রাসুল (সা.)হাদীসে বলেন, ‘স্বামীহারা নারী (বিধবা বা তালাকপ্রাপ্তা)-কে তার সিদ্ধান্ত ছাড়া (অর্থাৎ পরিষ্কারভাবে তাকে বলে তার কাছ থেকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে) বিয়ে দেয়া যাবে না। কুমারী মেয়েকে তার সম্মতি (কথার মাধ্যমে অথবা চুপ থাকার মাধ্যমে) ছাড়া বিয়ে দেয়া যাবে না। লোকেরা জিজ্ঞেস করল, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সাঃ)! কেমন করে তার সম্মতি জানব? তিনি বললেন, চুপ করে (লজ্জার দরুন) থাকাটাই তার সম্মতি।’ (বুখারি, হাদিস নং : ৪৭৪১)
সুতরাং বুখারীর এই হাদীস থেকে পরিষ্কার বুঝা যাচ্ছে  কুমারী মেয়ের অনুমতি ব্যতীত বিয়ে দেওয়া যাবেনা।আর যদি জোর করে মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দেন তাহলে তিনি মেয়েটির উপর জুলুম করলেন যার দরুণ মহান আল্লাহ তাআলার কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে।এছাড়া যেহেতু বিয়েটা শুদ্ধ হবে না তাই এই মেয়েটির সাথে তার স্বামী সহবাসসহ যা কিছু করবে তা জিনা হিসেবে সাব্যস্ত হবে।আর এর জন্য যিনি জোর করে এ বিয়ে দিয়েছেন তিনি পাপের অংশীদার হবেন।
ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ
Call

ইসলামী শরীয়াহ মোতাবেক বিয়েতে কুমারী মেয়ের-ও অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। কোন অভিবাবক জোর করে বিবাহ দিতে পারবে না। যদি দেয় তাহলে সে এই বিবাহ রাখতেও পারে অথবা বিচ্ছেদও ঘটাতে পারে। যদি কোন পিতা তার কুমারী মেয়েকে তার বিনা অনুমতিতে বিবাহ দেয় এই প্রসংগে হাদিসে এসেছে, ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, জনৈকা কুমারী মেয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খিদমাতে উপস্থিত হয়ে অভিযোগ পেশ করে যে, তার পিতা তাকে এমন এক ব্যাক্তির সাথে বিবাহ দিয়েছে, যে তার অপছন্দ। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ব্যাপারে তাকে ইখতিয়ার প্রদান করেন। (সূনান আবু দাউদ হাদিস নম্বরঃ ২০৯২ হাদিসের মানঃ সহিহ) আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, অকুমারী মহিলাকে তার সুস্পষ্ট অনুমতি ব্যতিরেকে বিবাহ দেওয়া যাবে না। কুমারী মহিলাকেও তার সম্মতি ব্যতিরেকে বিবাহ দেওয়া যাবে না। আর চুপ থাকাই তার সম্মতি। (সূনান তিরমিজী হাদিস নম্বরঃ ১১০৭ হাদিসের মানঃ সহিহ) এই বিষয়ে অর্থাৎ কুমারী কন্যাকে বিবাহ প্রদানের বিষয়ে আলিমগণের মতবিরোধ রয়েছে। কুফাবাসী এবং অপরাপর অধিকাংশ আলিমের মতে পিতা যদি তার সাবালিকা কুমারী কন্যাকে সম্মতি না নিয়ে বিয়ে দিয়ে দেয় আর সে পিতৃপ্রদত্ত এই বিয়েতে সন্তুষ্ট না হয় তবে এই বিবাহ বাতিল হয়ে যাবে। মদীনাবাসী কোন কোন আলিম বলেন, কুমারী কন্যা অমত হলেও তাকে পিতা বিয়ে দিয়ে দিলে জায়েজ হবে। ইমাম মালিক ইবনু আনাস, শাফেয়ী, আহমদ ও ইসহাক (রহঃ)-এর এ অভিমত। কুমারী ও বিধবা মেয়ের মত গ্রহণ প্রসঙ্গে ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে 'আরো' বর্ণিত 'যে'। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বিধবা নারী নিজের ব্যাপারে তার অভিভাবক অপেক্ষা অধিক কর্তৃত্বশীল এবং কুমারী মেয়ের বিবাহের ব্যাপারে তার সম্মতি গ্রহণ করতে হবে। বলা হলো, ইয়া রাসূলুল্লাহ! কুমারী তো বিবাহের ব্যাপারে কথা বলতে লজ্জাবোধ করে। তিনি বলেনঃ তার নীরবতাই তার সম্মতি। (সুনানে ইবনে মাজাহ হাদিস নম্বরঃ ১৮৭০ হাদিসের মানঃ সহিহ) প্রশ্নের শর্ত সাপেক্ষ ছাড়াও অতিরিক্ত কিছু কথা হলোঃ উক্ত এবং সহীহ বুখারী হাদীসের উপর ভিত্তি করে ইমাম আবূ হানীফা (রহঃ) বলেছেনঃ অবিভাবক বিবাহিত ও অবিবাহিত মেয়েকে কোন নির্দিষ্ট ছেলেকে বিয়ে করতে বাধ্য করতে পারে না। অতএব পূর্বে বিবাহিত মেয়েদের কাছ থেকে বিয়ের জন্য রীতিমত আদেশ পেতে হবে এবং অবিবাহিত বালেগ মেয়ের কাছ থেকে যথারীতি অনুমতি নিতে হবে। এ সম্পর্কে ইমাম মুসলিম হাদীস বর্ণনা করেছেনঃ পূর্বে বিবাহিত মেয়েরা তাদের নিজেদের বিয়েতে মত জানানোর ব্যাপারে তাদের অলী অপেক্ষাও বেশি অধিকার রাখে। আর পূর্বে অবিবাহিত মেয়েদের নিকট তাদের পিতা বিয়ের মত জানতে চাইলে তাদের চুপ থাকাই তাদের অনুমতিজ্ঞাপক। কিন্তু বড়ই দুর্ভাগ্যের ব্যাপার বর্তমান অধঃপতিত মুসলিম সমাজে মেয়েদের এ অধিকার বাস্তব ক্ষেত্রে কার্যকর হচ্ছে না। এর অপর একটি দিক বর্তমানে খুবই প্রাবল্য লাভ করেছে। আধুনিক ছেলেমেয়েরা তাদের বিয়ের ব্যাপারে তাদের বাপ মা গার্জিয়ানদের কোন তোয়াক্কাই রাখে না। তাদের কোন পরোয়াই করা হয় না। ‘বিয়ে নিজের পছন্দেই ঠিক’ এ কথার সত্যতা অস্বীকার করা হচ্ছে না, তেমনি এ কথাও অস্বীকার করার উপায় নেই, আধুনিক যুবক যুবতীরা যৌবনের উদ্দামতায় অবাধ মেলামেশার গড্ডালিকা প্রবাহে পড়ে দিশেহারা হয়ে যেতে পারে এবং ভাল-মন্দ, শোভন অশোভন বিচারশূন্য হয়ে যেখানে সেখানে আত্মদান করে বসতে পারে। তাই উদ্যম-উৎসাহের সঙ্গে সঙ্গে সুস্থ বিচার বিবেচনারও বিশেষ প্রয়োজন। কেননা বিয়ে কেবলমাত্র যৌন পরিতৃপ্তির মাধ্যম নয়; ঘর, পরিবার, সন্তান, সমাজ, জাতি ও দেশ সর্বোপরি নৈতিকতার প্রশ্নও তার সাথে গভীরভাবে জড়িত। তাই বিয়ের ব্যাপারে ছেলেমেয়ের পিতা বা অলীর মতামতের গুরুত্ব আছে। কেননা সাধারণতঃ অলী-পিতা-মাতা নিজেদের ছেলেমেয়ের কখনো অকল্যাণকামী হতে পারে না। তাই বাস্তব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে পিতামাতার মতের গুরুত্ব কিছুতেই অস্বীকার করা চলে না। ছেলের বিয়েতে অলী তথা অভিভাবকের বাধ্য বাধকতা নেই কিন্তু মেয়ের জন্য বাধ্যবাধকতা রয়েছে। মেয়ের বৈধ অলী থাকাবস্থায় তাকে না জানিয়ে নকল অলী বানিয়ে কোর্ট ম্যারেজের মাধ্যমে যত বিবাহ হয়ে থাকে তা সবই বাতিল। তাদের দাম্পত্য জীবন হবে ব্যভিচারী জীবনের মত। তাদের অর্জিত সন্তান সন্ততি জারজ হিসেবে পরিগণিত হবে। এ অভিশপ্ত জীবন থেকে পরিত্রাণের জন্য তাদেরকে বৈধ অলীর মাধ্যমে পুনর্বিবাহ পড়াতে হবে। অনেক সময় দেখা যায় অলী বর্তমান থাকা সত্ত্বেও তাকে গুরুত্ব না দিয়ে এবং তার নির্দেশ ও সম্মতি ব্যতিরেকে অন্য কোন লোককে অলী হিসেবে দাঁড় করিয়ে বিবাহ কার্য সম্পন্ন করা হয়, এটা না-জায়িয। বরং মূল অলী নিজেই অথবা তার অবর্তমানে যাকে দায়িত্ব দিবে সে অলী হিসেবে বিবাহ কার্য সম্পাদন করবে। উল্লেখ্য অলী কর্তৃক মেয়ের পক্ষ থেকে পূর্ব অনুমতি বা সমর্থন নিতে হবে ঠিক আছে। কিন্তু বৈধ অলীর সমর্থন ও অনুমতি ব্যতীত কোন মেয়ের বিয়েই বৈধ হবে না। কারণ আয়েশা হতে বর্ণিত হয়েছে তিনি বলেনঃ রাসুল (সাঃ) বলেছেনঃ যে মেয়েই তার অভিভাবকের অনুমতি ব্যতীত বিয়ে করবে তার বিয়ে বাতিল। এ কথাটি তিনবার উল্লেখ করেন। [এ ভাষায় হাদীসটি ইমাম আবূ দাঊদ ২০৮৩, তিরমিযী ১১০২ বর্ণনা করেছেন।] আল্লাহ তাআলা বলেছেন, হে আমার বান্দারা! আমি নিজের ওপর জুলুম হারাম করে নিয়েছি এবং তোমাদের পরস্পরের মধ্যেও তা হারাম করেছি। সুতরাং তোমরা পরস্পরের ওপর জুলুম কোরো না। (মুসলিম, জামে তিরমিজি) আল্লাহ তাআলা আরো বলেন, 'অতঃপর যে উপদেশ তাদেরকে দেওয়া হয়েছিল, যখন তারা তা ভুলে গেল তখন আমি মুক্তি দিলাম তাদেরকে, যারা মন্দ হতে নিষেধ করে। আর যারা জুলম করেছে তাদেরকে কঠিন আজাব দ্বারা পাকড়াও করলাম। কারণ তারা পাপাচার করত। (সূরা আল- আরাফঃ ১৬৫)

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ