অনেকেই আছেন যারা বেশ অল্প বয়সেই মেরুদন্ডে ব্যথার শিকার হন। হাড়ের দুর্বলতা জনিত কারণে অথবা নিজের অসতর্কতামূলক কাজে বেশীরভাগ মানুষ মেরুদণ্ড ব্যথায় ভুগে থাকেন। কিন্তু এই মেরুদণ্ডের ব্যথা অনেক মারাত্মক পর্যায়ে না যাওয়া পর্যন্ত অনেকেই একে গুরুত্ব সহকারে দেখেন না। অল্প সময়ের ব্যথা ভেবে চুপচাপ থাকেন এবং ভুল করেন। কারণ এই ব্যথা ধীরে ধীরে মারাত্মক আকার ধারন করতে পারে এবং সঠিক পদক্ষেপ না নিলে মেরুরজ্জ ক্ষয় হওয়া এবং মেরুরস শুকিয়ে যাওয়ার মত ভয়াবহ রোগ হতে পারে। তাই আজ জেনে নিন মেরুদণ্ডের সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় কিছু কাজের তালিকা।
বালিশের দিকে লক্ষ্য রাখুন
ঘুমের সময় মাথায় বালিশ নিয়ে ঘুমানোর সামান্য ত্রুটির কারণেও মেরুদণ্ডের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। বালিশ বেশি উঁচু হলে মেরুদণ্ডে চাপ পড়ে। তাই বালিশ এমনভাবে নির্বাচন করুন যাতে শোয়ার সময় মেরুদণ্ড সোজা থাকে। চিৎ হয়ে ঘুমানোর অভ্যাস থাকলে হাঁটুর নিচে আরেকটি বালিশ রাখুন। কাত হয়ে ঘুমানোর অভ্যাস থাকলে হাঁটুর মাঝে বালিশ রাখার চেষ্টা করুন।
সতর্কতার সাথে ব্যায়াম করুন
অনেকেই ব্যায়াম করেন সুস্বাস্থ্যের জন্য। কিন্তু বেশিভাগ সময়েই ব্যায়ামের সঠিক নিয়ম পালন করতে দেখা যায় না অনেককে। ব্যায়াম করার সময় সতর্কতা অবলম্বন করুন। মেরুদণ্ডে বেশি চাপ পড়ে এমন ব্যায়াম করা থেকে বিরত থাকুন।
একটানা একভাবে বেশিক্ষণ বসে থাকবেন না
কাজের সময় আমরা একটানা একভাবে বসে কতোক্ষণ সময় পার করি তা আমরা অনেকেই হিসাব করি না। কিন্তু একটানা একভাবে বসে থাকা আমাদের মেরুদণ্ডের মারাত্মক ক্ষতি করে। তাই কাজের ফাঁকে উঠে দাঁড়াবেন কিংবা খানিকক্ষণ হাঁটবেন। নিতান্তই না পারলে একটু পর পর বসার স্টাইল পরিবর্তন করুন।
ভিটামিন ডি
ভিটামিন ডিএর স্বল্পতা হাড়কে করে তোলে ভঙ্গুর। গবেষণায় দেখা যায় যারা মেরুদণ্ডের সমস্যা নিয়ে ডাক্তারের কাছে যান তাদের ৮০% মানুষই ভিটামিন ডি সল্পতার কারণে মেরুদণ্ডের সমস্যায় পড়েন। তাই ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার খান এবং সকালের মিষ্টি রোদ গায়ে লাগানোর ব্যবস্থা করুন।
ক্রাঞ্চ করুন
ক্রাঞ্চ প্রায় ৭৫% পর্যন্ত মেরুদণ্ডের সমস্যা দূর করতে সহায়তা করে। তাই ব্যায়ামের তালিকায় রাখুন ক্রাঞ্চ। একটি সমতল জায়গায় লম্বা হয়ে শুয়ে পড়ুন। এরপর মাথার পেছনে দু হাত দিয়ে হাতু ভাঁজ করুন। এই অবস্থায় মাথাসহ দেহের উপরিভাগ উপরে তুলুন। এই ব্যায়ামটি মেরুদণ্ডের জন্য বেশ কার্যকরী একটি ব্যায়াম।
ব্যাকপেইন আমাদের খুব সাধারণ সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর যখনই আপনি এ সমস্যায় পড়বেন নিজের সব কাজকর্ম বাদ দিয়ে বসে থাকবেন না। সচল থাকুন, দেখবেন ব্যথা আর বাড়তে পারবে না। আর বাড়িতে একটু চেষ্টা করলেই কমাতে পারেন এই অসহ্য ব্যথা। জেনে নিন কীভাবে করবেন এই কাজগুলো।
# অফিসে অনেকক্ষণ টানা বসে থাকবেন না। মাঝে মাঝে উঠুন, একটু হাঁটাচলা করুন। আর গদি চেয়ার পরিহার করে চেষ্টা করুন কাঠের অথবা প্লাস্টিকের চেয়ার ব্যবহার করতে।
# ভারী জিনিস বেশিক্ষণ টানাটানি করলে ব্যাকপেইন হতে পারে। খুব বেশি সময় এই কাজ করবেন না। মাঝে মাঝে বিশ্রাম নিন।
# আর ব্যাকপেইনের সমস্যা নিয়মিত দেখা দিলে আপনার ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন।
# ব্যাকপেইন কমানোর জন্য ফিটনেস এক্সপার্টের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন স্ট্রেচিং এক্সারসাইজ করার জন্য। আমরা জানিয়ে দিচ্ছি কিছু এক্সারসাইজের নিয়মাবলি।
স্ট্রেচিং এক্সারসাইজ
# লো ব্যাকপেইন কমানোর জন্য এই এক্সারসাইজ করতে পারেন। সিঁড়ির সামনে সোজা হয়ে দাঁড়ান। সিঁড়ির তৃতীয় ধাপে ডান পা রাখুন। এরপর মেরুদণ্ড সোজা রেখে সামনের দিকে ঝুঁকে মাথা হাঁটুর কাছে নিয়ে যান। ১৫-২০ মিনিট এই অবস্থায় থেকে আবার ফিরে আসুন। এবার বাম পা সামনে নিন। পুনরায় একই কাজ করুন। তবে লক্ষ রাখবেন খুব বেশি সময় যেন না করে ফেলেন। এতে ক্ষতি হতে পারে।
# মিড ব্যাকপেইনের জন্য এই এক্সারসাইজ। হাঁটুর তলায় দু’হাত রেখে পা বুকের সামনে নিয়ে আসুন। এই অবস্থায় কয়েক সেকেন্ড থেকে আবার পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসুন। বিশ্রাম নিন।
# পা সোজা করে মাটিতে দাঁড়ান। ব্যালেন্স পাওয়ার জন্য দু’পায়ের মাঝে হাল্কা ফাঁকা রাখতে পারেন। এরপর মাথা ঝুঁকিয়ে পা ছোঁয়ার চেষ্টা করুন। দু’ পা জোড়া করে দাঁড়িয়ে নিচের দিকে ঝোঁকার সময় দু’ হাত হাঁটুতে রাখুন সাপোর্ট হিসেবে। এরপর হাত সরিয়ে নিন। ২০ সেকেন্ডের মতো এই অবস্থায় থেকে আবার সোজা অবস্থায় ফিরে আসুন, কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিন।
নিয়মিত ব্যায়ামগুলো করতে থাকলে আস্তে আস্তে ব্যথা কমে যাবে। চেষ্টা করুন সময় মেনে করার। আর ব্যায়াম করে শারীরিক কোনো সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন।