একটি দেশের যুব সমাজই হচ্ছে মূল শক্তি। দেশ গঠন, সমৃদ্ধি ও উন্নয়নের দিকে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া, দেশের অভ্যন্তরে যেকোন সামাজিক, রাজনৈতিক এমনকি প্রাকৃতিক সংকট ও দুর্যোগে যুব সমাজই সর্বাগ্রে এগিয়ে আসে। যুব সমাজের যেকোন দায়িত্ব মাথা পেতে নেওয়ার দুর্নিবার আকর্ষণ ও অজেয়কে জয় করার গতি অপ্রতিরোধ্য। যুব সমাজ তাদের আন্তরিকতা ও দৃঢ় আস্থার মাধ্যমে যে কোন সমস্যা মোকাবেলা করে সফলতা নিয়ে আসতে পারে। এদেশের প্রত্যেকটি ঐতিহাসিক পটপরিবর্তনে এদেশের যুব সমাজের সাহসী উজ্জ্বল অংশগ্রহণ জাতীয় ইতিহাসের এক একটি স্বর্ণোজ্জ্বল অধ্যায়। যোগাযোগ ব্যবস্থায় মোবাইল ফোন বর্তমান সময়ের জন্য অত্যন্ত জরুরি ও প্রয়োজনীয় একটি পণ্য। কিন্তু সঠিক কোন দিক নির্দেশনা, নিয়মাবলী এবং শ্রেণী, পেশা ও বয়সের ক্ষেত্রে ব্যবহারের কোন সীমাবদ্ধতা না থাকায় সবাই পণ্যটি ব্যবহার করার অপার স্বাধীনতা ভোগ করছে। ফলে পণ্যটি আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে উপকারিতার চেয়ে অপকারিতা বয়ে আনছে বেশি। বিশেষ করে যুব সমাজের ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে সবচেয়ে বেশি। এর জন্য এককভাবে কেউ দায়ী নয়। মোবাইল সেট প্রস্তুতকারী, সেট আমদানীকারক, বিভিন্ন মোবাইল অপারেটর, সরকার, অভিভাবক, সমাজ সচেতন ব্যক্তি কেউ এর দায় এড়াতে পারবেন না। প্রত্যেকের অবহেলা ও উদাসীনতায় যুব সমাজে এই পণ্যটি কুপ্রভাব বিস্তার করার জন্য দায়ী। সুতরাং আমরা মনে করি, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার আগেই সবার সম্মিলিত উদ্যোগই পারে যুব সমাজকে ভয়াবহ ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে। এ কথা সত্য যে, প্রযুক্তি বিশ্বকে এনে দিয়েছে হাতের মুঠোয়। বহুল ব্যবহৃত পণ্য মোবাইল ফোন হয়ে উঠেছে তাদের সব ধরনের অপকর্মের নির্ভরযোগ্য মাধ্যম। মোবাইল ফোনের কল্যাণে ঘরে বসেই মাদক প্রাপ্তি, গ্রহণ ও বিস্তার সহজ হয়ে উঠেছে। একটি ফোন কলই সব ধরনের মাদক নিমিষে ঘরে পৌঁছে যায়। অন্যদিকে মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট সংযুক্তি ও ব্যবহার অবাধ এবং নীতিহীনতার দিকে নিমজ্জিত হচ্ছে। ইন্টারনেটে বিভিন্ন ধরনের অশ্লীল ছবি দেখা সহজ হওয়ায় ইভটিজিং, ধর্ষণ ও গণধর্ষণের মত ঘটনায় জড়িয়ে পড়ছে যুব সমাজ। সুতরাং মোবাইল ফোন অপারেটর সেট প্রস্তুতকারী ও আমদানীকারকদের মোবাইল ফোনে অপ্রয়োজনীয় সুযোগ প্রদানে সরকারের কঠোর নজরদারী জরুরি হয়ে পড়েছে বলে আমরা মনে করি। অন্যদিকে মোবাইল সেটে ভয়েস ও ভিডিও রেকর্ডের সুবিধা থাকায় এটিকে বিভিন্ন অনৈতিক কাজও হীন উদ্দেশ্যে ব্যবহার করার সুযোগ পেয়ে যাচ্ছে এক শ্রেণীর অসৎ ও কুচক্রী মহল। নারীকে বিভিন্নভাবে প্রলুব্ধ করে প্রেমের ফাঁদে ফেলে বাধ্য করছে অনৈতিক কাজে লিপ্ত হতে, আবার এই সব কর্মের ভিডিও চিত্র ধারণ করে ব্ল্যাকমেলের মাধ্যমে বিপন্ন করে তুলছে তাদের জীবন। এ থেকে স্কুল ছাত্রী, গৃহবধূ, সেলিব্রেটি পার্সন কেউ রেহাই পাচ্ছে না। ইতিমধ্যে এই ধরনের প্রতারণার স্বীকার হয়ে অনেকে আত্মাহুতি দেওয়ার মত নির্মম সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছেন, অনেক নারীর ঘর ভেঙ্গেছে, অনেকে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হয়েছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে একই ব্যক্তির একাধিক অপারেটরের সিম ব্যবহার করা এবং শ্রেণী, পেশা, বয়সের ক্ষেত্রে এ পণ্যটি ব্যবহারে কঠোর দিক নির্দেশনা ও নিষেধাজ্ঞা জারী করা উচিত বলে আমরা বিশ্বাস করি। সরকারের উচিত সংশ্লিষ্ট সব মহলের সঙ্গে পরামর্শ করে প্রযুক্তির অবাধ ব্যবহার প্রতিরোধী সঠিক ও কার্যকর নীতিমালা দ্রুত তৈরি করা। তা না হলে যুব সমাজকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে।