Waruf

Call

আপনি কিসের ভিক্তিতে বলছেন তা বলেননি। আপনি কি জানেন, এক সময় রাশিয়াই ছিল প্রথম, পরে রাশিয়া ভেঙ্গে যেয়ে দুর্বল হয়ে পড়ে। রাশিয়ার কাছে আমেরিকার সমান প্রযুক্তি রয়েছে বরং কিছু ক্ষেত্রে রাশিয়া এগিয়ে। এখনো নাসা কে রকেট ইঞ্জিন সরবরাহ করে রাশিয়া তা কি জানেন। বর্তমান রাশিয়ার দুর্বলতা হচ্ছে অর্থনীতি। রাশিয়া বিশাল দেশ হওয়া সত্বেও অধিকাংশ জায়গা শীতল, বনভুমিতে ঢাকা। বসবাসের উপযুক্ত নয়। রাশিয়ার জনসংখ্যা আয়তনের তুলনায় নগন্য। রাশিয়া ভেঙ্গে উপযুক্ত স্থান গুলো ১৭ টি স্বাধীনদেশ হয়েছে। এ কারনেই উৎপাদন ব্যবসা বানিজ্য ইত্যাদির অবকাঠামো শেষ হয়ে গেছে বলে দুর্বল। অন্যদিকে রাশিয়া ভাঙ্গনের আগে সব ছিল বলে বাইরে থেকে মেধাশক্তি সংগ্রহে রাশিয়া এগুইনি। কিন্তু আমেরিকা রাশিয়ার সাথে পাল্লা দিতে পৃথিবীর যেকোন দেশের মেধাশক্তি টাকা অফার, সুযোগ ইত্যাদি নিয়া নিজে উন্নত হয়েছে। আমেরিকার অধিকাংস স্থান বসবাস সহ উৎপাদন উপযুক্ত। কোন স্টেট ভাঙ্গেনি। 

এছাড়াও ১৯৪৭ এর পর ইউরোপ আমেরিকার সাথে জোট করে আর রাশিয়া একা পড়ে থাকে তাই আজ রাশিয়ার সেই দাপট নাই। তথাপি সামরিক অস্ত্রে রাশিয়া এখনো প্রথম। তবে এখানেও যে দুর্বলতা আছে তা হচ্ছে এসব অস্ত্রপাতি, প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য সেনাবাহিনীর অভাব রয়েছে। যাই হোক রাশিয়া সব কিছু কেটে উঠিতেছে।

যদিও তাদের উত্থান পতনে আমার প্রতাক্ষ লাভ লস নাই। 

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ

রাশিয়ার মত বিশাল একটি শক্তিশালী দেশ আমেরিকাকে পিছনে ফেলতে পারে নি। তার মধ্যে সবচেয়ে বড় কারণটি হল রাশিয়ার দূর্বল অর্থনীতি।

প্রথমেই, [1] দূর্বল অর্থনীতি [2] সোভিয়েত পতন। . [3] ডলার পলিসি। [4] দূর্বল পররাষ্ট্রনীতি। [5] NATO [6] রাশিয়ার ব্রেইন ড্রেন(brain drain)

[1] রাশিয়া বহু বছর কমিউনিস্ট শাসন ব্যবস্থার উপর চলেছে যেখানে তাদের অর্থনীতি খুব একটা সমৃদ্ধি অর্জন করতে পারে নি। শেষে টাকার অভাবে সোভিয়েত ইউনিয়নই ভেঙ্গে গেল। সোভিয়েত ইউনিউয়নের রাশিয়ায় উচ্চশিক্ষাখাত ফ্রী থাকলেও তাদের দেশের একটি বড় অংশ কেবল সামরিকখাতে ব্যয় করছে। রাশিয়ার স্যাটেলাইট, বিভিন্ন দূর্দান্ত বৈজ্ঞানিক প্রজেক্ট সবই ছিল সোভিয়েত সামরিক বাহিনী দ্বারা নিয়ন্ত্রিত । সামরিক বাহিনী সামরিক সক্ষমতা বাড়াতে এত টাকা ব্যয় করতো যে অন্যান্যখাতে বাধ্য হয়ে ব্যয় কমাতে হত। ফলে অর্থনীতিভাবে কখনই পুঁজিবাদী দেশ আমেরিকার মত অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি সম্ভব হয় নি রাশিয়ার।

বর্তমান রাশিয়াতে কমিউনিজম না থাকলেও এখনও দেশের অনেক প্রজেক্ট সামরিক বাহিনী দ্বারা নিয়ন্ত্রিত এবং সামরিক সক্ষমতা বাড়ানোর দিকেই কেবল নজর। একটি দেশ সার্বিক দিক উন্নয়ন না হলে সেদেশের অর্থনীতির নতুন খাত তৈরী হয় না।

[2] সোভিয়েত পতন :
আমেরিকা ও NATO এর মত শক্তিশালী জোটকে মোকাবেলা করার সামর্থ্য ছিল সোভিয়েত রাশিয়ার। কিন্তু ১৯৯১ সালে সোভিয়েতের পতন হয় দেশের অর্থনীতি দেউলিয়া হয়ে যাবার কারণে। সোভিয়েত রাশিয়ার পতন রাশিয়াকে বহু বছর পিছিয়ে নিয়ে গেছে। বহু ব্যয়বহুল সামরিক প্রজেক্ট বন্ধ হয়ে গিয়েছিল অর্থের অভাবে। নতুন জন্ম দেয়া রাশিয়াকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সামরিক প্রযুক্তি বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছিল নিজের দেশকে অর্থাভাব কাটিয়ে উঠার জন্য। আর রাশিয়া এসব গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি আমেরিকার কাছেই বিক্রি করেছিল।

সোভিয়েতের সময়ে অর্থাভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়া একটি প্রজেক্ট ↓↓↓

খুবই গুরুত্বপূর্ণ সোভিয়েত সামরিক প্রযুক্তি Yak-141 যা নতুন রাশিয়াকে অর্থ যোগাড়ের জন্য বিক্রি করতে হয়েছিল। যেই প্রযুক্তি কিনে বর্তমান আমেরিকা F-35 তৈরি করেছে ↓↓↓

[3] আমেরিকার মত ডলার পলিসি নেই রাশিয়ার :
আমেরিকা আজকের অবস্থা আসতে তাকে অনেক চতুর ও দূরদর্শী চিন্তা নিয়ে এগিয়ে যেতে হয়েছে। ১৯৭০ সালের দিকে আমেরিকা সৌদি বাদশাহের সাথে একটি চুক্তি করেন। 
যে চুক্তিতে ছিল যে সৌদি আরব তার পেট্রোল বিশ্বের ডলারের বিনিময়ে বিক্রি করবে। অর্থাৎ যেকোন দেশ সৌদি থেকে তেল কিনলে তাকে ডলার দিয়ে কিনতে হবে। আর আমেরিকা সৌদির এই পদক্ষেপের বিনিময়ে তাকে সামরিক সুরক্ষা দিবে নিজের সামরিক ঘাটি সৌদিতে স্থাপন করে । সেই থেকে বিশ্বের বুকে ডলার currency এর রাজা হয়ে গেল। আমেরিকা বসে বসে ডলার ছাপায় আর অন্যদেশকে বিক্রি করে।
রাশিয়া এরকম কারো সাথে তাদের মুদ্রা চুক্তি করে নি ফলে রাশিয়া নিজের মুদ্রাকে শক্তিশালী করতে পারে নি। আর তার উপর আমেরিকা NATO ভুক্ত দেশগুলোর মাধ্যমে রাশিয়ার বিজনেসকে ইউরোপে ফেলতে বাধা সৃষ্টি করে। ফলে রাশিয়া বিশাল পরিমাণে গোল্ডের মুজুদ রাখতে বাধ্য হয়।

সম্প্রতি রাশিয়া নিজের অস্ত্রের বিক্রির ক্ষেত্রে ডলারের লেনদেন বাদ দিয়েছে। কিন্তু তাতেও আমেরিকার ডলারের প্রভাব কাটিয়ে উঠা সম্ভব হয় নি।
রাশিয়ার গোল্ড রিজার্ভের পরিমাণের গ্রাফ ↓↓↓

[4] দূর্বল পররাষ্ট্রনীতি :
রাশিয়া সামরিক দিক দিয়ে যতই শক্তিশালী হোক না কেন। রাশিয়া বিশ্বের উপর নিজের কর্তৃত্ব জাহির করতে পারে না। কারণ তাদের পররাষ্ট্রনীতি খুবই দূর্বল । রাশিয়ার বিশ্বপরিমন্ডলে একপ্রকার একলাচল নীতি নিয়ে চলতে বাধ্য। বিশ্বে রাশিয়ার দৃঢ় পক্ষপাতীতকারী দেশ নেই। যাদের প্রভাব খাটিয়ে রাশিয়া NATO, UN,G-8 এসব সংস্থাতে নিজের স্বার্থ একচেটিয়া খাটাতে পারে আমেরিকার মত।
তবে রাশিয়া আস্তে আস্তে নিজের একটা বলয় তৈরীর চেষ্টা করছে।
ইরান,চীন,সিরিয়া,ভেনিজুয়েলার মত দেশগুলোর সাথে রাশিয়ার নিজে থেকে এগিয়ে আসা তাই প্রমাণ করে।

[5] NATO সংস্থা ভেঙ্গে না গিয়ে আরো দেশ যুক্ত হওয়া :
সোভিয়েত রাশিয়া বলুন অথবা বর্তমান রাশিয়া সব সময়ই NATO একটি বড় হুমকি। NATO সংস্থার বর্তমান একটি পলিসি হল যদি কোন NATO ভুক্তদেশ কোন দেশ কর্তৃক হামলার সম্মুখীন হয় তবে NATO জোটভুক্ত সকল দেশ একসাথে সেই আগ্রাসন প্রতিহত করবে। এখানে রাশিয়া NATO সাথে সর্বদাই বিভিন্ন সময় বিশ্ব রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বাধার সম্মুখীন হয়। সামরিক দিক দিয়ে শক্তিশালী হলেও NATO ভুক্তদেশ যেগুলো রাশিয়ার সাথে বর্ডার শেয়ার করে সেসব দেশেও রাশিয়া নিজের প্রভাব জমাতে পারে না। রাশিয়ার আমেরিকার মত বৈশ্বিক হস্তক্ষেপ করতে গেলে EU,NATO দ্বারা সবসময় বাধার সম্মুখীন হতে হয়।
[অনেকে ইউক্রেনের থেকে ক্রিমিয়া দখলের কথা বলবে। তাদের বলতে চাই ইউক্রেন NATO ভুক্ত দেশ নয় ]

[6] রাশিয়ার ব্রেইন ড্রেইন (brain drain):

ব্রেইন ড্রেইন অর্থাৎ কোন দেশের মেধা বা প্রতিভাবান ব্যক্তি যদি কোন কারণে নিজ ছেড়ে অন্য দেশে চলে যায় তবে সেটাকে ব্রেইন ড্রেইন(Brain drain) বলে।

রাশিয়ার অসংখ্য মেধাবী লোক রাশিয়াতে কাজ না পেয়ে বা ভাল অর্থ উপার্জনের আশায় বিদেশে(USA,UK, Moldova, Croatia,Lithuania,Germany, Israel) পাড়ি জমায়।
রাশিয়ার প্রায় ৫০% রাশিয়ান বিজ্ঞানী, ৫২% IT experts, ৪০% ডাক্তার,৪৯% ইঞ্জিনিয়ার বিভিন্ন কারণে রাশিয়া ছেড়ে অন্য কোথাও বেশী অর্থে কাজ করতে ইচ্ছুক থাকে। ২০১৭ দিকে প্রায় 
১ কোটির কাছাকাছি লোক রাশিয়া ছেড়ে অন্যদেশে বিভিন্ন কারণে চলে গিয়েছে।
একটি দেশ থেকে এই পরিমাণে মেধাবীরা চলে গেলে সেটা দেশের উপরও বাজে প্রভাব ফেলে।

তাহলে আপনি বলুন রাশিয়া কিভাবে আমেরিকাকে পেছনে ফেলবে। কেবল পারমানবিক বোমা আর সামরিক দিক দিয়ে শক্তিশালী হলেই তো আর বিশ্বের সবচেয়ে বড় মোড়ল হওয়া যায় না। পাকিস্থানও পারমানবিক ও সামরিক দিক দিয়ে অনেক শক্তিশালী তাই বলে অন্যদিক দিয়ে তো পিছিয়ে যেমনটা রাশিয়া।

ধন্যবাদ


ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ