শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
Jobedali

Call

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পরেই এশিয়া ও আফ্রিকার অঞ্চলে উপনিবেশগুলি একে একে স্বাধীনতা অর্জন করতে থাকে| কিন্তু এর ফলস্বরূপ উপনিবেশবাদ যে সম্পূর্ণভাবে অবলুপ্ত হয়, তা নয়| 

সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলি বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে তাদের ঔপনিবেশিক শাসনের জাল গুটিয়ে আনতে বাধ্য হওয়ায় নতুন উপায় অনুসন্ধান করতে শুরু করে, যার মাধ্যমে তারা প্রত্যক্ষভাবে না হলেও পরোক্ষভাবে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অনুশাসন চালিয়ে যেতে থাকে|

এই পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নয়া বা নব্য উপনিবেশবাদের আবির্ভাব ঘটে| ব্রুটেন্টসের মতে, নয়া উপনিবেশবাদ হলো তৃতীয় বিশ্বের সফল জাতীয় মুক্তি আন্দোলনের প্রেক্ষিতে পশ্চাৎপদী সাম্রাজ্যবাদের পাল্টা জবাব|

রাজনৈতিক দিক থেকে স্বাধীন হলেও তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর অর্থনৈতিক অবস্থা অনেকাংশেই বৈদেশিক সংগঠন বা বহুজাতিক সংস্থা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত, একেই Economic Dependency বা অর্থনৈতিক নির্ভরশীলতা বলা হয়| এর মূল কারণ হলো, এই দেশগুলি উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় মূলধন সংগ্রহ করতে অপারক/পারে না এবং প্রযুক্তিগত দিক থেকেও পশ্চাৎপদ|

নয়া উপনিবেশবাদের আরেকটি দিক হল বাজার অর্থনীতি| সম্প্রতি GATT চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পর বা ডাঙ্কেন প্রস্তাব প্রায় সমস্ত রাষ্ট্র মেনে নেওয়ায় তৃতীয় বিশ্বের লগ্নির পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পেয়েছে| তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো কৃষি ও শিল্পের স্বয়ম্ভর হয়ে উঠলে পুঁজিবাদী রাষ্ট্রগুলির রপ্তানি বাণিজ্যে হার আরও সংকুচিত হবে| তাই এই পরিস্থিতি প্রতিরোধ করতেই শিল্পোন্নত রাষ্ট্রগুলির মস্তিষ্ক প্রসূত নীতি হলো - GATT, WTO, বিশ্বায়ন ইত্যাদি| তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো এই সকল ফাঁদে পা দেওয়া ছাড়া উপায় নেই|

দ্রুত বিকাশের জন্য প্রয়োজন শিল্পোন্নত দেশগুলোর কাছ থেকে অর্থনৈতিক প্রযুক্তি ও অন্যান্য সাহায্য| এই সাহায্যের বিনিময়ে তারা অনুন্নত দেশগুলোকে আপত্তিজনক শর্তাবলী মেনে নিতে বাধ্য করেছে| তবে বিদেশি পুঁজি ও প্রযুক্তি বিদ্যা প্রয়োগ করে অনুন্নত দেশগুলো তাদের উন্নয়নের লক্ষ্যে পৌঁছাতে সক্ষম হচ্ছে, তা কিন্তু নয়|

উপরিউক্ত আলোচনা থেকে একথা সুস্পষ্টভাবে বলা যায় যে, নয়া উপনিবেশবাদ আর কিছুই নয়, রাজনৈতিক ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর সাম্রাজ্যবাদী শক্তির অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণ সুসংহত ও প্রসার করার প্রয়াস মাত্র|


তবে এধারণাও ঠিক নয় যে, নব্য উপনিবেশবাদ বহু চরিত্র সমন্বিত| নক্রুমাহ ব্যাখ্যা করেছেন যে, নব্য উপনিবেশবাদের কৌশলগুলি অতি সূক্ষ্ম ও বিচিত্র এবং এগুলো শুধুমাত্র অর্থনীতির ক্ষেত্রে কার্যকর তা নয়, রাজনৈতিক মতাদর্শগত ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেই এগুলি সমানভাবে প্রযোজ্য| কোন কোন ক্ষেত্রে রাজনীতিতে সরাসরি না হলেও পরোক্ষ হস্তক্ষেপ লক্ষ্য করা যায়| বহুজাতিক সংস্থাগুলো নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য বিরোধী গোষ্ঠীকে মদত দিয়ে শাসক দলকে ক্ষমতাচ্যুত করার ঘটনাও বিরল নয়|

নব্য উপনিবেশবাদ মতাদর্শগত ক্ষেত্রেও যথেষ্ট সক্রিয়| প্রপোগান্ডা ও অপপ্রচারের মাধ্যমগুলির সাহায্যে পাশ্চাত্য চিন্তাধারা ও আদর্শ গুলি তৃতীয় বিশ্বের জনগণের সাথে অতি সহজেই পৌঁছে যাচ্ছে এবং তাদের নিজস্ব ভাবধারাকে প্রভাবিত করতে সক্ষম হচ্ছে| এই প্রচার মূলত সাম্যবাদী আন্দোলনের বিরুদ্ধে মনোভাব সৃষ্টির উদ্দেশ্য| এর লক্ষ্য হলো, পশ্চিমী উদারনৈতিক ও গণতান্ত্রিক মতাদর্শে সুদুর প্রসারী প্রচার, যাতে করে তৃতীয় বিশ্বের সদ্য স্বাধীন রাষ্ট্রের দেশগুলি রাষ্ট্রের পরিকাঠামো সৃষ্টির সময় সমাজতান্ত্রিক আদর্শের পরিচালিত না হয়|

এছাড়া সামরিক চুক্তি সম্পাদন ও জোট প্রস্তুতিকরণ ও নয়া উপনিবেশবাদের হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে| সামরিক ঘাঁটিগুলিও অনেক সময় অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপের ভিত্তি হিসেবে ব্যবহৃত হয়| SEATO প্রভৃতি সংগঠনগুলিকে সদ্য স্বাধীন দেশগুলির সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোর সাথে সহাবস্থান নয়া উপনিবেশবাদের অপর এক ধৃত প্রকাশ|

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ