স্মৃতি
সময় চলে যায়
আর কথা রয়ে যায়
হৃদপিন্ডের পাতায় পাতায়
দিন-রাত্রির স্বপ্ন মেলায়।।
ভুলে যেতে চাইলেও
ভুলা যায় না এমন কিছু স্মৃতি
আপন হৃদপিন্ডের আয়নায় যেন
অন্ধ রীতি।।
সুরের পাখি যেমন দূরে গেলেও
তার রেশ ফুরায় না,
তেমনি আবদুস সাত্তার ভাই এর বিদায় বেলার স্মৃতি
ভুলে যেতে চাইলেও
তারে ভোলা যায় না।।
বিদায়-বেলায়
-
---
তুমি অমন ক’রে গো বারে বারে জল-ছল-ছল চোখে চেয়ো না,
জল-ছল-ছল চোখে চেয়ো না।
ঐ কাতর কন্ঠে থেকে থেকে শুধু বিদায়ের গান গেয়ো না,
শুধু বিদায়ের গান গেয়ো না।।
হাসি দিয়ে যদি লুকালে তোমার সারা জীবনের বেদনা,
আজো তবে শুধু হেসে যাও, আজ বিদায়ের দিনে কেঁদো না।
ঐ ব্যথাতুর আঁখি কাঁদো-কাঁদো মুখ
দেখি আর শুধু হেসে যাও,আজ বিদায়ের দিনে কেঁদো না।
চলার তোমার বাকী পথটুকু-
পথিক! ওগো সুদূর পথের পথিক-
হায়, অমন ক’রে ও অকর”ণ গীতে আঁখির সলিলে ছেয়ো না,
ওগো আঁখির সলিলে ছেয়ো না।।
দূরের পথিক! তুমি ভাব বুঝি
তব ব্যথা কেউ বোঝে না,
তোমার ব্যথার তুমিই দরদী একাকী,
পথে ফেরে যারা পথ-হারা,
কোন গৃহবাসী তারে খোঁজে না,
বুকে ক্ষত হ’য়ে জাগে আজো সেই ব্যথা-লেখা কি?
দূর বাউলের গানে ব্যথা হানে বুঝি শুধু ধূ-ধূ মাঠে পথিকে?
এ যে মিছে অভিমান পরবাসী! দেখে ঘর-বাসীদের ক্ষতিকে!
তবে জান কি তোমার বিদায়- কথায়
কত বুক-ভাঙা গোপন ব্যথায়
আজ কতগুলি প্রাণ কাঁদিছে কোথায়-
পথিক! ওগো অভিমানী দূর পথিক!
কেহ ভালোবাসিল না ভেবে যেন আজো
মিছে ব্যথা পেয়ে যেয়ো না,
ওগো যাবে যাও, তুমি বুকে ব্যথা নিয়ে যেয়ো না।।
বিদায় বেলার কাব্য
বিদায়! বিদায়! একি কলরব ধ্বনিছে বাতাসে
ক্রন্দন ভরা অক্ষিপট, ভাসাইছে সবাই ঝর্ণার ধারা
অধর পুষ্প নাহি ফুটে, মুখে সবার বিষণ্ণতা
আজি মোদের বিদায় লগ্ন, কহিছে কৃষ্ণপাতা।
বিদায় ঘণ্টা তাল তুলেছে ঢং ঢং করুণ তানে
দশ বছরের লালিত মাতৃক্রোড় ছেড়ে
পাড়ি জমাব আজ জীবন উচ্ছাশার দ্বিতীয় পথ পানে।
অতীত ফেলি ভাবি চিন্তায় নিমগ্ন সভায়
একি নিয়ম নীতি সবার, বুঝি না আমি।
কত স্মৃতি হাসি উল্লাস মাখা দিন মিশে আছে এইখানে
প্রতিটি পাথর-বেঞ্চ-ঘণ্টা সবার মাঝে আমাদের ভালবাসা
আজ ছাড়িতে হবে এসব, দিতে হবে বলি, একি ব্যাথা।
রচিত হবে স্মৃতির মঠ, হবে কি আর কখনো এভাবে আসা?
হৃদয় প্রশান্ত ব্যাথায় বলে, সাহারার তপ্ত বালি
কেন আসিল এ বিদায় লগন, কেন হল সৃষ্টি?
কত স্মৃতি কত কথা আজ বলে ধূসর মরুভূমি
অলস মন যেতে নাহি চায়, ভুলিব কি তোমার কৃষ্টি!
কত কাব্য রচিত হয়েছে এতদিন, আজ যেন ক্ষান্ত কলম
একি বিদায় একি বিদায়! পাজর ঘোষিছে কিন কিন,
হে প্রিয় আলয়, তোমায় বলি, করি শেষ আরতি
আমাদের যেন ভুলিও না তুমি, রেখো মনে চিরদি
যেতে নাহি দিব- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-
দুয়ারে প্রস্তুত গাড়ি; বেলা দ্বিপ্রহর;
হেমন্তের রৌদ্র ক্রমে হতেছে প্রখর।
জনশূন্য পল্লিপথে ধূলি উড়ে যায়
মধ্যাহ্ন-বাতাসে; স্নিগ্ধ অশত্থের ছায়
ক্লান্ত বৃদ্ধা ভিখারিণী জীর্ণ বস্ত্র পাতি
ঘুমায়ে পড়েছে; যেন রৌদ্রময়ী রাতি
ঝাঁ ঝাঁ করে চারি দিকে নিস্তব্ধ নিঃঝুম--
শুধু মোর ঘরে নাহি বিশ্রামের ঘুম।
গিয়েছে আশ্বিন-- পূজার ছুটির শেষে
ফিরে যেতে হবে আজি বহুদূরদেশে
সেই কর্মস্থানে। ভৃত্যগণ ব্যস্ত হয়ে
বাঁধিছে জিনিসপত্র দড়াদড়ি লয়ে,
হাঁকাহাঁকি ডাকাডাকি এ-ঘরে ও-ঘরে।
ঘরের গৃহিণী, চক্ষু ছলছল করে,
ব্যথিছে বক্ষের কাছে পাষাণের ভার,
তবুও সময় তার নাহি কাঁদিবার
একদণ্ড তরে; বিদায়ের আয়োজনে
ব্যস্ত হয়ে ফিরে; যথেষ্ট না হয় মনে
যত বাড়ে বোঝা। আমি বলি, "এ কী কাণ্ড!
এত ঘট এত পট হাঁড়ি সরা ভাণ্ড
বোতল বিছানা বাক্স রাজ্যের বোঝাই
কী করিব লয়ে কিছু এর রেখে যাই
কিছু লই সাথে।'