যোনি থেকে ঘটা যেকোন রক্তপাত যোনিগত রক্তপাত হিসাবে পরিচিত। যখন এটা মাসিকজনিত চক্রের কারণে স্বাভাবিকভাবে ঘটে এটা মেনোরিয়া হিসাবে পরিচিত হয়। যাই হোক, কোনও প্রচণ্ড মাসিকজনিত রক্তস্রাব অথবা কোনও অস্বাভাবিক রক্তপাত যা একজন মহিলার মাসিক ঋতু বাদে অন্য কারণে ঘটে, সেটা একটা উদ্বেগের বিষয়।

যোনিগত রক্তস্রাবের বিভিন্ন কারণ থাকে যা প্রজনন তন্ত্র বাদে অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারে। এগুলির মধ্যে মহিলার চিকিৎসাগত অবস্থা, ঔষধ, জরায়ুমধ্যস্থ যন্ত্রসমূহ, রক্তের ব্যাধি, এবং আরও বেশি কিছু থাকতে পারে।

যোনিপথ থেকে অস্বাভাবিক রক্তস্রাবকে উপেক্ষা করা উচিত নয় এবং একজন ডাক্তারকে জানানো উচিত কারণ এটা কোনও গুরুতর অন্তর্নিহিত চিকিৎসাগত অবস্থার ইঙ্গিত দিতে পারে। কোনও অস্বাভাবিক যোনিগত রক্তস্রাবের সময়মত রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসা মহিলাটির জননতন্ত্রীয় এবং সেই সাথে সাধারণ স্বাস্থ্যের পক্ষে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যোনিগত রক্তস্রাবের চিকিৎসা এর অন্তর্নিহিত কারণের উপর নির্ভর করে এবং এর মধ্যে ঔষধ, হরমোন চিকিৎসা, এবং যদি প্রয়োজন হয়, কোনও অস্ত্রোপচারও সামিল হতে পারে।

যোনিগত রক্তস্রাবের কারণগুলিকে সাধারণভাবে জননতন্ত্রীয়, আয়াট্রোজেনিক (মেডিক্যাল চিকিৎসার কারণে), এবং পদ্ধতিগত হিসাবে শ্রেণীভুক্ত করা যেতে পারে। বিভিন্ন বয়সের কোঠার মহিলাদের ক্ষেত্রে যোনিগত রক্তস্রাবের কারণ নীচেও ব্যখ্যা করা হয়েছে।


জননতন্ত্রীয় ব্যবস্থার সঙ্গে সম্পর্কিত যোনিগত রক্তপাত - Vaginal bleeding associated with the reproductive system in Bengali
মহিলা জননতন্ত্রীয় ব্যবস্থা বহুবিধ অঙ্গের পারস্পরিক ক্রিয়াকলাপের দ্বারা গঠিত হয়। একটা অঙ্গের কোনও অস্বাভাবিকতা অন্যটাকে এবং কোনও কোনও সময় পুরো শরীরকে প্রভাবিত করে। নীচে কয়েকটি জননতন্ত্রীয় ব্যবস্থার ব্যাধি যা কোনও অস্বাভাবিক যোনিগত রক্তপাতের সৃষ্টি করতে পারেঃ

ঋতুকালীন যোনিগত রক্তস্রাব - Vaginal bleeding during periods in Bengali
ঋতু বা মাসিক যোনিগত রক্তস্রাব এন্ডোমিট্রিয়াম (জরায়ুর ভিতরের পর্দা) স্বাভাবিক খসার কারণে ঘটে। এটা ঘটে যখন ডিম্বাশয়ের দ্বারা মোচন করা ডিম নিষিক্ত হয়না। মাসিকজনিত রক্তস্রাব হচ্ছে স্বাভাবিক এবং এটা এমন কিছু ব্যাপার নয় যার জন্য দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হতে হবে, যতক্ষণ না এটা অত্যন্ত বেশি হয় এবং অত্যধিক রক্তক্ষয় হয়। এনএইচএস-ইউকে অনুযায়ী, মাসিকের স্বাভাবিক স্থিতিকাল গড়ে পাঁচদিন সহ দুই থেকে সাত দিন পর্যন্ত ব্যাপ্ত হতে পারে। এর বাইরে যোনিগত রক্তস্রাব হল অস্বাভাবিক এবং অবিলম্বে চিকিৎসা করা উচিত কারণ যদি এটা মাস দুয়েক চলতে থাকে, এটা আক্রান্ত মহিলার মধ্যে লোহার অভাবজনিত রক্তাল্পতা ঘটাতে পারে।

চিকিৎসা
প্রচণ্ড বেশি মাসিকজনিত রক্তস্রাবের চিকিৎসায় হরমোনগত এবং অ-হরমোনগত উভয় পদ্ধতি অন্তর্ভুক্ত।

হরমোনগত পদ্ধতিসমূহ
প্রচণ্ড বেশি মাসিকজনিত রক্তস্রাব চিকিৎসার জন্য এগুলো হল সবচেয়ে বেশি ফলপ্রদ। যখন মাসিক শুরু হয় শরীরের প্রোজেস্টেরোন দ্রুত ক্ষয় হতে থাকে এবং এই ক্ষয় এন্ডোমিট্রিয়াম-এর প্রদাহের জন্য দায়ী। এইজন্য প্রোজেস্টেরোন দেওয়া এন্ডোমিট্রিয়াম-এর প্রদাহ এবং ঝরা কমাবে, এবং অত্যধিক রক্তপাত আটকাবে। হরমোনগত পদ্ধতি একটা জরায়ুমধ্যস্থ ব্যবস্থার সদ্ব্যবহার করে যা শরীরে হরমোন ধীরে ধীরে ছাড়ে, জন্মনিরোধক বড়িগুলির সংমিশ্রণ, মৌখিক প্রোজেস্টেরোন ট্যাবলেট, এবং হরমোন ইঞ্জেকশন।

অ-হরমোনগত পদ্ধতিসমূহ
অ-হরমোনগত পদ্ধতিগুলির মধ্যে আছে একটা স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখার জন্য ব্যায়াম, অ্যান্টিফাইব্রিনোলিটিক ঔষধ (রক্তপিণ্ডের মধ্যে বিদ্যমান ফিব্রিন-এর ভাঙ্গন যে ঔষধগুলি রোধ করে), এবং নন-স্টেরয়েডাল অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটোরি ড্রাগস (এনএসএআইডিজ)। একটা স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা ডিম্বাশয়গুলির স্বাভাবিক কাজকর্ম করায় সাহায্য করে। স্থূল হওয়া ডিম্বাশয়গত ত্রুটিপূর্ণ ক্রিয়ার বৃহত্তর ঝুঁকির দিকে আপনাকে ঠেলে দিতে পারে। অ্যান্টিফাইব্রিনোলিটিক ঔষধগুলি রক্তপিণ্ডের মধ্যে ফিব্রিন ভাঙ্গন দমন করার দ্বারা অত্যধিক রক্তক্ষয় রোধ করে। এনএসএআইডিজ এন্ডোমিট্রিয়াম-এর প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে এবং মাসিকজনিত প্রচণ্ড রক্তস্রাব রোধ করে।
যৌনসঙ্গমের পর যোনিগত রক্তপাত - Vaginal bleeding after sex in Bengali
প্রথমবার দম্পতির মধ্যে যৌনসঙ্গমের সময় সতীচ্ছদ (যোনির ছিদ্রের উপরে থাকা একটা পাতলা আবরণ) ছেঁড়া এবং যোনির পর্দার ঘর্ষণজনিত ছেঁড়া বা ছড়ে যাওয়ার কারণে যোনিগত রক্তপাত সাধারণভাবে ঘটে। যাই হোক, যদি এটা আপনার প্রতিবার, কয়েকদিন অথবা কয়েক সপ্তাহ যৌনসঙ্গমের পর অনুভূত হয়, তাহলে এটা অন্যান্য সমস্তকিছুর মধ্যে পেলভিক ইনফ্লেমেটোরি ডিজিজ-এর মত শ্রোণীচক্রের ব্যাধি, ক্যামিডিয়া অথবা গনোরিয়ার মত যৌনগতভাবে সঞ্চারিত সংক্রমণ, রজঃনিবৃত্তির পর যোনিপথের তৈলাক্তভাব কমার কারণে পর্দার শুষ্কতা, পলিপ, জরায়ুর শেষ প্রান্তের সরু নলির প্রদাহ ইত্যাদির কারণে হতে পারে।

চিকিৎসা

যৌনসঙ্গমের অব্যবহিত পরে অথবা চলাকালীন যে রক্তপাত ঘটে সেটা মৃদু এবং সাধারণতঃ চিকিৎসার দরকার করেনা। যাই হোক, দীর্ঘায়িত রক্তপাত এবং যৌনসঙ্গমের কয়েক দিন বা কয়েক সপ্তাহ পরে রক্তপাত যোনিপথের কোনও আঘাত বা সংক্রমণ নির্দেশ করতে পারে। যদি অগোচরীভূত (আনরিপোর্টেড) থেকে যায়, এটা গুরুতর জটিলতা যেমন সংক্রমণের বিস্তার, অত্যধিক রক্তক্ষয়, এইচআইভি-এইডস, এবং অন্যান্য গুরুতর চিকিৎসাগত অবস্থাগুলির দিকে নিয়ে যেতে পারে।

সংক্রমণের কারণে যোনিগত রক্তপাত - Vaginal bleeding due to infection in Bengali
জননতন্ত্রের সংক্রমণগুলি যেমন পেলভিক ইনফ্লেমেটোরি ডিজিজ, যৌনগতভাবে সঞ্চারিত ব্যাধিগুলি যেমন ক্যামিডিয়া এবং গনোরিয়া, এবং ছত্রাকজনিত সংক্রমণগুলিও দুটো মাসিক ঋতুর মধ্যে যোনিগত রক্তপাত ঘটাতে পারে।

চিকিৎসা

জননতন্ত্রীয় ব্যবস্থার সংক্রমণের চিকিৎসা সাধারণভাবে সামিল করে ঔষধপ্রয়োগ যেমন অ্যান্টিবায়োটিক, সংক্রামক রোগের জীবাণুনাশক, এবং প্রদাহ-প্রতিরোধী ঔষধগুলি। এইসমস্ত ঔষধ রোগ-সৃষ্টিকারী জীবাণু/ভাইরাস/ছত্রাকের সংখ্যা এবং জরায়ু বা যোনিপথের প্রদাহ কমায়। যার ফলে, একটা নির্দিষ্ট সময়ব্যাপী, যোনি থেকে অস্বাভাবিক রক্তপাত বন্ধ হয়।

আঘাতের কারণে যোনিগত রক্তপাত - Vaginal bleeding due to injury in Bengali
শ্রোণীগত এলাকায় কোনও আঘাত, শ্রোণীর হাড়ে চিড়, অথবা যৌনগত আক্রমণের কারণে শ্রোণীগত অঙ্গগুলিতে আঘাত অনর্গল এবং কখনও কখনও জীবন-ঘাতী যোনিগত রক্তপাতও ঘটাতে পারে। এই ধরণের ক্ষেত্রগুলিতে, মানসিক এবং শারীরিকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত মেয়েটি বা মহিলাটির জীবন রক্ষা করার জন্য একজন স্ত্রীরোগবিশেষজ্ঞকে দেখানো অত্যন্ত জরুরি।

চিকিৎসা

যোনিতে কোনও আঘাতের প্রদাহ-রোধী ঔষধ, অ্যান্টিবায়োটিক প্রোফিল্যাক্সিস (সংক্রমণের বিকাশ আটকানোর জন্য), অথবা কোনও অস্ত্রোপচার প্রয়োগ করে চিকিৎসা করা যেতে পারে। যৌন নির্যাতনের ক্ষেত্রে, মেয়েটির জন্য কাউন্সেলিং থেরাপি এবং তার মা-বাবারও প্রয়োজন।

গর্ভাবস্থায় যোনিগত রক্তপাত - Vaginal bleeding during pregnancy in Bengali
“যোনিগত রক্তপাত”-এর উপর একটা সাম্প্রতিক সমীক্ষা নির্দেশ করে, যে গর্ভাবস্থায় রক্তপাত স্বাভাবিক নয় কিন্তু এটা সচরাচর প্রায়শঃ ঘটে। তিনটি গর্ভাবস্থার মধ্যে প্রায় একটায় কোন না কোন সময় যোনিগত রক্তপাত হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। গর্ভাবস্থার বিভিন্ন ত্রৈমাসিক কালে যোনিগত রক্তপাতের সম্ভাব্য কারণগুলি হল নিম্নরূপঃ

প্রথম ত্রৈমাসিক

প্রথম ত্রৈমাসিক কালে যোনিগত রক্তপাতের সম্ভাব্য কারণগুলির মধ্যে আছেঃ

জরায়ুর দেয়ালের সাথে ভ্রূণের মিলন (গর্ভাবস্থার প্রাথমিক পর্ব যখন কোষগুলি একটা ভবিষ্যৎ ভ্রূণে পরিণত হওয়ার জন্য ভাগ হতে শুরু করে)।
গর্ভস্রাব
ফ্যালোপিয়ান টিউব এবং পৈটিক গহ্বরের মত অস্বাভাবিক জায়গাগুলিতে ভ্রূণের সম্মিলন বা সঞ্চরণ। এটা এক্টোপিক প্রেগন্যান্সি হিসাবে পরিচিত।
প্লেসেন্টা (মায়ের শরীরের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান ভ্রূণের সাথে যে কর্ড সংযোগ করে) এবং জরায়ুর দেয়ালের মধ্যে রক্তের অস্বাভাবিক জমা হওয়া। এটা সাবকোরিয়োনিক হেমারেজ হিসাবে জ্ঞাত।
চিকিৎসা

হালকা রক্তপাত যা ভ্রূণের সম্মিলনের কারণে ঘটে সেটা স্বাভাবিক এবং কোনও চিকিৎসার দরকার হয়না। রক্তপাত ঘটে সামান্য পরিমাণে অথবা দাগ হিসাবে।
কোনও এক্টোপিক প্রেগন্যান্সি (যে গর্ভাবস্থায় ভ্রূণ জরায়ুর বাইরে, বিশেষতঃ ফ্যালোপিয়ান টিউবে বাড়ে) ঔষধ দিয়ে যেমন গর্ভপাতের বড়ি, অথবা ল্যাপারোস্কোপিক স্যালপিঞ্জেক্টোমি (ভ্রূণের সাথে ফ্যালোপিয়ান টিউব অপসারণ) অথবা স্যালপিঙ্গোস্টোমি (শুধুমাত্র ভ্রূণের অপসারণ) দ্বারা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে নিরাময় করা যেতে পারে। কোনও ফেটে যাওয়া এক্টোপিক প্রেগন্যান্সি হচ্ছে একটা চিকিৎসাগত জরুরি অবস্থা এবং অবিলম্বে চিকিৎসা প্রয়োজন।
কোনও গর্ভস্রাব নিরাময় করা হয় মৃত ভ্রূণটিকে জরায়ু থেকে বাদ দিয়ে। এটা ঔষধ প্রয়োগ অথবা অস্ত্রোপচার দ্বারা করা যেতে পারে।
দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক

গর্ভাবস্থার দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকের সময় যোনি থেকে অস্বাভাবিক রক্তপাতের জন্য কারণগুলি হল নিম্নরূপঃ

জন্মের পথের মুখের কাছে জরায়ুর সঙ্গে প্লেসেন্টার সংযুক্তি।
জরায়ুর পেশীময় স্তরের (মায়োমিট্রিয়াম) সঙ্গে প্লেসেন্টার অস্বাভাবিক সংযুক্তি।
জরায়ুর দেয়াল থেকে প্লেসেন্টার হঠাৎ বিচ্ছিন্ন হওয়া অথবা বিচ্যুতি।
জরায়ুর ভিতরে ভ্রূণের হঠাৎ মৃত্যু।
চিকিৎসা

স্বাভাবিক সংযুক্তির ফলে হালকা রক্তপাত হয় যার জন্য সাধারণতঃ চিকিৎসার দরকার হয়না। কিন্তু, যদি রক্তপাত অতিরিক্ত হয় অথবা লম্বা সময় ধরে ঘটে, অবিলম্বে স্ত্রীরোগবিশেষজ্ঞকে জানান।
প্লেসেন্টার অস্বাভাবিক সংযুক্তি এবং কোনও গর্ভস্রাব ঔষধ প্রয়োগ অথবা অস্ত্রোপচারের সাহায্যে অপসারণ করার দ্বারা নিরাময় করা দরকার।
তৃতীয় ত্রৈমাসিক

যখন কোনও মহিলা তাঁর গর্ভাবস্থার তৃতীয় ত্রৈমাসিকে থাকেন তখন অস্বাভাবিক যোনিগত রক্তপাতের কয়েকটি কারণ হল নিম্নরূপঃ

প্লেসেন্টার সমগ্র অথবা একটা অংশের হঠাৎ বিচ্ছিন্ন হওয়া।
জরায়ুর পেশীময় স্তর ভেদ করে প্লেসেন্টার বৃদ্ধি।
অকাল প্রসব বেদনা।
চিকিৎসা

চিকিৎসার মধ্যে রক্তপাত বন্ধ করতে এবং জরায়ুগত সংকোচন শিথিল করা বা প্রসব বেদনায় আরাম দিতে ঔষধপ্রয়োগ, ক্ষয় হওয়া রক্ত প্রতিস্থাপন করতে রক্ত পরিসঞ্চালন (ট্রান্সফিউশন), এবং বিরল ক্ষেত্রগুলিতে গর্ভাশয় থেকে ভ্রূণটিকে বাদ দিতে অথবা ফেটে যাওয়া জরায়ু সম্পূর্ণ অপসারণ করতে (হিস্টেরেক্টোমি) সিজারিয়ান সেকশন (পেলভিক এলাকার অস্ত্রোপচার) সামিল হতে পারে।

টিউমার এবং অস্বাভাবিক অঙ্গ বৃদ্ধির কারণে যোনিগত রক্তপাত - Vaginal bleeding due to tumours and abnormal growths in Bengali
কয়েকটি অ-ক্যান্সারযুক্ত টিউমার যা অস্বাভাবিক যোনিগত রক্তপাত ঘটাতে পারে তা নীচে তালিকাভুক্ত করা হলঃ

ফাইব্রয়েডস
ফাইব্রয়েডগুলো হচ্ছে জরায়ুর মধ্যে অ-ক্যান্সারযুক্ত বৃদ্ধি। জরায়ুর পেশীগত স্তরের কোনও অতিবৃদ্ধির কারণে এগুলো গড়ে ওঠে। ফাইব্রয়েডগুলি সাধারণতঃ উপসর্গহীন এবং হঠাৎ কখনও সনাক্ত হয়। এগুলো বিভিন্ন আকারের এবং সংখ্যায় অনেক হতে পারে। জরায়ুর যেকোন জায়গায় ফাইব্রয়েডগুলি বৃদ্ধি পেতে পারে এবং তার উপর নির্ভর করে, এগুলো মাসিক-জনিত অত্যধিক রক্তপাত অথবা মাসিকের তারিখগুলির মধ্যবর্তী সময়ে রক্তপাত ঘটাতে পারে।

এন্ডোমিট্রিয়োসিস
এন্ডোমিট্রিয়োসিস হচ্ছে একটা রোগ যাতে জরায়ু বাদে অন্যান্য স্থানে যেমন ফ্যালোপিয়ান টিউব, ডিম্বাশয়, সার্ভিক্স, এবং পৈটিক জায়গায় এন্ডোমিট্রিয়ামের একটা অ-ক্ষতিকারক (অ-ক্যান্সারযুক্ত) বৃদ্ধি ঘটে। হরমোনগুলির প্রভাবে, এই এন্ডোমিট্রিয়ামও খসে যেতে পারে এবং শ্রোণীগত (পেলভিক) ব্যথার সঙ্গে অস্বাভাবিক যোনিগত রক্তপাত ঘটাতে পারে।

এন্ডোমিট্রিয়াম-এর হাইপারপ্লেশিয়া
কোনও টিস্যুর কোষগুলির উৎপাদনের হারে কোনও বৃদ্ধি হাইপারপ্লেশিয়া হিসাবে পরিচিত। যখন এটা জরায়ুর এন্ডোমিট্রিয়াম-এর ভিতরের আবরণে ঘটে, এটা এন্ডোমিট্রিয়াল হাইপারপ্লেশিয়া হিসাবে জানা যায়। এটা একটা দশা যা এস্ট্রোজেন হরমোনের উত্থিত মাত্রা এবং প্রোজেস্টেরোন মাত্রায় হ্রাসের কারণে ঘটে। এটা 50-54 বৎসর বয়সের মধ্যের মহিলা অথবা যেসমস্ত মহিলা স্থূল তাঁদের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ঘটে। এটা জরায়ু এবং যোনি থেকে কোনও অস্বাভাবিক রক্তপাত বারবার ঘটার কারণগুলির অন্যতমও। যদি চিকিৎসা না করে ফেলে রাখা হয়, এটা এন্ডোমিট্রিয়ামগত ক্যান্সারে রূপান্তরিত হতে পারে।

পলিপ
কোনও পলিপ হল একটা অ-ক্যান্সারযুক্ত বৃদ্ধি যা এন্ডোমিট্রিয়ামে গ্রন্থিগুলির এবং সেগুলোর চারপাশের সংযোগকারী টিস্যু অথবা স্ট্রোমার অতিবৃদ্ধির কারণে ঘটে। জরায়ুর দেয়াল অথবা ছাদ যেকোন জায়গায়, এবং সার্ভিক্স-এর মুখে (জন্মের পথ) পলিপ গড়ে উঠতে পারে। এগুলোকে জরায়ুগত এবং যোনিগত অস্বাভাবিক রক্তপাতের সর্বাধিক দৃষ্ট কারণগুলির অন্যতম হিসাবে গণ্য করা হয়। খুব কমই, পলিপ ক্যান্সারযুক্ত ক্ষতেও রূপান্তরিত হতে পারে।

অ্যাডেনোমায়োসিস
অ্যাডেনোমায়োসিসও হচ্ছে একটা অ-ক্ষতিকারক (অ-ক্যান্সারযুক্ত) টিউমার যাতে জরায়ুর পেশীর স্তরের (মায়োমিট্রিয়াম) মধ্যে এন্ডোমিট্রিয়াম এর ভিতরের একটা ছিদ্রের মাধ্যমে ঠেলে বেড়ে ওঠে। এটা শ্রোণী এলাকায় ব্যথা, অস্বাভাবিক রক্তপাত এবং চূড়ান্ত ক্ষেত্রগুলিতে, বন্ধ্যাত্ব ঘটায়।
চিকিৎসা

ক্ষুদ্র টিউমারগুলি ঔষধের সাহায্যে নিরাময় করা যেতে পারে। যাই হোক, যেগুলো বড় এবং প্রচণ্ড রক্তপাত অথবা ব্যথা সৃষ্টি করে, সেগুলো অস্ত্রোপচারের সাহায্যে বাদ দিতে হবে। কখনও কখনও যখন টিউমারগুলি সংখ্যায় অনেক হয় এবং জরায়ুর দেয়ালের সাথে যুক্ত থাকে, জরায়ুর সম্পূর্ণ অপসারণ জরুরি হতে পারে। এন্ডোমিট্রিয়োসিস চিকিৎসা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটার এন্ডোমিট্রিয়াল ক্যান্সারে পরিণত হওয়ার একটা বেশি ঝুঁকি আছে।

অভিউলেশন-এর গোলমাল এবং যোনিগত রক্তপাত - Ovulation disorders and vaginal bleeding in Bengali
মহিলাদের মধ্যে যাঁদের মাসিকজনিত চক্রগুলি নিয়মিত অভিউলেশন (ডিম মোচন করা) ছাড়া হয় তাঁরাও প্রায়শঃ যোনিগত রক্তপাত অনুভব করতে পারেন। এটা ঘটে কারণ যখন ডিম মোচন করা হয়না, এন্ডোমিট্রিয়াম-এর উপর এস্ট্রোজেনের প্রভাব কমে যায় এবং এটা এন্ডোমিট্রিয়াম-এর পুরুত্ব ঘটায়। এর ফলে, মহিলাটির একটা প্রচণ্ড মাসিকজনিত রক্তপাতের অভিজ্ঞতা হয়। যদি এটা দীর্ঘ সময় স্থায়ী হয়, এটা রক্তাল্পতায় পর্যবসিত হতে পারে।

চিকিৎসা

অভিউলেশন-সম্পর্কিত গোলমালগুলির চিকিৎসার মধ্যে আছে ওজন কমানোর জন্য ব্যায়াম, ইনসুলিন-সংবেদনশীলমূলক ঔষধ যেমন মেটফরমিন, গোনাডোট্রোপিনস-এর সাহায্যে হরমোন চিকিৎসা, এবং যেসমস্ত মহিলা গর্ভধারণ করতে চান তাঁদের ক্ষেত্রে ল্যাপারোস্কোপিক ওভারি বা ডিম্বাশয়গত ছিদ্র করে অভিউলেশন সঙ্ঘটিত করা। তাঁদের জন্য ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশনও (আইভিএফ) একটা ভাল বিকল্প।

ক্যান্সার সম্পর্কিত যোনিগত রক্তপাত - Cancer associated vaginal bleeding in Bengali
মাসিকজনিত রক্তপাতের একটা বিরল কারণ হচ্ছে মহিলা জননতন্ত্রীয় ব্যবস্থায় ক্যান্সারের লক্ষণ প্রকাশ। যোনি, জরায়ু, সার্ভিক্স, ফ্যালোপিয়ান টিউব, অথবা ডিম্বাশয়গুলিতে যেকোন জায়গায় ক্যান্সারের লক্ষণ প্রকাশ পেতে পারে। সর্বাধিক দৃষ্ট জননতন্ত্রীয় নালীর ক্যান্সার যা মহিলাদের ক্ষেত্রে ঘটে হচ্ছে সার্ভিক্যাল ক্যান্সার। এটা হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস দ্বারা ঘটে এবং এশিয়ার মহিলা এবং বিশ্বব্যাপী মহিলাদের ক্ষেত্রে মৃত্যুর প্রধান কারণগুলির অন্যতম হিসাবে গণ্য করা হয়।

চিকিৎসা

ক্যান্সারের চিকিৎসা ক্যান্সারের পর্যায়ের উপর নির্ভর করে। প্রথমিক পর্যায়গুলি শুধুমাত্র কেমোথেরাপির সাহায্যে চিকিৎসা করা যেতে পারে, যাই হোক, পরবর্তী পর্যায়গুলির কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি, এবং অস্ত্রোপচারের একটা সংমিশ্রণ প্রয়োজন।

মেডিক্যাল চিকিৎসার কারণে যোনিগত রক্তপাত - Vaginal bleeding due to medical treatments in Bengali
কিছু মেডিক্যাল চিকিৎসার সাথে সম্পর্কিত যোনিগত রক্তপাতের কারণগুলি আয়াট্রোজেনিক কারণ হিসাবে পরিচিত। এগুলোর কয়েকটি নীচে তালিকাভুক্ত করা হয়েছেঃ

হরমোন থেরাপি ঘটিত যোনিগত রক্তপাত - Hormone therapy induced vaginal bleeding in Bengali
হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপির বিরূপ প্রভাবগুলির উপর একটা সাম্প্রতিক সমীক্ষা নির্দেশ করে যে কিছু মহিলা যাঁরা এই থেরাপি নেন যোনি থেকে অস্বাভাবিক রক্তপাতের অভিজ্ঞতা পেতে পারেন। রজঃনিবৃত্তির (মেনোপজ) পর শরীরে এস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টেরোন-এর মত যৌন হরমোনগুলির মাত্রাগুলি বজায় রাখার জন্য হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি দেওয়া হয়।

চিকিৎসা

সাধারণতঃ, হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপিতে দেওয়া সম্পূরক হরমোনগুলির পরিমিত মাত্রাগুলির পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থাকেনা। সেজন্য, আপনি আপনার স্ত্রীরোগবিশেষজ্ঞের সঙ্গে থেরাপির পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াগুলির বিষয়ে পরামর্শ করতে পারেন। হরমোনগুলির ডোজ কমানো আপনার যোনি থেকে অস্বাভাবিক রক্তপাত বন্ধ করতে পারে।

জন্মনিরোধক বড়ি এবং যোনিগত রক্তপাত - Contraceptive pills and vaginal bleeding in Bengali
জন্মনিরোধক বড়িগুলির ব্যবহারও জরায়ু এবং যোনি থেকে অস্বাভাবিক রক্তপাতের একটা কারণ হিসাবে দেখা গেছে। জন্মনিরোধক বড়িগুলি হল স্টেরয়েড হরমোন যেগুলো জন্ম নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যবহৃত হয়।

চিকিৎসা

স্টেরয়েডগুলি বন্ধ করার আগে, আপনার চিকিৎসক অথবা স্ত্রীরোগবিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করুন। ডাক্তার স্থির করবেন যোনিগত রক্তপাত এবং অন্যান্য পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াগুলি প্রতিরোধ করার জন্য স্টেরয়েড হরমোনগুলি আপনার বন্ধ করা অথবা মাত্রা কমানোর দরকার আছে কিনা।

অবসাদ-প্রতিরোধী ঔষধ এবং যোনিগত রক্তপাত - Antidepressants and vaginal bleeding in Bengali
একটা সমীক্ষা, “দ্য রিস্ক অব ভ্যাজাইনাল অ্যান্ড পোস্টপার্টাম ব্লিডিং আফটার দা ইউজ অব অ্যান্টিডিপ্রেস্যান্টস ডিউরিং প্রেগন্যান্সি”, নির্দেশ করেছিল যে গর্ভাবস্থার গোড়ার দিকে এইসমস্ত ঔষধগুলি যোনিগত রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়ায়। সেজন্য, গর্ভাবস্থায় শুধুমাত্র একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করার পরে এইসমস্ত ঔষধগুলি নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

চিকিৎসা

এইসমস্ত ঔষধগুলির প্রভাবগুলি একবার সেগুলো বন্ধ করা হলে ধীরে ধীরে কমে আসে। যাই হোক, আপনি নিজের থেকে ঔষধগুলি বন্ধ করার আগে আপনার উচিত আপনার থেরাপিস্ট-এর সাথে সর্বদা পরামর্শ করা কারণ এটা আপনার অবস্থার পুনরবনতি ঘটাতে পারে।

পিণ্ড গলানোর ঔষধগুলির কারণে যোনিগত রক্তপাত - Vaginal bleeding due to clot dissolving medicines in Bengali
“অ্যাবনর্মাল ইউটেরাইন ব্লিডিং ইন উয়োমেন রিসিভিং ডাইরেক্ট ওরাল অ্যান্টিকোয়াগুল্যান্টস ফর দা ট্রিটমেন্ট অব ভিনাস থ্রম্বোএম্বোলিজম” নামে একটা সাম্প্রতিক সমীক্ষা অনুসারে, মহিলাদের মধ্যে যাঁরা পিণ্ড ভাঙার ঔষধ নেন, তাঁদের মধ্যে অস্বাভাবিক যোনিগত এবং জরায়ুগত রক্তপাত একটা পরিচিত উপসর্গ।

চিকিৎসা

আপনার চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করুন এবং যোনিগত রক্তপাতের উপসর্গগুলি, স্থিতিকাল এবং পরিমাণ যা আপনি অনুভব করেন সেসম্বন্ধে জানান। আপনি নিজের থেকে ঔষধগুলি বন্ধ করবেন না কারণ এটা কোনও পিণ্ড গঠন অথবা ধমনীগুলির অবরোধ ঘটাতে পারে, যা জীবন-ঘাতীও হতে পারে।

আইইউডিগুলির কারণে যোনিগত রক্তপাত - Vaginal bleeding due to IUDs in Bengali
কিছু মহিলা যাঁরা একটা জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি হিসাবে কোনও জরায়ুমধ্যস্থ যন্ত্র বেছে নেন, তাঁরা জরায়ুর মধ্যে যন্ত্র স্থাপনের গোড়ার দিনগুলিতে যোনিগত রক্তপাত অনুভব করতে পারেন। এটা ঘটে কারণ শরীর নিরাময় হতে এবং জরায়ুর সাথে যন্ত্রটা যুক্ত করতে কিছুটা সময় নেয়। সম্পূর্ণ নিরাময়ের পর, রক্তপাত বন্ধ হয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে, যন্ত্র স্থাপন ব্যর্থ হতে পারে এবং মহিলারা কোনও সংক্রমণ পেতে পারেন। এটা জরায়ু এবং যোনি থেকে অনবরত রক্তপাত ঘটায়।

চিকিৎসা

হালকা রক্তপাত বড় কোনও উদ্বেগের বিষয় নয় এবং সাধারণতঃ চিকিৎসার দরকার হয়না। যাই হোক, যদি আপনার রক্তপাত বন্ধ না হয়, সেপসিস (টিস্যুগুলিতে সংক্রমণ এবং বিষাক্ত পদার্থ জমা) রোধ করার জন্য অবিলম্বে চিকিৎসা প্রয়োজন। কোনও সংক্রামিত আইইউডি অপসারণ করা এবং সেই সাথে সংক্রমণ চিকিৎসা করার জন্য অ্যান্টিবায়োটিক এবং প্রদাহ-প্রতিরোধী ঔষধ প্রয়োগ দরকার।

যোনিগত রক্তপাতের পদ্ধতিগত কারণগুলি - Systemic causes of vaginal bleeding in Bengali
কতগুলি চিকিৎসাগত কারণ আছে যা কোনও মহিলাকে অস্বাভাবিক যোনিগত রক্তপাতের প্রতি প্রবণ করে তোলে। এগুলোর কয়েকটি নীচে তালিকাভুক্ত করা হলঃ

রক্তপাতের গোলমাল এবং যোনিগত রক্তপাত - Bleeding disorders and vaginal bleeding in Bengali
“অ্যাবনর্মাল ইউটেরাইন ব্লিডিং ইনক্লুডিং কোয়াগুলোপ্যাথিজ অ্যান্ড আদার মেন্সট্রুয়াল ডিজঅর্ডার্স”-এর বিষয়ে একটা সাম্প্রতিক নিবন্ধ নির্দেশ করে যে মহিলারা যাঁদের রক্তপাত অথবা রক্ত জমাট বাঁধার গোলমাল আছে তাঁদের যোনিগত বা জরায়ুগত রক্তপাত কখনও কখনও হতে পারে। এই গোলমালগুলি রক্তের সময়মত পিণ্ড গঠন করার ক্ষমতায় এবং রক্তপাত স্বাভাবিকভাবে বন্ধ করায় একটা হ্রাস ঘটায়। সেজন্য, এমনকি একটা ক্ষুদ্র ক্ষতও রক্ত জমাট বাঁধায় দেরি করে এবং ক্ষতস্থান থেকে দীর্ঘকালীন রক্তপাত ঘটায়।

চিকিৎসা

রক্তপাতের গোলমাল একজন চিকিৎসককে অবিলম্বে জানানো উচিত। এগুলো সাধারণতঃ ঘটে শরীরে জমাট বাঁধার উপাদানগুলির অভাবের কারণে। চিকিৎসায় সামিল হতে পারে উপাদান বিদ্যমান থাকা ফ্রেশ ফ্রোজেন প্লাজমার মাধ্যমে জমাট বাঁধার উপকরণগুলির সম্পূরক, অথবা রক্ত সঞ্চালনের (ব্লাড ট্রান্সফিউশন) সাহায্যে।

থাইরয়েড সমস্যার কারণে যোনিগত রক্তপাত - Vaginal bleeding due to thyroid problems in Bengali
“রোল অব থাইরয়েড ইন পেশেন্টস উইথ মেন্সট্রুয়াল ডিজঅর্ডার্স ইন টার্শিয়ারি কেয়ার সেন্টার অব দা ওয়ালড সিটি অব ডেলহি” বিষয়ে একটা সাম্প্রতিক সমীক্ষা নির্দেশ করেছিল যে যেসমস্ত মহিলাদের থাইরয়েড সমস্যা আছে, বিশেষতঃ তাঁরা যাঁদের হ্রাসপ্রাপ্ত থাইরয়েড উৎপাদন আছে তাঁদের মাসিকজনিত সমস্যাগুলি দেখা গেছে। কারো কারোর ক্ষেত্রে যোনিগত অথবা জরায়ুগত রক্তপাতও একটা উপসর্গ হিসাবে বিদ্যমান থাকতে পারে।

চিকিৎসা

হাইপোথাইরয়েডিজম সাধারণতঃ ঔষধ দ্বারা নিরাময় করা হয় যা থাইরয়েড গ্রন্থির কাজকর্ম উন্নত করতে অথবা শরীরে কম থাইরয়েড হরমোনগুলি আবার পূর্ণ করতে সাহায্য করে।

লিভার সিরোসিস-এর কারণে যোনিগত রক্তপাত - Vaginal bleeding due to liver cirrhosis in Bengali
একটা সমীক্ষা, “দ্য ডায়াগনোসিস অ্যান্ড ট্রিটমেন্ট অব অ্যাবনর্মাল ইউটেরাইন ব্লিডিং ইন ননপ্রেগন্যান্ট পেশেন্টস উইথ হেপাটিক সিরোসিস”, বলে যে যেসমস্ত মহিলাদের লিভার সিরোসিস থাকে তাঁদের ক্ষেত্রে জরায়ুগত অস্বাভাবিক রক্তপাত বিদ্যমান থাকে। এটা মাসিকজনিত চক্রগুলির সময়ে অত্যধিক রক্তপাত হিসাবে সাধারণতঃ অনুভূত হয়। এটা ঘটে কারণ লিভার হল রক্ত জমাট বাঁধার জন্য দায়ী উপাদানগুলি উৎপাদনের একটা অতীব গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। সিরোসিস-এর ক্ষেত্রে, সেগুলোর উৎপাদন, কার্যকর ক্রিয়াকলাপ এবং লভ্যতা বিপর্যস্ত হয়ে যায়।

চিকিৎসা

সিরোসিস-এর চিকিৎসার মধ্যে সামিল থাকে কারণস্বরূপ উপাদান যা লিভার নষ্ট করছে। এর মধ্যে থাকতে পারে অ্যান্টিভাইরাল বা অ্যান্টিবায়োটিক, প্রদাহ-প্রতিরোধী ঔষধ, মদ্যপান কমানো, এবং কখনও কখনও অস্ত্রোপচার।

বিভিন্ন বয়সের মহিলাদের ক্ষেত্রে যোনিগত রক্তপাত - Vaginal bleeding in women of different ages in Bengali
অ-গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে
প্রজননক্ষম বয়সে থাকা অ-গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে অস্বাভাবিক রক্তপাতের কারণগুলি এবং সেই সাথে চিকিৎসা উপরে উল্লেখ করা হয়েছে।

গর্ভাবস্থায়
গর্ভাবস্থার বিভিন্ন পর্যায়ে অস্বাভাবিক রক্তপাতের সম্ভাব্য কারণগুলি উপরে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

নবজাত এবং বয়ঃসন্ধিকালের মেয়েদের ক্ষেত্রে
নবজাত শিশুদের ক্ষেত্রে, মায়ের উচ্চ এস্ট্রোজেন মাত্রাগুলির দ্বারা উত্তেজিত হওয়া থেকে এন্ডোমিট্রিয়াম নিজে থেকে চলে যায়। যার ফলে, এগুলো কিছু সময় ধরে যোনি থেকে অস্বাভাবিক রক্তপাত করাতে পারে। একটু বড় শিশুদের ক্ষেত্রে, হরমোনগত অসাম্যের কারণে এবং অকালে বা সময়ের আগে বয়ঃসন্ধিকালের কারণে যোনিগত রক্তপাত ঘটে।

রজঃনিবৃত্তির পরবর্তীকালের মহিলাদের ক্ষেত্রে
রজঃনিবৃত্তির পরবর্তীকালের মহিলাদের ক্ষেত্রে অস্বাভাবিক জরায়ুগত অথবা যোনিগত রক্তপাতের কারণগুলি হল হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি, টিউমার, পলিপ, মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ঔষধ, ক্যান্সার, ইত্যাদি। এই সবগুলোই বিশদে উপরে উল্লেখ করা হয়েছে।


শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে