F.Rahman

Call

আমরা সাধারণত জলের সংকেত H2O বলেই জানি। তবে এই ভারী জল কি !

আসলে আমাদের পানীয় জল তৈরি হয় ২ অনু হাইড্রোজেন ও ১ অনু অক্সিজেন নিয়ে। এই হইড্রোজেন এর কিছু সমস্থানিক(সমস্থানিক বা আইসোটোপ হল একই মৌলিক পদার্থের ভিন্ন ভিন্ন পরমাণু যাদের পারমাণবিক সংখ্যা একই তবে নিউক্লিয়াসে নিউট্রনের সংখ্যা ভিন্ন। সমস্থানিকসমূহের পারমাণবিক সংখ্যা একই কিন্তু ভর সংখ্যা ভিন্ন। প্রোটনের সংখ্যা একই থাকায় সমস্থানিকসমূহের রাসায়নিক ও ভৌত ধর্মে অনেক সাদৃশ্য বিদ্যমান) আছে।

হাইড্রোজেন (H) প্রাকৃতিকভাবে সংঘটিত ৩টি আইসোটোপ রয়েছে, যা মাঝে মাঝে 1H(প্রোটিয়াম), 2H (ডয়টেরিয়াম)এবং 3H(ট্রিটিয়াম) দ্বারা প্রকাশ করা হয়। অন্যান্যগুলো অত্যন্ত অস্থিতিশীল নিউক্লিয়াস (4H থেকে 7H), যা গবেষণাগারে কৃত্রিম উপায়ে তৈরী কিন্তু প্রকৃতিতে সংঘটিত হয় না। সবচেয়ে স্থিতিশীল রেডিওআইসোটোপ হল টিট্রিয়াম(3H), যার অর্ধ জীবন ১২.৩২ বছর। সকল ভারী আইসোটোপই কৃত্রিম এবং এক জেপ্টোসেকেন্ডের (১০−২১ সেকেন্ডে) চেয়েও কম অর্ধ জীবন রয়েছে। যার মধ্যে 5H হল সবচেয়ে স্থিতিশীল এবং সবচেয়ে কম স্থিতিশীল আইসোটোপ হল 7H।

ডয়টেরিয়াম কে D দ্বারা প্রকাশ করা হয় এবং ট্রিটিয়াম কে T দ্বারা প্ৰকাশ করা হয়।

উক্ত প্রকৃতি নির্মিত তিনটি সমস্থানিকই অক্সিজেনের সাথে বিক্রিয়া করে অক্সাইড গঠন করে। যথা: H2O , D2O, T2O

এই D2O ভারী জল বা পানি বলে পরিচিত।

১ লক্ষ হাইড্রোজেন পরমাণুর মধ্যে মাত্র ১৫টি ডিউটেরিয়াম পরমাণুর আইসোটপ পাওয়া যায়। আর এই আইসোটপ যখন অক্সিজেনের সাথে মিশে জল উৎপন্ন করে তাকে ভারী জল বলে। ভারী জল দেখতে সাধারন পানির মত। তবে সাধারন জলের চেয়ে ভারী কারণ এটিতে সাধারণ হাইড্রোজেনর থেকে একটি বেশি নিউট্রন বিদ্যমান থাকে।

প্রকৃতিতে ভারী জল একক ভাবে বিরাজ করে না। সাধারন জলের সাথে মিশে থাকে। বৃষ্টির জল, পুকুর, নদী, খাল, নলকূপ, কূয়া, সমুদ্রের জলের সাথে মিশে থাকে। তবে নদী বা সমুদ্রের ০.০১৫ শতাংশ জলই ভারী জল। নলকূপ কুয়া পুকুরের পানিতে প্রতিটনে থাকে দুইশ গ্রাম হতে আড়াইশ গ্রাম। ভারী পানি সাধারন পানির মতই গন্ধহীন বর্ণহীন স্বচ্ছ। এর পৃথক প্রণালী খুব সহজ। স্বাভাবিক তড়িৎ বিশ্লেষণ ও পাতন প্রক্রিয়ায় আলাদা করা যায়। বার বার পাতন করে প্রায় ৯৯% ভারী পানি পাওয়া যায়।

বিজ্ঞানী হেরল্ড উড়ে (Harold Urey) ১৯৩৩ সালে সর্ব প্রথম সাধারন জল থেকে ভারী জল পৃথক করতে সমর্থ হন এবং ডয়টেরিয়াম আবিষ্কারের জন্য ১৯৩৪ সালে রসায়নে নোবেল পুরস্কার এ ভূষিত হন। ভারতীয় বিজ্ঞানী স্যার এইচ. জে. ভাবার( H.J.Bhabha - father of Indian nuclear program ) বলেছিলেন যে, ভারত মহাসাগরে যে অফুরন্ত ভারী জলের ভান্ডার আছে, তা একদিন অফুরন্ত শক্তির উৎস হয়ে দেখা দেবে। তার এ মূল্যবান ভবিষ্যৎ বানীটির গুরুত্ব ততদিন পর্যন্ত বোঝা যায়নি যতদিন পর্যন্ত নিউক্লিয়ার ফিউশন বিক্রিয়া আবিষ্কার হয়নি। কারন নিউক্লিয়ার ফিউশন বিক্রিয়া ঘটানোর জন্য যে টার্গেট পরমানুর প্রয়োজন তার একমাত্র উৎস হল সমূদ্রের ভারী জল থেকে আহরিত ডিউটেরিয়াম বা ভারী হাইড্রোজেন। সমুদ্রের পানি থেকে আহরিত দশ লিটার ভারী পানিতে যে পরিমান ভারী হাইড্রোজেন (ডিউটেরিয়াম) পাওয়া যায় তা দ্বারা ফিউশন বিক্রিয়া ঘটানো হলে যে পরিমান শক্তি উৎপাদন করা যায় তা অন্য ভাবে উৎপাদন করতে গেলে আনুমানিক তিন হাজার লিটার পেট্রল খরচ করতে হবে।

ভারী জলের ব্যাবহার :

ক) ভারী হাইড্রোজেনের বা ডিউটেরিয়াম এর একমাত্র উৎস এই ভারী পানি।
খ) সরাসরি নিউক্লিয়ার রিয়েক্টরে কুলেন্ট হিসেবে ভারী পানি ব্যাবহার হয়।
গ) চুল্লি থেকে গামা রশ্মির বহির্গমন রোধ করতে ভারী পানি ব্যাবহার হয়।
ঘ) আনবিক বোমা তৈরীতে প্রয়োজনীয় ডিউটোরিয়ামের লিথিয়াম যৌগ ভারী জল হতে পাওয়া যায়। ভারী জল হতে উদগিরীত আনবিক শক্তি ইউরেনিয়াম থেকে অনেক বেশি ।সাধারন ভাবে প্রতি টন ইউরেনিয়াম-২৩৫(U235) নামক মৌল থেকে যেইখানে ২০ মেগা টন শক্তি পাওয়া যায় সেখানে ভারী পানি থেকে উৎপাদিত লিথিয়াম-ডয়টেরাইড যৌগ থেকে পাওয়া যায় প্র‌ায় ৬০ মেগা টনের মত।

তাই এনার্জি সেক্টরে ভারী জলের গুরুত্ব অপরিসীম। কেননা এই ভারী জলই একদিন পৃথিবীর মহাশক্তির উৎস হবে। যথোপযুক্ত প্রযুক্তি আর প্রয়োগের মাধ্যমে এর উৎস খুজে আমরাও ভারী জলের শান্তিপূর্ণ ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারি।

Talk Doctor Online in Bissoy App