Call

আমাদের দেশে কতক পীর-ফকির, আলেম- জাহেল, কি শিক্ষিত, কি অশিক্ষিত অনেকেই তাবিজ-কবচ, তাগা, কড়ি, সামুক, ঝিনুক ও গাছ-গাছালির শিকর- বাকর ইত্যাদি দিয়ে বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা করেন এবং ইহা বৈধ ও জায়েজ মনে করেন। এ সম্পর্কে বাজারে কিছু বই পুস্তক পাওয়া যায়, সে সব বইয়ে নির্ধারিত বিষয়ে গ্রহণ যোগ্য কোন দলিল নেই, আছে কিছু মনগড়া কিচ্ছা- কাহিনী, অসংখ্য তদবিরের বর্ণনা ও তার বানোয়াট উপকারীতা। এ সব বই পড়ে কেউ কেউ বিপদ-আপদ, দুঃখ-কষ্ট, অভাব- অনটন, রোগ, যন্ত্রণা থেকে মুক্তি লাভের আশায় বিভিন্ন তদবির ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ হয় ও তা গ্রহণ করে। তারা এ ধরণের চিকিৎসার মূল্যায়ন ও তার বৈধতা-অবৈধতা সম্পর্কে পুরোপুরি অজ্ঞ। আমি এই লিখাটির মাধ্যমে এ বিষয়টির তত্ত্ব ও স্বরূপ উদ্ঘাটন এবং ইসলামের দৃষ্টিতে তার হুকুম বর্ণনার প্রয়াস পেয়েছি। ০১. সাহাবি ইমরান বিন হুসাইন রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত : একদা নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তির হাতে তামার চুড়ি দেখে বললেন, এটা কি? সে বলল: এটা অহেনার অংশ। {অহেনার অর্থ এক প্রকার হাড়, যা থেকে কেটে ছোট ছোট তাবিজ আকারে দেয়া হয়।} তিনি বললেন: এটা খুলে ফেল, কারণ এটা তোমার দূর্বলতা বাড়ানো ভিন্ন কিছুই করবে না। যদি এটা বাঁধা অবস্থায় তোমার মৃত্যু হয়, তবে কখনও তুমি সফল হবে না।’ (মুসনাদে আহমদ, হাকেম ও ইবনে মাজাহ) হাদিসটি সহিহ। ০২. উকবা বিন আমের রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসূলকে বলতে শুনেছি: ‘যে ব্যক্তি তাবিজ লটকালো, আল্লাহ তাকে পূর্ণতা দেবেন না, আর যে কড়ি ব্যবহার করবে, আল্লাহ তাকে মঙ্গল দান করবেন না।’ আহমদ, হাকেম। ০৩. উকবা বিন আমের আল-জোহানি রাদিআল্লাহু আনহু বলেন : ‘একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমতে একদল লোক উপস্থিত হল। তিনি দলটির নয়জনকে বায়আত করলেন একজনকে করলেন না। তারা বলল, হে আল্লাহর রাসূল! নয়জনকে বায়আত করলেন একজনকে করলেন না? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: তার সাথে তাবিজ রয়েছে। অতঃপর তিনি স্বহস্তে তা ছিড়ে ফেললেন এবং তাকে বায়আত করলেন, আর বললেন, যে ব্যক্তি তাবিজ ব্যবহার করল সে শিরক করল।’ সহিহ মুসনাদে আহমদ, হাকেম। ০৪. একদা হুজায়ফা রাদিআল্লাহু আনহু এক ব্যক্তির হাতে জ্বরের একটি তাগা দেখতে পেয়ে তা কেটে ফেলেন। অতঃপর তিনি তিলাওয়াত করেন : তাদের অধিকাংশ আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে, তবে শিরক করা অবস্থায়।’ (ইউসুফ : ১০৬) তাফসিরে ইবনে কাসির। এ থেকে প্রমাণিত হয়, সাহাবি হুজায়ফার মতে তাগা ব্যবহার করা শিরক। ০৫. বুখারি ও মুসলিমে বর্ণিত, আবু বশির আনসারি রাদিআল্লাহু আনহু কোন এক সফরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গী ছিলেন। সে সফরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনৈক ব্যক্তিকে এ নিদের্শ দিয়ে পাঠালেন, ‘কোনও উটের গলায় ধনুকের ছিলা অথবা বেল্ট রাখবে না, সব কেটে ফেলবে।’ ০৬.আবু ওয়াহহাব রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ঘোড়া বেঁধে রাখ, তার মাথায় ও ঘাড়ে হাত বুলিয়ে দাও এবং লাগাম পরিয়ে দাও। তবে ধনুকের ছিলা ঝুলিয়ো না। সুনানে নাসায়ী। ০৭. আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিআল্লাহর স্ত্রী জয়নব রাদিআল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: একদিন আব্দুল্লাহ বাড়িতে এসে আমার গলায় তাগা দেখতে পান। তিনি বললেন, এটা কী? আমি বললাম, এটা পড়া তাগা। এতে আমার জন্য ঝাঁড়-ফুঁক দেয়া হয়েছে। তা নিয়ে তিনি কেটে ফেললেন এবং বললেন, আব্দুল্লাহর পরিবার শিরক থেকে মুক্ত। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি : ঝাড়-ফুঁক, সাধারণ তাবিজ ও ভালোবাসা সৃষ্টির তাবিজ ব্যবহার করা নিঃসন্দেহে শিরক। আহমদ, হাকেম, ইবনে মাজাহ। আল্লাহ আমাদের হেফাযত করুন। আমীন!!

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ

তাবিজ নিজে ব্যবহার করা এবং অন্যকে ব্যবহার করতে দেয়ার হুকুম কি হবে তা কয়েকটি বিষয়ের উপরে নির্ভর করে। 

(ক) যদি তাবিজ-কবচকে স্বয়ং কোনো অকল্যাণ থেকে রক্ষাকারী, বা কল্যাণ দানকারী মনে করে ব্যবহার করা হয় বা ব্যবহার করতে দেয়া হয় তাহলে তার ভেতরে যাই থাকুক না কেনো এটা স্পষ্ট শির্ক হবে। **শির্ক হলো সবচেয়ে বড়ো কবিরা গুনাহ। ** 

(খ) যদি ওসিলা হিসাবে ব্যবহার করা হয় এবং মূল কল্যাণ দানকারী, অকল্যাণ দূরকারী হিসাবে একমাত্র আল্লাহর উপরে বিশ্বাস থাকে তাহলে তাবিজের ভিতরে কি আছে তার উপর ভিত্তি করে এর হুকুম হবে। 

(i) যদি স্পষ্ট কুরআনের আয়াত, দোয়া ইত্যাদি থাকে, কোনো অস্পষ্ট কিছু যেমন আবজাদ সংখ্যা, বিভিন্ন অর্থ না জানা চিহ্ন ইত্যাদি না থাকে তাহলে-

 (১) অনেক ওলামায়ে কেরামের মতামত হলো এটাকে ব্যবহার জায়েজ হবে না, হাদিসে নিষেধ থাকার কারণে। 

(২) কিছু সংখ্যক ওলামায়ে কেরাম বৈধ বলেছেন, যদি ব্যবহারকারী কুরআন ও দোয়া পড়তে অপারগ হয়। যেমন ছোটো বাচ্চা। *আমরা প্রথম মতটির পক্ষে। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে তাদের অভিভাবক কুরআন ও দোয়া পড়ে তাদের গায়ে ফু দিয়ে দিবে, হাতে ফু দিয়ে গায়ে হাত বুলিয়ে দিবে। যতদ্রুত সম্ভব একটু বড়ো হলেই নিরাপত্তার আমলগুলো মুখস্থ করিয়ে দিবে। * 

(ii) এর বাইরে তাবিজে অন্য কিছু লেখা থাকলে, বা অন্য কোনো জিনিস থাকলে, যেমন কোনো পাথরের টুকরা, বিশেষ কোনো কাপড় বা সুতা, বিশেষ কোনো স্থানের মাটি, কোনো গাছের ডাল, পাতা, শিকড় ইত্যাদি থাকলে তা সর্বসম্মতিক্রমে নিষিদ্ধ বা হারাম হবে। আল্লাহই সবচেয়ে ভালো জানেন। আল্লাহ আমাদেরকে এবং আমাদের ঈমানকে হেফাজত করুক।। #রুকইয়াহ #হিজামা #খুলনা #RHKhulna

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ