শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে

আমরা বুক ভরে যে বাতাস নিই, তাতে নাইট্রোজেন মৌলের পরিমাণ থাকে সবচেয়ে বেশি। নাইট্রোজেনের পারমাণবিক সংখ্যা সাত। আর পর্যায় সারণির পঞ্চম (VIA) গ্রুপে এই মৌলের অবস্থান। অর্থাৎ নাইট্রোজেন পরমাণুর বহিঃস্থ স্তরে, পাঁচটি ইলেকট্রন আছে। অক্টেট বা অষ্টক হলাে পরমাণুর স্থায়ী ইলেকট্রন বিন্যাস। নাইট্রোজেনের বেলায় তিনটিই ইলেকট্রন হলেই অষ্টক ইলেকট্রন বিন্যাস হয়ে যায় ।

তাই নাইট্রোজেন তিনটি ভিন্ন পরমাণুর সঙ্গে যুক্ত হয়েত্রিবন্ধন যৌগ গঠন করে।যেমন অ্যামােনিয়া (NH), ট্রাইমিথাইল অ্যামিন, ট্রাই-ইথাইল অ্যামিন ইত্যাদি। তিনটি বন্ধন গঠন করতে গিয়ে, নাইট্রোজেন তার তিনটি ইলেকট্রনকেব্যবহার করে। এতে নাইট্রোজেনের বহিঃস্থ স্তরে দুটি ইলেকট্রন বন্ধনহীন থেকে যায়। আমরা এই ইলেকট্রন জোড়াকে বলি নিঃসঙ্গ ইলেকট্রন জোড় (Lone pair)।

এগুলাে যেহেতু বন্ধন গঠনে ব্যবহৃত হয়নি, সে অর্থে নিঃসঙ্গ। পর্যায় সারণির গ্রুপ পচে যতগুলাে পরমাণু আছে, সব কটির বেলায় এমনই হয়। কারণ, এরা একই গােত্রভুক্ত একটি বন্ধন যেহেতু দুটি ইলেকট্রনের সমন্বয়ে গঠিত, তাই এই লােন পেয়ার ইলেকট্রন বন্ধন গঠন করতে হলে এমন একটি অরবিটাল দরকার।

যেটি শূন্য (Empty orbital) অর্থাৎ যেটিতে ইলেকট্রন নেই। লােন পেয়ার অরবিটাল, শূন্য অরবিটালকে ইলেকট্রন প্রদান (Donate) করে। কোনাে পরমাণু (বা যৌগস্থ পরমাণু) যখন জোড়া ইলেকট্রন দিতে সক্ষম, তখন সেটাকে আমরা বলি লুইস ক্ষার।

বিজ্ঞানী লুইসের নামানুসারে। কারণ, তিনি এই চমক্কার মতবাদ দিয়েছিলেন । নাইট্রোজেন যেহেতু জোড়া ইলেকট্রন প্রদান করতে পারে, সেহেতু নাইট্রোজেন হলাে লুইস ক্ষার (Lewis base)। নাইট্রোজেনের গ্রুপের অন্যান্য পরমাণুও লুইস ক্ষার। যে পরমাণু তার শূন্য অরবিটালের মধ্য দিয়ে এই

জোড়া ইলেকট্রন গ্রহণ করতে পারে, তাকে বলা হয় গ্রহীতা (Lone

pair acceptor)। এই গ্রহণকারী পরমাণু বা এর যৌগগুলােকে বলা হয় লুইস অ্যাসিড (Lewis acid)। এক বাক্যে, ইলেকট্রন জোড়া যে প্রদান করে, সেটি হলাে লুইস ক্ষার, আর ইলেকট্রন জোড়া যে গ্রহণ করে,

সেটি হলাে লুইস অ্যাসিড ।

নাইট্রোজেন ও এর যৌগগুলাে আমাদের কাছে লুইস ক্ষার হিসেবেই পরিচিত ছিল সব সময়। তাই বলে যে চিরকাল লুইস ক্ষার হিসেবেই পরিচিত থাকবে, এমন তাে কথা নেই। রসায়নবিদেরা পরমাণুর গভীরে গিয়ে দুমড়েমুচড়ে নতুন রূপ দিতে চান। তারা ক্ষুদ্র জগতে নতুনত্ব আনেন। সম্প্রতি এমনই এক কাজ করেছেন কয়েকজন রসায়নবিদ । তাদের লক্ষ্য ছিল নাইট্রোজেনকে

এমনভাবে রূপ দেওয়া, যেন সে পরমাণুতে শূন্য অরবিটাল তৈরি করা যায়। যদি শূন্য অরবিটাল তৈরি করা যায়, তাহলে সেটি জোড়া ইলেকট্রন গ্রহণ করতে পারবে। আর যদি তা-ই হয়, তাহলে ক্ষেত্রবিশেষে নাইট্রোজেনকেও লুইস অ্যাসিড হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। কী ভয়ংকর চিন্তাভাবনা ও কাজ


এই ভাবতে ভাবতে তঁাৱা কাজটিও করে ফেলেছেন। নাইট্রোজেনের কিছু স্থায়ী যৌগ (Stable CompCUnd) তৈরি করেছেন, যেগুলােতে নাইট্রোজেন পরমাণুতে আছে শূন্য অরবিটাল। কার্বন পরমাণুতে শূনা অরবিটালথাকলে সেগুলােকে আমরা বলি কার্বেনিয়াম আয়ন। তাই নাইট্রোজেনের বেলায় বলা হয় নাইটেনিয়াম আয়ন। নাইটেনিয়াম আয়নের কথা বলায়নবিদরা আগেই জানতেন। তবে নাইট্রনিয়াম যৌগের ধর্ম সম্পর্কে খুব বেশি কিছু জানা যায়নি। সম্প্রতি রসায়নবিদরা যে যৌগগুলাে তৈরি করেছেন, সেগুলাে স্থায়ী হওয়ায়এগুলাের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্ম সম্পর্কে ভালোভাবে

জানা গেছে। এসব যৌগের কেলাস গঠন (Crystal structure) নির্ণয় করেছেন তাঁরা। রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে সেগুলাে থেকে নতুন যৌগও তৈরি করেছেন। যে নাইট্রোজেনকে আমরা লুইস ক্ষার হিসেবে চিনেছি, সেটি আজ লুইস অ্যাসিড হিসেবেও প্রমাণিত।

এর নতুন রূপকে আমরা জানলাম। ক্ষেত্র ভেদে এটি লুইস অ্যাসিড হিসেবেও কাজ করতে পারে । হয়তাে এক দশকের মধ্যেই উচ্চতর পাঠ্যবইয়ে নাইট্রোজেনের এই লুইস অ্যাসিড ধর্ম সম্পর্কে পড়ানাে হবে।

রসায়নবিদদের এই গবেষণা গত ফেব্রুয়ারি মাসে প্রকাশিত হয়েছে জানাল অব দ্য আমেরিকান কেমিক্যাল সােসাইটি (JACS) নামক রসায়নের পৃথিবীখ্যাত জার্নালে । নিবন্ধটির শিরােনাম ছিল Nitrogen Lewis

acid । মাত্র তিন শব্দের শিরােনামের এই আর্টিকেল একটি মৌলিক ধারণাকে বদ্ধমূল করেছে। খুলে দিয়েছে এক নতুন জানালা। আর সে জন্যই গবেষণাটি স্থান। পেয়েছে এত উঁচু মানের জার্নালে।

https://www.sciencedirect.com/science/article/abs/pii/S0960852420311561


ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ