শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
Call

শিশুরও নাক ডাকে! শুনে অবাক হবার কিছু নেই। শিশুর যখন নাক আছে, তখন ডাকতে অসুবিধা কী? কিন্তু শিশুর কেন নাক ডাকে? কেনই বা অনেক শিশু হাঁ করে ঘুমায়?
আমরা নাক দিয়ে শ্বাস গ্রহণ করি আবার শ্বাস ত্যাগও করি। নাক দিয়ে যে বাতাস শ্বাসপথে ঢোকে তা ন্যাসোফ্যারিংসে বা নাসা-গলবিল, ল্যারিংস বা স্বরযন্ত্র হয়ে প্রবেশ করে ট্রাকিয়া বা শ্বাসনালীতে। সেখান থেকে ব্রনকাস বা ক্লোমনালী হয়ে ব্রনকিওল বা ক্লোমনালিকা হয়ে পৌঁছায় অ্যালভিওলাস বা ফুসফুসের বায়ুথলিতে। নিঃশ্বাসের সময় বাতাস আবার এই পথেই ফেরে। এই আসা যাওয়ার পথে বাতাস যদি বাধা পায়, তখনই শ্বাসপথ থেকে নানা ধরনের শব্দ উত্‍পন্ন হয়। বাধাটা যদি নাক বা গলায় হয় তখন যে শব্দ শোনা যায়, সেটাই নাক ডাকা।

শিশুর নাক ডাকার কারণ এবং জটিলতা

শিশুর নাক ডাকতে পারে নানা কারণেই। নাকের কারণগুলোর মধ্যেই রয়েছে নাকে পার্টিশনের হাড় বাঁকা থাকা, নাকে অ্যালার্জির কারণে নাকের মাংসল (টার্বিনেট) অংশগুলো ফুলে থাকা, নাকে পলিপ, নাকে সর্দি, নাকের পেছনের ফুটো জোড়া লেগে থাকা (কোয়ানাল অ্যাস্ট্রেসিয়া) ইত্যাদি।
নাক ছাড়া অন্য কারণেও নাক ডাকতে পারে। শিশুদের টনসিল দুটি সাধারণত বেশ বড় এবং গোল গোল হয়। অনেক শিশুর আবার নাকের পেছনে ন্যাসোফারিংসে থাকে অ্যাডিনয়েড গ্ল্যান্ড, যা বেড়ে গেলেও শিশুর শ্বাস নিতে অসুবিধা হতে পারে, শিশুর নাক ডাকতে পারে। বড় টনসিল এবং বড় অ্যাডিনয়েড ছাড়াও শিশুর বড় জিভ, লম্বা মাংসল আলজিভ, লম্বাটে তালু, ছোট চোয়ালের হাড়, তালুতে প্যারালিসিস, ফ্যারিনজাইটিস সহ নানা কারণেই নাক ডাকতে পারে।

শিশুদের ঘুমের মধ্যে নাক এবং হাঁ করে ঘুমানোর সবচেয়ে বড় দুটি কারণ হলো বড় টনসিল এবং বড় অ্যাডিনয়েড গ্ল্যান্ড। টনসিলের প্রদাহ বা টনসিলাইটিস হলে টনসিল বড় হতে পারে, আবার অনেকে সময় জন্ম থেকেই অনেক শিশুর টনসিল বেশ বড় থাকে। ক্রনিক টনসিলাইটিস হলে বারে বারে শিশু গলাব্যথায় ভোগে, জ্বর-সর্দি-কাশি হয়, খেতে চায় না, কান ব্যথা বলে, গলার দুপাশের গ্ল্যান্ড ফোলে, কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়। এ রকম হলে অবশ্যই নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞ চিকিত্‍সকের কাছে পরামর্শ নিন। সময়মতো চিকিত্‍সা না করে সেপটিক টনসিল গলায় পুষে রাখলে শিশুর হৃদযন্ত্রের অসুখ রিউম্যাটিক হার্ট হতে পারে, হার্টের ভালভ নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

আপনার শিশু কি সারা বছর সর্দিকাশিতে ভোগে, নাক বন্ধ থাকায় মুখ দিয়ে শ্বাস নেয়, বারে বারে গলা শুকিয়ে যায়, ওপরের পাটির সামনের দাঁতগুলো কি এগিয়ে আসছে? ও কি হাঁ করে ঘুমায় এবং ঘুমের মধ্যে নাক ডাকে? তাহলে নির্ঘাত্‍ আপনার শিশুর অ্যাডিনয়েড গ্ল্যান্ড বেড়েছে, সংক্রমণ হয়েছে। এমনটা হলে শিশু খেতে চাইবে না, খাবার মুখে নিয়ে বসে থাকবে, কানে ব্যথা হবে, কান দিয়ে পুঁজ পড়তে পারে, নাক দিয়ে রক্ত পড়তে পারে। এই অবস্থায় দ্রুত চিকিত্‍সকের কাছে নিয়ে যান। চিকিত্‍সা না করে রোগ পুষে রাখলে শিশুর বুদ্ধি কমে যাবে, কানে শুনবে না, নাক-মুখের আকৃতি পালটাবে, বুকের খাঁচা ছোট হয়ে যাবে, যাকে বলে পিজিয়ন'স চেস্ট।
শেষ কথা হলো, নাক ডাকলে বা হাঁ করে ঘুমালে শিশুকে অবশ্যই ডাক্তার দেখাবেন।

তথ্যসূত্র: ডা. অমিতাভ ভট্টাচার্য, নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞ, ভারত

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ