শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে

আমার মনে হয় অহং প্রতিটি মানুষকে সকল সম্ভাব্য উপায়ে এক পৃথক সত্তায় গঠন করে। একটি মানুষ যে অন্য সকলের থেকে পৃথক, অহংই এই ভাবটি সৃষ্টি করে। নিশ্চিত রূপেই অহং তোমাতে এই ভাবটি উদ্রেক করে ‘আমি আছি’, ‘আমি চাই’, ‘আমি করি’ ‘আমি অস্তিত্বশীল’ এমন কি বিখ্যাত উক্তি ‘‘আমি চিন্তা করি তাই আমি অস্তিত্ববান’’, যা হল... আমি দুঃখিত কিন্তু আমার মনে হয় এটি একটি মূর্খতা বা বোকামি—কিন্তু তবুও একে একটি বিখ্যাত বোকামি বলে মানতে হবে, এবং এটিও হল ‘অহং। যার থেকে তোমার ধারণা হয় যে তুমি হলে ‘মনোজ’, তা হল অহং। এবং তুমি যে এটি বা ওটির থেকে একেবারে পৃথক এবং যা তোমার দেহকে দ্রবীভূত করে নৈসর্গিক স্পন্দনের এক সাধারণ পুঞ্জের মধ্যে বিলীন হতে বাধা দেয়, তা হল অহং, যা তোমাকে দেয় এক যথাযথ আকার, নির্দ্দিষ্ট চরিত্র, এক পৃথক চেতনা, এই বোধ যে তুমি সকলের থেকে স্বতন্ত্রভাবে নিজেতে সত্তাবান, সত্যই এই রকম একটা কিছু। যদি কোন ব্যক্তি চিন্তা না করে, স্বতঃস্ফূর্ত্ত ভাবেই তা মনে হতে পারে যে যদি জগৎ অদৃশ্য হয়ে যায় তবুও সে সেখানে থাকবে এবং সে যেমনটি তেমনই থাকবে। এটি অবশ্য অতি-অহং। সত্যি বলতে কি, যদি কেউ নিজের অহংকে একটু বেশী তাড়াতাড়ি হারিয়ে ফেলে তাহলে সে প্রাণিক ও মানসিক দৃষ্টিকোণ থেকে আবার এক আকারহীন পিন্ডে পরিণত হবে। নিশ্চিত ভাবেই অহং হল স্বাতন্ত্রীকরণের সহায়ক। অর্থাৎ যতক্ষণ পর্যন্ত এক ব্যক্তিসত্তা নিজের মধ্যে এক স্বাতন্ত্র্যে প্রতিষ্ঠিত না হয় ততক্ষণ অহং অত্যন্ত প্রয়োজনীয় উপাদান। যদি কারুর শক্তি থাকে সময় পূর্ণ হবার আগেই অহংকে বিলুপ্ত করে দেওয়ার, সেক্ষেত্রে তার ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্য নষ্ট হবে। কিন্তু একবার যখন ব্যক্তি-স্বাতন্ ত্র্য তৈরী হয়ে যায়, তখন এবং অপ্রয়োজনীয় এমনকি ক্ষতিকরও হয়। তখনই সেই সময় আসে যখন অহংকে ত্যাগ করা উচিৎ। কিন্তু স্বাভাবিক ভাবেই যেহেতু তোমাকে গড়ে তুলতে সে এত পরিশ্রম করেছে, এত সহজে সে তার কাজ ছেড়ে দেবে না। সে চাইবে তার পরিশ্রমের পুরস্কার তা হল স্বাতন্ত্র্যকে উপভোগ করা। স্বার্থপরতা (অহমিকা) হল এমন একটি বস্তু যাকে সংশোধন করা অপেক্ষাকৃত সহজ, কারণ সবাই জানে স্বার্থপরতা কাকে বলে। সেটাকে আবিষ্কার করাও সহজ, সংশোধন করাও সহজ, অবশ্য সত্যিই যদি কেউ তা করতে রাজী হয় এবং সে জন্যে লেগে পড়ে থাকে, তবেই। কিন্তু অহংকারকে ধরতে পারা ঢের বেশী শক্ত। কারণ ও যে কি বস্তু, তা উপলব্ধি করতে পারার আগে, নিজে সম্পূর্ণ অহঙ্কার মুক্ত হতে পারা চাই, নইলে তাকে দেখতে পাওয়া যায় না। মানুষের পায়ের নখ থেকে মাথার চুল পর্যন্ত সবটা, বাহ্য চেতনা থেকে আধ্যাত্মিক চেতনা পর্যন্ত সমস্ত কিছু অহংকারের সঙ্গে মিশে এক হয়ে রয়েছে। এমন কিছুই নেই যার সঙ্গে অহংকার মিশে নেই। তাই ও যে কি বস্তু তা মানুষ বুঝতেই পারে না। আগে ওকে জয় করা চাই, ওর থেকে বেরিয়ে আসা চাই, নিজেকে ওর থেকে খানিকটাও অন্তত মুক্ত করা চাই, তা যদি তোমার সত্তার ক্ষুদ্রতম কোন একটি অংশেও হয়, তা হলেও চলবে, তখন বুঝতে পারবে অহংকার কি। যে বস্তু আমাদের স্বতন্ত্র ব্যক্তি হয়ে উঠতে সাহায্য করে, এবং একইসঙ্গে আবার আমাদের দেবতা হয়ে উঠতে বাধা দেয় সেটাই হল অহংকার। একেবারে ঠিক তাই। এ দুটিকে একসঙ্গে কর, তাহলেই অহংকে দেখতে পাবে। অহং না থাকলে, জগৎ এখন যে ভাবে গড়ে উঠেছে তাতে স্বতন্ত্র ব্যক্তি বলে কিছু থাকত না; আবার অহং আছে বলে, জগৎ ভগবানের রাজ্য হয়ে উঠতে পারে না। ‘অহং’ শ্রীমায়ের বাণী সংকলন থেকে

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ