরকী পংক্তি বলে অভিহিত করে থাকেন। কথা হলো, যদি এটি একটি শিরকী কথা বা অতিরঞ্জনমূলক কথা বা পংক্তি হয়ে থাকে এবং এ জাতীয় শিরকী কথা যে বলবে সে মুশরিক হয়ে যায় তবে তো পৃথিবীর তাবৎ মানুষ মুশরিক হয়ে যাবে। করণ মানুষ তাদের সাধারণ বাকচারিতায় বলে থাকে, আমি লেখা পড়া করে শিক্ষিত হয়েছি, অতিরিক্ত খাবারের ফলে আমার জঠরপীড়া দেখা দিয়েছে, তোমার কারণে আমাকে বকা খেতে হলো। মাধ্যম ব্যবহার যোগে এ জাতীয় অসংখ্য কথা বার্তা আমরা বলে থাকি। মাদানী সাহেব যে আঙ্গিকে পংক্তিটির উপর আপত্তি করেছেন সে আপত্তি এসব অতি প্রচলিত বাক্যের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হয়। এবং কিছু ভাইদের দৃষ্টিভঙ্গি মতে এ জাতীয় বাক্য যারা বলে তারাও মুশরিক হয়ে যান। কারণ কোনো ব্যক্তি নিছক নিজের লেখা পড়ার যোগ্যতা বলে আলেম হতে পারে না। আল্লাহর রহমত না হলে আদৌ আলেম হওয়া সম্ভব নয়। অতিরিক্ত খাবারের কারণে জঠর পীড়া হতে পারে না। খাবারের নিজস্ব কোনো শক্তি নেই। এভাবে আমরা মানুষের প্রতিটি বাক্যের মাঝে শিরক অনুসন্ধান করতে সক্ষম হবো। এতে করে দেখা যাবে কোনো লা-মাযহাবী কিংবা সালাফী ভাইও এ জাতীয় শিরক থেকে মুক্ত থাকবেন না। বস্তুত এ কবিতা পাঠের কারণে যদি কেউ শিরকে লিপ্ত হয় কিংবা মুশরিক হয়ে যায় তবে তার দায়টা প্রথমে মূল কবির উপর বর্তাবে। তিনি আগে মুশরিক হবেন। তারপর অন্যরা। অথচ কেউ একারণে তাকে মুশরিক বলে অভিহিত করে নি। যারা বলেন, কবিতার মাঝে শিরকী কথা রয়েছে তারা কি নিরংকুশভাবে বলতে পারবেন এ কবিতা যারা পাঠ করে তারা সবাই মুশরিক এবং অমুসলিম? আশা করি হুট করে এমন স্পর্শকাতর সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া তাদের পক্ষে সম্ভব হবে না।

আমরা যদি রূপকল্প কিংবা উপমা-উৎপ্রেক্ষা এবং সাদৃশ্য নিরূপণকে ঢালাওভাবে অতিরঞ্জন বলে অভিহিত করি তবে কুরআন হাদীসে এ জাতীয় অতিরঞ্জনের (?) ভুরি ভুরি উদাহরণ খুঁজে পাওয়া যাবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, তারা জান্নাতেও প্রবেশ করতে পারবে না যতক্ষণ না-সূচের ছিদ্রপথে উষ্ট্র প্রবেশ করে। (সূরা আরাফ- ৪০)

জুনদুব ইবনে সুফইয়ান রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলে কোনো এক রণাঙ্গনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আঙ্গুল রক্তাক্ত হয়ে যায়। তখন তিনি আঙ্গুলকে সম্বোধন করে বলেন, তুমি নিছক একটি আঙ্গুলমাত্র; রক্তাক্ত হয়েছ। তুমি যে ব্যথা পেয়েছো তা আল্লাহর রাস্তায় বলে গৃহীত হবে। (সহীহ বুখারী; হা.নং ২৮০২)

উপরোক্ত কুরআন ও হাদীসের উপমা ভাষ্যকে কি অতিরঞ্জন বলার অবকাশ রয়েছে? আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করুন।

আপত্তি ৩ : তিনি তাঁর পূর্ণতার চূড়ান্ত উচ্চতায় পেঁছে গেছেনকবিতার এ অর্থটি একটি শিরকপূর্ণ কথা। কারণ তিনি তো পূর্ণতার উচ্চতায় পৌঁছুতে পারেন না। আল্লাহ তাআলা তাকে পৌঁছিয়েছেন।

পর্যালোচনা : যদি আপত্তিটি যথার্থই হয়ে থাকে তবে পৃথিবীর সূচনা লগ্ন থেকে অদ্যবধি কোনো ব্যক্তির পক্ষে মুসলিম হওয়া সম্ভব হবে না। সবাইকেই মুশরিকের তকমা বহন করতে হবে। এমনকি এ আপত্তি যদি মেনে নেয়া হয় তাহলে (আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাই।) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামসহ সমস্ত সাহাবায়ে কেরাম এবং তাবে তাবিয়ীন এবং সর্বযুগের সমস্ত আলেম মুশরিক হয়ে যাবেন (নাউযু বিল্লাহ)। কারণ পৃথিবীর সমস্ত মানুষই ক্রিয়া সম্পাদনের ক্ষেত্রে সৃষ্টির দিকে সম্পৃক্ত করে কর্তাবাচক শব্দ ব্যবহার করে থাকে। সবাই বলে, আমি খাই, সে করে, তারা যায়, পাখি উড়ে, ফসল হয়, নদী বয় ইত্যাদি। এসব কথাবার্তায় কর্তাবাচক পদের সম্পর্ক সৃষ্টির সাথে জুড়ে দেয়া হচ্ছে। অথচ সৃষ্টিজীব বা সৃষ্টপদার্থ নিজস্ব শক্তিতে করতে পারে না, খেতে পারে না, যেতে পারে না। সবকিছুই আল্লাহ তাআলা করান। সৃষ্টি কিছুই করতে পারে না। আমি খাইনা বলে বলতে হবে আল্লাহ আমাকে খাওয়ান। এটাই হলো প্রকৃত এবং বাস্তবিক অর্থ। আমি খাই এটা হলো রূপক এবং পরোক্ষ অর্থ। সুতরাং যারা এ আঙ্গিকে প্রশ্ন করেন, তারা কি বলতে চান, রূপক অর্থ ব্যবহার করার কারণে পৃথিবীর সর্বযুগের সকল মানুষ মুশরিক হয়ে গেছে। এবং তারা কি নিজেদেরকেও মুশরিক হিসেবে স্বীকার করবেন রূপক অর্থ ব্যবাহার করার কারণে? যদি এমনটিই হয় তবে মুমিন হওয়ার জন্য ভাষায় পরিবর্তন আনতে হবে। ক্রিয়া সম্পাদনের ক্ষেত্রে আমি তুমি তথা সৃষ্টির ব্যবহারকে তুলে দিতে হবে। এবং কর্তাপদবাচ্যে একমাত্র আল্লাহর নাম ব্যবহার করতে হবে। এটা কি সম্ভব? আল্লাহ তাআলাও তো পবিত্র কুরআনে এমন ব্যবহার করেন নি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও করেন নি। আল্লাহ তাআলা বলেন, শপথ চন্দ্রের, যখন তা সূর্যের পর আবির্র্ভূত হয়। শপথ দিবসের, যখন তা সূর্যকে প্রকাশ করে। শপথ রজনির, যখন সে সূর্যকে আচ্ছাদিত করে। সূরা আশ-শামস ১-৪। আয়াতটিতে অকর্মক এবং সকর্মক উভয় প্রকার ক্রিয়ার সম্বন্ধ সৃষ্টির সাথে করা হয়েছে। এতে কি শিরকের দুর্গন্ধ অনুসন্ধান করার সুযোগ আছে? আল্লাহ আমাদের সবাইকে ক্ষমা করুন।

আল্লাহ তাআলা কুরআনে কারীমের নানা জায়গায় প্রচুর পরিমাণ রূপকল্পের ব্যবহার করেছেন। যথা আল্লাহ সূরা দাহরের দ্বিতীয় আয়াতে বলেন, إِنَّا خَلَقْنَا الْإِنْسَانَএর আভিধানিক অর্থ, আমরা মানুষকে সৃষ্টি করেছি। এখানে কি এ আভিধানিক অর্থকে মৌলিক অর্থ হিসেবে গ্রহণ করা যাবে? তবে তো সাধের ঈমানটিই নষ্ট হয়ে যাবে। কারণ তখন অর্থ হবে আমি এবং আমার সাথে যারা আছে আমরা সবাই মিলে এ পৃথিবীকে সৃষ্টি করেছি। এ বিশ্বাস যদি কেউ করে তবে কি তার ঈমান অক্ষুণ্ন থাকবে? সুতরাং এখানে এবাক্যটিকে রূপক অর্থে গ্রহণ করতে হবে। মূল অর্থ হলো, একমাত্র আল্লাহ তাআলাই এ পৃথিবীকে সৃষ্টি করেছেন। এক্ষেত্রে কারো কোনো ধরনের সহায়তা গ্রহণ করেন নি।

আপত্তি ৪ : অনেক ভাই কবির কবিতার দ্বিতীয় পংক্তির ব্যাপারে আপত্তি করেন। যথা আহলে হাদীস ভাইদের সম্পাদনায় প্রকাশিত মাসিক ম্যাগাজিন আত-তাহরীক এ কবিতাটির দ্বিতীয় পংক্তির ব্যাপারে বলা হয়েছে, ‘এখানে রাসূল (ছাঃ)- কে নূরের তৈরি কল্পনা করা হয়েছে। যাঁর দেহের আলোকচ্ছটায় অন্ধকার বিদূরীত হয়েছে। এটি কুরআন বিরোধী আক্বীদা (কাহফ ১৮/১১০)।’ (আত-তাহরীক, জুন ২০১৫ইং)

(সতর্কীকরণ : দঃ, ছাঃ, সাঃ এজাতীয় সাংকেতিক বর্ণের মাধ্যমে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর সালাত সালাম লেখা আসলাফের কর্মপন্থার বিপরীত। তাই এজাতীয় অবাঞ্ছিত সংকোচন ও সংক্ষিপ্ত করণ নীতিকে পরিহার করা চাই।)

পর্যালোচনা : বস্তুত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে নূরের তৈরি কল্পনা করা কিংবা বিশ্বাস করা কোনোটিই ইসলামী শরীয়াহ মতে জায়েয নেই। কবিতার ভিতরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে নূরের তৈরি বলে কল্পনা করা হয়েছে- এটা কি করে উপলব্ধ হলো? শেখসাদী রাহ. কি এ ভ্রান্ত বিশ্বাসে বিশ্বাসী ছিলেন? তাছাড়া কবিতায় তো বাস্তব অন্ধকারের কথা বলা হয় নি। এটা তো স্বত:সিদ্ধ কথা, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কারণে দৃশ্যমান অন্ধকার বিদূরীত হয় নি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্মের পর রাত দিনের আবর্তন আগের মতই স্বাভাবিক গতিতেই চলেছে। তাঁর কারণে রাতের অন্ধকার বিদূরীত হয়ে রাত দিন হয়ে যায় নি। উপরন্তু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দেহের নূরের কারণে রাতের বেলা তার চার পাশ আলোকোজ্জ্বল হতো বলে যে দু-একটি বর্ণনা পাওয়া যায় তাও জাল এবং মানব রচিত বর্ণনা। সুতরাং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কবিতার দ্বিতীয় পংক্তিতে নূরের তৈরি বলে কল্পনা করা হয়েছে বলাটা অর্থপূর্ণ কথা নয়। বরং এখানে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অদৃশ্যমান নূরের কথা বলা হয়েছে। এবং অন্ধকার বলতেও রূপক অন্ধকার বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রত্যাদেশগত নূরের ফলে দীনহীনতার যাবতীয় অমানিশা বিদূরীত হয়ে গেছে।

বস্তুত এ কবিতা পাঠের বৈধতা অবৈধতার ব্যাপারটি একটি আপেক্ষিক বিষয়। কে কোন অর্থে কিংবা কে কোন বিশ্বস নিয়ে কবিতা পাঠ করে তা তো অজ্ঞাত একটি বিষয়। কেউ যদি আপত্তিকর অর্থ-বিশ্বস নিয়ে কবিতাটি পাঠ করে তবে তার ক্ষেত্রে আপত্তিকর বিধান প্রযোজ্য হবে। পক্ষান্তরে যদি কেউ শিরকমুক্ত পরিষ্কার বিশ্বাস নিয়ে এটিকে পাঠ করে তবে তার ক্ষেত্রে বৈধতার বিধান প্রযোজ্য হবে। কিন্তু ঢালাওভাবে এ কবিতা পাঠকে শিরক বা অবিধানিক বলার সুযোগ নেই। সূর্যোদয় একটি অতি পরিচিত শব্দ। পৃথিবীর উচ্চ শিক্ষার অনন্য প্রতিষ্ঠান ও উঁচু মানের গ্রন্থগুলোতেও ভাষার ব্যবধানে এ শব্দটি ব্যবহৃত হয়। কেউ যদি একথাটিকে এ অর্থে ব্যবহার করে যে নিছক প্রাকৃতিক নিয়মেই সূর্যোদয় হয়, এর পেছনে অদৃশ্য কোনো শক্তির হাত নেই তবে সে বে-ঈমান হয়ে যাবে। সে আর মুসলিম থাকবে না। পক্ষান্তরে কেউ যদি এ অর্থে কথাটিকে বলে যে প্রাকৃতিক রীতি বলতে কিছু নেই। এ সূর্যোদয়ের পেছনে মহামহীম আল্লাহর অদৃশ্য শক্তি রয়েছে। আল্লাহ তাআলার নির্দেশনা ব্যতীত এক চুল পরিমাণও সূর্যের স্থানান্তরিত হওয়ার শক্তি নেই। তবে সে মুমিন। তার ঈমানে সামান্য পরিমাণও ঘটতি সৃষ্টি হবে না। তো এখানে একি বাক্য। একজনে বলে নাস্তিক হয়ে যাচ্ছে। আরেকজনে বলে মুমিন থেকে যাচ্ছে। সুতরাং এখন কি একথা বলার সুযোগ আছে, যে ব্যক্তি বলবে সূর্যোদয় হয় সে বে-ঈমান হয়ে যাবে? উপরন্তু আমরা বলি, সূর্যোদয় হয়। তুখোড় বিজ্ঞানী সমাজ থেকে শুরু করে একজন গ- মূর্খ পর্যন্ত সবাই বলে সূর্যোদয় হয়। কিন্তু বাস্তবিক অর্থে কি একথাটি সঠিক? বিজ্ঞান কি এ বাক্যটির দৃশ্যমান অর্থ সমর্থন করে? প্রকৃত অর্থ বিবেচনায় তো সূর্য উদিত হয় না। বরং আমাদের পৃথিবী ঘুরে ঘুরে কখনো আমাদের সূর্যের মুখোমুখি করে দেয়, কখনো তার থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। সূর্যের মুখোমুখি করার সূচনা পর্বকেই আমরা সূর্যোদয় বলে অভিহিত করি। এবং সূর্য থেকে দূরে সরে যাওয়ার শেষ মুহূর্তটিকে আমরা সূর্যাস্ত বলে অভিহিত করি। এখন যারা একথা লিখে বা বলে তারা কি পৃথিবীর আবর্তনের এ সত্যকে অস্বীকার করে বলে? যারা সূযোদয়-সূর্যাস্ত বলে তাদেরকে কি আমরা মিথ্যাবাদী এবং বিজ্ঞান বা বাস্তবতা বিরোধী বলব? এখানে সাধারণত আমরা এ যুক্ত শব্দটিকে রূপক অর্থে ব্যবহার করে থাকি। আমরা কেউ এর নিগূঢ় বাস্তবতাকে অস্বীকার করি না। এখন কেউ যদি চোখের দেখা সূর্যোদয়-সূর্যাস্তকেই বাস্তব বলে বিশ্বাস করে এবং এর নিগূঢ় রহস্য ও তাৎপর্যকে অবিশ্বাস এবং অস্বীকার করে তবেই তাকে বাস্তবতা বিরোধী বা বিজ্ঞান বিরোধী বলে অভিষিক্ত করা যেতে পারে। ঢালাওভাবে সূর্যাস্ত-সূর্যোদয় বলাকে মিথ্যা বা বিজ্ঞান বিরোধিতা বলার অবকাশ নেই। কারণ এটি একটি আপেক্ষিক বিষয়।

উল্লেখ্য, আমাদের সমাজের আরেক শ্রেণীর ভাইয়েরা আরবী এ কবিতাটিকে নিয়ে অতিশয় অতিরঞ্জনে মত্ত রয়েছেন। তারা এটাকে ক্ষেত্রবিশেষে কুরআনের আয়াতের মর্যাদায়ও ভূষিত করে ফেলেন। এবং হাদীসে বর্ণিত দুরূদের বিকল্প হিসেবে আরবী এ কবিতাটিকে নির্দ্বিধায় পাঠ করতে থাকেন। মীলাদ মাহফিল থেকে শুরু করে ওয়াজের প্যান্ডেলগুলোতে এ কবিতাটির অতিরঞ্জনমূলক মুখরতা লক্ষ করা যায়। অথচ এটি একটি নিছক কবিতা বৈ কিছুই নয়। এটা কোনো দুরূদ বা দুআ নয়। কবিতাকে কবিতার স্থানেই রাখতে হবে। একে কবিতার মর্যাদা থেকে দুআ-দুরূদের মর্যাদায় উত্তীর্ণ করা আদৌ বৈধ হবে না। বরং এমনটি করা হলে তা হবে অমার্জিত অপরাধ।

সারকথা, স্বাভাবিক অবস্থায় আরবী এ কবিতাটি পাঠ করতে কোনো সমস্যা নেই। তবে কেউ যদি ভ্রান্ত বিশ্বাস নিয়ে কিংবা ভ্রান্ত অর্থে বিশ্বাস করে এ কবিতাটি পাঠ করে তবে তার জন্য এ কবিতা পাঠ করা বৈধ হবে না। তেমনিভাবে যারা এ কবিতাটির প্রতি অতিভক্তি দেখাতে গিয়ে একে দুআ-দুরূদের পর্যায়ে নিয়ে যায় তাদের জন্যও এ আপত্তিকর ভক্তি নিয়ে কবিতাটি পাঠ করা জায়েয হবে না। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সর্বক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি এবং প্রান্তিকতামূল আচরণকে পরিহার করে নববী আদর্শে জীবন ধারণ করার তাওফীক দান করুন।

পুনশ্চ, ahlalhadeeth.com বা মুলতাকা আহলিল হাদীস নামক একটি এ্যারাবিয়ান সাইটে আরবী এ কবিতাটিকে কেন্দ্র করেই একটি প্রশ্ন করা হয়েছিল। বিষয়ের সাথে সংশ্লিষ্টতা হেতু আমরা সে প্রশ্নোত্তরের অনুবাদ নিম্নে তুলে ধরছি।

প্রশ্ন : নিম্নোক্ত এ পংক্তিমালায় শরীয়ী দৃষ্টিকোণ থেকে কোনো বৈপরিত্য আছে কি না?

বালাগাল উলা বিকামালিহী, কাশাফাদদুজা বিজামালিহী

হাসুনাত জামীউ খিসালিহী, সাল্লু আলাইহি ওয়া আলিহী

আল্লাহ তাআলা আপনাকে উত্তম বিনিময় দান করুন।-আবু মারয়াম সালাফী

উত্তর : কবি এখানে তার কবিতার প্রথম পংক্তি দ্বারা বুঝাতে চাচ্ছেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর পূর্ণতার মাধ্যমে বা তাঁর পূর্ণতার ক্ষেত্রে সৃষ্টিকুলের উপর শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছেন। আর একথা বাস্তব এবং বিশুদ্ধ। কবি দ্বিতীয় পংক্তিতে বলতে চেয়েছেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সৌন্দর্য সকল মানুষের সৌন্দর্যের উপর শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছে। এবং তিনি তাঁর সৌন্দর্যের মাধ্যমে রাতের আঁধারকে বিদূরীত করে রাতকে আলোকিত করে দিয়েছেন। সুতরাং কবি এখানে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর গুণাবলী বর্ণনা করছেন এবং তাঁর সৌন্দর্যের কথা আলোচনা করেছেন। সুতরাং এ পংক্তিগুলোতে কোনো সমস্যা নেই।

তথ্যসূত্র

1ولا بد من الإشارة إلى أن تمام الإيمان بالنبي صلى الله عليه وسلم هو الإيمان بأن الله سبحانه وتعالى خلق بدنه الشريف في غاية الحسن والكمال على وجه لم يظهر لآدمي مثله.

ويرحم الله القائل: فهو الذي تم معناه وصورت × ثم اصطفاه حبيباً بارئ النسم × منزه عن شريك في محاسنه × فجوهر الحسن فيه غير منقسم.

وقيل في شأنه صلى الله عليه وسلم أيضاً: بلغ العلى بكماله × كشف الدجى بجماله × حسنت جميع خصاله × صلوا عليه وآله

(فتاوى واستشارات الإسلام اليوم ২০/৩০৮)

2لا بد من الإشارة إلى أن تمام الإيمان بالنبي صلى الله عليه وسلم هو الإيمان بأن الله سبحانه وتعالى خلق بدنه الشريف في غاية الحسن والكمال على وجه لم يظهر لآدمي مثله.

رحم الله حسان بن ثابت رضي الله عنه إذ قال: خلقت مبرءاً من كل عيب × كأنك قد خلقت كما تشاء

ويرحم الله القائل: فهو الذي تم معناه وصورته × ثم اصطفاه حبيباً باريء النسم × فتنزه عن شريك في محاسنه × فجوهر الحسن فيه غير منقسم.

وقيل في شأنه صلى الله عليه وسلم أيضاً: بلغ العلى بكماله × كشف الدجى بجماله × حسنت جميع خصاله × صلوا عليه وآله

ورحم الله ابن الفارض حيث قال: وعلى تفنن واصف يفنى الزمان وفيه ما لم يوصف موسوعة البحوث والمقالات العلمية

3وأما التغني لإسماع نفسه ودفع الوحشة عن نفسه، هل هو مكروه؟ فقد اختلف المشايخ، منهم من قال:لا يكره، وبه أخذ شمس الأئمة السرخسي رحمه الله، وإنما المكروه على قول هذا القائل ما يكون على سبيل اللهو، وهذا القائل يحتج بما روي عن أنس بن مالك رضي الله عنه، أنه دخل على أخيه البراء بن مالك وهو كان يتغنى، والبراء من زهاد الصحابة، ومن المشايخ من قال:جميع ذلك مكروه، وبه أخذ شيخ الإسلام خواهر زاده، وهذا القائل يحمل حديث البراء على أنه كان ينشد الأشعار المباحة التي فيها ذكر الوعظ والحكمة، وهذا لأن اسم الغناء كما ينطلق على الغناء المعروف ينطلق على غيره، قال عليه السلام: من لم يتغنّ بالقرآن فليس منا قلنا: وإنشادنا هو مباح من الأشعار لا بأس به، وإذا كان في الشعر صفة المرأة إن كانت امرأة بعينها وكانت حية يكره، وإن كانت ميتة أو كانت امرأة مرسلة لا يكره. (المحيط البرهانى ২২/১৭৩)

قال في التتارخانية: قراءة الأشعار إن لم يكن فيها ذكر الفسق والغلام ونحوه لا تكره.4

وفي الظهيرية: قيل معنى الكراهة في الشعر أن يشغل الإنسان عن الذكر والقراءة وإلا فلا بأس به ا هـ .

وقال في تبيين المحارم: واعلم أن ما كان حراما من الشعر ما فيه فحش أو هجو مسلم أو كذب على الله تعالى أو رسوله صلى الله عليه وسلم أو على الصحابة أو تزكية النفس أو الكذب أو التفاخر المذموم ، أو القدح في الأنساب ، وكذا ما فيه وصف أمرد أو امرأة بعينها إذا كانا حيين ، فإنه لا يجوز وصف امرأة معينة حية ولا وصف أمرد معين حي حسن الوجه بين يدي الرجال ولا في نفسه ، وأما وصف الميتة أو غير المعينة فلا بأس وكذا الحكم في الأمرد ولا وصف الخمر المهيج إليها والديريات والحانات والهجاء ولو لذمي كذا في ابن الهمام والزيلعي. (رد المحتار ২৬/৩৩৩)

5السوال: هل فى هذه الابيات مخالفة شرعية؟

بلغ العلى بكماله × كشف الدجى بجماله × حسنت جميع خصاله × صلوا عليه وآله. وجزاكم الله خير. ابومريم السلفى

الجواب: يقصد أنه عليه الصلاة والسلام فاق البرية بكماله. وهذا صحيح. وأنه كشف الدجى بجماله. فهو يقول أنه صلى الله عليه وسلم فاق جماله جمال البشر وأنه كشف وأنار الليل بجماله. فهو يصف النبي صلى الله عليه وسلم ويذكر محاسنه ولا شيء في الأبيات. ملتقى اهل الحديث من الشبكة العالمية (ahlalhadeeth.com)

 

জাযাকাল্লাহু খাইরান

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ
Call

এটি কোন দো‘আ নয়, বরং কবিতা। বাক্যটি পারস্য কবি শেখ সা‘দী (৫৮৫ অথবা ৬০৬-৬৯১ হিঃ) স্বীয় গুলিস্তাঁ গ্রন্থে আরবীতে লিখিত তার অল্প সংখ্যক কবিতা সমূহের মধ্যে রাসূল (ছাঃ)-এর প্রশংসায় লিখিত কবিতার একটি অংশ। এটি দরূদ হিসাবে পাঠ করা যাবে না। কারণ এটি একটি কবিতা মাত্র। দ্বিতীয়তঃ এটি শিরক মিশ্রিত। এখানে বলা হয়েছে, ‘উচ্চতা তার পূর্ণতায় পৌঁছে গেছে’। অথচ এটি কেবল আল্লাহর জন্য খাছ। তৃতীয়তঃ এখানে রাসূল (ছাঃ)-কে নূরের তৈরী কল্পনা করা হয়েছে। যাঁর দেহের আলোকচ্ছটায় অন্ধকার বিদূরিত হয়েছে। এটি কুরআন বিরোধী আক্বীদা (কাহফ ১৮/১১০) । সুতরাং এটি পাঠ করা থেকে বিরত থাকা আবশ্যক। উল্লেখ্য যে, স্বয়ং কবিও এটিকে দরূদ বলেননি। বরং শেষে বলেছেন, ﺻَﻠُّﻮﺍ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺁﻟِﻪِ ‘তোমরা তাঁর ও তাঁর পরিবারের প্রতি দরূদ পাঠ কর’।

আপনার উত্তর সম্পূর্ণ ভুল।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ
Call

বালাগাল উলা বি কামালিহি কোন দরুদ না। এটাকে কেউ দরুদ মনে করলে তার ভুল ভাঙ্গানো সমর্থনযোগ্য। কিন্তু আরেকটু আগ বেড়ে একে শিরকী কবিতা বলা হলো অজ্ঞতা বা মাথামোটা টাইপ কাজ। মূলত যারা এটাকে শিরকী বলে, তারা লাইনটার অপব্যাখ্যা করে। এটার সরল অনুবাদ হলো, ‘তিনি (রাসূল সা.) উচ্চতায় পৌঁছেছেন কামেল হওয়ার মাধ্যমে।’ এখন প্রশ্ন হলো, তিনি কামেল কীভাবে হলে? স্বীয় প্রচেষ্টায়? নাকি আল্লাহ তাঁকে কামেল বানিয়েছেন বিধায় তিনি কামেল হয়েছেন? যে কোন মুমিন মাত্রই স্বীকার করবেন যে, আল্লাহ তাঁকে কামেল বানিয়েছেন বিধায় তিনি কামেল হয়েছেন। কথা অনেক সহজ ও সরল। কিন্তু যাদের মনের মধ্যে বক্রতা বা কুটিলতা আছে, কিংবা আছে অহেতুক মানুষকে শিরকের অপবাদে জর্জরিত করার অপ-ইচ্ছা, তারা এই সহজ কথাকে জটিল বানায় এই ব্যাখা দিয়ে যে, রাসূল সা. নিজে নিজে কামেল হবার কারণে উচ্চতায় পৌঁছেছেন। অথচ তিনি কামেল হয়েছেন কি নিজ ক্ষমতাবলে না আল্লাহর দয়ায় এই প্রসঙ্গ বাক্যে পুরোই অনুপস্থিত। এটা বুঝে নিতে হয় আকলে সালিম তথা সুস্থ বিবেচনাবোধ দিয়ে। (কমেন্টে কিছু আলোচনার লিংক দিব। দেখবেন তারা এটার অনুবাদ করতেছে, রাসুল সা. উচ্চতায় পৌঁছেছেন নিজের ক্ষমতায়, নিজের কৃতিত্বে। এখানে ‘নিজের কৃতিত্বে, নিজের ক্ষমতায়’ এগুলো হলো তাদের মনগড়া অনুবাদ। যা আরবীতে অনুপস্থিত। আরবী জানেন এমন যে কেউই আমার সাথে সহমত হবেন। আর যদি এটাকে ব্যাখ্যা হিসেবে ধরে নেই তাহলেও সেটা অপব্যখ্যা। যার কিছুটা পেছনে বলেছি, বাকিটা সামনে বলব। তাদের মনগড়া বক্র মনের ব্যাখ্যাকে তারা অনুবাদের সাথে এমনভাবে মিশিয়ে শ্রোতার সামনে বলছেন, যেন এটাই হলো লাইনটার অনুবাদ। আল্লাহ এমন সব জাহালত বা অপব্যখ্যা থেকে এই উম্মতকে রক্ষা করুন।) আপনার কি মনে হয় একজন সাধারণ মুসলিমও যে জিনিস বুঝে, সেখানে শেখ সাদীর মত একজন জ্ঞানী বিখ্যাত বুজুর্গ মুসলিম কবির এতটুকু বুঝ ছিল না? নবী হওয়াকে যে ব্যক্তি আল্লাহর দান ছাড়া নিজ গুণে অর্জিত মনে করে তাঁর তো ঈমানই থাকে না। বালাগাত বা আরবী আলঙ্কারশাস্ত্রে খুব বিখ্যাত একটা উদাহরণ আছে- আনবাতার রবীউল বাক্বলা। মানে, বসন্ত সবজি উৎপন্ন করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, এই উদাহরণ যদি কোন নাস্তিক বলে তাহলে এই উৎপন্নের সাথে সবজির সম্বন্ধ করাটা হাকীকী বা প্রকৃত অর্থেই। কেননা নাস্তিকের বিশ্বাস এমনই যে, জগতে কোন সৃষ্টিকর্তা নেই। যা হয় সব যুগ-কাল-পরিবেশের থেকে। পক্ষান্তরে এটা কোন মুমিন বললে এটি মাজায বা রূপক ধরতে হবে। সেই ব্যক্তির আস্তিক বা মুমিন হওয়াটাই প্রমাণ (পরিভাষায় বলে-ক্বরীনা) যে, সে এখানে বসন্তকে সবজির স্রষ্টা আখ্যা দিচ্ছে না। এমন ব্যবহার আমরা প্রচুর করি। যেমন, শাহজাহান তাজমহল বানিয়েছেন। অথচ বাস্তবে এটা তিনি বানাননি; বরং কারিগররা বানিয়েছে। তবে তাঁর নির্দেশনা ছিল বিধায় তার দিকে সম্বন্ধিত হচ্ছে। এটাই হলো মাজায বা রূপক। এগুলো বুঝার জন্য প্রথমত দরকার একটা সুস্থ বিবেচনাবোধ, দ্বিতীয়ত ভাষার অলঙ্কারের সাথে পরিচিতি, তৃতীয়ত কাউকে অহেতুক অপরাধী বানানোর মানসিকতা না থাকা। অন্যথায় ‘অমুক ওষুধ খাওয়ার কারণে আমি সুস্থ হয়েছি।’ এই জাতীয় বাক্য বলাকেও শিরক বলে আখ্যা দিতে হবে। অথচ কথাটা কোন মুসলিমের মুখ দিয়ে বের হওয়াটাই ক্বরীনা বা দলিল যে, সে এখানে ওষুধকে মাধ্যম মনে করছে। মূল সুস্থতাদানকারী তো আল্লাহই। যাইহোক, এটা দরুদ নয় সেই বিষয়কে মানুষকে সচেতন করা দরকার। অনেকেই দরুদ মনে করে এটি পাঠ করে, যা সঠিক নয়। এটি একটি কবিতা। তাই আমাদের উচিত নেকি অর্জনের জন্য কবিতা নয়, দরুদ পাঠ করা। পাশাপাশি যারা একে শিরক বলে তাদের অপব্যখ্যাকেও প্রশ্রয় না দেওয়া। وهذه السطور لمن يعرف العربية: بلغ العلى بكماله أي بأن يكون كاملا، فهنا إضافة المصدر إلى فاعله، كما هو معروف الاستعمال في اللغة العربية.


- শায়খ আব্দুল্লাহ আল মাসউদ হাফিযাহুল্লাহ

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ