মানুষ কেন অহংকার করে? আল্লাহ তায়ালা অহংকার সম্পর্কে কি বলেছেন? যারা অহংকার করে তাদের শাস্তি কি? অহংকারের কারণে অনেকেই বিপদে পড়ে, আবার বিপদ আপদে মানুষের গুনাহ মাফ হয়। যারা অহংকার করে এবং বিপদে পড়ে তাদের গুনাহ কি মাফ হিয়। এই সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাই, দলিল সহ।
শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
Mehedi001

Call

ﻭَﺍﺳْﺘَﻜْﺒَﺮُﻭﺍ ﻋَﻨْﻬَﺎ ﻻَ ﺗُﻔَﺘَّ ﻟَﻬُﻢْ ﺃَﺑْﻮَﺍﺏُ ﺍﻟﺴَّﻤَﺎﺀِ ﻭَﻟَﺎ ﻳَﺪْﺧُﻠُﻮﻥَ ﺍﻟْﺠَﻨَّﺔَ ﺣَﺘَّﻰ ﻳَﻠِﺞَ ﺍﻟْﺠَﻤَﻞُ ﻓِﻲ ﺳَﻢِّ ﺍﻟْﺨِﻴَﺎﻁِ ﻭَﻛَﺬَﻟِﻚَ ﻧَﺠْﺰِﻱ ﺍﻟْﻤُﺠْﺮِﻣِﻴﻦَ- )ﺍﻷﻋﺮﺍﻑ 40 (- ‘নিশ্চয়ই যারা আমার আয়াত সমূহে মিথ্যারোপ করে এবং তা থেকে অহংকারবশে মুখ ফিরিয়ে থাকে, তাদের জন্য আকাশের দুয়ার সমূহ উন্মুক্ত করা হবে না এবং তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না, যতক্ষণ না ছুঁচের ছিদ্রপথে উষ্ট্র প্রবেশ করে। এভাবেই আমরা পাপীদের বদলা দিয়ে থাকি’ (আ‘রাফ ৭/৪০)। অত্র আয়াতে আল্লাহ কুফরী বশে বা অজ্ঞতা বশে বলেননি। বরং ‘অহংকার বশে’ বলেছেন। ফলে অহংকারী কাফেরের জান্নাতে প্রবেশ করা ঐরূপ অসম্ভব, যেরূপ ছুঁচের ছিদ্রপথে উটের প্রবেশ অসম্ভব। কাফের তওবা করে ঈমান আনতে পারে, অজ্ঞ ব্যক্তি জানার পরে ফিরে আসতে পারে। কিন্তু অহংকারী ব্যক্তি স্বীয় অহংকারের উপরে দৃঢ় থাকে ও এক সময় সে ধ্বংস হয়ে যায়। অহংকার তাই মারাত্মক পাপ। যা অন্য অধিকাংশ পাপের উৎস। আলোচ্য আয়াতে আল্লাহ মানুষকে অহংকারের পাপ ও তার ভয়াবহ পরিণতি বিষয়ে সাবধান করেছেন। ‘অহংকার’ মানব স্বভাবের একটি নিকৃষ্ট অংশ। এর উপকারিতার চেয়ে অনিষ্টকারিতা বেশী। একে দমন করে সৎকর্মে লাগানোর মধ্যেই মানুষের কৃতিত্ব নির্ভর করে। মানুষের মধ্যে ষড়রিপু হ’ল কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মদ, মাৎসর্য। এর মধ্যে ‘মদ’ হ’ল দম্ভ, গর্ব, অহংকার। ‘মাৎসর্য’ হ’ল ঈর্ষা, হিংসা, পরশ্রীকাতরতা। প্রতিটি রিপুই মানুষের প্রয়োজনে সৃষ্ট এবং প্রতিটির দক্ষ ব্যবহার কাম্য। যেমন টক-ঝাল-মিষ্টি-লবণ প্রতিটিই প্রয়োজন। কিন্তু অধিক ব্যবহারে প্রতিটিই ক্ষতিকর। জীবনের চলার পথে ষড়রিপু আমাদের সার্বক্ষণিক সাথী। এগুলি ডাক্তারের আলমারিতে সাজানো ‘পয়জন’ (Poison)-এর শিশির মত। যা তিনি প্রয়োজনমত রোগীর প্রতি ব্যবহার করেন। অথবা মটর গাড়ীর মাথায় রাখা আগুনের বাক্সের মত। যাকে সর্বদা পাখা দিয়ে বাতাস করতে হয় এবং ড্রাইভার সর্বদা গিয়ার পরিবর্তনের মাধ্যমে আগুন নিয়ন্ত্রণ করে গাড়ী চালিয়ে থাকেন। দেহের মধ্যে লুক্কায়িত উপরোক্ত ৬টি আগুনের মধ্যে ‘মদ’ বা অহংকার ও আত্মম্ভরিতা হ’ল অন্যতম প্রধান স্ফুলিঙ্গ। যা একবার জ্বলে উঠলে ও নিয়ন্ত্রণ হারালে পুরা মানবগাড়ীটাকে খাদে ফেলে ধ্বংস করে ছাড়ে। অহংকারের আরবী নাম কিব্র )ﺍﻟْﻜِﺒْﺮ ( । যার অর্থ বড়ত্ব। অন্যের চাইতে নিজেকে বড় মনে করাই এর অন্তর্নিহিত অর্থ। এর পারিভাষিক অর্থ, সত্যকে দম্ভভরে প্রত্যাখ্যান করা এবং মানুষকে তুচ্ছ জ্ঞান করা। নিম্নের হাদীছটিতে এর পরিণতি ও ব্যাখ্যা দু’টিই বর্ণিত হয়েছে। আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেছেন, ﻻَ ﻳَﺪْﺧُﻞُ ﺍﻟْﺠَﻨَّﺔَ ﻣَﻦْ ﻛَﺎﻥَ ﻓِﻰ ﻗَﻠْﺒِﻪِ ﻣِﺜْﻘَﺎﻝُ ﺫَﺭَّﺓٍ ﻣِﻦْ ﻛِﺒْﺮٍ. ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺟُﻞٌ ﺇِﻥَّ ﺍﻟﺮَّﺟُﻞَ ﻳُﺤِﺐُّ ﺃَﻥْ ﻳَﻜُﻮﻥَ ﺛَﻮْﺑُﻪُ ﺣَﺴَﻨًﺎ ﻭَﻧَﻌْﻠُﻪُ ﺣَﺴَﻨَﺔً. ﻗَﺎﻝَ : ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠﻪَ ﺟَﻤِﻴﻞٌ ﻳُﺤِﺐُّ ﺍﻟْﺠَﻤَﺎﻝَ ﺍﻟْﻜِﺒْﺮُ ﺑَﻄَﺮُ ﺍﻟْﺤَﻖِّ ﻭَﻏَﻤْﻂُ ﺍﻟﻨَّﺎﺱِ- ‘ঐ ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না যার অন্তরে কণা পরিমাণ অহংকার রয়েছে। জনৈক ব্যক্তি প্রশ্ন করল, লোকেরা চায় যে, তার পোষাক সুন্দর হৌক, তার জুতা জোড়া সুন্দর হৌক। জবাবে তিনি বললেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ সুন্দর। তিনি সৌন্দর্য পসন্দ করেন। ‘অহংকার’ হ’ল ‘সত্যকে দম্ভের সাথে পরিত্যাগ করা এবং মানুষকে তুচ্ছ জ্ঞান করা’।[1] এর অর্থ এটা নয় যে, অহংকার করলেই সে জাহান্নামে যাবে। বরং এর অর্থ হ’ল সত্য জেনেও মিথ্যার উপরে দৃঢ় থাকা এবং নানারূপ দোহাই দিয়ে সত্যকে প্রত্যাখ্যান করা। আর ‘অন্যকে তুচ্ছ মনে করা’ অর্থ সর্বদা নিজেকে অন্যের চেয়ে বড় মনে করা এবং অন্যের কাছে নিজের মূল্যায়ন কামনা করা। তার চাহিদা মতে যথাযথ মূল্যায়ন না পাওয়াতেই সে অন্যকে হেয় জ্ঞান করে। আবু ওয়াহাব আল- মারওয়াযী বলেন, আমি আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারককে প্রশ্ন করলাম ‘অহংকার’ )ﺍﻟْﻜِﺒْﺮ ( কাকে বলে? তিনি বললেন, মানুষকে হেয় জ্ঞান করা। পুনরায় প্রশ্ন করলাম, ‘আত্মম্ভরিতা’ )ﺍﻟﻌُﺠْﺐ ( কাকে বলে? তিনি বললেন, তোমার কাছে যা আছে, অন্যের কাছে তা নেই বলে ধারণা করা।[2] রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তিনটি ধ্বংসকারী বস্ত্ত থেকে মানুষকে সাবধান করেছেন (১) প্রবৃত্তি পূজারী হওয়া (২) লোভের দাস হওয়া এবং (৩) আত্ম অহংকারী হওয়া। তিনি বলেন, এটিই হ’ল সবচেয়ে মারাত্মক )ﻭَﻫِﻲَ ﺃَﺷَﺪُّﻫُﻦَّ

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ
Call

 মুহাম্মাদ ইবনুূু মূসান্না, মুহাম্মাদ ইবনুূু বাশশার ও ইবরাহীম ইবনুূু দীনার (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনুূু মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে , নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যার অন্তরে অনু পরিমান অহংকার থাকবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না। এক ব্যাক্তি জিজ্ঞেস করল, মানুষ চায় যে, তার পোশাক সুন্দর হোক, তার জুতা সুন্দর হোক, এও কি অহংকার? রাসুল বললেনঃ আল্লাহ সুন্দর, তিনি সুন্দরকে ভালবাসেন। অহমিকা হচ্ছে দম্ভভরে সত্য ও ন্যায় অস্বীকার করা এবং মানুষকে ঘৃণা করা। 

(সহিহ বুখারি)



ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ