সাবালক মানুষের উপর সর্বপ্রথম যে জিনিস ফরয হয়, তা হল ইলম। অতঃপর আমল, অতঃপর প্রচার এবং এই তিনে সবর। ইলম অনুসন্ধান করার ব্যাপারে কুর’আন আমাদেরকে উদ্বুদ্ধ করে। মহান আল্লাহ বলেন, “জানো, শেখো ও শিক্ষা কর যে, আল্লাহ ছাড়া কোন (সত্য) উপাস্য নেই”। (সূরা মুহাম্মদ ১৯) কুর’আন কারীমের প্রথম আদেশ ছিল ‘পড়’। কিন্তু কোন বিষয় দিয়ে পড়া শুরু করবেন? সর্বপ্রথম কোন বিষয় আপনার জানা ও পড়ার জন্যে প্রাধান্য পাবে? নিশ্চয়ই যে জিনিস আপনার কাছে সবচেয়ে বড়, তা-ই আপনার কাছে সর্বপ্রথম শিক্ষণীয় হওয়া দরকার। আপনি বিশ্বাস করেন, ‘আল্লাহু আকবার’ (আল্লাহ সবার চেয়ে বড়), অতএব আল্লাহ সম্বন্ধে জ্ঞানলাভ আপনার কাছে সবার চেয়ে বেশি এবং সবার আগে প্রাধান্য পাওয়া প্রয়োজন। ‘আল্লাহ’ সম্বন্ধে জ্ঞান ঈমানের প্রথম রুকন। তাঁর নাম ও গুণাবলী সম্বন্ধে সঠিক ধারনা না হলে ঈমান সঠিক হয় না। আর ঈমান সঠিক না হলে হৃদয়ের জঞ্জাল দূর হয় না, আর তা না হলে তো বিপদ বটেই। মহান আল্লাহ বলেন, “যেদিন ধন সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি কোন কাজে আসবে না; সেদিন উপকৃত হবে কেবল সেই; যে আল্লাহর নিকট সুস্থ অন্তঃকরণ নিয়ে উপস্থিত হবে”। (সূরা আশ শুয়ারা ৮৮-৮৯) মহান আল্লাহ ঈমানদারদেরকে ঈমান আনার আদেশ দিয়ে বলেন, “হে ঈমানদারগণ, আল্লাহর উপর পরিপূর্ণ বিশ্বাস স্থাপন কর এবং বিশ্বাস স্থাপন কর তাঁর রসূলও তাঁর কিতাবের উপর, যা তিনি নাযিল করেছেন স্বীয় রসূলের উপর এবং সেসমস্ত কিতাবের উপর, যেগুলো নাযিল করা হয়েছিল ইতিপূর্বে। যে আল্লাহর উপর, তাঁর ফেরেশতাদের উপর, তাঁর কিতাব সমূহের উপর এবং রসূলগণের উপর ও কিয়ামতদিনের উপর বিশ্বাস করবে না, সে পথভ্রষ্ট হয়ে বহু দূরে গিয়ে পড়বে।” (সূরা নিসা ১৩৬) আর তাঁর প্রতি ঈমান আনার মৌলিক বিষয় হল তাঁর সত্তা, নামাবলী, গুণাবলী ও কর্মাবলী সম্বন্ধে সঠিক বিশ্বাস রাখা। এ আলোচনা এ গুরুত্বের কথা খেয়াল করেই। তাছাড়া যে জিনিসের মর্যাদা ও মাহাত্ম্য যত বেশি জানা যাবে, তত তার কদর বৃদ্ধি পাবে, তার প্রতি ভক্তি ও আগ্রহ বর্ধিত হবে। মহান আল্লাহর গুণাবলী সম্বন্ধে মুসলিম ওয়াকিফহাল হলে অবশ্যই তার ঈমান বৃদ্ধি পাবে, তাঁর প্রতি তার ভক্তি ও আগ্রহ, আশা ও ভরসা, ভয় ও মান্যতা বর্ধিত হবে। যে আল্লাহর ইবাদত আমরা করি, যাঁকে আমরা আপদে-বিপদে আহবান করি, সেই আল্লাহর মা’রিফাত বড় মধুর জিনিস। মালিক বিন দিনার বলেন, ‘দুনিয়াবাসীরা দুনিয়া থেকে বিদায় নিল, অথচ তার মধ্যে সবচেয়ে ভালো জিনিসের স্বাদ ভক্ষণ করল না’। লোকেরা জিজ্ঞেস করল, ‘হে আবু ইয়াহইয়া ! তা কি? উত্তরে তিনি বললেন, “আল্লাহ আযযা অজাল্লার মা’রিফাত’। (হিলয়্যাহ, আবু নুয়াইম ২/৩৫৮) মহান আল্লাহ তাঁর সুন্দর নামসমূহ ধরে ডেকে দু’আ ও প্রার্থনা করতে আদেশ করেছেন এবং মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুসংবাদ দিয়েছেন যে, যে ব্যক্তি তাঁর ৯৯টি নাম মুখস্ত রাখবে, সে বেহেশতে যাবে। মহান আল্লাহর নামাবলী অর্থসহ জানা থাকলে তার ফল ও পরিণাম বড় সুন্দর হয়। · পদে পদে তাঁর জ্ঞান, দৃষ্টি ও আধিপত্যের কথা স্মরণ হলে তাঁর প্রতি ভয়,ভক্তি,তা’যিম ও ভালবাসা বৃদ্ধি পায়। · পাপকাজে পা বাড়াতে লজ্জাবোধ হয়। · মহান আল্লাহর প্রতি সাক্ষাৎ কামনা বাড়ে। · তাঁর করুণা হতে নিরাশা দূর হয়। · তাঁর প্রতি সুধারণা,ভরসা ও নির্ভরতা বৃদ্ধি পায়। · মনের অহংকার ও ঔদ্ধত্য দূর হয়।