শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
Bulbul10

Call

খুশকির হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা
খুশকি কি ?
খুশকি বা খুসকি মূলতঃ মাথার লোমকূপ সমূহতে ময়লা জমে ও ছত্রাকের আবির্ভাবের কারণে হয়ে থাকে এবং খুশকি সমস্যার প্রধান শত্রু হলো ডিরমট্রিস সেবেরিক।মূলতঃ খুশকি সমস্যার প্রাদুর্ভাব ঘটে মাথার ত্বকের উপরের অংশে। এছাড়া মুখে এবং কানে ইহা দেখা যায়। এমনকি ঠোটে, নাকের ছিদ্র থেকে শুরু করে কপাল, ভ্রুতেও ইহা দেখা যেতে পারে। রোগটি কর্তৃক আক্রান্ত ত্বকের শুষ্কতা কমে যায় এবং শুষ্ক ত্বকের ছোট ছোট মৃত ত্বক খুসকি তৈরিতে সহায়তা করে। তবে ত্বকের শুষ্কতার কারণ যদি খুসকি হয় তবে সহজেই বোঝা যায় কারণ চুল বাদে অন্য যে কোন ত্বকেই খুশকি হোক না কেন তা সহজেই দৃষ্টিগোচর হবে। সাধারনত খুশকি একজন মানুষের বয়ঃসন্ধিকালীন সময়ে বা প্রাপ্তবয়স্ক হবার সময় দেখা যায়।
মাথার চামড়ায় খুশকি হলে ছোট ছোট আঁশের মতো মরা চামড়া উঠতে থাকে ফলে মাথার চামড়া চুলকায় এবং চিরুনি দিয়ে যখন চুল আচড়ানো হয় তখন খুশকিগুলি মাথার চুল থেকে ঝরতে থাকে। খুশকি মাথা থেকে কাঁধে বা জামায় পরে একজনের শ্রীহানি ঘটায়। মাথা যখন খুশকিতে আক্রান্ত তখন যদি মাথা চুলকানো হয় তখন ভালো অনুভূত হয় বিধায় খুশকি আক্রান্ত একজন ব্যক্তি সর্বদা মাথা চুলকাতে থাকে এবং তার মাথা থেকে মরা চামড়া ঝরতে থাকে। মূলত আমরা খুশকি বলতে মাথার খুশকিকেই বুঝিয়ে থাকি তবে শুধুমাত্র খুশকির মাত্রা বেশী হলেই শরীরে অন্যান্য অঙ্গে এটার পাদুর্ভাব দেখা যায়।খুশকি অন্যান্য প্রদাহজনিত রোগ এবং এলার্জি ঘটাতে পারে।
খুশকির কারণ ঃ
যে সব কারণে খুশকি হয় তা নিম্নে আলোচনা করা হলো:
১) মাথার ত্বকের শুষ্কভাবের কারণে খুশকি হয়ে তাকে। শীতকালে যখন আবহাওয়াতে আর্দ্রতা কম থাকে তখন ত্বকের শুষ্কতা বৃদ্ধি পায়। শীতকালে ঘরের অভ্যন্তরের ঠান্ডা বাতাস এবং ঘরের বাইরের তুলনামূলক গরম বাতাসের ফলে তাপমাত্রার অসামাঞ্জস্যাতার সৃষ্টি হয় এবং সে কারণে গ্রীষ্মকালের তুলনায় শীথকালে খুশকি হয়ে থাকে।
২) কোন ব্যক্তি যদি দিনের বেলায় খুব অল্পবারের জন্য তার চূল আচড়ান তবে তার মাথায় মৃত ছোট ছোট চামড়া গুলি জমতে থাকে এবং খুশকি সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।
৩) যাদের ত্বক এলার্জেটিক তাদের খুশকির প্রবনতা বেশী। সূর্যের অতি বেগুনী রশ্মি ও ত্বক এক অপরের সহিত বিপরীত প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করে খুশকি উৎপাদন করতে পারে।[৩]
৪) পর্যাপ্ত পরিমান শ্যাম্পু না করলে মাথার ত্বক অপরিষ্কার হয়ে পড়ে যা থেকে খুসকির উৎপত্তি হতে পারে।
৫) খাদ্যভাসের কারণেও খুশকি হতে পারে। মূলত ভিটামিন বি ও জিংক গ্রহণ না করলে খুশকি হয়।
৬) ম্যালেসেজিয়া নামক এক ধরনের ছত্রাকের কারণে খুশকি হতে পারে। মূলত এই ছত্রাকটি সকলের ত্বকেই কম আর বেশি থাকে। এটি সাধারনত কোন সমস্যার সৃষ্টি করে না। কিন্তু এটির পরিমাণ ত্বকে যখন বেশি হয়ে যায় তখন তা ত্বক থেকে তেল শুষে নেয় এবং ত্বককে শুষ্ক করে তোলে। ফলে অতিরিক্ত ত্বকীয় কোষ উৎপাদিত হতে থাকে এবং বেশী সংখ্যাক কোষ মৃত হতে থাকে এবং কোষ গুলি মারা গেলে তা চুলের তেলের সাথে মিশে খুশকির সৃষ্টি করে।[৪]
৭) যারা অতিরিক্ত মানসিক চাপে থাকেন তাদের মধ্যে খুশকির প্রবনতা বেশী।
৮) কিছু বিশেষ রোগ যেমন পার্কিন্সন, হৃদরোগ, স্টোক খুশকির পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়।
৯) ত্বকের নানা সমস্যা যেমন চুলকানির ফলে যে ঔষধ ব্যবহার করা হয় সে ঔষধের পত্রিক্রিয়ায় খুশকির উদ্ভব হতে পারে।
১০) যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদের খুশকি হয়ে থাকে।
খুশকির হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসাঃ-
ধাতু বিচারপুর্বক নিম্নলিখিত ঔষধাবলীতে উপকার পাওয়া যায়,যথা ঃআর্সেনিক এলবাম,ব্যারাইটা কার্ব,ব্রায়োনিয়া, ফ্লোরিক এসিড,গ্রাফাইটিস,ক্যালি সালফ,লাইকোপোডিয়াম,নেট্রাম মিউর,সিপিয়া,সালফার আয়োড,থুজা ইত্যাদি।
খুশকির হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় ব্যবহৃত ঔষধ নির্বাচন কৌষলঃ
কচলিরিয়াঃ-মাথার চুলের গোড়ায় সাদা গমের ভুসির মত খুস্কিতে ইহা উপকারী।
স্যানিকিউলাঃ-নিম্ন গতিতে ভয়,গরমে কাতর,ক্রদ্ধ মেজাজ,এই প্রকৃতির রোগীর চক্ষুর ভ্রু,দাড়ি বা গোফে খুস্কির একটি উত্তম ঔষধ।
আর্সেনিক এলবামঃ-পরিস্কার পরিচ্ছন্ন পছন্দকারী সৌখিন,শীত কাতর,মাথায় ঠান্ডা জলে আরাম বোধ,রোগীদের মাথার চুলের গোড়ায় খুস্কি পড়ায় একটি মহৎ উপকারী ঔষধ।
সালফারঃ-অপরিস্কার,অপরিচ্ছন্ন,নোংরা চর্ম পীড়া গ্রস্হ রোগীদের শরীরের বিভিন্ন স্হানে খুস্কিতে ইহা উপকারী।
বাইওকেমিক চিকিৎসাঃ-
নেট্রাম সালফঃ-মাথার চুলের গোড়ায়,দাড়িতে ভ্রুতে খুস্কি পড়ার উত্তম কার‌্যকরী ঔষধ।
ক্যালি সালফঃ-মাথায়,মুখে,হাতের তলায় বা শরীরের বিভিন্ন স্হানে খুস্কি।শুস্ক চর্ম উঠার ইহা মহৌষধ।
খুশকি নিরাময়ে ঘরোয়া সমাধানঃপুরনো তেঁতুল পানি,টকদই,ডিমের সাদা,মেথি,চুলের স্বাস্থ্য রক্ষার্থে ও খুশকি দূর করতে অলিভ অয়েলের জুড়ি নেই,পেঁয়াজের রস ব্যবহার করলে উপকার হয়।
উপসংহারঃ-প্রত্যহ মৃদু গরমজলসহ বেসম বা সরিষার খৈলদ্বারা মস্তক ধৌত করিতে হয়।আর্নিকা ১ড্রাম বিশুদ্ধ নারিকেল তৈল অথবা অলিভ অয়েল কিম্বা ল্যাভেন্ডার অয়েলসহ মিশ্রিত করিয়া তাহা মস্তকে মাখিলে উপকার হয়।রাত্রি কালে শয়ন করিবার পুর্বে উত্তমরুপে উক্ত তৈল মর্দন করা উচিত।কর্পূর অথবা সোহাগার খৈ তৈলের সহিত মিশ্রিত করিলেও উপকার হইতে পারে।নিয়মিত চুল আঁচড়ান। এতে খুশকি হবার সম্ভাবনা কমে যাবে।*পুষ্টিকর খাবার খান। এতে মাথার ত্বক ও চুল ভালো থাকবে। *চুল নিয়মিত পরিষ্কার করুন। কারণ অপরিচ্ছন্ন চুলে খুশকি হয় বেশি। *কিছু চর্মরোগ সাধারণভাবে দেখতে খুশকির মতো হয়। তাই মাথায় খুশকির পরিমাণ বেশি হলে চিকিত্‍সকের শরণাপন্ন হোন

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ