ইসলামি শরিয়তে মানুষের মৃত্যুর পর কোন অঙ্গ দান করা জায়েজ নেই ।এ বিষয়ে আলেমগণ অনেক যুক্তি দিয়েছেন ।তাদের সারাংশ এটা, যেহেতু মানব শরিরের প্রতিটি অঙ্গের মালিক আল্লাহ্ ।যিনি তৈরি করেন তিনি মালিক হবেন ।যেহেতু মানুষের দেহ মানুষ নিজে তৈরি করে নি।তাই যে জিনিসের মালিক মানুষ আজ পর্যন্ত হতে পারেনি, সেটা কিভাবে দান করবে? তাছাড়া কবরে তিন প্রশ্নের একটি হবে নবিকে চিনতে পারছেন কিনা?চোখ দান করলে নবিকে দেখবেন কিভাবে?
ইসলামে মরোনত্তর অঙ্গ দান হারাম। কিডনির মালিক বা কোন
অঙ্গের মালিক আপনি নন!!!!
কিডনি, চোখ ইত্যাদি অঙ্গের মালিক
আল্লাহরব্বুল আলামিন।
সুতরাং যে
জিনিসের মালিক আমরা না তাই দান বা বিক্রি
করার অধিকার আমাদের নেই।
কেউ
যদি দান করে বিক্রি তবে হাসরের মাঠে
তাকে
ঐ দান করা অঙ্গ ছাড়াই পুনরায় জিবীত
করা হবে। তাই ইসলামের দৃষ্টিতে জিবীত
অবস্থায় বা মরনত্তর অঙ্গদান ও বিক্রি করা।
যায়েজ নাই।
মরোনোত্তর অঙ্গ দান করা অবশ্যই জায়েজ আছে তবে যদি সেটা কারও জীবন বাঁচানোর জন্য ব্যবহার করা হয় এবং কষ্ট দূর করার জন্য হয়। তবে এখানে যদি নিজের স্বার্থ না থাকে কিংবা টাকা নেয়া না হয় তবেই সেটা গ্রহণযোগ্য। কারণ ইসলাম ধর্ম আমাদেরকে ত্যাগী হতে শিখায়। সৃষ্টির উপকার করলে আল্লাহ খুশী হন। আপনার অঙ্গের মালিক যেমন আপনি নন ঠিক তেমনি আপনার টাকা-পয়সাসহ কোনো কিছুর মালিকও আপনি নন! যেটা আপনি পরিশ্রম করে অর্জন করেছেন সেটার মালিকও আপনি নন। এটা কোরআন দ্বারা প্রমাণিত। পৃথিবীর সবকিছুর মালিকই আল্লাহ।
সূরা বাকারা ১৭৬ নং আয়াতে আছে"
|
সৎকর্ম শুধু এই নয় যে, পূর্ব কিংবা পশ্চিমদিকে মুখ করবে, বরং বড় সৎকাজ হল এই যে, ঈমান আনবে আল্লাহর উপর কিয়ামত দিবসের উপর, ফেরেশতাদের উপর এবং সমস্ত নবী-রসূলগণের উপর, আর সম্পদ ব্যয় করবে তাঁরই মহব্বতে আত্নীয়-স্বজন, এতীম-মিসকীন, মুসাফির-ভিক্ষুক ও মুক্তিকামী ক্রীতদাসদের জন্যে। আর যারা নামায প্রতিষ্ঠা করে, যাকাত দান করে এবং যারা কৃত প্রতিজ্ঞা সম্পাদনকারী এবং অভাবে, রোগে-শোকে ও যুদ্ধের সময় ধৈর্য্য ধারণকারী তারাই হল সত্যাশ্রয়ী, আর তারাই পরহেযগার" |
অর্থাত, মানুষের উপকার করলে আল্লাহ খুশী হন। মানুষের অঙ্গও তার সম্পদের অন্তর্ভুক্ত। এবং সেটা থেকে দান করা অবশ্যই সওয়াবের কাজ।
আপনি মরার পর আপনার শরীর পঁচে যাবে। মাটি খেয়ে ফেলবে। কিন্তু আযাব কিংবা শান্তি বর্ষিত হবে আপনার আত্নার উপর। তারা তো আপনার আত্না নিয়ে কিছু করছে না? তারা আপনার শরীর (যেটা একটা বস্তু মাত্র!) সেটা অন্যকে দান করবে। এতে গুনাহ হবে না।
সূরা আল কাসাস আয়াত ৭৮ :
"সে বলল, আমি এই ধন আমার নিজস্ব জ্ঞান-গরিমা দ্বারা প্রাপ্ত হয়েছি। (আসলে এটা তার নয়) সে কি জানে না যে, আল্লাহ তার পূর্বে অনেক সম্প্রদায়কে ধ্বংস করেছেন, যারা শক্তিতে ছিল তার চাইতে প্রবল এবং ধন-সম্পদে অধিক প্রাচুর্যশীল?"
অর্থাত মানুষ যে সম্পদ অর্জন করেছে সেটার মালিকও আল্লাহ।
একজন মুসলিমের উপকার করলে সে আপনার জন্য দোয়া করবে। কেয়ামতের দিন যেটা আপনার জন্য অনেক বড় পাওয়া হতে পারে। একজন অমুসলিমের উপকার করলে হতেও পারে সে আপনার দানশীলতা দেখে মুসলিম হয়ে গেছে। তাই ইসলামের স্বার্থে এই কাজ করা যেতে পারে।
যদিও অনেক আলেমের মতে এটা জায়েজ নেই। কিন্তু আমরা যদি সাহাবীদের যুগ পর্যালোচনা করি তবে দেখতে পাই তারা আমাদের তুলনায় অনেক বেশী ত্যাগী জীবনযাপন করেছেন। তাদের যুগে যদি বিজ্ঞান উন্নত থাকতো তবে তাদের মধ্যে নিশ্চয়ই অঙ্গ দান করার নজির পাওয়া যেতো।