Call

চার রাকাত ফরজ নামাজের প্রতি রাকাতে সুরা ফাতিহার সাথে অন্য সুরা পরতে হবে না।

ফরজ নামাজের ৩য়, ৪র্থ রাকাতে সুরা ফাতেহার সঙ্গে অন্য সুরা মেলানো সুন্নত পরিপন্থী। সুন্নাত হলো, শেষের দুই রাকাতে শুধু সুরা ফাতেহা পড়া।

আবু কতাদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) জোহর এবং আসরের নামাজের প্রথম দুই রাকাতে সুরা ফাতেহা ও আরেকটি সুরা পড়তেন। আর শেষ দুই রাকাতে শুধু সুরা ফাতেহা পড়তেন।

(সহীহ বুখারি, হাদিস নং: ৭৫৯; মুসলিম, হাদিস নং: ৪৫১; তবে মুসলিম শরিফের ৪৫২ নং হাদিসে রাসুল (সা.) থেকে ভিন্ন আমলের প্রমাণ পাওয়া যায়।)

আবু সাঈদ খুদরি (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সাঃ) জোহরের প্রথম দুই রাকাতের প্রত্যেক রাকাতে ৩০ আয়াত করে পড়তেন। আর শেষের দুই আয়াতে ১৫ আয়াত করে পড়তেন। আর আসরের প্রথম দুই রাকাতের প্রত্যেক রাকাতে ১৫ আয়াত করে এবং শেষের দুই রাকাতের প্রত্যেক রাকাতে তার অর্ধেক পড়তেন।

এই হাদিসে ভিন্ন আমলের প্রমাণ পাওয়া গেলেও চার মাজহাবের ওলামায়ে কেরাম আবু কতাদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদিসের ওপর আমল করেছেন কয়েকটি কারণেঃ-

এক. মুসলিম শরিফে বর্ণিত আবু সাঈদ খুদরীর হাদিসের তুলনায় আবু কতাদার হাদিসটি বেশি বিশুদ্ধ। আবু কাতাদার হাদিসটি বুখারি ও মুসলিম উভয়েই বর্ণনা করেছেন। অন্যদিকে আবু সাঈদ খুদরীর হাদিসটি শুধু ইমাম মুসলিম (রহঃ) বর্ণনা করেছেন।

দুই. আবু কতাদার হাদিসটি বহু সাহাবা-তাবেয়িদের আমলের সঙ্গে মিলে। যেমন, উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ), আলী (রাঃ), আবদুল্লাহ ইবনে মাউসদ (রাঃ), জাবের (রাঃ), আবু দারদা (রাঃ) ও হজরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্নিত হয়েছে যে, তারা আবু কতাদার হাদিসের ভাষ্যমতে ফরজ নামাজের প্রথম দুই রাকাতে সুরা ফাতেহার সঙ্গে অন্য সুরাও মিলাতেন, আর শেষের দুই রাকাতে শুধু ফাতেহা পড়তেন।

ইবনে সিরিন (রহঃ) এর বক্তব্যের মাধ্যমে বোঝা যায় যে, সাহাবায়ে কেরামের মাঝে বিষয়টির ওপর ইজমা হয়ে গেছে যে, ফরজ নামাজের শেষের দুই রাকাতে শুধু ফাতেহা পড়বে। অন্য সুরা মিলাবে না।

ইবনে সিরিন (রহঃ) বলেন, আমি সাহাবাদের সম্পর্কে জানি না যে, তারা ফরজ নামাজের প্রথম দুই রাকাতে সুরা ফাতেহা ও অন্য সুরা আর শেষ দুই রাকাতে শুধু সুরা ফাতেহা পড়ার ব্যাপারে কখনো মতবিরোধ করেছেন। (আল মুগনি: ২/২৮১)।

হজরত উমর (রাঃ) বিখ্যাত তাবেয়ি শুরাইহ ইবনে হানি (রহঃ) এর কাছে লিখেন যে, প্রথম দুই রাকাতে সুরা ফাতেহা ও অন্য সুরা মিলাও আর পরের দুই রাকাতে শুধু সুরা ফাতেহা পড়। (আল-মুজামুল আওয়াসত: ৩/২৬৮)।

অন্যদিকে মুজাহিদ (রহঃ), ইবনে সিরিন ও হাসান বসরি (রহঃ) প্রমুখ তাবেয়িগণের আমলও আবু কতাদা (রাঃ) এর বর্ণিত হাদিসের সঙ্গে মিলে। এ বিষয়ে মু্সান্নাফে ইবনে আবি শাইবায় দুইটি বর্ণনা রয়েছে।

আবু কতাদা তার বাবা থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুল (সাঃ) ফরজ নামাজের প্রথম দুই রাকাতে সুরা ফাতেহা ও অন্য সুরা পড়তেন। আর শেষের দুই রাকাতে শুধু সুরা ফাতেহা পড়তেন। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা: ৩/২৬৫; হাদিস নং: ৩৭৬২)।

ইবনে সিরিন (রহঃ) বলেন, আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. জোহর ও আসরের প্রথম দুই রাকাতে সুরা ফাতেহা ও কোরআন থেকে যতটুকু সহজ হয় পড়তেন। আর পরের দুই রাকাতে শুধু সুরা ফাতেহা পড়তেন। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা ৩/২৬১, হাদিস নং: ৩৭৪৩)।

অতএব ফরজ নামাজের শেষ দুই রাকাতে কেবল সুরা ফাতেহাই পড়বে। ইচ্ছাকৃত অন্য সুরা পড়বে না। তবে মিলিয়ে ফেললে সাহু সেজদা ওয়াজিব হবে না। (আলবাহরুর রায়েক ১/৩২৬; শরহুল মুনইয়াহ ৩৩১; রদ্দুল মুহতার ১/৪৫৯)।


ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ