শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে

সতেরাে শতকে ইন্দোনেশিয়ার জাভা এলাকার মানুষ অদ্ভুত এক রােগে ভুগত। ১৮৫৩ সালের দিকে জাপানের নাবিকেরাও প্রায়ই এ রােগে অসুস্থ হতাে। এতে আক্রান্ত মানুষ খুবই দুর্বল হয়ে যেত। তাদের হাত-পা পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে যেত। সবশেষে মৃত্যু। এ রােগে শরীর খুবই দুর্বল হতাে বলে মালয় ভাষায় এ রােগের নাম দেওয়া হয়েছিল বিরিবিরি বা বেরিবেরি, যার অর্থ ভীষণ দুর্বল। সে সময় চিকিৎসকেরা ভেবেছিলেন,বেরিবেরির পেছনে জীবাণুই দায়ী । কিন্তু অনেক খুঁজেও কোনাে জীবাণু শনাক্ত করা যায়নি। একসময় চালের বাদামি আবরণ থেকে একটি উপাদান আলাদা করতে পেরেছিলেন বিজ্ঞানীরা। পানিদ্রাব্য এ বস্তুকে বলা হতাে অ্যান্টি বেরিবেরি উপাদান। কারণ এই উপাদানটি বেরিবেরি রােগ সারাতে পারত। 


১৯১২ সালে পােলিশ রসায়নবিদ ক্যাসিমির ফাঙ্ক প্রমাণ করলেন, অ্যান্টি বেরিবেরি অন্য রাসায়নিক পদার্থের সঙ্গে বিক্রিয়া করে। এই বিক্রিয়ার ধরন। রসায়নবিদদের আগে থেকেই জানা থাকা অ্যামাইন। গ্রুপের (amine group) মতাে ছিল। ফাঙ্ক বললেন,অ্যান্টি বেরিবেরি পদার্থ আসলে একটি অ্যামাইন (amine), যা প্রাণীদেহের জন্য অতি দরকারি।

 শুধু বেরিবেরিই নয়, স্কার্ভি বা রিকেটসের মতাে রােগগুলাে সারাতেও খাবারের সঙ্গে যেসব পদার্থ গ্রহণ করতে হয়, সেগুলােও অ্যামাইন বলে ধারণা করলেন ফাঙ্ক। এ অ্যামাইনগুলাে প্রাণীদের সুস্থতা ও বেঁচে থাকার জন্য খুব সামান্য পরিমাণে হলেও অবশ্য প্রয়ােজনীয়। সে কারণে উপাদানটির নাম দেওয়া হলাে ভিটামিনস (vitamines), অর্থাৎ গুরুত্বপূর্ণ (vital) অ্যামিন (amine)। আরেকটি মত হচ্ছে ল্যাটিন শব্দ ভিটা (vita), যার অর্থ ‘বেঁচে থাকার জন্য' এবং অ্যামিন (amine) শব্দ যােগ করে।

ভিটামিনস শব্দটি তৈরি করেছিলেন ফাঙ্ক। তবে পরে পরীক্ষায় দেখা গেল, এসব পদার্থের বেশ কয়েকটি অ্যামাইন নয়। এ কারণে ১৯২০ সালে নামটি ঘেঁটে দেওয়া হলাে। vitamines শব্দ থেকে থেকে ইংরেজি B (e) বর্ণটি বাদ দেওয়া হলাে। তাই ফাঙ্কের উদ্ভাবিত নামটি পরিবর্তিত হয়ে গেল ভিটামিন (vitamin)। খাদ্যের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান—সে কথা মাথায় রেখেই বাংলা ভাষাতেও ভিটামিনকে বলা হয় খাদ্যপ্রাণ ।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ