শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে

পাঠ্যপুস্তকের কিছু গুরুত্ব  

১। মানসিক উত্তেজনা:

বই পড়ার সর্বপ্রথম উপকারিতা হচ্ছে মানসিক উত্তেজনা। এক গবেষণায় দেখা গেছে, অধ্যয়ন Dementia এবং Alzheimer’s নামের  এই রোগ দুটিকে হ্রাস এমনকি প্রতিরোধ করতেও সাহায্য করে। মস্তিষ্ককে সচল রাখলে তা কখনোই তার ক্ষমতা হারাবে না। মস্তিষ্ককে শরীরের একটি সাধারণ পেশী হিসেবে বিবেচনা করে, নিয়মিত ব্যায়াম করলে তা শক্তিশালী এবং ফিট থাকবে।

 

তোমরা একটি কথা নিশ্চয়ই শুনেছ ‘Use it or lose it’। মস্তিষ্কের ক্ষেত্রেও এ কথাটি প্রযোজ্য। এছাড়া তোমার মস্তিষ্ককে সচল রাখতে বিভিন্ন খেলা খেলতে পারো। যেমন: দাবা কিংবা ধাঁধা মেলানোও যেতে পারে। যা-ই কর না কেন বই পড়ার প্রয়োজনীয়তা ভুলে গেলে চলবে না।

২। মানসিক চাপ হ্রাস:  

কিছু মানুষ তাদের মানসিক চাপ কমাতে ব্যায়ামের আশ্রয় নেয়, কেউ কেউ আবার যোগব্যায়ামের দ্বারস্থ হয় তাদের স্বাভাবিক জীবন ফিরে পেতে। জীবনে এমন কোন মানসিক চাপ নেই সেটি যেই পরিমাণই হোক না কেন, যা একটি ভালো গল্প সমাধান করতে পারে না। বই পড়ার মজা হচ্ছে এটি তোমাকে মুহূর্তের মধ্যেই কোন এক অজানা জগতে নিয়ে যাবে কিংবা এমন কোন সময়ে তুমি ভ্রমণ করবে যা তুমি কখনো কল্পনাও করোনি। একটি ভালো অনুচ্ছেদ তোমাকে প্রতিদিনের বাস্তবতা থেকে একটু হলেও রেহাই দেবে। এমনিভাবে তোমার মানসিক চাপ কমিয়ে শেষে তোমার মানসিক প্রশান্তি ফিরিয়ে আনবে।

books, life hacks, reading skills

৩। শব্দভাণ্ডার বৃদ্ধি:

বই পড়া শব্দভাণ্ডার বৃদ্ধিতে অনেক বেশি সাহায্য করে। যত বেশি বই পড়বে তত বেশি তোমার শব্দভাণ্ডারে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন শব্দ যোগ হতে থাকবে। এবং এক সময় লক্ষ্য করবে তুমি তোমার কথাবার্তায় প্রায়ই সেসব শব্দ ব্যবহার করছো। এসব শব্দ ব্যবহার করে তুমি খুব সহজেই এবং স্পষ্টভাবে  নিজেকে অন্যের কাছে তুলে ধরতে পারছো। নিজেকে স্পষ্টভাবে প্রকাশ করা তোমার চাকুরিজীবনে এমনকি বাক্তিগত জীবনেও কী পরিমাণ  সহায়ক হবে তা অবশ্যই তোমার অজানা নয়। এমনকি তোমার আত্মবিশ্বাস জোগাতেও অনেক সাহায্য করবে।

নতুন কোন ভাষা শিখতেও বই পড়ার কোন বিকল্প নেই। এটি তোমাকে খুব দ্রুত নতুন কোন ভাষা আয়ত্ত করতে সহায়তা করবে।

৪। স্মৃতিশক্তি উন্নত করে:

তুমি যখন একটি বই পড় সেখানে দেখবে বিভিন্ন তথ্য দেয়া থাকে যা তোমাকে গল্পের স্বার্থেই মনে রাখতে হয়। যেমন: বিভিন্ন চরিত্র, ইতিহাস, পটভূমি, গল্পের উদ্দেশ্য, উপ-খণ্ড ইত্যাদি। এসব তথ্য আমাদের কাছে অতিরিক্ত মনে হলেও মস্তিষ্কের অসাধারণ ক্ষমতা রয়েছে সবকিছু মনে রাখার। প্রত্যেকটি নতুন স্মৃতি একটি নতুন Synapse তৈরি করে এবং বিদ্যমান স্মৃতিকে আরও শক্তিশালী করে এবং স্বল্পমেয়াদী স্মৃতিকে আরও উন্নত করে।

৫। Analytical thinking কে উন্নত করে:

বই পড়ার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হচ্ছে  Analytical thinking কে উন্নত করা। অনেকের কাজের ক্ষেত্রে দেখা যায় Analytical thinking খুব দরকার পড়ে, সেই ক্ষেত্রে বই পড়া খুব কাজে লাগতে পারে। এমনকি কখনো হয়েছে যে তুমি কোন রহস্যমূলক বই পড়ছো এবং পুরো বই পড়ার আগেই তুমি রহস্যটি সমাধান করে ফেলেছো? তার মানে তোমার ভালো দক্ষতা রয়েছে। মানুষের জীবনেও এমন অনেক পরিস্থিতি তৈরি হয় যেখানে Analytical thinking দিয়েই সেসব পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হয়।

৬। অন্যের থেকে অভিজ্ঞতা অর্জন:

তুমি বইয়ে যা পড়ছো তা মূলত কারও বিশেষ জ্ঞান কিংবা অভিজ্ঞতা থেকেই লেখা। সেই জ্ঞান তোমার সফলতাকে ত্বরান্বিত করবে একটি বিশেষ লক্ষ্যের দিকে, যেহেতু তোমাকে একটি সঠিক পথ অবলম্বন করার উপদেশ দেয়া হবে এবং ভুলগুলো চিহ্নিত করে দেয়া হবে। বিভিন্ন বইয়ে দেখবে লেখক তার জীবনের সফলতা এবং ব্যর্থতা নিয়ে আলোচনা করে এবং সেই ব্যর্থতা থেকে উপরে উঠতে থাকে বিভিন্ন উপদেশ।

books, life hacks, reading skills

তুমি তাঁদের গল্প থেকে জানতে পারবে কোন পথে গেলে সফলতা নিশ্চিত এবং ভুলের সম্ভাবনাও কমে আসে। জীবন খুবই ছোট এসব ভুলের পুনরাবৃত্তি করা সফলদের একজন হতে চাইলে তাঁদের অতীত থেকে শিক্ষা নাও এবং জেনে নাও ব্যর্থতাকে সফলতায় রূপান্তর করার মন্ত্র ।

৭। কল্পনাশক্তি ও সৃজনশীলতা বৃদ্ধি করে:

বই যেন তোমাকে এক কল্পনার রাজ্যে নিয়ে যাবে, তোমাকে দেখাবে কোন কিছুই যেন অসম্ভব নয়। পড়ার মাধ্যমেই দেখবে তোমার অনেক জানা জিনিস বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে আবিষ্কার করতে পারছো। জানতে পারছো কীভাবে আচরণের ভিন্নতায় ফলাফলেরও পরিবর্তন আসে। বই যেন এক বিশাল মাকড়শার জাল, যা সবকিছুকেই এক সূত্রে গেঁথে দেয়, তোমার জানা বিষয়ের সঙ্গে নতুন আবিষ্কৃত বিষয়কে জোড়া লাগিয়ে নতুন এক উত্তর কিংবা সমাধান বের করা যেন বইয়ের এক অনন্য বৈশিষ্ট্য।

“A book must be the ax for the frozen sea within us.”

-Franz Kafka

৮। নতুন বিষয় আবিষ্কার করা:

বই পড়ার মাধ্যমে তুমি  নতুন কোন বিষয়, নতুন কোন তথ্য কিংবা কোন সমস্যা সমাধান করা অথবা কোন কিছু অর্জন করার নতুন কোন মাধ্যম আবিষ্কার করতে পারো। কে জানে বই পড়ার সুবাদে তোমার পছন্দের তালিকায় নতুন কোন শখ কিংবা নতুন কোন পেশা যুক্ত হয়েছে যেটি শেষে তুমি তোমার পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছো এবং সফলতা অর্জন করেছো। অন্বেষণের শুরু কিন্তু পড়া এবং উপলব্ধির মাধ্যমেই।

“Whenever you read a good book, somewhere in the world a door opens to allow in more light.”

-Unknown

৯। Meditation for your soul:

মানসিক প্রশান্তি পেতে চাও? তাহলে বসে পরো কোন এক নিরিবিলি জায়গায় তোমারই কোন এক পছন্দের বই নিয়ে। সেখানের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, মুক্ত বাতাস তোমার চিন্তাকে যেন আরও প্রসারিত করবে কিন্তু তা কখনোই লাইব্রেরিতে বসে বসে পড়ার মধ্যে পাওয়া সম্ভব নয়। কিছুক্ষণের বই পড়া তোমার সারাদিনের ক্লান্তিকে নিমিষেই দূর করে দিবে।

“Books are the mirrors of the soul.”

-Virginia Woolf

১০। মনোযোগ বৃদ্ধি করে:

তথ্যপ্রযুক্তির যুগের সাথে তাল মিলাতে গিয়ে মানুষ যেন প্রযুক্তির গতিই আগে গ্রহণ করেছে। মানুষ এখন যে সমস্যাটির সবচেয়ে বেশি সম্মুখীন হয় তা হল মনোযোগের অভাব। ৫ মিনিটের বিস্তারে একদিকে যেখানে কোন কাজের পরিকল্পনা করা হচ্ছে, আরেকদিকে হয়ত ইমেইল চেক করা হচ্ছে, আবার সেই সংগে কারো সাথে হয়ত করা হচ্ছে চ্যাট কিংবা ব্যবহার করা হচ্ছে স্মার্টফোন। এই ধরনের আচরণ কার্যক্ষমতা কমিয়ে বাড়িয়ে দেয় স্ট্রেস।

books, life hacks, reading skills

যখন আমরা একটা গল্প পড়ি তখন আমাদের মনোযোগ শুধুমাত্র সেই গল্পের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে যেন পুরো পৃথিবীটা তখন নিশ্চুপ হয়ে যায়। এভাবে প্রতিদিন যদি বই পড়ার অভ্যাস করা হয় তবে দেখবে মনোযোগ ও বৃদ্ধি পাচ্ছে। কাজে যাওয়ার আগে ১৫-২০ মিনিট পড়ার অভ্যাস করো এবং তুমি খুবই অবাক হবে দেখে যে তুমি আগের থেকেও অনেক বেশি মনোযোগী হতে পারছো।

১১। যোগাযোগ এর মন্ত্র:

যোগাযোগ আমাদের জীবনের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি মন্ত্র যা শুধু বই পড়ার মাধ্যমেই প্রেরণ করা যায়। যারা বই পড়ে তারা খুব সহজেই অন্যের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারে। তারা জানে কোন পরিস্থিতিতে কি কথা বলতে হয় এবং কার সাথে কীভাবে কথা বলতে হয়। যারা বই পড়ে না তারা অনেক বিষয়েই সচেতন নয়। যারা কিছুই জানে না তাদের আসলে অন্যকে বলারও কিছু থাকে না।

সমাজে চলতে গেলে যোগাযোগ এর কোন বিকল্প নেই। বই পড়া যেমন তোমার জ্ঞানের পরিধি বিস্তারে সাহায্য করবে, তেমনি তোমাকে ভালো সংবাদদাতা হতেও সহায়তা করবে। বই পারবে তোমাকে পৃথিবীর সংগে যুক্ত করতে।

১২। আত্মন্নোতিতে সাহায্য করে:

বই পড়া নিজেকে এক উন্নত আমি গঠনে সহায়তা করে। বই পড়ার মাধ্যমেই তুমি  এক নতুন পৃথিবী আবিষ্কার করবে। যেই বিষয় নিয়ে তোমার আগ্রহ রয়েছে সেই বিষয়ে তোমার জ্ঞান আরও বৃদ্ধি করতে পারবে। বই পড়ার মধ্য দিয়েই তুমি তোমার অন্তরদৃষ্টির একটি সুগঠিত পন্থা এবং ভবিষ্যতের উত্তম কর্ম নির্ণয় করতে সক্ষম হবে।

“Books are the quietest and most constant of friends, they are the most accessible and wisest of counselors and the most patient of teachers”  – Charles W. Elio

“Reading is to the mind, what exercise is to the body” – এই কথাটির মধ্যেই বই পড়ার গুরুত্ব বোঝা যায়। ব্যায়াম যেমন আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখে তেমনি বই পড়ার মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের মনকে সুস্থ এবং প্রফুল্ল রাখতে পারি। আসলে বই পড়ার আনন্দ কখনোই শব্দ দিয়ে প্রকাশ করা সম্ভব নয় এটি শুধু অনুভব করা যায় অভিজ্ঞতা দ্বারা।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ