manik

Call

সকল প্রশংসা একমাত্র আল্লাহ্‌র। মানুষ স্বপ্ন দেখে থাকে তিন প্রকারে: ১. আল্লাহ্‌র পক্ষ থেকে। ২. শয়তানের পক্ষ থেকে। ৩. নিজের কল্পনার ফলে। শরীয়তের ক্ষেত্রে শুধু মাত্র আম্বিয়াদের স্বপ্ন হচ্ছে ওহী। আম্বিয়াদের স্বপ্ন ছাড়া অন্যদের স্বপ্ন থেকে ইসলামের কোন বিধিবিধান গ্রহন করা যাবে না। ইব্রাহীম (আ:) স্বপ্ন দেখলেন এবং ইসমাইল (আ:) -কে বললেন, হে ইসমাইল আমি স্বপ্নে দেখলাম যে আমি তোমাকে জবাই করছি, তোমার মত কি? ইসমাইল (আ:) বললেন হে পিতা, যা আল্লাহ্‌র আদেশ হয়েছে তা আপনি করে ফেলুন। এই ক্ষেত্রে ইব্রাহীম (আ:) এর ছেলেও জানছে যে আমার পিতার স্বপ্ন হচ্ছে ওহী। কিন্তু সাধারন মানুষের স্বপ্ন কি ওহী? না, কখনও না। আমরা এই আকিদা রাখি না। হজরত ছোলায়মান এব্‌নে ছোহায়েম বলেন আমি স্বপ্নযোগে হুজুরের জিয়ারত লাভ করি। আমি আরজ (জিজ্ঞাসা) করিলাম ইয়া রাসূলাল্লাহ। যাহারা আপনার দরবারে হাজির হইয়া আপনার উপর ছালাম পাঠ করে আপনি কি তাহা শুনতে পান? হুজুর বলেন হাঁ আমি তাহার ছালামের উত্তরও দিয়া থাকি। ইব্রাহীম এব্‌নে শাইবান বলেন, আমি হজ্জ করিয়া রওজায়ে আতহারে হাজির হইয়া যখন ছালাম করি তখন কবর শরীফ হইতে অ-আলাইকুমুছ ছালামু শব্দের উত্তর শুনতে পাই…[ফাযায়েলে দরূদের, পৃষ্ঠায়-৪০] ফাযায়েলা দরূদ মতে রাসূল (সা:) স্বপ্নযোগে এক ব্যক্তিকে বলেছেন, যে উনি সালামের উত্তর দিয়ে থাকেন এবং মানুষ তা শুনতেও পায়। কিন্তু কোন সহীহ হাদিসে এর প্রমান নেই যে রাসূল (সা:) সালামের উত্তর দিয়ে থাকেন এবং মানুষ তা শুনতে পায়। কোন সাহাবী (রা:) বা তার স্ত্রীরা (রা:) কি সালামের উত্তর শুনতে পেতেন? তারা কখনও শুনতে পাননি। তাহলে প্রশ্ন: ফাযায়েলে দরূদে যে ব্যক্তি স্বপ্নযোগে রাসূল (সা:) এর সাথে কথা বললেন, তিনি কি রাসূল (সা:), নাকি শয়তান দাবি করছে যে, সে রাসূল (সা:)? যেহেতু এই বিষয়টি কোন সহীহ হাদিস দ্বারা প্রমানিত নয় এবং কুরআনেও এর উল্লেখ নেই এবং আহলে সুন্নাহে্‌র আলেমেরা এটাকে সঠিক মনে করে না। তাই ফাযায়েলে দরূদের ঐ স্বপ্নটি অবশ্যই শয়তানের পক্ষ থেকে হয়েছে, এতে কোন সন্দেহ নেই। ফাযায়েলে দরূদে আরও যেসব দলিল বর্ণনা করা হয়েছে, তা আমরা খতিয়ে দেখেছি, যার সারাংশ কতক ওলী ও নেককার লোকের ঘটনা এবং তাদের উল্লেখ করা প্রত্যক্ষদর্শী কতক লোকের নাম। সন্দেহ নেই, এসব ঘটনা দলিল হিসেবে পেশ করার উপযুক্ত নয়। দলিল হয়তো কুরআনের আয়াত অথবা হাদিস অথবা উম্মতের ইজমা অথবা ন্যূনতম পক্ষে কোন সাহাবির বাণী হবে। কিসসা বা ঘটনা নয়। বিশেষ করে যদি রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ব্যক্তিত্ব ও ইলমে গায়েবের (অদৃশ্যের জ্ঞান) সাথে তার সম্পৃক্ততার বিষয় হয়। এসব বিষয় শির্‌কী আকিদা বলেছেন, শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ): “এসব ক্ষেত্রে তাদের কিছু শয়তানি ধান্ধা ও আসর হাসিল হয়, যা তারা আল্লাহর পক্ষ থেকে কারামত মনে করে। তাদের কেউ দেখে যে, কবরস্থ ব্যক্তি তার কাছে এসেছে, (অথচ বহু বছর পূর্বে সে মারা গছে) এবং বলছে: আমি অমুক। অনেক সময় তাকে বলে: আমরা এমন লোক, আমাদেরকে যখন কবরে রাখা হয় আমরা উঠে আসি। এমনি ঘটনা ঘটেছে তুনসি ও নুমান সালামির সাথে। আর শয়তান তো অহরহ মানুষের আকৃতি ধারণ করে, তাদেরকে ঘুমন্ত ও সজাগ উভয় অবস্থায় ধোঁকা দেয় ও প্রতারিত করে। অনেক সময় অপরিচিত লোকের নিকট এসে বলে : আমি অমুক বুযুর্গ অথবা আমি অমুক আলেম। অনেক সময় তাদেরকে বলে : আমি আবু বকর, আমি ওমর। আবার অনেক সময় জাগ্রত অবস্থায় এসে বলে : আমি মাসীহ, আমি মূসা, আমি মুহাম্মদ। এ জাতীয় আরও অনেক ঘটনা আমি জানি, আর এ থেকে অনেকে বিশ্বাস করে নেয় যে, নবীগণ নিজ আকৃতিতে জাগ্রত অবস্থায় তাদের সাথে সাক্ষাতের জন্য এসেছেন। এদের কতক শায়খ আছেন, যাদের মুজাহাদা, ইলম, তাকওয়া ও দ্বীনদারী প্রসিদ্ধ, তারা সরল মনে এসব ঘটনা বিশ্বাস করে নেয়। এদের মধ্যে কতক রয়েছে, যে ধারণা করে, যখন সে নবীর কবর যিয়ারত করতে আসে, তখন তিনি সশরীরে কবর থেকে বের হয়ে তার সাথে কথা বলেন। এদের কেউ কাবার সীমানায় জনৈক শায়খের চেহারা দেখে বলে: তিনি ইবরাহিম খলিল। এদের কেউ ধারণা করে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ হুজরা থেকে বের হয়ে তার সাথে কথা বলেছেন। এটা সে নিজের কারামাত মনে করে। এদের কারো বিশ্বাস: কবরস্থ ব্যক্তিকে আহ্বান করলে সে ডাকে সাড়া দেয়। এদের কেউ বর্ণনা করত: ইব্‌ন মুনদাহ কোন হাদিস সম্পর্কে সমস্যায় পড়লে, হুজরায় প্রবেশ করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করত, আর তিনি তার উত্তর দিতেন। সর্বশেষ এমন ঘটনা মরক্কোর এক ব্যক্তির ঘটে, অতঃপর সে এ ঘটনাকে নিজের কারামাত গণ্য করে। এসব ধারণা পোষণকারী সম্পর্কে ইব্‌ন আব্দুল বারর বলেছেন : তুমি নিপাত যাও! এসব ঘটনা তুমি মুহাজির ও আনসার সম্পর্কে জান ? তাদের মধ্যে এমন কেউ ছিল, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যুর পর যে তাকে জিজ্ঞাসা করেছে, আর তিনি তার উত্তর দিয়েছেন ? সাহাবায়ে কেরাম কত বিষয়ে মত বিরোধ করেছে, তারা কেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করেনি ?! এমনকি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মেয়ে ফাতেমা মিরাসের ব্যাপারে ভিন্ন মত পোষণ করেন, তিনি কেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করেননি ?” [ (সংক্ষিপ্ত) মাজমুউল ফতোয়া : ১০/৪০৬-৪০৭] ইব্‌ন তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) আরও বলেন : “এর দ্বারা বলা উদ্দেশ্য যে, সাহাবায়ে কেরামদের গোমরাহ করার জন্য শয়তান এসব স্পষ্ট কুফরি পেশ করার সাহস করেনি, যেরূপ সাহস এসব গোমরাহ ও বিদআতিদের ক্ষেত্রে করেছে, এরা কুরআনের অপব্যাখ্যা করেছে, অথবা এরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীস সম্পর্কে অজ্ঞ ছিল, অথবা এরা অস্বাভাবিক আশ্চর্য কিছু শ্রবণ করেছে ও দেখেছে, আর তাকেই মনে করেছে যে, এগুলো নবী ও নেককার লোকের আলামত, অথচ এগুলো ছিল শয়তানের কারসাজি। খ্রিষ্টান ও বিদ‘আতি সম্প্রদায় এভাবেই পথভ্রষ্ট হয়েছে। তারা মুতাশাবেহ আয়াতের (যার অর্থ আল্লাহ ব্যতীত কেউ জানে না) অনুসরণ করে, আর দাবি করে এগুলো মুহকাম (স্পষ্ট অর্থের ধারক), অনুরূপ তারা যুক্তি ও ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য দলিল আঁকড়ে থাকে, অতঃপর কিছু শোনে ও দেখে বলে : এগুলো আল্লাহর পক্ষ থেকে, অথচ তা শয়তানের পক্ষ থেকে, আর তারা দাবি করে এগুলো স্পষ্ট সত্য এতে কোন অস্পষ্টতা নেই। অনুরূপ সাহাবাদের ক্ষেত্রে শয়তান এমন সাহস করেনি, তাদের সামনে সে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আকৃতি ধারণ করবে, অথবা তার নিকট ফরিয়াদ করবে, অথবা তাদের নিকট এমন আওয়াজ পেশ করারও সাহস দেখায়নি, যে আওয়াজ তার আওয়াজের ন্যায়, কারণ যারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখেছে, তারা নিশ্চয় জানে এসব শিরক ও হারাম। এ জন্য শয়তান তাদের কাউকে এও বলতে সাহস করেনি : তোমাদের কারো প্রয়োজন হলে আমার কবরের নিকট আসো, আমার উসিলা দিয়ে ফরিয়াদ কর, না তার জীবদ্দশায় না তার মৃত্যুর পর। পরবর্তী যুগের লোকের ক্ষেত্রে যেরূপ ঘটেছে। শয়তান তাদের কারো নিকট এসে এও বলার সাহস করেনি : আমি অদৃশ্য ব্যক্তি, অথবা আমি চতুর্থ আওতাদের অন্তর্ভুক্ত, অথবা সপ্তম আওতাদের অন্তর্ভুক্ত, অথবা চল্লিশ আওতাদের অন্তর্ভুক্ত। অনুরূপ তাদের কাউকে বলার সাহস করেনি : তুমি তাদের অন্তর্ভুক্ত, কারণ এগুলো ছিল তাদের নিকট অসার ও নিরর্থক। শয়তান তাদের কারো কাছে এসে বলার সাহস করেনি : আমি আল্লাহর রাসূল, অথবা কবর থেকে তাদের কাউকে সম্বোধন করারও সাহস করেনি, যেমন পরবর্তী যুগে অনেকের ক্ষেত্রে ঘটেছে, তার কবরের নিকট, অন্যদের কবরের নিকট, বরং যেখানে কবর নেই সেখানেও…উক্তির সমাপ্তি। এ জন্যই সাহাবাদের কেউ বলেনি : তার কাছে খিজির এসেছে, না মূসা, না ঈসা, আর না তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উত্তর শুনেছেন। ইব্‌ন ওমর (রাদিআল্লাহু আনহু) সফর থেকে এসেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সালাম করতেন, কিন্তু কখনো তিনি বলেননি আমি উত্তর শুনেছি। অনুরূপ তাবেঈ বা তাদেরও অনুসারী কারো ক্ষেত্রে এরূপ ঘটেনি। এসব গোমরাহী তখনই সৃষ্টি হয়েছে, যখন তাওহীদ ও সুন্নতের ইলম হ্রাস পেয়েছে, তখনি তাদের গোমরাহ করার সুযোগ শয়তানের হাতে এসেছে, যেরূপ গোমরাহ করেছে নাসারাদের, যখন তাদের নিকট ঈসা ও তার পূর্ববর্তী নবীদের ইলম হ্রাস পেয়েছিল…[ (সংক্ষিপ্ত) মাজমুউল ফতোয়া : ২৭/৩৯০-৩৯৩] ফাযায়েলে দরূদ নিম্নের দুটি লিংক থেকে সংগ্রহ করা যাবে… http://www.banglakitab.com/Fazail%20E%20Amal/Fazail-E-Amal2-Fazail-E-Darud-Pages-1-111-MaulanaZakariah.pdf http://www.banglakitab.com/Fazail%20E%20Amal/Fazail-E-Amal2-Fazail-E-DarudHajj-Pages-112-221-MaulanaZakariah.pdf

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ