RafiaBegum

Call

আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন মা’বূূদ নেই এবং মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহর রাসূল এ কথার ঘোষণা দেয়া ইসলামে প্রবেশের চাবিকাঠি স্বরূপ। এই সাক্ষ্য দেয়া ব্যতীত ইসলামে প্রবেশ করা সম্ভব নয়। এই জন্যই রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুয়া’য (রাঃ)কে ইয়ামান দেশে পাঠানোর সময় আদেশ দিয়েছিলেন যে, তুমি সর্বপ্রথম এই কথার সাক্ষ্য দেয়ার আহবান জানাবে যে, আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন মা’বূূদ নাই। এবং মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহর রাসূল। প্রথম বাক্যটি অর্থাৎ “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ” এর অর্থ হচ্ছে, মানুষ অন্তর দিয়ে বিশ্বাস করবে যে, আল্লাহ ব্যতীত সত্য কোন উপাস্য নেই। সেই সাথে মুখে এই কালেমাটির উচ্চারণ করবে। যার দাসত্ব ও উপাসনা করা হয় তার নাম ইলাহ। (لاَ اِلَهَ اِلاَّ اللَّهُ) “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ” এই বাক্যটির দু’টি অংশ। একটি ‘না’ বাচক অংশ অপরটি ‘হ্যাঁ’ বাচক অংশ। “লা-ইলাহা” কথাটি ‘না’ বাচক। এবং “ইল্লাল্লাহ” কথাটি ‘হ্যাঁ’ বাচক। প্রথমে সমস্ত বাতিল মা’বূূদের জন্য কৃত সকল প্রকার এবাদতকে অস্বীকার করে দ্বিতীয় বাক্যে তা একমাত্র হক্ক মা’বূূদ আল্লাহর জন্য সাব্যস্ত করা হয়েছে। “লা-ইলাহ ইল্লাল্লাহ” এর অর্থ ‘আল্লাহ ছাড়া কোন মা’বূূদ নেই।’ যদি কেউ প্রশ্ন করে যে, আপনি কিভাবে বললেন আল্লাহ ছাড়া কোন মা’বূূদ নেই? অথচ আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, বাস্তবে আল্লাহ ব্যতীত অসংখ্য মা’বূূদের উপাসনা করা হচ্ছে। আল্লাহ ব্যতীত যাদের এবাদত করা হচ্ছে আল্লাহও তাদেরকে মা’বূূদ হিসাবে নাম রেখেছেন। আল্লাহ বলেন, )فَمَا أَغْنَتْ عَنْهُمْ ءَالِهَتُهُمْ الَّتِى يَدْعُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللَّهِ مِنْ شَيْءٍ لَمَّا جَاء أمْرُ رَبِّكَ( “আল্লাহকে বাদ দিয়ে তারা যেসব মা’বূূদকে ডাকত, আপনার পালনকর্তার হুকুম যখন এসে পড়বে, তখন কেউ কোন কাজে আসবেনা।” (সূরা হুদঃ ১০১) আল্লাহ আরো বলেনঃ )وَ لاَ تَجْعَلْ مَعَ اللَّهِ إِلَهًا ءَاخَرَ( “আল্লাহর সাথে অন্য কোন মা’বূূদ স্থির করবেন না”। (সূরা বানী ইসরাঈলঃ ৩৯) আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ )وَلَا تَدْعُ مَعَ اللَّهِ إِلَهًا آخَرَ( “আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে মা’বূদ ডেকো না।” (সূরা কাসাসঃ ৮৮) আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ ) لَنْ نَدْعُوَ مِنْ دُونِهِ إِلَهًا( “আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন মা’বূদকে আমরা কখনই আহবান করব না।” (সূরা কাহ্‌ফঃ ১৪) এখন আমরা কিভাবে বলতে পারি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন মা’বূদ নেই। অথচ দেখা যাচ্ছে গাইরুল্লাহর জন্য উলুহিয়্যাত উল্লেখ করা হয়েছে। আর আমরাই বা কিভাবে গাইরুল্লাহর জন্য এবাদত সাব্যস্ত করতে পারি? অথচ রাসূলগণ তাদের সমপ্রদায়ের লোকদেরকে বলেছেন, )اعْبُدُوا اللَّهَ مَا لَكُمْ مِنْ إِلَهٍ غَيْرُهُ( “তোমরা এক আল্লাহর এবাদত কর। তিনি ব্যতীত তোমাদের অন্য কোন মা’বূদ নাই।” (সূরা আরাফঃ ৫৯) উপরোক্ত সমস্যার উত্তর এই যে, “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ” বাক্যটির মধ্যে ইলাহা কথাটির পরে হাক্কুন শব্দ উহ্য রয়েছে। আসলে বাক্যটি এ রকম হবে, (لا اله حق الا الله) (লা-ইলাহা হাক্কুন ইল্লাল্লাহ) হাক্কুন শব্দটি উহ্য মানলেই সমস্যা দূর হয়ে যাবে। তাই আমরা বলব আল্লাহ ছাড়া যাদের এবাদত করা হয়, তারাও মা’বূদ কিন্তু এগুলো বাতিল মা’বূদ। এবাদত বা দাসত্ব পাওয়ার তাদের কোন অধিকার নাই। এ কথার প্রমাণ আল্লাহর বাণী, )ذَلِكَ بِأَنَّ اللَّهَ هُوَ الْحَقُّ وَأَنَّ مَا يَدْعُونَ مِنْ دُونِهِ الْبَاطِلُ وَأَنَّ اللَّهَ هُوَ الْعَلِيُّ الْكَبِيرُ( “এটাই প্রমাণিত যে, আল্লাহ-ই সত্য এবং আল্লাহ ব্যতীত তারা যাদের উপাসনা করে তারা সবাই মিথ্যা। আল্লাহ সর্বোচ্চ সুমহান।” (লুকমানঃ ৩০) আল্লাহ আরো বলেনঃ ]أَفَرَأَيْتُمْ اللَّاتَ وَالْعُزَّى, وَمَنَاةَ الثَّالِثَةَ الْأُخْرَى, أَلَكُمْ الذَّكَرُ وَلَهُ الْأُنثَى, تِلْكَ إِذًا قِسْمَةٌ ضِيزَى, إِنْ هِيَ إِلَّا أَسْمَاءٌ سَمَّيْتُمُوهَا أَنْتُمْ وَآبَاؤُكُمْ مَا أَنزَلَ اللَّهُ بِهَا مِنْ سُلْطَانٍ( অর্থঃ “তোমরা কি ভেবে দেখেছ লাত ও ওয্‌যা সম্পর্কে এবং তৃতীয় আরেকটি মানাত সম্পর্কে? পুত্র সন্তান কি তোমাদের জন্য এবং কন্যা সন্তান আল্লাহর জন্যে? এমতাবস্থায় এটা তো হবে খুবই অসংগত বন্টন। এগুলো কতগুলো নাম ছাড়া অন্য কিছু নয়, যা তোমরা নিজেরা রেখেছ এবং তোমাদের পূর্ব-পুরুষেরা রেখেছে। এর সমর্থনে আল্লাহ কোন দলীল নাযিল করেন নি।” (সূরা নাজ্‌মঃ ১৯-২৩) আল্লাহ তাআ’লা কুরআনে ইউসুফ (আঃ) এর কথা উল্লেখ করে বলেন, )مَا تَعْبُدُونَ مِنْ دُونِهِ إِلَّا أَسْمَاءً سَمَّيْتُمُوهَا أَنْتُمْ وَآبَاؤُكُمْ مَا أَنزَلَ اللَّهُ بِهَا مِنْ سُلْطَانٍ( “তোমরা আল্লাহকে ছেড়ে নিছক কতগুলো নামের এবাদত কর, সেগুলো তোমরা এবং তোমাদের বাপ-দাদারা নাম করণ করে নিয়েছো। আল্লাহ এদের পক্ষে কোন প্রমাণ অবতীর্ণ করেন নি।” (সূরা ইউসুফঃ ৪০) সুতরাং লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ অর্থ আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন উপাস্য নাই। তিনি ব্যতীত অন্যান্য মা’বূূদগুলো সত্য মা’বূদ নয়। বরং তা বাতিল উপাস্য। মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহর রাসূল এ কথার সাক্ষ্য দেয়ার অর্থ এই যে, অন্তরে বিশ্বাস এবং মুখে এই কথার স্বীকৃতি প্রদান করা যে, মুহাম্মাদ বিন আবদুল্লাহ সমস্ত জিন ও মানুষের জন্য রাসূল হিসাবে প্রেরিত হয়েছেন। আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ )قُلْ يَاأَيُّهَا النَّاسُ إِنِّي رَسُولُ اللَّهِ إِلَيْكُمْ جَمِيعًا الَّذِي لَهُ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ يُحْيِ وَيُمِيتُ فَآمِنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ النَّبِيِّ الْأُمِّيِّ الَّذِي يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَكَلِمَاتِهِ وَاتَّبِعُوهُ لَعَلَّكُمْ تَهْتَدُونَ( “হে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আপনি বলে দিন যে, হে মানব মন্ডলী তোমাদের সবার প্রতি আমি আল্লাহ প্রেরিত রাসূল, সমগ্র আসমান ও জমিনের রাজত তাঁর। একমাত্র তাঁকে ছাড়া আর কারো উপাসনা নয়। তিনি জীবন ও মৃত্যু দান করেন। সুতরাং তোমরা সবাই বিশ্বাস স্থাপন কর আল্লাহর উপর, তার প্রেরিত উম্মী নবীর উপর, যিনি বিশ্বাস রাখেন আল্লাহর উপর এবং তাঁর সমস্ত কালামের উপর। তাঁর অনুসরণ কর, যাতে তোমরা সরল পথ পেতে পার।” (সূরা আরাফঃ ১৫৮) আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ )تَبَارَكَ الَّذِي نَزَّلَ الْفُرْقَانَ عَلَى عَبْدِهِ لِيَكُونَ لِلْعَالَمِينَ نَذِيرًا( “পরম কল্যাণময় তিনি যিনি তাঁর বান্দার প্রতি ফায়সালার গ্রন' অবতীর্ণ করেছেন যাতে তিনি বিশ্ব জগতের জন্যে সতর্ককারী হতে পারেন।” (সূরা ফুরকানঃ ১) মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে রাসূল হিসাবে সাক্ষ্য দেয়ার অর্থ হলঃ (১) তিনি যে বিষয়ের সংবাদ দিয়েছেন, তা বিশ্বাস করা, (২) তাঁর আদেশ মান্য করা, (৩) তিনি যে বিষয় নিষেধ করেছেন, তা থেকে দূরে থাকা (৪) তাঁর নির্দেশিত শরীয়ত অনুযায়ী আল্লাহর এবাদত করা। (৫) তাঁর শরীয়তে নতুন কোন বিদ্‌আত সৃষ্টি না করা। এই বিষয়ের সাক্ষ্য দেয়ার অন্যতম দাবী হল সৃষ্টি বা পরিচালনায় এবং প্রভুত্বে কিংবা এবাদতে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর কোন অধিকার নাই। বরং তিনি আবদ্‌ বা আল্লাহর দাস ও বান্দা। মা’বূদ নন। তিনি সত্য রাসূল। তাঁকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করা যাবে না। তিনি নিজের জন্য কিংবা অপরের জন্য কল্যাণ-অকল্যাণের কোন ক্ষমতা রাখেন না। মানুষের কল্যাণ-অকল্যাণের একমাত্র মালিক আল্লাহ। আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ )قُلْ لَا أَقُولُ لَكُمْ عِندِي خَزَائِنُ اللَّهِ وَلَا أَعْلَمُ الْغَيْبَ وَلَا أَقُولُ لَكُمْ إِنِّي مَلَكٌ إِنْ أَتَّبِعُ إِلَّا مَا يُوحَى إِلَيَّ( “আপনি বলুনঃ আমি তোমাদেরকে বলি না যে, আমার কাছে আল্লাহর ভান্ডার রয়েছে। তাছাড়া আমি অদৃশ্য বিষয় অবগতও নই। আমি এমনও বলি না যে, আমি ফেরেশতা। আমি তো শুধু ঐ ওহীর অনুসরণ করি, যা আমার কাছে আসে।” (সূরা আনআ’মঃ ৫০) সুতরাং তিনি একজন আদেশ প্রাপ্ত বান্দা মাত্র। তাঁর প্রতি যা আদেশ করা হয় তিনি কেবল মাত্র তারই অনুসরণ করে থাকেন। আল্লাহ বলেনঃ )قُلْ إِنِّي لَا أَمْلِكُ لَكُمْ ضَرًّا وَلَا رَشَدًا قُلْ إِنِّي لَنْ يُجِيرَنِي مِنْ اللَّهِ أَحَدٌ وَلَنْ أَجِدَ مِنْ دُونِهِ مُلْتَحَدًا( “বলুনঃ আমি তোমাদের ক্ষতি সাধন করার ও সুপথে আনয়ন করার মালিক নই। বলুনঃ আল্লাহ তাআ’লার কবল থেকে আমাকে কেউ রক্ষা করতে পারবে না। এবং তিনি ব্যতীত আমি আশ্‌্রয় স্থল পাবনা।” (সূরা জিনঃ ২১-২২) আল্লাহ তাআ’লা আরো বলেনঃ )قُلْ لَا أَمْلِكُ لِنَفْسِي نَفْعًا وَلَا ضَرًّا إِلَّا مَا شَاءَ اللَّهُ وَلَوْ كُنتُ أَعْلَمُ الْغَيْبَ لَاسْتَكْثَرْتُ مِنْ الْخَيْرِ وَمَا مَسَّنِي السُّوءُ إِنْ أَنَا إِلَّا نَذِيرٌ وَبَشِيرٌ لِقَوْمٍ يُؤْمِنُونَ( “আপনি বলে দিন, আমি আমার নিজের কল্যাণ সাধনের এবং অকল্যাণ সাধনের মালিক নই। কিন্তু আল্লাহ যা চান। আর আমি যদি গায়েবের খবর জেনে নিতে পারতাম, তাহলে বহু মঙ্গল অর্জন করে নিতে পারতাম। ফলে আমার কখনো কোন অমঙ্গল হতনা। আমি তো শুধুমাত্র একজন ভীতি প্রদর্শক এবং সুসংবাদদাতা ঈমানদারদের জন্য।” (সূরা আরা‘ফঃ ১৮৮) এটাই হল লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ মুহাম্মাদূর রাসূলুল্লাহ এর প্রকৃত অর্থ। হে পাঠক! এই অর্থের মাধ্যমেই আপনি জানতে পারলেন যে, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বা অন্য কোন মাখলুক এবাদতের অধিকারী নয়। এবাদতের মালিক একমাত্র আল্লাহ তাআ’লা। তিনি বলেনঃ )قُلْ إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَاي وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ لَا شَرِيكَ لَهُ وَبِذَلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَا أَوَّلُ الْمُسْلِمِين

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ
RafiaBegum

Call

“আপনি বলুনঃ আমার নামায, আমার কোরবানী এবং আমার জীবন ও মরণ বিশ্ব-প্রতিপালক আল্লাহর জন্যে। তাঁর কোন শরীক নেই। আমি তাই আদিষ্ট হয়েছি এবং আমি প্রথম আনুগত্যশীল মুসলিম।” (সূরা আন্‌আমঃ ১৬২-১৬৩) নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে আল্লাহ তাআ’লা যে সম্মান দান করেছেন, তাতে অধিষ্ঠিত করাই নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর জন্য যথেষ্ট। তিনি আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। মর্যাদাবান হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট। তাঁর উপর আল্লাহর পক্ষ হতে সীমাহীন শান্তির ধারা বর্ষিত হোক। বিষয়/প্রশ্নঃ (১৭) গ্রন্থের নামঃ ফাতাওয়া আরকানুল ইসলাম বিভাগের নামঃ ঈমান লেখকের নামঃ শাইখ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন (রহঃ) অনুবাদ করেছেনঃ আবদুল্লাহ শাহেদ আল মাদানি - আবদুল্লাহ আল কাফী

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ