সাইয়েদ আবুল আ'লা মওদুদী যিনি মাওলানা মওদুদী, বা শাইখ সাইয়েদ আবুল আ'লা মওদুদী নামেও পরিচিত।


শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
Call

সাইয়্যেদ আবুল আ'লা মওদূদী (রহ.) এর জীবন ও কর্ম অনেক বিসৃ।এত কথা এখানে লেখা সম্ভব না। আপনি চাইলে আব্বাস আলী খানের "মাওলানা মওদূদী একটি জীবন, একটি ইতিহাস" বইটি পড়তে পারেন।৪২১ পৃষ্ঠার বই।তবুও সংক্ষেপে একটু লিখছি:-

১.১৯০৩-ভারতের হায়দারাবাদের আওরঙ্গবাদে (বর্তমানে মহারাষ্ট্রের মধ্যে) জন্ম গ্রহণ করেন।শৈশবে তাকে গৃহ-শিক্ষকের তার শিক্ষা জীবন শুরু হয়। ৯ বছর বয়স পর্যন্ত গৃহতেই শিক্ষা চলতে থাকে।এসময়ের মধ্যে আরবি ব্যাকরণ,সাহিত্য এবং ফিকাহ শাস্ত্রে বিশেষ জ্ঞান লাভ করেন।এর পরে আওরঙ্গবাদের ফাওকানিয়া (উচ্চ) মাদরাসায় রুশদিয়া মানের শেষ বর্ষে (৮ম শ্রেণি) ভর্তি।সেখানে কুরআন,হাদিস,ফিকাহ,মানতিক, আরবি ব্যাকরণ,সাহিত্য,ইতিহাস,ভুগোল,অংক,রসায়ন শাস্ত্র ও স্বাস্থ্য বিজ্ঞানে শিক্ষা অর্জন।

২.১৯১৬ সালে-হায়দারাবাদের দারুল উলুমে শিক্ষালাভ। ৩.১৯১৮-সাংবাদিক হিসেবে ''বিজনোর'' পত্রিকায় কাজ শুরু করেন।

৪.১৯২০-জবলপুরে "তাজ" পত্রিকার এডিটর হিসেবে নিয়োগ।

৫.১৯২১-দিল্লীতে মাওলান আব্দুস সালাম নিয়াজির কাছে আরবি শিক্ষা গ্রহণ ও দৈনিক "মুসলিম" পত্রিকার এডিটর হিসেবে নিয়োগ। 

৬.১৯২৫-নয়া দিল্লীর "আল জামিয়াহ" পত্রিকার এডিটর হিসেবে নিয়োগ লাভ।

৭.১৯২৬-দিল্লীর "দারুল উলুম ফতেহপুরি" থেকে "উলুম-এ-আকালিয়া ও নাকালিয়ায় সনদ লাভ করেন।

৮.১৯২৭-"আল জিহাদ ফিল ইসলাম" নামে একটি গবেষণাধর্মি গ্রন্থ রচনা করেন।

 ৯.১৯২৭  ও ১৯২৮ এর মাঝামাঝি সময়ে তিনি জার্মানি ভাষা শিক্ষা গ্রহণ করতে থাকে।

১০.১৯২৮-দারুল উলুম ফতেহপুরি থেকে "জামে তিরমিযি" ও "মুয়াত্তা ইমাম মালিক" সনদ লাভ।

১১.১৯৩০-সালে আল জিহাদ ফিল ইসলাম বইটি প্রকাশ।তখন তার বয়স ২৭ বছর।

১২.১৯৩৩-ভারতের হায়দারাবাদ থেকে "তরজমানুল কুরআন" নামক পত্রিকা প্রকাশ  শুরু।

১৩.১৯৩৭-তার ৩৪ বছর বয়সে চৌধুরী নিয়াজ আলি খানের মাধ্যমে লাহোরে,দক্ষিণ এশিয়ার কিংবদন্তিতুল্য মুসলিম কবি  ও দার্শনিক আল্লামা মুহাম্মদ ইকবালের সাথে পরিচয় হয়।

১৪.১৯৩৮-হায়দারাবাদ থেকে পাঠানকোটে গমন।সেখানে আল্লাম ইকবালের পরামর্শে, চৌধুরী নিয়াজ আলী খান কর্তৃক দারুল ইসলাম ট্রাস্টে প্রতিষ্ঠা।এটি পাঠানকোটের ৫ কি.মি. পশ্চিমে জামালপুরে নিয়াজ আলী খানের ১০০০ একর এস্টেট থেকে দানকৃত ৬৬ একরের উপর প্রতিষ্ঠা করেন।

১৫.১৯৪১-লাহোরে "জামায়াতে ইসলামি হিন্দ" নামে একটি ইসলামি রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করেন এবং আমির হিসেবে নির্বাচিত হন।

১৬.১৯৪২-জামায়াতে ইসলামির প্রধান কার্যাললয় পাঠনকোটে স্থানান্তর।

১৭.১৯৪২ -তাফহিমুল কুরআন নামক তাফসির গ্রন্থ প্রণয়ন শুরু।

১৮.১৯৪৭-জামায়াতে ইসলামির প্রধান কার্যালয় লাহোরের ইছরায় স্থানান্তর।

১৯.১৯৪৮-ইসলামী সংবিধান ও ইসলামি সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য প্রচারণা শুরু করেন।যার কারণে, পাকিস্তান সরকার তাকে কারাগারে বন্দি করেন।

২০.১৯৪৯-পাকিস্তান সরকার জানায়াতের ইসলামি সংবিধানের রূপরেখা গ্রহণ করে।

২১.১৯৫০-কারাগার থেকে মুক্তি লাভ।

২২.১৯৫৩-"কাদিয়ানি সমস্যা " নামে  একটি বই লিখে কাদিয়ানি বা আহমদিয়া সম্প্রদায়কে অমুসলিম প্রমাণ করেন।এরই প্রেক্ষিতে ইতিহাসখ্যাত বড় রকমের কাদিয়ানি বিরোধী হাঙ্গামার তৈরী হয়।এ সময় অনেকগুলো সংগঠন একোগে কাদিয়ানিদেরকে সরকারিভাবে অমুসলিম ঘোষনার দাবীতে আন্দোলন শুরু করে।তারা সর্বদলীয় কনভেনশনে ২৭ শে ফেব্রুয়ারি "ডাইরেক্ট একশন কমিটি "গঠন করে।জামায়াত এ কমিটির বিরোধিতা করে অহিংস আন্দোলনের পক্ষে অবস্থান নেয়।কিন্তু তথাপি মার্চ মাসে শুরুতে আন্দোলন চরম আকার ধারণ করে, পুলিশের গুলিতে কিছুলোক নিহত হয়।পরে একটি সামরিক আদালত মওদূদূকে এই গোলযোগের জন্য দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদন্দের আদেশ দেয়।পরে সঠিক তদন্ত শেষে এ মৃত্যুদন্দাদেশ প্রত্যাহার করে যাবজ্জীবন করাদন্ড দেয়।পরে তাও খারিজ করে দেয়।

২৩.১৯৫৮-সামরিক শাসক ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খান "জামায়াতে ইসলামি কে"নিষিদ্ধ ঘোষনা করেন।

২৪.১৯৬০-মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভ্রমন।

২৫.১৯৬৩-ইরানের বিপ্লবী নেতা আয়তুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনীর সাক্ষাত।

২৭.১৯৬৪-জানুয়ারিতে আবারো কারা বন্দি এবং প্রায় ১৯৬৪ এর শেষের দিকে কারা মুক্তি।

২৮.১৯৭১-পাকিস্তান থেকে পূর্ব পাকিস্তান আলাদা হবে কিনা এ প্রশ্নের সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতের উপর ন্যাস্ত করেন।

২৯.১৯২১-তাফহিমুল কুরআন লেখা সম্পন্ন করেন।

৩০.১৯৭২-জামায়াতে ইসলামির আমির পদ থেকে ইস্তফা দেন।

৩১.১৯৭৮-তার রচিত শেষ বই  রাসূল (সা) এর জীবনী গ্রন্থ "সিরাতে সওয়ারে আলম" প্রকাশিত।

৩২.১৯৭৯-আগষ্ট, চিকিৎসার জন্য লন্ডনে গমন করেন।

৩৩.-২২শে সেপ্টেম্বর ১৯৭৯-আমেরিকার বাফেলো শহরের এক হাসপাতালে শ্রেষ্ঠ মনীষী সাইয়্যেদ আবুল আ'লা মওদূদী (রহ) শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।

৩৪.২৩শে সেপ্টেম্বর ১৯৭৯- বাফেলো থেকে জানাযা শেষে নিউইয়র্ক,লন্ডন, আমস্ট্রার্ডম,দামেস্ক ও দুবাই এ জানাযা  হয়ে সর্বশেষ ২৫ সেপ্টেম্বর করাচি এসে পৌঁছে।এরপর করাচিতে জানাযা শেষে, লাহোরের ইছরায় বিশ্ববরেণ্য আলেমে দ্বীনকে সমাধিস্থ করা হয়।

৩৫.কাবা শরিফে তার গায়েবানা জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। ইতিহাসে কাবা শরিফে ২ জনের গায়েবানা জানাযা হয় এক বাদশাহ নাজ্জাশীর আরেকটা মাওলানা মওদূদীর।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ