সার্নের বিজ্ঞানীরা নতুন পাঁচটি অতিপারমাণবিক কণা (Subatomic particle) আবিষ্কার করেছেন। লার্জ হ্যাড্রন কলাইডারের (এলএইচসি)এলএইচসি বিউটি (LHCb) ডিটেক্টরটি ব্যবহার করে বিজ্ঞানীরা এই কণাগুলাের সন্ধান পেয়েছেন। 

কণাগুলাে মূলত ব্যারিয়ন। তার মানে এরা তিনটি করে কোয়ার্ক দিয়ে তৈরি। সব কটি কণা একই সঙ্গে আবিষ্কৃত হয়েছে, যেটিকে একটি অনন্য ঘটনা বলা চলে। গত মাসে ই-প্রিন্ট আর্কাইভ arXiv-এ প্রকাশিত একটি পেপারে বিজ্ঞানীরা কণাগুলাে নিয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন।কোয়ার্ক ছয়টি ফ্লেভারের হয়ে থাকে : আপ, ডাউন, চার্ম, স্ট্রেঞ্জ, টপ ও বটম। বিভিন্ন ফ্লেভারের কোয়ার্ক মিলে অপেক্ষাকৃত বড় কণা তৈরি করে। পরমাণুর

নিউক্লিয়াসে যে প্রােটন থাকে, সেটা একটা ব্যারিয়ন। দুটো আপ কোয়ার্ক এবং একটি ডাউন কোয়ার্ক মিলে প্রােটন তৈরি হয়।

নতুন আবিষ্কৃত কণাগুলাে মূলত ওমেগা-সি-জিরাে (০) নামে একটি ব্যারিয়নের উত্তেজিত অবস্থাকে নির্দেশ করে। দুটি স্ট্রেঞ্জ এবং একটি চার্ম কোয়ার্ক দিয়ে এটি গঠিত। ওমেগা-সিজিরাে কোয়ার্কটি সবল মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে সাই-সিপ্লাস (=c+) নামে আরেকটি ব্যারিয়ন (একটি চার্ম,একটি স্ট্রেঞ্জ এবং একটি আপ কোয়ার্ক দিয়ে তৈরি) এবং একটি কে মেসনে (K) রূপান্তরিত হয়। 

তারপর সাই-সি-প্লাস ব্যারিয়নটি দুর্বল মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে একটি প্রােটন, একটি কে মেসন এবং একটি পাই মেসনে (T') পরিণত হয়। এলএইচসি বিউটি ডিটেক্টরটিতে চালানাে পরীক্ষা থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা ওমেগাসি-জিরাে ব্যারিয়নটির ক্ষয় এবং এর উত্তেজিত অবস্থাগুলাে বের করতে পেরেছেন। প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী কণাগুলাের নাম দেওয়া হয়েছে (3000)2 (3050)9, 2 (3066)0, 2 (3090) এবং 2 (3119) । নতুন আবিষ্কৃত কণাগুলাের শক্তি ব্যারিয়নটির সবচেয়ে কম শক্তির যে অবস্থা—গ্রাউন্ড স্টেট—তার চেয়ে বেশি। বন্ধনীর ভেতরের সংখ্যাগুলাে মেগা ইলেকট্রনভােল্টে (MeV) কণাগুলাের ভরকে বােঝাচ্ছে।

এই আবিষ্কার যে হঠাৎ করে হয়ে গেছে, তা কিন্তু নয়। ২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত প্রথমবারের এলএইচসি বেশ লম্বা সময় ধরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা

চালায়। এর মধ্যেই ২০১২ সালের জুলাইয়ে হিগস বােসন আবিষ্কারের ঘােষণা আসে, যেটা নিয়ে এখনাে বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা চালাচ্ছেন। এরপর ২০১৩ থেকে ২০১৫ সালের মার্চ পর্যন্ত আরও উচ্চশক্তিতে পরীক্ষা

চালানাের উদ্দেশে প্রয়ােজনীয় আপগ্রেডের জন্য এলএইচসিকে সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়। 

ওই বছরের এপ্রিল থেকে আবার এলএইচসির কার্যক্রম চালু করা হয়। পুরােটা সময়ে বিজ্ঞানীরা যে বিপুল পরিমাণ তথ্য বিভিন্ন পরীক্ষা থেকে সংগ্রহ করেছেন, সেসব তথ্য বিশ্লেষণ করার মাধ্যমে এবং LHCb ডিটেক্টরের বিভিন্ন কণা খুঁজে বের করার অনন্য ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে বিজ্ঞানীরা এই নতুন কণাগুলাের সন্ধান পেয়েছেন।

বিজ্ঞানীরা পরবর্তী সময়ে কণাগুলাের কোয়ান্টাম সংখ্যা নির্ণয় করতে চেষ্টা করবেন, যা থেকে কণাগুলাের বিভিন্ন ভৌত বৈশিষ্ট্য জানা যাবে। এ

আবিষ্কার একটা ব্যারিয়নের ভেতর কীভাবে তিনটি কোয়ার্ক একসঙ্গে আবদ্ধ থাকে, সেটা নিয়ে জানতে বিজ্ঞানীদের সহায়তা করবে। 

তিনটির বেশি কোয়ার্কের সমন্বয়ে গঠিত কণা, যেমন টেট্রাকোয়ার্ক কিংবা পেনটা কোয়ার্ক গঠন বুঝতেও আবিষ্কারটি কাজে আসবে বলে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন। 

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ