মুসলিম পুরুষ কেবলমাত্র মুসলিম ধর্মের নারীকেই
বিয়ে করতে পারবে।
তবে ইসলামী শরীয়াতে আহলে কিতাব তথা ইয়াহুদী ও নাসারা খৃষ্টান
মহিলাকে মুসলমান পুরুষের জন্য বিবাহ করা জায়িয আছে। কিন্তু যে কোন ইয়াহুদী-খৃষ্টান
মহিলা আহলে কিতাবের অন্তর্ভুক্ত নয়। বরং কেবলমাত্র ঐ সব ইয়াহুদী-খৃষ্টান মহিলাকে
বিবাহ করা জায়িয আছে যারা বাস্তবিকপক্ষে মূসা (আঃ) বা ঈসা (আঃ) কে নবী বলে মনে
প্রাণে স্বীকার করে। তাদের দ্বীনকে সহীহ মনে করে এবং তা মানতে ও তার উপর
চলতে সব সময় চেষ্টা করে। তবে এ ধরনের আহলে কিতাব মহিলা বর্তমানে পাওয়া
দৃস্কর । বর্তমান যুগে বহু ইয়াহুদী ও খৃষ্টান মহিলা আছে, যারা আদমশুমারীতে ইয়াহুদী বা
খৃষ্টন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তারা মূসা (আঃ) ও ঈসা (আঃ) কে নবী বলে মানে না এবং তাদের
শরীয়াতও মানে না। তারা তাদের ধর্মের কোন তোয়াক্কাও করে না। শুধু নাম মাত্র
ইয়াহুদী বা খৃষ্টান। সুতরাং, যে কোন আহলে কিতাব মহিলাকে কিতাবী মহিলা মনে করে
বিবাহ করা নিজের দ্বীন ঈমান ধ্বংসের শামিল। সুতরাং, কোন মুসলমানের জন্য সে ধরনের
মহিলাকে বিবাহ করা বৈধ নয়।
আল্লাহ বলেন, আজ তোমাদের জন্য যাবতীয় ভাল ও পবিত্র বস্তু হালাল করা হল আর যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে তাদের খাদ্য তোমাদের জন্য হালাল, আর তোমাদের খাদ্য তাদের জন্য হালাল, সচ্চরিত্রা মু’মিন নারী এবং তোমাদের পূর্বে যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে তাদের সচ্চরিত্রা নারী তোমাদের জন্য হালাল করা হল যখন তোমরা তাদেরকে মোহরানা প্রদান কর, বিবাহের দূর্গে স্থান দানের উদ্দেশ্যে, ব্যভিচারী হিসেবে নয় এবং গোপন সঙ্গী গ্রহণকারী হিসেবে নয়। কেউ ঈমান অমান্য করলে, তার কার্যাদি নিষ্ফল হবে। আর সে আখেরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।
(সূরা-
মায়েদা, আয়াতঃ ০৫)।
এখানে ইহুদী ও নাসারা মহিলাদের বিয়ে করার ক্ষেত্রে একটি শর্ত আরোপ করা হয়েছে। তা হলো, তাদেরকে অবশ্যই ‘মুহসানাহ’ বা সংরক্ষিত মহিলা হতে হবে। সুতরাং তাদের মধ্যে যারা সংরক্ষিত বা নিজের লজ্জাস্থানের হেফাযতকারিনী নয়, তারা এর ব্যতিক্রম।
কেবলমাত্র তাদের মেয়েদেরকেই বিয়ের
অনুমতি দেয়া হয়েছে আর এ সঙ্গে শর্তও
আরোপিত হয়েছে যে, তাদের মুহসানাত তথা সংরক্ষিত
মহিলা হতে হবে। এ নির্দেশটির বিস্তারিত ব্যাখ্যা
নিরূপণের ব্যাপারে ফিকাহবিদদের মধ্যে
মতবিরোধ রয়েছে।
ইবনে আব্বাসের (রাঃ)
মতে এখানে আহলে কিতাব বলতে সে সব আহলে
কিতাবকে বুঝানো হয়েছে যারা ইসলামী রাষ্ট্রের
প্রজা। অন্যদিকে দারুল হারব ও কুফার ইহুদি ও
খ্রিষ্টানদের মেয়েদের বিয়ে করা জায়েজ নয়।
হানাফী ফকীহগণ এর থেকে সামান্য একটু
ভিন্নমত পোষণ করেন। তাদের মতে
বহির্দেশের আহলে কিতাবদের মেয়েদেরকে
বিয়ে করা হারাম না হলেও মাকরূহ, এতে কোনো
সন্দেহ নেই।
পক্ষান্তরে সাঈদ ইবনুল মুসাইয়েব
ও হাসান বসরীর মতে, আয়াতটির হুকুম সাধারণভাবে
প্রযোজ্য। কাজেই এখানে জিম্মী ও অজিম্মীর
মধ্যে পার্থক্য করার কোনো প্রয়োজন নেই।
তারপর মুহসানাত শব্দের ব্যাপারেও ফকীহগণের
মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে।
হজরত উমর (রাঃ) এর
মতে, এর অর্থ পবিত্র ও নিষ্কলূষ চরিত্রের
অধিকারী মেয়েরা। মুহসানাত শব্দের এ অর্থ গ্রহণ
করার কারণে তিনি আহলে কিতাবদের স্বেচ্ছাচারী
মেয়েদের বিয়ে করাকে এ অনুমতির আওতার
বাইরে রেখেছেন। হাসান, শাবী ও ইব্রাহীম
নাখঈ (রাঃ) এ একই মত পোষণ করেন।
ইসলামিক সায়েন্স সহযোগী অধ্যাপক ড. মুহাম্মাদ
সালামাহ বলেন, যদি সে একজন পবিত্র নারী হয়,
তাহলে আপনি তাকে বিয়ে করতে পারেন কারণ
মুসলমানদের জন্য খ্রিষ্টান নারীদের বিয়ে করার
অনুমতি রয়েছে। এই শর্তে যে, সেও মুসলিম
হবে। প্রকৃতপক্ষে, এটি তার খ্রিষ্টান নারীর
মুসলিম হওয়ার জন্য আপনার পক্ষ থেকে সাহায্য
হিসেবে বিবেচিত হবে।
সারকথা হলো, ভিন্ন ধর্মের অনুসারীদের বিয়ে
করার ব্যাপারে ইসলামের দিক-নিদের্শনা হলো-
মুসলিম হিসেবে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করানো সম্ভব
হলে বিয়ে করা বৈধ। সে যদি নিজের মন
থেকে আগ্রহী হয়ে ইসলাম গ্রহণ
করে তখন সে তার সাথে বিবাহ
বন্ধনে আবদ্ধ হতে কোন আপত্তি
নেই। একজন ইসলাম ধর্মের
অনুসারী থাকবে অন্যজন তার ধর্মের অনুসারী
থাকবে এভাবে দাম্পত্যজীবন শুরু করাকে ইসলাম
সমর্থন করে না।