ইসলামে পুরুষের বহু বিবাহের ফলে ইসলামি নারিদের কী লাভ?
শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে

নাস্তিকভাইদের ইসলাম বিরোধীতার কারণ সমূহের অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে, ইসলাম পুরুষদেরকে কেন চারটি বিয়ের অনুমতি দিলো? তারা বিষয়টিকে এমনভাবে প্রচার করেন যে, ইসলাম পুরষদেরকে চারটি বিয়ে করতে বলেছে। নারীদেরকে যথেচ্ছ ব্যবহারের সুযোগ করে দিয়েছে। যার যখন মন চাইবে সে তখন বিয়ে করতে পারবে। ইত্যাদি ইত্যাদি বক্তব্যের মাধ্যমে তারা ইসলাম স্বীকৃত বহু বিবাহের বিষয়টিকে এতোটাই বিকৃত করে উপস্থাপন করেন যে, এক সময় তাদের বক্তব্যের মধ্যে থেকে ‘বিয়ে’ শব্দটি গৌন হয়ে যায় এবং বক্তব্যের মূল ভাব এটাই বুঝাতে থাকে যে, ইসলাম পুরুষদেরকে যেন যথেচ্ছ এবং যে কোন উপায়ে যত খুশি নারী ভোগের সুযোগ করে দিয়েছে। আসলে বিষয়টি এর থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। বিশাল ও বিস্তৃত একটি প্রেক্ষাপটের মাঝখানের একটি অংশ ‘'চারটি বিবাহ'কে আগে-পরের সম্পূর্ণ প্রেক্ষাপট থেকে বিচ্ছিন্ন করে যেভাবে উপস্থাপন করা হয়, তাতে কেবল মাত্র সীমাহীন অস্পষ্টতার মধ্য দিয়ে ইসলামের উপর আক্রোশ আর ক্রোধ উদ্গীরণই তাদের সাফল্য বলে বিবেচিত হয়, সত্য উদ্ঘাটন বা বাস্তবতার নিরীখে একটি অতি প্রয়োজনীয় বিষয়কে বিশ্লেষণের সুযোগ থাকে না। এ ক্ষেত্রে অনেক গুলো অস্পষ্ট বিষয়ের মধ্যে অন্যতম কয়েকটি যথাক্রমে: ইসলাম আসলে পুরুষদের অসংখ্য বিয়ের সুযোগ রহিত করে দিয়েছে। ইসলাম বিবাহ বিমুখ সমাজে এসে লোকদেরকে পাইকারী হারে চারটি করে বিয়ের নির্দেশ দেয় নি, (যেমনটি নাস্তিকরা সাধারণ লোকদেরকে বুঝিয়ে থাকেন) বরং নারীদের যথেচ্ছ ব্যবহারে উন্মুখ সমাজে পুরুষদের শতাধিক বিয়ের ক্ষমতাকে রহিত করে দিয়ে তাকে সর্বোচ্চ চারটির মধ্যে স্থির করে দিয়েছে। ইসলাম পূর্ব আরব সমাজে নারীদেরকে যথেচ্ছ ব্যবহার করা হতো। এক একজন ব্যক্তির স্ত্রীদের কোন সীমা রেখা ছিলো না। অনেকের স্ত্রীদের সংখ্যা ছিলো ১০০ (একশত) এরও বেশি। ১০/১৫ টি তো সাধারণ বিষয় ছিলো। লাগাম ছাড়া এমন শতাধিক ও সহস্রাধিক বিবাহ বা নারী সম্ভোগ হিন্দু ধর্মের দেবতাদের মধ্যেও দেখা যায়। শ্রীকৃষ্ণের জীবন বৃতান্তে বলা হয়েছে, ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ১৬,১০৮ জন রাজকুমারীর সাথে যৌনক্রিয়া করেছিলেন। মহাভারতের স্বর্গারোহণ পর্বে বলা আছে, কৃষ্ণের পিতা-বাসুদেব ১৬,০০০ নারীকে বিয়ে করেছিলেন। কৃতিবাসী রামায়ন, আদিকান্ডের ৬৪৬ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে, ভগবান রাম পিতা মহারাজ দশরথের ৭৫০ বহুবিবাহ করেছিলেন। একই বইয়ের ৬৪৫ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে ঋৃষিরাজ কশ্যাপ বিয়ে করেছিলেন ২৭ টি। ( কৃতজ্ঞতা স্বীকার, গুরুদেবজী, এ বিষয়ে বিস্তারিত : Click This Link ) বর্তমানেও পাশ্চাত্য সভ্যতা বিবাহের পরিবর্তে যিনা- ব্যভিচারকে উন্মুক্ত করে দেয়ার ফলে আজ সেখানে এক একজন পুরুষ তার জীবনে কত হাজার মহিলার সাথে যে যৌন ক্রিয়া করে, তা সে নিজেও বলতে পারবে না। নারীরা অনেক সময় তাদের সন্তানদের পিতাকেও চিহ্নিত করতে পারেন না। যার কারণে সেখানে সন্তানের পরিচয় মায়ের পরিচয় দিয়ে দেয়াই উত্তম। পাশ্চাত্যের যৌন স্বাধীনতার সংস্কৃতি তাদের পছন্দ তাদের সবাইও সেই একই নীতিতে হাজার হাজার নারীর সাথে মিলিত হন। আমাদের দেশেও এমন হাজার হাজার পুরুষ পাওয়া যাবে, যারা বিবাহ করতে ভয় পান কিংবা একটি বিয়ে করেছেন তবে রাত কাটান হাজার জনের সাথে। নারীদের জন্য বিভীষিকাময় এমনি এক চরম মুহূর্তে ইসলাম এসে বিকৃত রুচির পুরুষদের শতাধিক বিয়ের খায়েশকে সর্বোচ্চ ৪ টির মধ্যে সীমাবদ্ধ করে দিয়েছে। ইসলাম গ্রহণের পর অনেক সাহাবীই রাসূলের নির্দেশে ৪ টি স্ত্রী রেখে বাকিদেরকে তালাক দিয়ে দেন। এভাবে ইসলাম চারটির অধিক স্ত্রী রাখা চিরকালের জন্য হারাম সাব্যস্ত করে। -এখন আপনি আপনার বিবেকের কাছেই প্রশ্ন করুন, ইসলাম শতাধিক বিয়েকে অনধিক চারটির মধ্যে স্থির করে দিয়ে মানবিক কাজ করেছে না অমানবিক কাজ করেছে? ইসলাম পুরুষদেরকে যথেচ্ছ বিবাহের কোন সুযোগ দেয় নি। (এক সময়ে চারটির অধিক স্ত্রী রাখা সম্পূর্ণ হারাম।) আর ইসলাম পুরুষদেরকে একাধিক তথা চারটি বিয়ের ‘নির্দেশ’ দেয়নি, বরং প্রয়োজনীয় শর্ত সাপেক্ষে ‘অনুমতি’ দিয়েছে। যদি শর্ত পূরণ করা না যায় তাহলে একটির অধিক বিবাহ করাকেও হারাম বলেছে। ইরশাদ হয়েছে, ﻓَﺎﻧﻜِﺤُﻮﺍ ﻣَﺎ ﻃَﺎﺏَ ﻟَﻜُﻢ ﻣِّﻦَ ﺍﻟﻨِّﺴَﺎﺀِ ﻣَﺜْﻨَﻰٰ ﻭَﺛُﻠَﺎﺙَ ﻭَﺭُﺑَﺎﻉَ ۖ ﻓَﺈِﻥْ ﺧِﻔْﺘُﻢْ ﺃَﻟَّﺎ ﺗَﻌْﺪِﻟُﻮﺍ ﻓَﻮَﺍﺣِﺪَﺓً অর্থ: "তোমরা বিয়ে কর নারীদের মধ্যে যাকে তোমাদের ভাল লাগে; দু’টি, তিনটি অথবা চারটি। আর যদি ভয় কর যে, তোমরা সমান আচরণ করতে পারবে না, তবে একটি।" (সূরা নিসা, আয়াত ৩) এই আয়াতে একের অধিক বিয়ে করার আগে সমতার শর্ত দেয়া হয়েছে। একাধিক স্ত্রীর সবার মাঝে সমতা ও সমান অধিকার বিধান করা ফরজ করেছে। যদি সকলের হক যথাযথভাবে আদায় করার ক্ষেত্রে সামান্যতমও সংশয় থাকে তাহলে একের অধিক বিয়েকে ‘হারাম’ ঘোষণা করেছে। এখন প্রশ্ন হলো তাহলে ইসলাম পুরুষদেরকে চারটি বিয়েরই বা অনুমতি দিলো কেন? এটা জানতে হলে আগে আমাদের জানতে হবে বিয়ে কি এবং বিয়ের অনুমতি দেয়া হয়েছে কেন? বিয়ে কি এবং যিনা-ব্যভিচারের পরিবর্তে ইসলাম বিয়ের অনুমতি কেন দিয়েছে সেটি গত পর্ব গুলোতে আলোচনা করা হয়েছে। সংক্ষেপে নারী- পুরুষের প্রাকৃতিক চাহিদা পূরণের জন্যই বিবাহের অনুমতি দেয়া হয়েছে। আর শারিরিক চাহিদা ও আর্থিক সক্ষমতার উপর ভিত্তি করেই মূলত: ইসলাম বিয়ে করা, না করার অনুমতি দিয়েছে। এখন যেই ব্যক্তির শারিরিক ও আর্থিক সক্ষমতা আছে তাকে একটি বিবাহ করতে বলা হয়েছে তার প্রয়োজন পূরণের জন্য। পৃথিবীর সকল মানুষের চাহিদা এক রকম নয়। কারো কম কারো বেশি। এখন কারো যদি শারিরিক সক্ষমতা বা চাহিদা বেশি থাকে এবং একজন স্ত্রীর অধিক প্রয়োজন হয় তাহলে ইসলাম তার মানবিক দিক বিবেচনা করেই একাধিক স্ত্রীর মধ্যে সমতা বিধান করা ও তাদের হক পূর্ণ রূপে আদায় করার শর্তে প্রয়োজন অনুপাতে সর্বোচ্চ চারটি পর্যন্ত বিয়ে করার অনুমতি দিয়েছে। যদি ইসলাম এই অনুমতি না দিতো তাহলো তখন আপনারাই বলতেন যে, "দেখো ইসলাম কত অমানবিক! লোকটির অঢেল সম্পদ আছে সে ইচ্ছা করলে প্রতিদিন অনেক মেয়ের পেছনে টাকা উড়াতে পারে, কিন্তু ইসলাম তাকে একটির অধিক বিয়ের অনুমতি দেয় নি। এখন সে বাধ্য হয়েই ব্যভিচার করছে! এটা তো গেলো পুরুষের ক্ষেত্রে। মহিলার ক্ষেত্রেও এটি কল্যাণকর কেননা, বহু বিবাহের ক্ষেত্রে অনেক সময়ই দেখা যায় যে তালাকপ্রাপ্তা মহিলারাই দ্বিতীয়, তৃতীয় স্ত্রী হিসেবে কারো সাথে বিবাহে বসেন। কারণ সাধারণত: কুমারী মেয়েদেরকে সতীনের ঘরে দেয়া হয় না। এখন যদি বহু বিবাহের সুযোগ না থাকে তাহলে একজন কুমার ছেলে বিধবা বা তালাকপ্রাপ্তা মহিলাকে বিবাহ করা খুবই দূরুহ ব্যাপার। ফলে সেই মহিলা আজীবন একটি অনিশ্চিত ও কষ্টকর জীবন যাপনে বাধ্য হতো। ইসলাম তাদের কল্যাণের জন্যই শর্ত সাপেক্ষে পুরুষদের বহু বিবাহের অনুমতি দিয়েছে। আর এর ফলে সেই মহিলারও মৃত্যু পর্যন্ত নিশ্চিত সম্মানজনক জীবন-যাপনের সুযোগ হলো। অবিশ্বাসী ও সুযোগ সন্ধানীদের ফাও স্বার্থ লোটার পথ বন্ধ হলো। অর্থাৎ উপরোল্লেখিত সামগ্রিক আলোচনার দ্বারা দেখা গেলো, একজন নারীর জন্য বিয়ের মাধ্যমে নিজ চাহিদা পূরণ করাই হলো সবচেয়ে উপকারী ও লাভজনক। পক্ষান্তরে পুরুষদের জন্য বিবাহ হচ্ছে সামান্য আনন্দের বিনিময়ে বিশাল দায়িত্ব ও কর্তব্য কাধে নেয়া। আর যেহেতু প্রাকৃতিক চাহিদা পূরণের জন্যই বিবাহের অনুমতি দেয়া হয়েছে, তাই যদি কারো চাহিদা বেশি হয় এবং আর্থিক সক্ষমতাও থাকে তাহলে তার জন্য ইসলাম মানবিক দৃষ্টিকোন থেকে এবং তাকে গুনাহ মুক্ত রাখার জন্য শর্ত সাপেক্ষে একাধিক সর্বোচ্চ চারটি পর্যন্ত বিয়ের অনুমতি দিয়েছে এবং এর মাধ্যমে সমাজের পরিত্যাক্ত নারীদের সম্মানজনক জীবন নিশ্চিত করেছে। সুতরাং বহু বিবাহের অনুমতি যে কতটা মানবিক আর কল্যাণকর তা আর বিস্তারিত বলার অপেক্ষা রাখে না। এবার আসুন ভিন্ন মতাবলম্বী ও নাস্তিকদের আক্রোশ আর ক্ষোভের আসল কারণটি আমরা একটু ভেবে দেখি: নারী-পুরুষের শারীরিক ও জৈবিক চাহিদা পুরণের জন্য বিবাহ হচ্ছে ধর্ম ও সমাজ স্বীকৃত বৈধ পন্থা। পক্ষান্তরে জিনা-ব্যভিচারের মাধ্যমে নারী- পুরুষের জৈবিক চাহিদা পুরণ হলেও সেটি ধর্ম ও সমাজ স্বীকৃত নয় বরং তা অবৈধ। বর্তমান পাশ্চাত্য সমাজ এবং অনেক বিকৃত রুচির লোকদের কাছে জিনা-ব্যভিচার বৈধ হলেও কোন ধর্মই একে বৈধতা দেয় নি। ভিন্ন মতাবলম্বী ও নাস্তিকদের জন্য সবচেয়ে কষ্টকর বিষয় হচ্ছে: জিনা-ব্যভিচার নিষিদ্ধ করন ও বিবাহের বিধান চালু করণের ইসলামী নির্দেশ। কেননা এর ফলে নারীদেরকে যথেচ্ছ ভোগের সুযোগ তাদের হাতছাড়া হয়ে গেছে। বহু-বিবাহের অনুমতি দিয়ে ইসলাম নারীদের উপর জুলুম করেছে অভিযোগ তুলে তারা আসলে নারীদেরকে ফাও ভোগের ব্যবস্থা করতে চায়। এর দ্বারা তারা তাদের আক্রোশ প্রশমনের কিঞ্চিৎ চেষ্টা করে থাকে http://www.somewhereinblog.net/blog/funhappy/29380438 । যা কখনো হবার নয

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ