শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
Sumya Akter

Call

ইসলামী শরীআতের ফিকহী মাযহাবের পার্থক্যের অনেক যৌক্তিক কারণ রয়েছে যার কয়েকটি নিম্নরূপ- 

  1. প্রথমত, মহানবী (স)-এর হাদীস বিভিন্ন সাহাবী বর্ণনা করেন। অনেক বর্ণনাকারী তা অপরের নিকট বর্ণনা করেছেন। এ বর্ণনার ক্ষেত্রে পার্থক্য দেখা দেওয়া স্বাভাবিক। সুতরাং একই হাদীস বহু ক্ষেত্রে বিভিন্ন সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। ফলে বর্ণনার ক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবে কিছুটা পার্থক্য দেখা দিয়েছে।
  2. দ্বিতীয়ত, হাদীসের ব্যাখ্যার ব্যাপারেও মতপার্থক্য হয়েছে ।
  3. তৃতীয়ত, কখনও বর্ণনার সুত্রেও কোন দুর্বলতা দেখা দিতে পারে। যেমন বর্ণনাকারীদের মধ্যে কোন এক বা একাধিক ব্যক্তির বর্ণনা নির্ভরযােগ্য না হওয়া। সুতরাং এক ইমামের বিবেচনায় যে হাদীসটি গ্রহণযােগ্য, তা হয়ত অন্য ইমাম গ্রহণ করতে রাজি হননি। তিনি হয়ত অন্য হাদীসটি গ্রহণ করেছেন।
  4. চতুর্থত, বিভিন্ন সত্রে বর্ণিত একই মর্মের হাদীসে একটি মর্মকে একজন ইমাম অধিকতর নির্ভরযােগ্য মনে করেছেন। অপর ইমাম অন্য মর্মকে নির্ভরযােগ্য মনে করে গ্রহণ করেছেন।
  5. পঞ্চমত, আল-কুরআনের আয়াতের ব্যাখ্যায় মতানৈক্য। এটিও মাযহাবের পার্থক্যের অন্যতম কারণ হতে পারে। একজন তাফসীরকার একটি আয়াতের এক ধরনের ব্যাখ্যা করেছেন। আর একজন অন্যরূপ ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন। অবশ্য এসব শরীআতের কোন মৌলিক নির্দেশের (ফরযের) ব্যাপারে ফকীহদের মধ্যে পার্থক্য হয়নি; বরং মতপার্থক্য হয়েছে শাখা-প্রশাখায়।  উদাহরণস্বরূপ ফজরের সালাত পড়া ফরয। এ ব্যাপারে কোন ইমামের মতানৈক্য নেই; বরং সকলেই একমত। মতানৈক্য রয়েছে আদায়ের সময়ের ব্যাপারে। একজন ইমাম ফজরের সালাত আলাে-আঁধারে পড়া ভাল মনে করেন। অন্যজন ফরসা হবার পর পড়া ভাল মনে করেন। এ ব্যাপারে দুই ইমাম দুই হাদীস দ্বারা নিজেদের মতামত প্রমাণ করেছেন। অনুরূপভাবে ইমামের পেছনে কিরাত পাঠ করতে হবে, না চুপ করে থাকতে হবে। এ ব্যাপারেও দুটি মত রয়েছে। প্রত্যেকেরই যুক্তির ভিত্তিতে হাদীস রয়েছে। এমন সব খুঁটিনাটি বিষয়ে ইমামদের মধ্যে মতভেদের সৃষ্টি হয়েছে।
  6. ষষ্ঠত, যে সকল সমস্যার সমাধান কুরআন ও হাদীসে পাওয়া যায় না এক্ষেত্রে ইজমা ও কিয়াসের সাহায্যে হুকুম প্রদানের ক্ষেত্রে এ মতভেদের সৃষ্টি হয়েছে। ফয়সালা যেমন দুইজন দক্ষ ও অভিজ্ঞ আইনজ্ঞ মৌলিক আইনের ব্যাখ্যায় একমত হওয়া সত্ত্বেও এর ধারা-উপধারায় ভিন্ন ভিন্ন রায় প্রকাশ করে থাকেন। আর মুজতাহিদদের ভিন্ন। মত পােষণ করা কোন দূষণীয় নয়; বরং মহানবী (স) বলেছেন, “যারা এ জাতীয় গবেষণায় আম্নিয়ােগ করবে, তারা নির্ভুল সিদ্ধান্তে পৌঁছলে দুটি পুরস্কার পাবে, আর ভুল হলেও শ্রমের মর্যাদাস্বরূপ একটি পুরস্কার পাবে।”
  7. সপ্তমত, বিতর্কমূলক প্রশ্নে আইনজ্ঞের পরামর্শ ও বিচারকের মীমাংসা যেমন, ইসলামী আইনের ব্যাপারে ফকীহদের ফাতওয়াও সেইরূপ । বিভিন্ন বিচারক ভিন্ন ভিন্ন মত পােষণ করতে পারেন। যেসব ব্যাপারে কুরআন ও সুন্নাহয় ফয়সালা পাওয়া যায় না, সেসব ব্যাপারে ফকীহদের ইজতিহাদ ও রায়ের ওপর নির্ভর করতে হয় ।

আর ঐ সব ইজতিহাদ ও রায়ের ব্যাপারে সব সময়ে মতৈক্যের আশা করা যায় না।

ইসলামী আইন-কানুন ও মূলনীতির গবেষণাকারী মুজতাহিদগণের মূল ও প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে কুরআন ও হাদীস। এক্ষেত্রে কুরআন ও হাদীসের ব্যাখ্যা এবং হাদীসের বর্ণনা ও নির্ভরযােগ্যতায় ইমামদের মতপার্থক্যের কারণ থেকেই বিভিন্ন মাযহাবের উদ্ভব হয়েছে। তবে উক্ত পার্থক্যসমূহ শরীআতের মৌলিক বিষয়ে হয়নি, হয়েছে।

শাখা-প্রশাখায়। অতএব, সকল মাযহাবই সত্যাশ্রয়ী এবং অনুকরণীয়-অনুসরণীয়। যে কোন একটি মাযহাব অনুসরণ করলেই ইসলামের অনুসরণ করা হবে এবং মুক্তি পাওয়া যাবে ।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ