শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
Call

যদিও বলা হয় যে প্রেগনেন্সি একজন মহিলার জীবনের সব থেকে সুন্দর মুহূর্ত কিন্তু সব মায়ের জন্য ব্যাপারটি সঠিক নয়। কমবেশি সব মহিলাই মুড সুইং এর ভেতর দিয়ে নিজেদের গর্ভাবস্থার সময়গুলি গুলি পার করেন। দুঃখজনক হলেও সত্যি এই ব্যাপারে আমাদের দেশের বেশিরভাগ মহিলা বা তাদের পরিবারের সদস্যরা সচেতন নন। অনেক সময় হবু মার নিজের এই অবস্থা সম্পর্কে কোন ধারনাই থাকেনা যা পরবর্তীতে সন্তানের জন্য মঙ্গলকর হয়না। অনেক সময় মুড সুইং এর কারনে অতিরিক্ত স্ট্রেস তৈরি হয় যা থেকে জন্ম নেয় ডিপ্রেশন। গর্ভাবস্থায় এমন হওয়া খুব স্বাভাবিক কারণ মহিলাদের এই সময় বেশ কিছু হরমনাল পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। কিন্তু মুড সুইং থেকে বিষয়টি যখন ডিপ্রেশনের দিকে চলে যায় তখন তা থেকে premature labor pain হতে পারে বা অনেক সময় স্বল্প ওজনের অপুষ্টির শিকার বা বুদ্ধি প্রতিবন্ধী সন্তানের জন্ম হতে পারে। যেহেতু কম বেশি সব হবু মা কে এই ধরনের স্ট্রেস এর মধ্যে দিয়ে যেতে হয় তাই তা কমানোর জন্য নিজে কিছু পদক্ষেপ নিলে এই ধরনের পরিস্থিতি কাটানো সহজ হয়ে যায়। সব সময় একটা কথা মাথায় রাখতে হবে যে এই সময় আপনি শারীরিক ও মানসিক ভাবে সুস্থ থাকলেই কেবল আপনার সন্তান সুস্থ থাকবে। # সব প্রথম নিজের অবস্থা বুঝতে চেষ্টা করুন। মা হওয়া ব্যাপারটি কে শুধু গুরুদায়িত্ব না ভেবে নিজের নতুন অবস্থা সম্পর্কে সচেতন হন ও এই অনুভুতিগুলকে উপভোগ করার চেষ্টা করুন। আপনার অনাগত সন্তানের সাথে সাথে নিজেকে নিয়েও ভাবুন। এই সময় এমনিতেও ঘোরাফেরা কম করা হয়। সেক্ষেত্রে একঘেয়েমি কাটাতে পছন্দের গান শুনুন বা সিনেমা দেখুন বা ভাল কোন বই পড়ুন। নিজের দৈনন্দিন কাজ গুলো কমিয়ে দিন বা ভাগ করে নিন। স্বামী বাসায় থাকলে তাকে আপনার সাথে কাজ করতে উৎসাহিত করুন। এতে আপনার কাজে সাহায্য হবে সাথে এক সাথে সময় কাটানোও হবে। অনাগত সন্তানের জন্য নিজে কিছু তৈরি করুন, না পারলে কেনাকাটা করুন। # ঘুমের সময় বাড়িয়ে দিন। মনে রাখবেন আপনার শরীর আপনার অনাগত সন্তানকে সঠিক ভাবে বেড়ে উঠতে সাহায্য করার জন্য ওভারটাইম করছে। তাই আপনার বেশি ঘুমের প্রয়োজন আছে। # এ সময় আপনার ও আপনার সন্তানের জন্য সাস্থকর ও পরিপূর্ণ খাবার বেশি মাত্রাই খাবেন যেন আপনাকে শারীরিক দুর্বলতা পেয়ে না বসে। শারীরিক দুর্বলতা থেকেও অনেক সময় মানসিক অবসাদ তৈরি হয়। # গর্ভাবস্থায় নির্দিষ্ট ধাপ পার করার পর আপনি হালকা ব্যায়াম বা হাটাহাটি করতে পারেন তবে অবশ্যই আপনার ডাক্তার এর সাথে পরামর্শ করে। এসময় হালকা ব্যায়াম আপনার স্ট্রেস কমাতে অনেক সাহায্য করে। # শোনা কথায় কান দেবেন না। মনে রাখবেন আপনি মা। আপনার সন্তানের ভালো মন্দ আপনি সব থেকে ভাল বুঝতে পারেন। সব মা এর মধ্যে দিয়ে গেলেও সবার অভিজ্ঞতা গুলো কিন্তু এক রকম হয়না। তাই কারো খারাপ কিছু অভিজ্ঞতা হলে বা কোন খাবার খাওআর পরে বা কোন কাজ করার পরে সমস্যা হওয়া মানে এই না যে আপনিও সেই অভিজ্ঞতার মুখমুখি হবেন। আপনার ডাক্তার এর নির্দেশ মত চলুন। আপনার যে কোন সমস্যার সমাধান উনি সব থেকে ভাল দিতে পারবেন। # আপনার গর্ভকালীন সময়টা লেখার মাধ্যমে ধরে রাখুন। কোন কিছু নিয়ে মন খারাপ হলে হলে লিখে ফেলুন, দেখবেন স্ট্রেস অনেক কমে গেছে। # আমাদের দেশের অন্যতম প্রধান সমস্যা হল গর্ভধারণ এবং মা'দের ভাল মন্দ নিয়ে কথা বলার চর্চা প্রায় নেই বললেই চলে। আমি নিজেও এই সমস্যা পার করে এসেছি। ভালো হয় যদি আপনি আপনার কাছের কাউকে বেছে নিতে পারেন আপনার pregnancy buddy হিসেবে, যার সাথে আপনি আপনার যাবতীয় কথা শেয়ার করতে পারেন। সেই কাছের মানুষটি হতে পারে আপনার স্বামী, মা, শাশুড়ি, বোন বান্ধবি বা অন্য কেও। আমার ক্ষেত্রে আমার pregnancy buddy ছিলেন আমার ডাক্তার। # এত কিছুর পরেও একটি আসল কথা থাকে তা হল "না" বলা শিখুন। আপনি না বলা শিখতে না পারলে এসব কিছুই কাজ করবেনা। আমাদের সমাজে হবু মায়েদের উপরে পরিবার থেকে অনেক প্রেসার দেয়া হয় প্রায় সব ক্ষেত্রেই বাচ্চার ভালর কথা বলে। অনেক সময় অনেক কিছু খেতে দেয়া হয়না বা নিষেধ করা হয় বা কিছু আচার অনুষ্ঠান পালন করতে বলা হয় যা পালন করতে না পারলে বাচ্চার ক্ষতি হতে পারে এই বলা হয়ে থাকে। এসব আচার অনুষ্ঠান পালন করতে গিয়ে বা পালন করতে না পারলে অমঙ্গলের চিন্তা থেকে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মায়েদের ওভার স্ট্রেস এর সমস্যা দেখা দেয়। অযথা টেনশন করতে যাবেন না। খাওয়ার ব্যাপারে ডাক্তার এর কাছে থেকে বিধি নিষেধ জেনে নিন এবং বাসায় সবাইকে তা বুঝিয়ে বলুন। কিছু আচার অনুষ্ঠান পালন করার আগে বিষয়টি সম্পর্কে ভাল ভাবে বুঝে নিন এবং সেটা করতে পালন করতে অপরাগ হলে কারণ সহ বুঝিয়ে বলুন।বুঝিয়ে বলুন যে আপনার নিজের উপরে চাপ দিয়ে কোন কাজ করতে গেলে আপনার অনাগত সন্তানের ক্ষতির সম্ভাবনা অনেক বেশি হবে। # এসবের পরও যদি আপনার মনে হয় যে আপনার স্ট্রেস অনেক বেশি তাহলে আপনার চিকিৎসক এর সাথে যোগাযোগ করুন এবং কোন মানসিক ডাক্তার এর সাহায্য নিন। গর্ভাবস্থায় এমন হয় কি হয় না, হতে পারে কি পারে না- এইসব না ভেবে নিজেকে নিয়ে ভাবুন, আপনার সন্তানকে নিয়ে ভাবুন। আপনার নিজের দিকে বাড়ানো ছোট একটা পদক্ষেপ কিন্তু আপনার সন্তানকে একটা সুস্থ ও সুন্দর ভবিষ্যৎ দিতে পারে। সন্তানের মঙ্গলের জন্য কত কিছুই তো করেন। এবার একটু নিজেকে নিয়েই না হয় সচেতন হলেন।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ