নাকি তোমরা মনে কর যে, তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করবে অথচ এখনো তোমাদের কাছে তোমাদের পূর্ববর্তীদের মত অবস্থা আসেনি? অর্থ-সংকট ও দুঃখ-ক্লেশ তাদেরকে স্পর্শ করেছিল এবং তারা ভীত-কম্পিত হয়েছিল এমনকি রাসূল ও তার সংগী-সাথী ঈমানদারগণ বলে উঠেছিল, আল্লাহ্‌র সাহায্য কখন আসবে? জেনে রাখ, নিশ্চয় আল্লাহর সাহায্য অতি নিকটে।
(সূরা বাকারা, আয়াত ২১৪)

তাফসীর:

এ আয়াত থেকে বোঝা যায় যে, পরিশ্রম ও মেহনত ব্যতীত এবং বিপদ-আপদে পতিত হওয়া ছাড়া কেউই জান্নাত লাভ করতে পারবে না। তবে কষ্ট ও পরিশ্রমের স্তর বিভিন্ন। নিন্মস্তরের পরিশ্রম ও কষ্ট হচ্ছে স্বীয় জৈবিক কামনা-বাসনা ও শয়তানের প্রতারণা থেকে নিজেকে রক্ষা করে কিংবা সত্য দ্বীনের বিরুদ্ধবাদীদের বিরুদ্ধাচরণ করে নিজের বিশ্বাস ও আকীদাকে ঠিক করা। এ স্তর প্রত্যেক মুমিনেরই অর্জন করতে হয়। অতঃপর মধ্যম ও উচ্চস্তরের বর্ণনা- যে পরিমাণ কষ্ট ও পরিশ্রম করতে হবে, সে স্তরেরই জান্নাত লাভ হবে। এভাবে কষ্ট ও পরিশ্রম হতে কেউই রেহাই পায়নি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সবচাইতে অধিক বালা-মুসীবতে পতিত হয়েছেন নবী-রাসূলগণ। তারপর (মর্যাদার দিক থেকে) তাদের নিকটবর্তী ব্যক্তিবর্গ’। -সুনানে ইবনে মাজাহঃ ৪০২৩

নবীগণ ও তাদের সাথীদের প্রার্থনা যে, ‘আল্লাহর সাহায্য কখন আসবে’ তা কোন সন্দেহের কারণে নয়। বরং এ প্রশ্নের উদ্দেশ্য ছিল এই যে, যদিও আল্লাহ্ তাআলা সাহায্যের ওয়াদা করেছেন, এর সময় ও স্থান নির্ধারণ করেননি। অতএব, এ অশান্ত অবস্থায় এ ধরনের প্রার্থনার অর্থ ছিল এই যে, সাহায্য তাড়াতাড়ি আসুক। এমন প্রার্থনা আল্লাহর প্রতি ভরসা ও শানে নবুওয়াতের খেলাফ নয়। বরং আল্লাহ্ তাআলা স্বীয় বান্দাদের সবিনয় প্রার্থনাকে পছন্দ করেন। বস্তুত নবী এবং সালেহীনগণই এরূপ প্রার্থনার অধিক উপযুক্ত।


"(হে নবী) তারা আপনাকে প্রশ্ন করে যে, কি জিনিস তারা দান করবে? বলে দিন-যে বস্তুই তোমরা দান কর, তা হবে পিতা-মাতার জন্যে, আত্মীয়-আপনজনের জন্যে, এতীম-অনাথদের জন্যে, অসহায়দের জন্যে এবং মুসাফিরদের জন্যে। আর তোমরা যে কোন সৎকাজ কর না কেন, নিঃসন্দেহে তা ভালোভাবেই আল্লাহর জানা রয়েছে।" (সূরা বাকারা, আয়াত ২১৫)
তাফসীর:
বঞ্চিতদের সহায়তা করা ও তাদের দিকে লক্ষ্য রাখা মুমিনদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য যা কোরআনের বহু আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে। তাই ইসলামের প্রাথমিক যুগে মুসলমানরা রাসূল (সা.)'র কাছে প্রশ্ন করেছিল- কাকে ও কতটুকু দান করা যাবে? দানের পরিমাণ ও ধরণ স্পষ্ট ও স্থির নয় বলে এটা নির্ভর করে মানুষের ক্ষমতা ও অভাবগ্রস্তের চাহিদার পরিমাণের ওপর। তাই এ প্রশ্নের উত্তরে কোরআন বলেছে: দানের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হলো প্রয়োজনীয় ও লাভজনক বিষয় দান করা, তা পরিমাণে যাকে যতটুকুই দেয়া হোক না কেন এ ক্ষেত্রে সবার দিকেই লক্ষ্য রাখতে হবে, বয়স্ক বাবা-মা, অভাবগ্রস্ত নিজ পরিবারের সদস্য, দরিদ্র আত্মীয়-স্বজন এবং সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীর লোক যারা সাহায্যের প্রত্যাশী-সবার দিকেই খেয়াল রাখতে হবে। আয়াতের শেষাংশে বলা হয়েছে- শুধু দান নয় অন্যদের জন্য কল্যাণকর যেকোন কাজ সম্পর্কে আল্লাহ অবহিত। তাই মানুষকে নিজের সৎ কাজের বিষয়ে জানানোর চেষ্টা না করে গোপনে দান খয়রাত করা উচিত।
এই আয়াত থেকে আমরা এটা শিখলাম যে দান ও সাহায্যের ক্ষেত্রে বাবা-মা ও আত্মীয় স্বজন অন্যদের চেয়ে অগ্রাধিকার পাবে এবং সৎকাজের ফল কখনও নষ্ট হয় না, সেটা মানুষ জানুক আর নাই জানুক, আল্লাহ পাক তা ভালোকরেই জানেন।


"তোমাদের জন্য যুদ্ধের বিধান দেয়া হল যদিও তোমাদের কাছে তা অপছন্দনীয়। পক্ষান্তরে তোমাদের কাছে হয়তো কোন একটা বিষয় পছন্দসই নয়,অথচ তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। আর হয়তোবা কোন একটি বিষয় তোমাদের কাছে পছন্দনীয় অথচ তোমাদের জন্যে তা অকল্যাণকর। বস্তুতঃ আল্লাহই জানেন,তোমরা জান না।" (সূরা বাকারা, আয়াত ২১৬)

তাফসীর:
ধর্ম রক্ষার জন্য শত্রুদের সাথে প্রয়োজনে লড়াই করা মুমিনদের জন্য ফরজ বা বাধ্যতামূলক। কিন্তু মানুষ স্বাভাবিকভাবেই আনন্দ ও স্বাচ্ছন্দ পছন্দ করে এবং যুদ্ধে যাওয়াকে পছন্দ করে না। এই আয়াতে বলা হয়েছে- যদিও শত্রুর সঙ্গে মোকাবেলা করা কঠিন এবং যুদ্ধ আনন্দের বিষয় নয়, তারপরও ধর্মযুদ্ধে বা অন্যায়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধে মানুষের পার্থিব ও পারলৌকিক কল্যাণ রয়েছে। প্রবৃত্তির তাড়নায় কেউ যেন খোদার নির্দেশ ও বিধানকে মন্দ বা ক্ষতিকারক বলে মনে না করে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, শিশুরা ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে ঔষধ দেয়াকে ভয় পায় বলে ইঞ্জেকশন নিতে চায় না, সে এটা বুঝে না যে, তার সুস্থতা এর ওপর নির্ভর করে। আবার দেখা যায় শিশুটি এমন এক সুস্বাদু খাবার পছন্দ করে বসে যা অসুখের সময় তার জন্য ক্ষতিকারক। তাই সব আনন্দই ভাল নয় এবং সব কষ্টই মন্দ নয়।
এই আয়াত থেকে আমরা যা শিখলাম তা হলো-
প্রথমত : একমাত্র আল্লাহর বিধান বা নির্দেশ পালনের মধ্যেই মানুষের স্বার্থ ও কল্যাণ নিহিত।
দ্বিতীয়ত : মানুষের জ্ঞান সীমিত এবং আল্লাহর জ্ঞান অসীম। তাই আল্লাহর বিধানের কাছে আমাদের আত্মসমর্পন করা উচিত। আমরা আল্লাহর নির্দেশনার সুফল বুঝতে না পারলেও এবং আল্লাহর নির্দেশ বাস্তবায়ন করা কঠিন হলেও তাঁর বিধানের কাছে আমাদের আত্মসমর্পন করতে হবে। (সংগৃহীত)

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ